প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৯
দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমির ভেতর দিয়ে আমরা সুদান সীমান্তের দিকে এগোচ্ছি। আবু সিম্বেল থেকে সুদানের দূরত্ব মাত্র কুড়ি কিলোমিটার। আসোয়ানে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়ে ওয়াদি হালফা সীমান্ত দিয়ে সুদানে ঢুকে পড়া যায়। আমাদের তেমন সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা না থাকায় আপাতত দুপাশের মরুভূমি দেখতে দেখতে এগিয়ে যাই আবু সিম্বেলের পথে। মরুভূমিতে হলদে বাদামি ধূসর সারিসারি বালির স্তূপ কোথাও কোথাও বালির পাহাড় হয়ে উঠেছে। মরু প্রান্তরে বিদ্যুতের দীর্ঘ বিদ্যুৎসঞ্চালন লাইন এবং পথের পাশে সাজানো নির্মাণ সামগ্রী থেকে বোঝা যায় আসোয়ান হাই ড্যাম মিশরের মানুষের জীবনে কতোটা ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। প্রান্তরের মাঝখানে ফসলের সবুজ ক্ষেত এবং রাস্তার পাশে সবুজ গাছের দীর্ঘ সারি দেখে অনুমান করা যায় জলের ছোঁয়ায় ধূসর মরুর ঊসর বুকেও প্রাণের উন্মেষ ঘটেছে। ওসামা জানালেন, দেশের বিদ্যুতের শতকরা পনের ভাগই আসে আসোয়ান ড্যাম থেকে। অন্যদিকে লেক নাসেরের জলে এই অঞ্চলে আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে। শুধু সেচের পানি নয়, বন্যার সময় উপচে পড়া পানি নীল এবং লেক নাসেরের দুপাশ প্লাবিত করে যাবার পরেই এই অঞ্চলে শুরু হয়ে যায় চাষাবাদ। মিনিট পঁচিশেক পরে গাড়ির গতি একটু কমে এলে ওসামা জানালেন এখানে একটা চেকপোস্ট আছে। চেকপোস্টে অবশ্য কেউ কিছু চেক করলো না, এমনকি গাড়িও পুরোপুরি থামলো না। শুধু পথে দাঁড়ানো পুলিশ আরবিতে কিছু একটা জিজ্ঞেস করলে ওসামা উত্তর দিলেন, ‘বাংলাদেশে’। বুঝলাম, সাদা সাদা টুরিস্টের ভিড়ে এইসব আধাকালা মানুষের আমদানি কোন দেশ থেকে সেটাই তাদের জিজ্ঞাসার বিষয়। শুধু কৌতূহল নয়, খাতায় দেশের নাম টুকে রাখাও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে খাতা লেখা শেষ হবার আগেই আয়মান গাড়ি টান দিলে মনে হলো এদেশের নিরিহ পুলিশকে কেউ খুব বেশি পাত্তা দেয় না। পথের পাশের সরাইখানা থেকে বেরোবার সময় দেখেছি রাস্তায় হাইওয়ে পুলিশ গাড়ি নিয়ে নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে।
চেকপোস্ট পার হবার পরে মনে হয়েছিল, আমরা বোধহয় আবু সিম্বেল পৌাঁছে গেছি। আসলে এটি ছিল আবু সিম্বেল এলাকায় প্রবেশ পথ। এরপর থেকেই দুপাশে গাছপালার সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। প্রচুর খেজুর এবং তাল জাতীয় গাছ, পাশাপাশি তুলা, ভুট্টা ও গমের ক্ষেত, ঝোপঝাড় এবং ফুলের দেখা মেলে কোথাও কোথাও। এই বিরাণ ভূমিতে চলছে একটা শহর গড়ে তোলার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। রাস্তাঘাট কারুকাজ করা দেয়াল, আধুনিক ভবন এবং সুদৃশ্য মসজিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সাড়ে আটটায় আবু সিম্বেল পৌঁছালে টেম্পলের সংরক্ষিত এলাকার বাইরে একটা গাছের ছায়ায় দাঁড়ালাম। ওসামা প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে গেলে মাথার উপরে পাখির কিচির মিচির শুনে উপরে তাকিয়ে দেখি টুনটুনি জাতীয় ছোট্ট পাখি সবুজ পাতার ফাঁকে বাসা বুনছে। ‘জলই জীবন’ কথাটার সত্যতা আরো একবার উপলব্ধি করলাম। নীল নদের পানি আটকে রাখতে না পারলে কোথায় থাকতো লেক নাসের আর কোথায় থাকতো এই টুনটুনি পাখি!
প্রবেশ পথে পর্যটকদের দীর্ঘ লাইন দেখে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভোর সাড়ে চারটায় রওনা দিয়ে চার ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। ফেরার পথে কোথাও যাত্রা বিরতি না দিলেও সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগবে। আমাদের জাহাজ ছেড়ে যাবে দুপুর দেড়টায়। রামেসেস এবং নেফারতারির সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে সময় মতো ফিরতে পারবো তো! আমাদের অবাক করে দিয়ে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ওসামা টিকেটসহ ফিরে এলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কতোক্ষণ সময় পাবো এখানে?’ নির্বিকার ওসামার উত্তর, ‘তোমাদের যতোক্ষণ ইচ্ছে ঘুরে এসো। দু ঘণ্টার বেশি লাগবে না আশা করি।’
দু’ঘণ্টা এখানে কাটালে বেলা সাড়ে দশটা বাজবে, বেলা দুটোর আগে তো ফিরতে পারবো না। তারপরেও ওসমার আশ্বাসে আমরা চমৎকার বাদামি সিরামিক ইটের আধুনিক ভবনের ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রহরা পার হয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। প্রবেশ পথের পরে চোখের সামনেই বিশাল পাহাড়। আগেই জানা হয়ে গেছে, যে পাহাড় কেটে রামসেসের রূপ দেয়া হয়েছে, সে পাহাড় আসল পাহাড় নয়। এই কৃত্রিম পাহাড়ের গায়েই বসানো হয়েছে স্থানান্তরিত দুটি মন্দির। রামসেসের মন্দির এবং নেফারতারি মন্দিরে ঢুকতে হলে পাহাড়ের ডান দিক দিয়ে লেক নাসেরের পাড় ধরে বেশ কিছুটা পথ চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সামনে পৌঁছাতে হবে। প্রশ্ন হতেই পারে, মন্দির যাত্রীদের পাহাড়ের পেছন দিকে না ঘুরিয়ে সরাসরি মূর্তিসহ মন্দির দুটো এখানে বসিয়ে দিলে কি ক্ষতি হতো? এই প্রশ্নের উত্তরেই রয়েছে সে যুগের স্থপতিদের অসামান্য প্রজ্ঞার প্রমাণ। জ্যোর্তিবিদ্যা ও গাণিতিক হিসাব নিকাশে তাঁরা যে অসাধারণ উৎকর্ষ লাভ করেছিলেন তা সহজেই অনুমান করা যায়। সারা বছর মন্দিরের অভ্যন্তরে সূর্যালোক প্রবেশ না করলেও বছরে দুবার, ২২ শে ফ্রেবুয়ারি রামসেসের জন্ম দিনে এবং ২২ শে অক্টোবর ভোরে সম্রাটের অভিষেকের দিনে সরাসরি সূর্যের আলো এসে পড়ে দ্বিতীয় রামসেসের মুখে। মন্দিরের এই সুনির্দিষ্ট কৌনিক অবস্থান স্থানান্তরের সময়েও যথাযথভাবে বজায় রাখা হয়েছে। এই বিশাল স্থাপনা পরে এক জায়গা থেকে তুলে এনে অক্ষত অবস্থায় একইভাবে নতুন করে বসাবার সময় যে পাঁচ মিলিমিটার এদিক সেদিক হয়েছে হাজার তিনেক বছরের হিসাবে সেটি নগন্য।
আমরা লেকের ধার দিয়ে হেঁটে আবু সিম্বেলের প্রথম মন্দিরের সামনে এসে পৌঁছলাম। খাড়া পাহাড়ের শরীরে, সম্রাটের চারটি বিশাল মূর্তি মন্দিরে আগত হাজারো মানুষের মনে হয়তো সম্ভ্রম জাগাতো কিংবা ছড়িয়ে দিতো ভীতি। এখনো উদ্ধত মূর্তিমানরা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি ফারাওয়ের শক্তির পরিচয় দিতেই যেনো জনগণের রক্ষাকর্তা হিসাবে বসে আছেন। ষাট ফুটের চেয়েও দীর্ঘ মূর্তিগুলোর মাঝে ছোট আকারে জায়গা করে নিয়েছে রামসেসের মা রানি টুইয়া, স্ত্রী নেফারতিতি এবং অসংখ্য সন্তানের মধ্যে প্রিয় কয়েকজন। প্রবেশ দ্বারের ঠিক উপরে বসে আছেন বাজপাখির মাথাওয়ালা সূর্যদেব রা-হোরাখথি।
বাইরে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে মূূল মন্দিরে ঢুকবার পথে প্রথমবারের মতো দ্বাররক্ষীদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হলাম। ফারাওর সাক্ষাৎ উত্তর পুরুষ লম্বা জোব্বা এবং মাথায় পাগড়ি পরে দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘লা সুরাতান-লা তসবীর’ বলে আমাদের নিরস্ত করার চেষ্টা করছিলেন। আমাদের চেহারা সুরতে তিনি কী ভেবেছিলেন কে জানে! নব্বই ভাগ মুমিন মুসলমানের দেশের মানুষ হয়েও আমরা যে আরবি জানি না, সে কথা তাকে কে বলবে! অবশ্য বলার আগে তিনি নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছিলেন তাই ‘নো ফটো, নো ভিডিও’ বলে আমাদের বিষয়টা বুঝিয়ে দিলেন। সমস্যা হলো ক্যামেরা রাখবো কোথায়? আমার জিজ্ঞাসার উত্তরে প্রহরী জানালেন ক্যামেরা সাথে নিয়ে যাওয়া যাবে তবে ছবি তোলা যাবে না। আরও একটু আগ বাড়িয়ে বললেন, ‘মোবাইল ফোন ওকে-টেক পিকচার!’ তার অর্থ হলো মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে কোনো মানা নেই। বড় হলঘরের দুপাশে আটটি করে কলামের প্রতিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে রামসেসের বিপুলায়তন মূর্তি। দেয়ালে রিলিফের কাজগুলোতে তুলে ধরা হয়েছে যুদ্ধে পরাক্রমশালী ফারাওদের অপ্রতিরোধ্য বিজয়গাথা, শত্রুদের পদানত করে দেবতাদের উপস্থিতিতে তাদের হত্যা করার দৃশ্য। উত্তরের দেয়ালে হতোদ্যম সেনাবাহিনিকে উজ্জীবীত করে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১২৭৪ অব্দের বিখ্যাত কাদেশের যুদ্ধ জয়ের দৃশ্য চিত্রিত। এই দৃশ্যে রথের আরোহী রামসেস তার পলায়নপর শত্রুদের দিকে তীর নিক্ষেপ করছেন! পরের হলটিতে চার স্তম্ভের একটি চত্বরে রামসেস এবং নেফারতারি সিংহাসনে আসীন পবিত্র মন্দিরের তিন মহা-দেবতার সামনে উপস্থিত। দেয়ালগুলোর মতো মন্দিরের সিলিংও বিচিত্র চিত্রকর্মে সাজানো। শকুনরূপী প্রতিরক্ষার দেবী নেখবেত রামসেসের মাথার উপরে সিলিং-এ বসে সম্রাটের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করেছেন। ভেতরের প্রকাণ্ড পাথুরে কলামগুলো দৈর্ঘে প্রস্থে এতোটাই বড় যে এর নির্মাণ শৈলীর কথা ভাবলে শুধু তিনহাজার বছর আগের প্রেক্ষিতে নয় বর্তামানেও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও প্রায় অসম্ভব কাজ বলে মনে হয়। চিত্রিত দেয়ালগুলো জুড়ে আছে দ্বিতীয় রামসেস এবং তার পরিবার পরিজন, মহান দেব দেবী ও সৈন্য-সামন্ত ছাড়াও শিয়াল দেবতা আনুবিসের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য, সারিবদ্ধ শ্রমদাস, সমকালীন জীবন যাপনের চিত্র এবং হাইরোগ্লিফিক লিপিতে লেখা ইতিহাস। বিভিন্ন অংশে ঘুরে ঘুরে দেখার সময় লক্ষ করলাম পশ্চিমা ভ্রাতা-ভগ্নিরা দিব্যি ক্যামেরায় ছবি তুলছেন এবং নিঃশব্দে ভিডিও করে যাচ্ছেন। ধারণা করা যায় এ জন্য জোব্বাধারী দ্বাররক্ষীর হাতে যৎকিঞ্চিত ঈজিপশিয়ান পাউন্ড গুঁজে দিতে হয়েছে। আমাদের গাত্র বর্ণের কারণে মন্দিরের প্রহরী কিছু প্রত্যাশা করেননি, আর আমরাও কিছু দিতেও চাইনি। অতএব মোবাইল ফোনে বেশ কিছু ছবি তুলে বাইরে বেরিয়ে এলাম।
পাশের পাহাড়ের ঢালে রামসেসের সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রী নেফারতারির উদ্দেশ্যে নির্মিত মন্দির দেখতে যাবার আগে প্রধান মন্দিরের বিশালত্ব বুঝতে হলে বাইরে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ছাড়া উপায় নেই। একবার ডাইনে একবার বাঁয়ে ছোটাছুটি করে একটু ক্লান্তও হয়ে পড়েছিলাম। মহামন্দির থেকে দুশ গজের মতো দূরে ছোট মন্দিরে যাবার মাঝখানে একটা ছাউনির ছায়ায় বসে অল্প কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেয়ার সাথে সাথে ক্যামেরার মেমোরি কার্ড বদলে নিলাম। বেশিক্ষণ বসার উপায় ছিল না। সময় দ্রুত গড়িয়ে যাচ্ছে, কাজেই হাঁটতে শুরু করলাম নেফারতারি দর্শনে। তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও এখানেও মন্দিরের বাইরে চল্লিশ ফুট উঁচু বেদীতে দাঁড়িয়ে আছেন সম্রাট দ্বিতীয় রামসেস ও তাঁর স্ত্রী নেফারতারি। মহান সম্রাট নিজের চারটি এবং প্রিয়তমা স্ত্রীর দুটি বিশাল মূর্তি স্থাপন করিয়েছেন পাহাড়ের গায়ে। সংখ্যায় দুটি বেশি হলেও উচ্চতায় এখানে দুজনেই সমান। তবে রাজা মশাই বোধহয় নিরাপত্তাজনিত কারণে রাণীমার মূর্তিটি মাঝখানে রেখে নিজে দাঁড়িয়েছেন দুপাশে। প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে নারীদের, এমন কি সম্রাটজ্ঞীদের অনেক ছোট আকারে দেখানো হতো। এখানে দুজনেই বত্রিশ ফুট দীর্ঘ। ফারাওদের রাজত্বে নারীকে সম-মর্যাদা দানের এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে সম্রাট আখেনাতন স্ত্রী নেফারতিতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন প্রথম মন্দির। মন্দিরের ভেতরে দেয়াল চিত্রে এখানেও প্রাধান্য পেয়েছে ফারাওদের বিজয় গাথা এবং দেব দেবীর উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য, বিশেষ করে দেবী হাথোরের উদ্দেশ্যে সম্রাট ও সম্রাটজ্ঞীর নিবেদনের দৃশ্য।
আবু সিম্বেল মন্দির প্রাঙ্গনে যে পথে প্রবেশ করেছিলাম, বেরোবার সময় তার বিপরীত দিকের সবুজ গাছপালায় ছাওয়া সুন্দর বাঁধানো পথ দিয়ে লেক নাসের হাতের ডাইনে রেখে পাহাড়ের গায়ে ওড়ানো পতাকার সারি পার হয়ে এলাম। বাইরে বেরিয়ে যাবার আগে বিশ্রাম নেবার জন্যে কয়েকটি সুদৃশ্য ছাউনি থাকলেও আমাদের বসার সময় নেই। আমার রীতিমতো ভাবনা হচ্ছিল, তিনজনকে আসোয়ানে ফেলে রেখেই টুইয়া ভেসে যায় কিনা! কনকোর্সের বাইরে দীর্ঘ সারিতে টুরিস্টদের জন্যে আকর্ষণীয় সব সাজানো সুভ্যেনিয়ার এবং দোকানীদের বিনীত আমন্ত্রণ উপেক্ষা করে আমরা দ্রুত গাড়িতে উঠে বসলাম।
পথে রানাভাই বলছিলেন রামসেসের জন্মদিন আসলে ২১ ফেব্রুয়ারি আর অভিষেক ২১ অক্টোবর। আবু সিম্বেল স্থানান্তরের পরে পাঁচ মিলিমিটারের গোলমালে এখন দিনের প্রথম সূর্য সম্রাট এবং দেবতাদের অবয়ব আলোকিত করে একদিন পরে একদিন পরে অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি এবং ২২ অক্টোবর। আমি সারাক্ষণ উদ্বেগের মধ্যে থাকায় রানা ভাইয়ের কথাটা তখন খুব ভালো করে উপলব্ধি করতে পারিনি। বেলা সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে, আমরা দু ঘণ্টার জায়গায় তিন ঘণ্টা কাটিয়েছি আবু সিম্বেলে। সাড়ে তিন ঘণ্টায় আসোয়ান পৌঁছালেও আড়াইটা বাজবে। তবে আমি টেনশনে থাকলেও ওসামা বেশ নিরুদ্বেগ! আসোয়ানের কাছাকাছি এসে একবার গাড়ি থামিয়ে নিজের এবং রানা ভাইয়ের জন্য অষুধও কিনেছেন। টুইয়া থেকে ভোরে বেরিয়ে যাবার সময় হিসাব রাখার সুবিধার জন্যে আমাদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রবেশ পথে দাঁড়ানো রিসেপশনিস্ট যখন আমাদের হাত থেকে মাথা গুনতির কার্ড বুঝে নিলেন, তখন ঘড়িতে দুটো বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। তিনি বিরস বদনে ম্যানেজারকে জানালেন, ‘এখনো পাঁচজনের কোনো খবর নেই।’ আমি ম্যানেজারের উদ্দেশ্যে বললাম, ‘তাহলে আমাদের জন্যে জাহাজ ছাড়তে দেরি হয়নি নিশ্চয়ই।’ ম্যানেজার একটু কাষ্ঠ হাসি দিয়ে বললেন, ‘ইয়া। উই ডোন্ট নো, হাউ লং উই উইল হ্যাভ টু ওয়েট ফর দেম!’ওসামা ঠিকই জানতেন, প্রায় সব সময়েই কেউ না কেউ দেরি করবেই। মিনিট দশেক পরে সেই শেষ পাঁচজন ফিরে আসার পরে নোঙর তুলে বন্দর ছেড়ে নীল নদের জলে ভেসে চললো টুইয়া।
চলবে...
প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৮
প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৭
প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৬
প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫
প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪
প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩