রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২৭

বিষাদ বসুধা

স্বাস্থ্যমন্ত্রী পাগলের মতো সাহেদ করিমকে খুঁজছেন। সাহেদ তাকে কথা দিয়েছিল যে, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিডিয়াতে আর কোনো রিপোর্ট হবে না। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একের পর এক দুর্নীতির রিপোর্ট পত্রিকায় আসছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির রিপোর্ট। সারাক্ষণ তার মনের মধ্যে ভয়, এই বুঝি প্রধানমন্ত্রী তাকে ডেকে পাঠালেন! এই বুঝি তাকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বলা হলো! মন্ত্রী কারও কাছে মুখ দেখাতে পারেন না। বাসায় পত্রিকা লুকিয়ে রাখেন। বউ ছেলে মেয়েদের কাছে ছোট হয়ে যাওয়ার ভয় তার। কিন্তু পত্রিকা লুকালে কী হবে? টিভিগুলির কী করবেন? টিভিগুলো যেন আরেক ডিগ্রি সরেষ। সেখানে খবর তো প্রচার করেই। খবরের পর পরই শুরু হয় টকশো। সেই টকশো বড়ই টক লাগে মন্ত্রীর কাছে। সেদিন পরিবারের সবাই মিলে টিভিতে খবর দেখতে বসে বড় লজ্জার মুখে পড়লেন মন্ত্রী। সংবাদের শুরুতেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির খবর! মন্ত্রীর হাতেই ছিল রিমোট কন্ট্রোল। হেডলাইন পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অন্য চ্যানেলে চলে গেলেন। এক পর্যায়ে বন্ধই করে দিলেন।
মেহেরুন্নেসা বললেন, কি হলো? খবরটা দাও না!
না।
কেন?
খবরটা তিতা।
মেহেরুন্নেসা বিস্ময়ের দৃষ্টিতে মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রইলেন। কোনো খবরটা তিতা তা মনে করার চেষ্টা করলেন। কোনো একটা দুর্নীতির খবর! না। মনে করতে পারছেন না। তিনি মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বললেন, রিমোটটা আমার কাছে দাও তো।
না। এখন থাক।

মেহেরুন্নেসা আবারও বিস্ময়ের দৃষ্টিতে মন্ত্রীর দিতে তাকিয়ে রইলেন। বাচ্চারা টিভির সামনে থেকে উঠে চলে গেল। মেহেরুন্নেসাও কিছুক্ষণ পর অন্য ঘরে চলে গেলেন। মন্ত্রী বসে রইলেন। দুশ্চিন্তার বোঝা ভারী হয়ে তার মাথায় চেপে বসে। তিনি মনে মনে ভাবেন, এভাবে লুকিয়ে তিনি কতদিন ঠেকিয়ে রাখবেন! একদিন না একদিন তো পরিবারের লোকরা জানবেন। তখন তাদের কাছে তিনি কীভাবে মুখ দেখাবেন!
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্যাচারা লোক খারাপ না। নিরেট ভদ্রলোক। তিনি নিজে দুর্নীতি করেন না। কিন্তু তার মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি কিছুতেই ঠেকাতে পারছেন না। আসলে তিনি প্রশাসনিকভাবে শক্ত লোক না। কাউকে কিছু বলতে পারেন না। শুরুতেই তিনি যদি শক্তভাবে হাল ধরতেন তাহলে নিয়ন্ত্রণ হয়তো করতে পারতেন। তার অদক্ষতার কারণেই দুর্নীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। আসলে শুধু সৎ ভদ্রলোক হলেই চলে না। তাকে দক্ষ হতে হয়। প্রশাসনকে শক্ত হাতে চালাতে হয়। সেই কথা বার বার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পছন্দ করেন বলে হয়তো এখনই চাকরিটা যাবে না। কিন্তু যেতে কতক্ষণ! তিনি আর যা-ই হোক, দুর্নীতি এবং দুশ্চরিত্র লোকদের দুই চোখে দেখতে পারেন না। কারও বিরুদ্ধে এই দুই ধরনের অভিযোগ উঠলে তার আর রক্ষা নেই। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি এক মুহূর্তও দেরি করেন না। এটা স্বাস্থ্যমন্ত্রী খুব ভালো করেই জানেন। তিনি এও জানেন, প্রধানমন্ত্রী পত্রিকার কাটিং নয়; প্রতিদিন পত্রিকার হার্ড কপি পড়েন। তার কাছে সবগুলো পত্রিকা যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির রিপোর্টগুলো তার নজর এড়াবে না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী পত্রিকায় দুর্নীতির রিপোর্ট দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলেন, ইস! কয়েকদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী ডেকে করোনা মোকাবিলার জন্য বড় একটা বাজেট দিয়েছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী যদি ভাবেন, আমরা সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীর করোনার বাজেট নয়ছয় করছি! ছি ছি! এটা কোনো কাজ হলো!
কদিন ধরে দুশ্চিন্তায় মন্ত্রী ঘুমাতে পারেন না। তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসা তাকে অস্থির দেখে বলেন, কী হয়েছে করিম? কী নিয়ে এত চিন্তা করছ? কোনো সমস্যা হয়েছে?
না। তেমন কিছু না।
তাহলে এমন করছ কেন?
কেমন করছি?
কেমন অস্থির লাগছে তোমাকে! মনে হচ্ছে, কোনো বিষয় নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করছ!
আমার কিছুই ভালো লাগছে না।
আমাকে খুলে বলো। কোনো অসুবিধা নেই। আমি তোমাকে হেল্প করব।
পরে বলব।
পরে কেন? প্রেমে ট্রেমে পড়নি!
মন্ত্রী এবার না হেসে পারলেন না। একটা ভয়ানক থমথমে পরিবেশকে মেহেরুন্নেসা হালকা করে দিলেন। কিছুক্ষণের পরেই তিনি বললেন, হাসছ কেন? তোমার এখন অনেক ক্ষমতা। সরকারের ডাকসাইটে মন্ত্রী! এখন তো দুধের মাছিরা তোমার কাছে ঘুরঘুর করবেই। আমি মেয়ে। তাই মেয়েদের আমি খুব ভালো করে চিনি।
মন্ত্রী নিজে আবার চিন্তার রাজ্যে ডুবে গেলেন। তিনি মনে মনে সাহেদ করিমকে খোঁজেন। চিন্তা করতে করতেই মোবাইল হাতে নিয়ে সাহেদ করিমকে ফোন করেন। না। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার ফোন বন্ধ।

মন্ত্রী মনে মনে সাহেদ করিমকে গালমন্দ করেন। লোকটা একটা ভুয়া। কথা দিয়ে কথা রাখে না। বিপদের সময় পাশে থাকে না। আমার বিপদ থেকে সে বোধহয় কেটে পড়েছে। চরম বিরক্তি নিয়ে আবার টেলিফোনে সাহেদকে খোঁজেন।
কিছুক্ষণ পর মেহেরুন্নেসা আবার মন্ত্রীর কাছে গিয়ে বললেন, আজ পত্রিকা দেখেছ? স্ত্রীর কথা শুনে মন্ত্রী চমকে উঠলেন। বিস্ময়ের সঙ্গে তিনি বললেন, পত্রিকা! সকালে কখন দেখলে তুমি পত্রিকা! কী লিখেছে পত্রিকায়!
মন্ত্রীর চেয়েও বেশি বিস্মিত হলেন মেহেরুন্নেসা। তিনি ভাবতেও পারেননি মন্ত্রী তার কথায় এতটা বিস্ময় প্রকাশ করবেন। তার মানে কী! গত কয়েকদিন ধরে পত্রিকা পাচ্ছিলাম না কী কারণে? মন্ত্রী নিজেই কি লুকিয়ে রেখেছিলেন?
কিছুক্ষণ পর মেহেরুন্নেসা আবার বললেন, পত্রিকার কথা শুনে তুমি ওমন বিস্ময় প্রকাশ করলে কেন?
মন্ত্রী কথা ঘুরানোর জন্য বললেন, না মানে তুমি পত্রিকা কখন দেখলে?
আমি আজ অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠেছি। জানো, গত কয়েকদিন ধরে পত্রিকা পাচ্ছিলাম না। তাই ভাবলাম আগে আগে উঠে আজ হকারকে ধরব। হাঁটতে যাওয়ার নাম করে নিচে হাঁটাহাঁটি করলাম।
মন্ত্রী আবারও বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বললেন, তারপর! হকারকে পেলে?
হুম। হকারের কাছে জানতে চাইলাম, পত্রিকা সে ঠিকঠাক মতো দেয় কি না-
কী বলল?
বলল, ঠিকমতোই দিয়ে আসছে। কোনো রকম ত্রুটি করেনি। তাহলে পত্রিকাগুলো কোথায় গেল?
যাকগে, ওসব কথা রাখো। পত্রিকায় কী লিখেছে সেটা বলো।
মেহেরুন্নেসা সাহেদ করিম বলার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রী লাফিয়ে উঠলেন। বিস্ময় আর আতঙ্ক নিয়ে স্ত্রীর সামনে এগিয়ে গিয়ে বললেন, সাহেদ কী করেছে!
এত উত্তেজিত হচ্ছ কেন? বলছি।
আচ্ছা আচ্ছা...
তোমাদের সঙ্গে সাহেদ কোনো চুক্তি করেছিল নাকি!
হুম। করেছিল। করোনার ফ্রি টেস্ট করানোর বিষয়ে চুক্তি।
রিজেন্ট হাসপাতাল তো!
হুম।
এই দেখ তাকে নিয়ে পত্রিকায় কী লিখেছে।
পত্রিকা হাতে নিয়ে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে মন্ত্রী তাকিয়ে রইলেন।

গণমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখির পর সাহেদ করিমকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারের সিদ্ধান্তের কথা পুলিশ ও র‌্যাবের উপর মহলকে জানিয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় অভিযান। সারাদেশে পুলিশ ও র‌্যাব তৎপর। তৎপর মিডিয়াও। প্রতিদিনই তাকে নিয়ে নানা ধরনের কার্টুনসহ প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে। তাতে বলা হচ্ছে, সাহেদেও পুরো ব্যবসাই দাঁড়িয়েছে মিথ্যার উপর। সে যে হাসপাতাল করেছে তার বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলেও নিজের কোনো মিডিয়া নেই। অথচ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তার চলাফেরা, ওঠাবসা। তার দুই নম্বরি কাজকর্মেও খবর এখন পত্রিকায় উঠে আসছে। উঠে আসছে টিভির খবরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। তাকে নিয়ে টিভিগুলোতে থাকছে টকশো। সে এখন টক অব দ্য টাউন থেকে টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে গেছে। তাকে নিয়ে সর্বত্র আলোচনা। রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে, পাড়ায় মহল্লায় আলোচনার তুফান উঠছে। ছেলে-বুড়ো সবাই বলছে, দেশে এখন একটাই ইস্যু, সাহেদ।

বাংলাদেশে এই হলো আরেক সমস্যা। যখন যে ইস্যু আসে সেই ইস্যুটি তিতা না হওয়া পর্যন্ত কচলাতেই থাকে। দেশে যেন আর কোনো ইস্যু নেই। কেন? যখন ইস্যুটি তৈরি হচ্ছিল তখন কেন ধরা হলো না? আগে কেন সবাই সাহেদকে নিয়ে এতো নাচানাচি করল। অনেকে বলেন, সাহেদকে ছাড়া নাকি কোনো কোনো টিভি চ্যানেলে টকশোই শুরু হয় না! বাপরে! এত ক্ষমতা সাহেদের! এখন সেই সাহেদ কোথায়?

সাহেদ করিমের সঙ্গে বড় সাংবাদিকদের ছবি গণমাধ্যম লুকোবার চেষ্টা করলেও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়ে মন্ত্রী-এমপিদের ছবিও। সেই ছবিগুলো ভাইরাল হয়ে যায়। অতি সাধারণ মানুষও জানে, সাহেদের সঙ্গে কারা ওঠাবসা করেছে। এখন গরু খোঁজার মতো সাহেদকে খোঁজা হচ্ছে। পেলেই তাকে সুলে চড়ানো হবে-এমন অবস্থা।
সাহেদ করিমের সৃষ্টি হলো কীভাবে সে কথা কিন্তু কেউ বলছে না।

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২২

বিষাদ বসুধা: পর্ব ২০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৯

 

Header Ad

গোপনে দুইজনকে বিয়ে, কাউকেই অধিকার বঞ্চিত করেননি জান্নাতুল

ছবি: সংগৃহীত

একইসঙ্গে দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করছেন জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক নারী। স্ত্রীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেননি দুই স্বামীর কাউকেই। গোপনে মন জয় করে চলছিলেন দুই স্বামীর। প্রায় দুই বছর দুই স্বামীর সংসার করার পর অবশেষে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে হলফনামার মাধ্যমে গোপনে বিয়ে করেন রাজবাড়ী সদরের আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের আবু হানিফ শেখের ছেলে ইউটিউবার সাগর শেখ ও আলীপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাবা, মা ও ভাই প্রবাসে থাকায় বাবার বাড়িতে একাই বসবাস করতেন জান্নাতুল। সেখানে যাতায়াত করতেন স্বামী সাগর শেখ। সংসার জীবন ভালোই চলছিল এ দম্পতির। হঠাৎ জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় শ্বশুরবাড়ি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় সাগরের। এরই মধ্যে প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে পরিবারের সিদ্ধান্তে অন্য এক যুবককে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জান্নাতুল।

এদিকে স্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের বাড়িতে তুলে না নেয়ায় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। প্রথম স্বামী সাগরের দাবি, প্রায় দুই বছর ধরে তার সঙ্গেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক রেখে চলছিলেন জান্নাতুল।

স্ত্রীর পরিবার তাকে মেনে না নেয়ায় তার বোনের বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে একান্তে সময় কাটাতেন স্বামী-স্ত্রী। চলতি মাসের ২ নভেম্বর তারা একসঙ্গে নিজেদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন বলেও দাবি করেন সাগর।

তবে দুই সপ্তাহ আগে স্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় স্বামীর ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে পারেন সাগর। আর এতেই বাঁধে বিপত্তি। তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন জান্নাতুল। এখন দ্বিতীয় স্বামী নিয়েই সংসার করতে আগ্রহী তিনি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে ফিরে পেতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি আদালতে মামলা করেছেন সাগর।

সাগর শেখ বলেন, জান্নাতুল ও আমার বিয়ের বিষয়টি জান্নাতুলের মা ও বোন জানতো। বিয়ের পর আমাদের সংসার জীবন ভালোই কাটছিল। তবে হঠাৎ করে জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় তাদের বাড়িতে আমার যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বিয়ের চার মাসের মাথায় আমি ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির কাজে কয়েকদিনের জন্য রাজবাড়ীর বাইরে যাই।

কাজ থেকে এসে শুনি আমার স্ত্রী জান্নাতুল অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করেছে। আমি আমার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি। ওই ছেলের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক হয়নি। আমি তোমার স্ত্রী আছি, তোমারই থাকবো। আমার আম্মু দেশে আসলে আমি তোমার কাছে চলে আসবো।’

সাগর বলেন, ‘আমি জান্নাতুলদের বাড়ি যাতায়াত করতে না পারার কারণে বিভিন্ন সময় আমরা রাজবাড়ী শহরে আমার বোনের বাসায় ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতাম। ওর কলেজে আনা-নেয়াসহ সবকিছু আমিই করতাম। এমনকি গত ২ নভেম্বরও আমরা আমার বোনের বাসায় আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছি।

তবে বিবাহ বার্ষিকী পালনের দুদিন পরে আমি জানতে পারি জান্নাতুলের সঙ্গে ওই ছেলের (দ্বিতীয় স্বামীর) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চলছে। ওই ছেলে নিয়মিত জান্নাতুলের বাবার বাড়িতে এসে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাচ্ছে। এ বিষয়ে আমি জান্নাতুলকে প্রশ্ন করলে সে আমাকে গালাগালি করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে সে আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলেও জানায়।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি জান্নাতুলের মা প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছে। তিনিও এখন আমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে অস্বীকার করছেন। অথচ তার মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেম থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত সবকিছুই তিনি জানতেন।

এখন বাধ্য হয়ে আমি আমার স্ত্রীকে ফিরে পেতে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গত ১১ নভেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছি। এছাড়া ১৭ নভেম্বর রাজবাড়ীর বিজ্ঞ ১নং আমলি আদালতে মামলা করেছি।’

সাগর আরও বলেন, ‘আমাকে ডিভোর্স না দিয়ে আমার স্ত্রী অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে আমাকেও ম্যানেজ করে চলেছে, একইভাবে তার দ্বিতীয় স্বামীকেও ম্যানেজ করে চলেছে।

এটা আইন ও ধর্মীয় দুই দিক থেকেই অপরাধ। এছাড়া আমি এ পর্যন্ত আমার স্ত্রীর পেছনে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। তারপরও আমি আমার স্ত্রীকে ফেরত চাই। তাকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।’

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজী হননি জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। তবে তার দাবি, জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে তিনি জানতেন। সাগরের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তিনি জানতেন না।

জান্নতুলের দ্বিতীয় স্বামীর বাবা বলেন, ‘কোন এক সূত্রে আমার শ্বশুর জান্নাতুলদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তাকে পছন্দ করে। পরে আমি গিয়ে তার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বিয়ের দিন ধার্য হয়। বিয়ের আগের দিন সাগর নামে এক ছেলে আমার ছেলেকে ফোন করে বলে জান্নাতুলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক আছে।

সে জান্নাতুলের সঙ্গে নিজের একটি ছবিও আমার ছেলেকে পাঠায়। এরপর আমি ওই এলাকায় আমার আত্মীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের কোন সম্পর্ক ছিল না। এছাড়া জান্নাতুলকেও আমি সরাসরি প্রশ্ন করলে সেও সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে।

পরে ঘরোয়া আয়োজনে জান্নাতুলের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে হয়। এখন সাগর নামে ছেলেটি জান্নাতুলকে তার স্ত্রী হিসেবে দাবি করছে। আমি যতদূর জেনেছি সাগরের স্ত্রী ও সন্তান আছে। এখন বিষয়টি আইনগতভাবেই সমাধান হবে।

আর জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে কথা বলতে তার বাবার বাড়িতে গেলে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি।’

বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে তার মা হাচিনা বেগম বলেন, ‘সাগরের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল৷ তবে বিয়ের দুই মাসের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। আমার মেয়ে তো ছোট বুঝে নাই, যে কারণে সেসময় ওরা ডিভোর্সের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছে। এর ৪/৫ মাস পরে আমার মেয়ের আবার বিয়ে হয়েছে। সাগর আমার মেয়েকে চাপে ফেলে এতোদিন তার সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য করেছে।’

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক জানান, ‘সাগর ও জান্নাতুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তার নোটিশের একটি কপি ইউনিয়ন পরিষদে আসার কথা। এরকম কোন কপি কখনো পাননি তারা।’

তিনি বলেন, ‘সাগর আমার ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছে। আমিও খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সাগর জান্নাতুলের প্রথম স্বামী। সে সাগরকে তালাক না দিয়েই বিয়ের চার মাসের মাথায় অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করে। প্রায় দুই বছর সে চালাকি করে দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করেছে। সাগরের কাছ থেকে জান্নাতুল অনেক টাকা-পয়সা খেয়েছে বলেও আমি জানতে পেরেছি।’

আবু বক্কার বলেন, ‘সাগরের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি জান্নাতুলের বাবাকে নোটিশের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকি। তবে নোটিশ পেয়ে তিনি তার ছোটভাই ও তাদের এলাকার ইউপি সদস্য আবুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে এসে বলেন, আমি যেন পরিষদে বসে বিষয়টি সমাধান করে দেই। তবে এর ১/২ দিন পরে তিনি জানান, এ বিষয়ে তারা বসতে চান না।

আইনগতভাবে তারা বিষয়টি সমাধান করতে চান। পরে আবার তারা বসতে সম্মত হলে জান্নাতুল ও তার বাবা এবং তাদের এলাকার ইউপি সদস্য আবুল কালামসহ পরিষদের অন্য সদস্যদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদে বসেছিলাম। সাগরও সেখানে ছিল। তবে সেখানে জান্নাতুল বলে দিয়েছে সে কোনভাবেই সাগরের সঙ্গে ঘর সংসার করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা নির্যাতিত হয়। কিন্তু ছেলেরা যে কতোটুকু নির্যাতিত হয় তা এই সম্পর্কের জের দেখলে বোঝা যায়। আমাদের সমাজে ছেলেরা আরও বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। সেটা নীরবে নিভৃতে ছেলেরা সহ্য করে যাচ্ছে। আমি আশা করবো আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা বিষয়টি তুলে ধরবেন।

আপনাদের সংবাদের মাধ্যমে মানুষ যাতে সচেতন হতে পারে। আজকে আমার ইউনিয়নে এমন ঘটনা ঘটেছে। আর কোন ইউনিয়নে যেন এমন ঘটনা কোনদিন না ঘটে।’

Header Ad

শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

২৪ এর গনঅভূ্থানে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী, শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে যান বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন।

এ সময় মোবাইল ফোনে লাউডস্পিকারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমান বলেন, আব্দুল্লাহ দেশের জন্য মানুষের জন্য মানবতার কল্যাণের জন্য জীবনকে উৎস্বর্গ করে আল্লাহর দরবারে চলে গেছেন, আল্লাহ তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করুন। শহীদরা মরে না। তারা আল্লাহর জীম্মায় জীবন্ত থাকে। এ সময় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তিনি।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার বড় আঁচড়া গ্রামে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন আব্দুল্লাহর বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের খোঁজ খবর নেন,কবর জিয়ারত করেন এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।

এর আগে তিনি নাভারণ দারুল আমান ট্রাষ্টে ওলামা সম্মেলনে যোগদান করেন। পরে ২০১৬ সালে গুম হওয়া ইসলামি ছাত্র শিবিরে নেতা রেজোয়ানের বাড়িতে যান এবং খোঁজ খবর ও সমবেদনা জানান।

এসময় তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মৃত্যু বরনকারী সকলে ন্যায় বিচার পাবেন বলে পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেন। এবং গনঅভূ্থানে নিহত সকল পরিবারের সাথে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলাম আছে থাকবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোরের জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা গোলাম রসূল, সাবেক জেলা আমীর মাওলানা হাবীবুর রহমান, জেলা জামায়াতের নেতা মাওলানা আবু জাফর, মাওঃ শিহাব উদ্দিন শার্শা থানা আমীর রেজাউল ইসলাম, সেক্রেটারী মাওলানা ইউসুফ আলী ও ঝিকরগাছা থানা আমীর মাওলানা আসাদুল আলম প্রমূখ।

Header Ad

বিরামপুরে আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

দিনাজপুরের বিরামপুরে বিশনি পাহান (৫৫) নামের এক আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের ময়না মোড় এলাকার ধানক্ষেত থেকে ওই নারীর হাতবাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত বিশনি পাহান উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের বেণুপুর গ্রামের সাধন পাহানের মেয়ে।

নিহতের ভাই চরকা পাহান বলেন, আমার ছোট বোনের স্বামী বিশনি পাহানকে ছেড়ে চলে গেছেন। সে প্রতিরাতেই নেশা করতো। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই আমার বাড়িতে থাকতো আমার বোন। আমার বোন এলাকায় মানুষের জমিতে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। শুক্রবার বিকেলে এলাকার এক ব্যক্তির জমিতে ধান কাটার কাজ শেষ করে আর বাড়িতে ফেরেননি। রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। শনিবার সকালে ধানক্ষেতে হাতবাঁধা অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।

বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক জানান, এলাকাবাসীর দেওয়া খবরে ঘটনাস্থল থেকে আদিবাসী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে তাকে কে বা কাহারা হত্যা করেছে। তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গোপনে দুইজনকে বিয়ে, কাউকেই অধিকার বঞ্চিত করেননি জান্নাতুল
শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন
বিরামপুরে আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার
বিএনপির কাঁধে অনেক দ্বায়িত্ব: তারেক রহমান
'জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত'- তোফায়েল আহমেদ
৩ মাসে জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা : জ্বালানি উপদেষ্টা
জুটি বাধলেন মিঠুন চক্রবর্তী-আফসানা মিমি
দেশ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই : তারেক রহমান
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের আশঙ্কা
অক্টোবরে সড়কে প্রাণ গেছে ৪৭৫ জনের
গায়ানায় দলের সঙ্গে যোগ দিলেন সাকিব
আইপিএল নিলামের আগেই নিষিদ্ধ হলেন ভারতের ২ ক্রিকেটার
গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া
পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...
অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী
বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ
মাকে হত্যার পর থানায় হাজির ছেলে
৮ ক্রিকেটারসহ ৯ জনকে নিষিদ্ধ করলো বিসিবি