শনিবার, ১০ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস

 বিষাদ বসুধা

অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে আরেফিনের পেট খুব ভালো করে ওয়াশ করা হয়। অতিরিক্ত মদপানের কারণে তিনি চেতনা হারিয়েছিলেন। মোহিনীকে সে কথা চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন। তার অনুমতি নিয়েই আরেফিনকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়।

টানা দুইদিন এক রকম চোখ বন্ধই ছিল আরেফিনের। মাঝেমধ্যে চোখ খুললেও কাউকেই তিনি চিনতে পারেননি। মুখে কিছু খেতে পারেননি। টানা স্যালাইন চলেছে। এখন তিনি কিছুটা সুস্থ। তাকে কেবিনে আনা হয়েছে। স্যালাইন এখনো চলছে। আরো এক দুদিন স্যালাইন দেয়া লাগতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

মোহিনী একটা টুল টেনে আরেফিনের মাথার সামনে বসেন। তার কপালে হাত রাখেন। তারপর চুলে বিলি কেটে দেন। মোহিনীর ভালোবাসার পরশ টের পান আরেফিন। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে যান। এতো কিছুর পরও মোহিনীর ভালোবাসার এতোটুকুও যেন কমতি নেই। আবেগে তার চোখে পানি আসে। চোখের দুই পাশ দিয়ে পানি নেমে যায় দুইদিকে।

আরেফিনের চোখে পানি দেখে মোহিনী আবেগজড়ানো কণ্ঠে বললেন, তুমি কাঁদছ কেন?

আরেফিনও আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বললেন, আমি দুঃখিত মোহিনী! সত্যিই দুঃখিত। আমি ভুল করেছি। এ রকম ভুল আর হবে না। আমি তোমার হাত ছুঁয়ে বলছি।

ধন্যবাদ। 

মোহিনী আরো কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলতে পারেননি। তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে গেলে আর কথা বলতে পারেন না। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। মোহিনী মনে মনে বলেন, সরি বলার পর আর কী থাকে! সরি বলা মানে একটা মানুষের সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া। তারপরও মুখের ওপর কথা শুনানো ভালো মানুষের কাজ নয়। আর মোহিনীর পক্ষে ওতোটা খারাপ হওয়া সম্ভব নয়।

মোহিনীকে চুপ থাকতে দেখে আরেফিন বললেন, মোহিনী কিছু বলো! তুমি কিছু না বললে যে আমি স্বস্তি পাচ্ছি না।

কি বলব বলো? আমার কি বলার আছে? তুমি তো সরি বলেছ!

আমাকে তুমি ক্ষমা করেছ?

তুমি সরি বলার পর আমি সবকিছু ভুলে গেছি। আমার আর কিছুই মনে রাখিনি।

আরেফিন মোহিনীর হাতটা বুকের মধ্যে চেপে ধরে বললেন, আমি কোনো দিন তোমাকে ঠকাবো না। একথাটুকু তুমি শুধু বিশ^াস কোরো মোহিনী। তুমি ছাড়া আমি এই পৃথিবীতে দ্বিতীয় কাউকে আমার জীবনে স্থান দেবো না। এ আমার মনের কথা।

মোহিনী নিজেও জানেন আরেফিন আর যা-ই করুক ভালোবাসার জায়গায় তিনি আর কাউকে শেয়ার দেবেন না। একমাত্র মোহিনীই তার ভালোবাসা। তার জীবনের ধ্যানজ্ঞান। কিন্তু তার প্রকাশ ভঙ্গির কারণে সেটা সব সময় বোঝা যায় না। আর চাপা স্বভাবের মানুষগুলো বুঝি এমনই। তাদের ভালোবাসার গভীরতা বেশি। প্রকাশ কম।

মোহিনী নিজেই নিজের কিছু দোষক্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। তিনি জেনেশুনেই তো আরেফিনকে ভালোবেসেছেন; বিয়ে করেছেন। এতোদিনেও তিনি আরেফিনকে রিড করতে পারলেন না কেন? কেন আরেফিনের মন বুঝতে পারলেন না? এটা মোহিনীর সীমাবদ্ধতা। এখানে আরেফিনের কোনো দোষ নেই। আরেফিনের সমস্যা অন্য জায়গায়। সেগুলো শোধরানোর জন্য শুরু থেকেই তাকে বলতে হতো। শুরুতে ছাড় দেয়ার কারণে তার সমস্যাগুলো রয়েই গেছে।

একটা মানুষের মানসিকতা তৈরি হয় তার পরিবার থেকে। আরেফিন যে পরিবার থেকে উঠে এসেছে সে পরিবারের মানসিকতা তার ভেতরে রয়ে গেছে। ফলে দুজনের মধ্যে মানসিক একটা দূরত্ব রয়েই গেছে। মোহিনী অনেক বেশি মানবিক হওয়ার কারণে দ্বন্ধটা ওতো প্রকাশ পায়নি। অনেক কিছুই মোহিনী মেনে নিয়েছেন। কিন্তু সব সময় কি আর মানা যায়! মোহিনীও তো রক্তেমাংসের মানুষ। তিনি তো আর ফেরেস্তা নন।

তবে মোহিনীর সবচেয়ে বড় গুণ তিনি খুব মানবিক। মনটা খুব নরম। তিনি কোনো কিছু মনের মধ্যে রাখেন না। সেই সঙ্গে তিনি ক্ষমা করতে জানেন। কেউ অন্যায় করলেও সরি বললে, ক্ষমা করে দেন। তার অফিসের সবাই তাকে এজন্যই খুব পছন্দ করে। তাকে ভালোবাসে।

মোহিনীর মতো মানসিকতা সব মানুষের হয় না। হাজারকে এক দুজন হয়ত পাওয়া যায়। সেই মোহিনী আরেফিনের জীবনে এসেছে এক সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে। আর তাকে তিনি হেলায় হারাচ্ছেন। আরেফিন আসলে বুঝতেই পারছেন না কাকে তিনি অবহেলা, অবজ্ঞা করছেন। তিনি যদি বুঝতে পারতেন তাহলে হয়ত মোহিনীকে মাথায় করেই রাখতেন।

মোহিনী শুধু চেয়েছেন ওর কাছে ভালোবাসা। অবহেলা নয়। সেটা দিতেও আরেফিন কার্পণ্য করছেন। এটা নিশ্চয়ই কোনো মানুষের সহ্য হওয়ার নয়। জীবন শুরুর আগেই অবশ্য মোহিনী তাকে পই পই করে বলেছেন, দেখ তুমি আমাকে আর যাই কর, অবহেলা কোরো না। আমি মোটেই অবহেলা সহ্য করতে পারি না।

হাসপাতালের বিছানায় আরেফিনকে রেখে তিনি সেই অবহেলার কথা স্মরণ করাবেন না। বাসায় যাওয়ার পর শেষবারের মতো কথাগুলো বলবেন। সেটাই হবে মোহিনীর শেষ কথা বলা। এরপরও যদি তিনি একই কাণ্ড করেন তাহলে তিনি আরেফিনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। যে সম্পর্ক রাখা না রাখা সমান; সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেই বা কি হবে!

মোহিনী বিয়ের পরেও আরেফিনকে দু একবার তার শর্তের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আরেফিন গায়ে লাগাননি। তার ভাবখানা এমন যে, মোহিনী তার বিয়ে করা বউ। কাজেই এতো তোয়াজ করার কি আছে? কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা যে তোয়াজ করার নয়, ভালোবাসার তা সে বুঝতে পারছেন না।

অতীতের কিছু কথা বার বার মনে পড়ছে মোহিনীর। তিনি কয়েকবার বলতে যেয়েও বলতে পারেননি। চক্ষু লজ্জা বলে একটা কথা আছে। মোহিনীর সেগুলো খুব বেশি মাত্রায় আছে। সবকিছু নির্লজ্জের মতো তিনি বলতে পারেন না। তিনি তা তার পরিবার থেকে শেখেনি। অথচ সামান্য কারণে আরেফিন চোখ উল্টে ফেলে। মুখের ওপর কথা বলেন। এ ধরনের মানসিকতার মানুষকে তিনি মোটেই পছন্দ করেন না।

আরেফিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। উচ্চ শিক্ষা মানুষকে সভ্য করে। মানুষের মানসিকতার বিশাল পরিবর্তন ঘটায়। নীচু পরিবার থেকে এসেও মানুষ পারিপার্শ্বিক গণ্ডি থেকে শিক্ষা নেয়। মোহিনীর ধারনা ছিল, আরেফিন নিশ্চয়ই সেই শিক্ষা নিয়েছেন। কিন্তু পরে তার কীর্তিকলাপ দেখে চরম হতাশ হলেন। তাকে সে কথা আকারে ইঙ্গিতে বললেও তিনি কানে তুললেন না। এতে ভীষণ মন খারাপ হয় মোহিনীর। সেই কথা মনে পড়লে এখনও তার খারাপ লাগে। তিনি হতাশার সঙ্গে বলেন, আমি মানুষ চিনতে এতোবড় ভুল করলাম!

আরেফিনকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর বিষয়ে মোহিনীর মা বাবা কিছুই জানতেন না। তারা যখন জানতে পারলেন তখন আর দেরি না করে হাসপাতালেই তাকে দেখতে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে তাদেরকে দেখতে প্রস্তুত ছিল না মোহিনী। কারণ, আরেফিনকে হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে হাজারটা প্রশ্ন করবেন। সেই প্রশ্নের জবাব মোহিনীর কাছে নেই। তিনি মা বাবার কাছে মিথ্যা বলতে পারবেন না।

মোহসীন আহমেদ ও আনোয়ারা বেগমকে হাসপাতালে দেখে মোহিনী বললেন, তোমরা আবার কেন এসেছ?

বারে! আরেফিন অসুস্থ। আমরা দেখতে আসব না!

তেমন গুরুতর কিছু না।

গুরুতর না হলে হাসপাতালে কেন ভর্তি করালি?

মোহিনী চুপ করে রইলেন। কোনো জবাব দিলেন না। তিনি আনোয়ারা বেগমের পাশে গিয়ে বসলেন। প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য তিনি তার মাকে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। তারমধ্যে পারিবারিক এবং আনোয়ারা বেগমের শারীরিক বিষয় ছিল। তিনি মেয়ের প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তবে মোহসীন আহমেদ দমলেন না। তিনি আরেফিনের কাছে গিয়ে বসলেন। তার কাছে জানতে চাইলেন, কি সমস্যা হয়েছিল আরেফিন?

আরেফিন কিছু বলার আগেই মোহিনী বললেন, বাবা বললাম তো তেমন কিছু না। পেটের সমস্যা হয়েছিল। এখন ঠিক আছে। আমরা কাল সকালেই চলে যাবো।

মোহসীন আহমেদ মেয়ের দিকে তাকালেন। তারপর চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, আচ্ছা আচ্ছা! বুঝতে পারছি।

মোহসীন আহমেদ আর কথা বাড়ালেন না। তিনি মোহিনীর দিকে তাকিয়ে আসল রহস্য বোঝার চেষ্টা করেন। মোহিনীও তার চেয়ে কম নয়। তিনি তার বাবার চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছেন যে, তিনি তাকে রিড করার চেষ্টা করছেন। তিনি তার বাবাকে বোঝার সময়ই দিলেন না। তিনি বললেন, অনেক রাত হয়েছে। কাল তো তোমার আবার অফিস আছে।

মোহসীন আহমেদ তখন বলতে বাধ্য হলেন, হ্যাঁ আমাকে যেতে হবে।

আনোয়ারা বেগমও সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। তাদের বিদায় দিয়ে এক ধরনের স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়েন মোহিনী।  

সকাল সকালই হাসপাতাল থেকে আরেফিনকে নিয়ে বিদায় নেন মোহিনী। গুলশান দুই থেকে বনানী খুব বেশি দূরের পথ নয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যোই তারা বাসায় পৌছেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন, আজ ওরা কোথাও যাবেন না। বাসায় থাকবেন। দুজন আড্ডা দেবেন, গল্প করবেন। মোহিনী খুব ভালো কফি বানায়। ওর কফি খেয়ে খুব প্রশংসা করেন আরেফিন। আজ বাসায় ফিরেই আরেফিনকে তিনি কফির অফার করেন। সঙ্গে সঙ্গে সে ইতিবাচক মাথা নাড়ে।

খাবার টেবিলের দুই পাশে দুজন বসে মজা করে কফি খান। কফি খেতে খেতে মোহিনী আলোচনা শুরু করেন। তিনি আরেফিনকে শর্ত দেন, আজ আমরা খোলামেলা আলোচনা করব। এতে বিন্দুমাত্র মিথ্যা থাকতে পারবে না। আরেফিন তাতে সম্মতি দেন। তখন মোহিনী বলেন, তার যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে তিনি তা শোধরাবেন। আবার আরেফিনেরও যদি কোনো সমস্যা থাকে তা তিনিও শুধরে নেবেন। তাছাড়া দুজনের দাম্পত্য জীবন সুখের হবে না। সারাক্ষণ ঝগড়াঝাটি মোটেই ভালো লাগে না।

তারা দুজন যথেষ্ট আয় করেন। থাকা খাওয়া নিয়ে ওদের ভাবতে হয় না। তারা পরস্পরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। তারপরও কেন ওদের সংসার আনন্দের হবে না?

মোহিনী কথা বলা শুরু করলে আরেফিন তাতে আপত্তি জানিয়ে বললেন, এখন না বললেই নয়? সবে তো হাসপাতাল থেকে এলাম। এখন একটু বিশ্রাম নিই। তোমারও তো ভালো ঘুম হয়নি। আমরা সন্ধ্যায় আলোচনা করি!

মোহিনী বললেন, না। এতো বিশ্রাম নেয়ার কিছু নেই। আলোচনা এখনই করতে হবে। তোমার সমস্যা কি সেটা আমাকে খোলাখুলি বলো। আমাকে জানতে হবে। না জানলে সমাধান করা সম্ভব নয়। আরেফিন, তুমি খুব ভালো করেই জানো, আমি কোন পরিবেশে বড় হয়েছি। আমি জীবনে কখনোই কোনো সমস্যা অনুভব করিনি। নিজের হাতে কখনো রান্না করিনি। বাজার করিনি। সংসার নিয়ে কোনো রকম ভাবনাই আমাকে ভাবতে হয়নি। আমার জীবন তোমার সঙ্গে জড়াবে তাও কখনো ভাবিনি। বিধাতার কি খেয়াল জানি না। তোমার সঙ্গে যখন আমার জীবন জড়িয়ে গেছে তখন থেকে আমি তোমার মতো করে চলতে চেয়েছি। তোমাকে সবটুকু ভালোবাসা দিয়েছি। তোমার যাতে ভালো লাগে সে কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু আমি লক্ষ্য করলাম, তুমি সব সময় আমাকে এড়িয়ে চলছ। আমি যা করতে বলেছি তার উল্টোটা করেছ। আমি যা অপছন্দ করি তাই তুমি করো। এ কারণ কি তুমি বলো তো? খোলাখুলি বলো। একটি শব্দও মিথ্যা বলবে না। আমাদের ভুলভ্রান্তিগুলো আমাদের এখনই শোধরাতে হবে। তা না হলে অনেক বড় সমস্যা হবে। বিয়ে যখন করেছি তখন একটা সুন্দর, আনন্দময় সংসার আমি করতে চাই।

আরেফিন আমতা আমতা করে বললেন, আমি আসলে তোমাকে খুলে বলতে পারিনি। এটা আমার দুর্বলতা। তুমি অনেক বড় পরিবারের মেয়ে। আমি খুবই ছোট পরিবারের। তোমার সঙ্গে তুলনা করলে আমার অবস্থা তোমার একশ’ ভাগের এক ভাগ। আমার সব সময় একটা ভয়ের মধ্যে দিন কাটে। তুমি কি পছন্দ করো আর কি অপছন্দ করো তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় থাকি। তুমি কিসে মন খারাপ করো, আর কিসে রাগ করো তা বুঝতে পারি না। তোমার পছন্দ অপছন্দের বিষয়গুলো আমি ঠিক ধরতে পারি না। আসলে আমি তো সৌভাগ্যক্রমে তোমাকে পেয়েছি। তাই তোমাকে হারানোর ভয় সারাক্ষণ আমাকে অস্থির করে রাখে। তুমি যদি রাগ করে চলে যাও?

কি বলো এসব তুমি! আমার আচার আচরণে সে রকম কিছু পেয়েছ? আমি বিনা কারণে রাগ করেছি? তোমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছি?

না করোনি।

তাহলে তুমি এসব কেন ভাবো?

জানি না। আমার খুব ভয় হয়। ভয়ের কারণে ঠিকমতো তোমাকে আদরও করতে পারি না। সেক্স করতে গেলেও ভয় লাগে। তুমি কতটুকু কি পছন্দ করো; আমার কোথাও ভুল হচ্ছে কিনা!

শোন, এসব আলাপ বাদ। তোমার যা ভালো লাগে খোলাখুলি বলবে। জীবনটা কয়দিনের বলো! তোমাকে ভালোবেসেছি বলেই তো তোমাকে বিয়ে করেছি। আমি কি অন্য কাউকে ভালোবাসি? নাকি অন্য কোরো সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছি?

না। তা রাখোনি।

আমাকে বিশ্বাস করো তো?

অবশ্যই।

তাহলে আমার হাতে হাত রাখো। শপথ করো, আমাকে কোনো কিছু গোপন করবে না। যা ভালো লাগে খুলে বলবে।

আচ্ছা বলব।

প্রমিজ!

প্রমিজ।

মোহিনী আরেফিনকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন। এতে আবেগাপ্লুত হন আরেফিন। তিনিও মোহিনীকে আদর করেন।

সকালে অফিসে গিয়ে বসতেও পারেননি আরেফিন। এমন সময় তার অফিসের এক সহকর্মী তার কাছে ছুটে এসে। তাকে জানায়, বড় স্যার আপনাকে এখনই ডেকে পাঠিয়েছেন। কি যেন জরুরি ব্যাপার আছে। স্যার, এসেই আপনার খোঁজ নিয়েছেন। আপনি অফিসে এসেছেন কিনা জানতে চেয়েছেন।

আরেফিনের বস ডেভিড লকউড জাতিসংঘ ঢাকা অফিসের স্থায়ী প্রতিনিধি ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর সমন্বয়ক। তার দপ্তরেই আরেফিন চাকরি করেন। আরেফিন আর চেয়ারে বসেননি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার বসের রুমে যাওয়া মাত্র ডেভিড লকউড বললেন, আরে! আপনি কখন এলেন? বসেন বসেন! আপনার সঙ্গে জরুরি আলাপ আছে।

জি স্যার।

আরেফিন চেয়ারে বসে। লকউড অফিস সহকারিকে কফি দিতে বলে হাতের কাজ দ্রুত শেষ করেন। আরেফিন মনে মনে ভাবেন, জরুরি আলাপটা কি? রাতের মধ্যে কি এমন ঘটল যে সকালে অফিসে এসেই আমার সঙ্গে আলাপের প্রয়োজন হলো! নিশ্চয়ই নেতিবাচক কিছু ঘটেনি। স্যারের মুড দেখে তা বোঝা যাচ্ছে। তিনি গুড মুডে আছে তা তার চেহারায় স্পষ্ট। এর মধ্যে অফিস সহকারি কফি দিয়ে যায়। লকউড ইশারায় আরেফিনকে কফি খেতে বলেন। তিনি কম্পিউটারে টাইপ করে কিছু ম্যাসেজও পাঠান। তারপর কফির মগ হাতে নিয়ে চুমুক দেন। দুতিনবার চুমুক দেয়ার পর বলেন, আরেফিন আপনাকে আমরা একটা প্রশিক্ষণ কর্মশালায় পাঠাতে চাই। আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে। আমার মনে হয়, এটা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হবে।

জি স্যার। স্যার, কর্মশালাটি কোথায় হবে?

চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালা। আমাদের অনেক কাজে লাগবে। আপনার নাম আমি হেডকোয়ার্টারে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন শুধু আপনার সম্মতিপত্রে সই করতে হবে। আর কিছু না।

লকউড সম্মতিপত্রের একটি ব্ল্যাঙ্ক কপি আরেফিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন, এই নিন। আপনি সই করুন।

আরেফিন কাগজটি নিজের কাছে নিয়ে সই করে আবার লউউডের কাছে দিলেন। তিনি ফাইলে রেখে বললেন, আমি আজই হেডকোয়ার্টারে পাঠিয়ে দেবো। আর শোনেন, আপনি কিন্তু ভালো করছেন। বলতে পারেন তারই স্বীকৃতি স্বরূপ আপনাকে চীনে পাঠানো। সাধারণত, উপর লেভেল থেকে এ ধরনের কর্মশালায় পাঠিয়ে থাকি। এটা আপনার জন্য একটা বিরাট সুযোগ। এই সুযোগ হাতছাড়া করা মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা। আপনি নিশ্চয়ই নিজের ক্ষতি চাইবেন না! আর নিজের ভালোটা তো পাগলেও বোঝে। কি বলেন?

জি স্যার। থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। আপনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। আপনি না হলে এই সুযোগ কখনোই পেতাম না।

না না! এটা আপনি অর্জন করেছেন। আপনি ভালো কাজ করছেন বলেই আমি আপনাকে সুযোগ দিতে পেরেছি। আরো ভালোভাবে কাজ করুন। অবশ্যই আপনি অনেক দূর যাবেন।

ধন্যবাদ স্যার। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার শুভ হোক। এখন তাহলে যান। কাজ করেন।

আরেফিন নিজের রুমে যান। তার খুশি খুশি ভাব দেখে তার সহকর্মী রায়হান জহির বলল, কি ব্যাপার আরেফিন ভাই! আপনাকে খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে! কোনো আনন্দের সংবাদ আছে নাকি?

হুম। আনন্দের সংবাদই বটে!

তা মিষ্টিটিষ্টি খাওয়ান। মিষ্টি খাইয়ে আনন্দের সংবাদটা দিন!

খাওয়াবো খাওয়াবো। অবশ্যই মিষ্টি খাওয়াবো।

সংবাদটা কি শুনি।

এখনই বলা যাবে না। পরে বলব। দুতিন দিন পর।

সে কী! সুসংবাদটা এখন বলা যাবে না!

নারে ভাই। স্যারের নিষেধ আছে।

হতাশার সঙ্গে রায়হান জহির বলল, হুম! কোনো মানুষ সুসংবাদ কাউকে দেয় না; তা এই প্রথম দেখলাম। না বললে আর কী!

আরেফিন দেখলেন, রায়হান জহির খুব মন খারাপ করেছে। তিনি তার কাছে এগিয়ে গিয়ে কাঁধে হাত রাখলেন। তারপর বললেন, বলবো ভাই, বলবো। সময় হলে নিশ্চয়ই বলব। তুমি মনে কিছু নিও না।

রায়হান জহির আর কোনো কথা বলল না। সে নিজের কাজে মন দেয়। আরেফিনও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

আরেফিন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর্মশালায় যোগ দেয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। মনে মনে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে মোহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। সম্মতিপত্রে সই করে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে পাঠানোর জন্য সে মোহিনীকে বিষয়টা জানায়। এটা শোনার পর মোহিনী তেলেবেগুনে জ¦লে উঠেন। তিনি কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারেন না। তিনি তাকে বললেন, তুমি দুই মাসের জন্য দেশের বাইরে যাবে তা আমাকে আগে থেকে বলোনি কেন? আর তোমার যাওয়া কি এতোই প্রয়োজন ছিল? না গেলে কি হতো? তোমার চাকরি চলে যেত। কাজটা তুমি ঠিক করোনি। মোটেই ঠিক করোনি।

 

 

আরও পড়ুন

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

 

 

Header Ad
Header Ad

শাহবাগে বিক্ষোভে উত্তাল জনতা, খালেদা জিয়ার উপস্থিতি চায় ইনকিলাব মঞ্চ

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে উত্তাল আন্দোলন চলছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার সারা দিনব্যাপী এই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা ‘ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’ সহ নানা স্লোগানে মুখরিত করে তোলে শাহবাগ চত্বর।

এই প্রেক্ষাপটে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি এক আবেগঘন আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে শাহবাগে আসার জন্য।

হাদি নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে লেখেন— “বাংলাদেশের বেগম জিয়া, শাহবাগে হাজারো শহিদ পরিবার ও সারা বাংলাদেশ আপনার অপেক্ষায়।”

অন্য একটি পোস্টে তিনি আরও লেখেন— “জুলাই যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আপোষহীন নেত্রী বেগম জিয়ার কাছে যেতে চাই আমরা শাহবাগের দাওয়াত নিয়ে। কাইন্ডলি সংশ্লিষ্ট কেউ হেল্প করুন। উনি আমাদের সার্বভৌম অভিভাবক।”

শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে ফোয়ারার পাশে তৈরি করা মঞ্চ থেকে আন্দোলনের নতুন ধাপ হিসেবে মোড় অবরোধের ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

ঘোষণার পরপরই আন্দোলনকারীরা মিছিলসহ শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় এবং অবরোধ শুরু করে।

Header Ad
Header Ad

১৭ বছর পর দেশে ফিরে মসজিদে জুমার নামাজ পড়লেন জোবাইদা রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। ছবি: সংগৃহীত

১৭ বছর পর স্বদেশে ফিরে প্রথমবারের মতো মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। আজ (শুক্রবার) তিনি রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বর মসজিদে সশরীরে জুমার নামাজে অংশ নেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জোবাইদা রহমানের নামাজ আদায়ের কিছু ছবি পোস্ট করে লেখেন— "ধানমন্ডি ৭ নম্বর মসজিদে আজ জুমার নামাজ আদায় করেছেন তারেক রহমানের সহধর্মিণী জোবাইদা রহমান।"

এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার নাসির, তার স্ত্রী ব্যারিস্টার মেহনাজ মান্নানসহ আরও কয়েকজন।

২০০৮ সালে দেশ ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি জমানো জোবাইদা রহমান চলতি বছরের ৬ মে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফেরেন। ফিরে আসার পর থেকে তিনি গুলশানের ফিরোজা বাসভবনে অবস্থান করছেন। মাঝে মাঝে তিনি বাবার বাড়ি ধানমন্ডির মাহবুব ভবনেও যাতায়াত করছেন।

জোবাইদা রহমানের এই জুমার নামাজে অংশগ্রহণ ও জনসম্মুখে উপস্থিতি বিএনপির রাজনৈতিক পরিসরে তার সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের একটি বার্তা হিসেবেও দেখা হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Header Ad
Header Ad

ভারতে ইউটিউবে বন্ধ যমুনা-বাংলাভিশনসহ ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল

ছবি: সংগৃহীত

ভারত সরকার জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলার উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে ইউটিউবে বাংলাদেশের অন্তত চারটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার সীমিত করেছে। শুক্রবার (৯ মে) স্থানীয় ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ সংস্থা ডিসমিস্ল্যাব বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বন্ধ হওয়া চ্যানেলগুলো হলো— যমুনা টিভি, একাত্তর টিভি, বাংলাভিশন, এবং মোহনা টেলিভিশন।

ভারতীয় ব্যবহারকারীরা এখন ইউটিউবে এসব চ্যানেলে প্রবেশ করতে গেলে একটি সতর্কবার্তা দেখতে পাচ্ছেন— "এই ভিডিওটি বর্তমানে এই দেশে প্রদর্শনের জন্য অনুমোদিত নয়, কারণ এটি জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার ভিত্তিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত।"

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০-এর ৬৯(ক) ধারা অনুযায়ী, সরকার জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, জনশৃঙ্খলা বা রাষ্ট্রের অখণ্ডতা বিঘ্নিত হয়—এমন কনটেন্ট বা চ্যানেল বন্ধ করার নির্দেশ দিতে পারে। সেই ধারার অধীনেই ইউটিউবকে টেকডাউন অনুরোধ পাঠানো হয়েছে বলে জানায় ডিসমিস্ল্যাব।

ভারতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো বাংলাদেশ সরকার, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বা ইউটিউব কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও মিডিয়া কনটেন্টের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ থেকেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে গণমাধ্যম কূটনীতি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

শাহবাগে বিক্ষোভে উত্তাল জনতা, খালেদা জিয়ার উপস্থিতি চায় ইনকিলাব মঞ্চ
১৭ বছর পর দেশে ফিরে মসজিদে জুমার নামাজ পড়লেন জোবাইদা রহমান
ভারতে ইউটিউবে বন্ধ যমুনা-বাংলাভিশনসহ ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল
আটকের পরও যে ফোনে ছেড়ে দেওয়া হয় আবদুল হামিদকে
নওগাঁয় দুলাভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে গ্রেপ্তার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা
বাংলাদেশ সফরে আসছে না ভারত, অনিশ্চিত এশিয়া কাপ
আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল শাহবাগ, জনস্রোতে ভরপুর রাজপথ
বিএনপি ছাড়া সব রাজনৈতিক দল এখন শাহবাগে: সারজিস আলম
শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যায় গ্রেপ্তার টিনা ৩ দিনের রিমান্ডে
চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড ৪১.০২ ডিগ্রি সেলসিয়াস; বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ
কাশ্মীরে ফের বিএসএফের গুলি, ৭ পাকিস্তানি নিহত: দিল্লির দাবি বিচ্ছিন্নতাবাদী
নওগাঁয় ককটেল বিস্ফোরণে উড়ে গেল বাড়ির টিন
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ‘আমাদের বিষয় নয়’: যুক্তরাষ্ট্র
দেশের তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে যা বলল আবহাওয়া অফিস
আ.লীগ নিষিদ্ধে গুরুত্বের সাথে সরকার বিবেচনা করছে: সরকারের বিবৃতি
টাঙ্গাইলে নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতা রাজ্জাকসহ ২ জন গ্রেফতার
অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল
এবার অপেক্ষা তারেক রহমানের ফেরার, চলছে জোরালো প্রস্তুতি
পদ্মার এক ইলিশের দাম সাড়ে ৮ হাজার টাকা
৫ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে থানায় নেওয়া হলো আইভীকে