শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা

 

সোহওয়ার্দী উদ্যানের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন আরেফিন। তিনি ছাড়া উদ্যানে আর দ্বিতীয় মানুষ নেই। ভরদুপুরে উদ্যানে আরো মানুষ থাকার কথা। অনেকেই গরমের উত্তাপ সইতে না পেরে উদ্যানে গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নেয়। তরুণ ছেলেমেয়েরাও প্রেম করতে যায় উদ্যানে। আজ কেন নেই তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি চোখ বন্ধ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি তার নিজের জীবন, তার স্ত্রীর জীবন এবং সংসার জীবন নিয়ে ভাবেন।

দাম্পত্য জীবনে পা দেয়ার পর তার মনে হয়, জীবনটা একেবারে শেকলে বাঁধা। বাধাধরা জীবন। এই জীবন তার জন্য নয়। কেন তিনি শুধু শুধু একটা মেয়েকে ভালোবাসলেন; তাকে বিয়ে করলেন! বিয়ের আগেও যদি কোনোভাবে বুঝতে পারতেন তাহলে তিনি বিয়েই করতেন না।

আরেফিন ভাবেন, তিনি একটা ছোট পরিবারের সন্তান। তার বাবা প্রকৃত অর্থেই চাষা। তার মা পড়ালেখা না জানা এক গৃহিনী। তিনি ছাড়া পরিবারের আর কারো অক্ষরজ্ঞান নেই। গণ্ডমুর্খ বললেও ভুল বলা হবে না। আরেফিন গোবরে পদ্মফুলের মতো। স্রেফ মেধার গুণে উতরে গেছেন। তার উচিত ছিল, ছোট পরিবারের একটা মেয়েকে বিয়ে করা। তা না করে তিনি বিয়ে করেছেন বড় ঘরের মেয়েকে। শুধু বড় ঘরে বললে ভুল হবে, দুই পরিবারের মধ্যে ব্যবধান আকাশ আর পাতাল।

মোহিনীর বাবা মোহসীন আহমেদ ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী। ঢাকা শহরের তার তিনচারটা বাড়ি। বেশ কয়েকটা ফ্ল্যাট। গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক। তবে পরিবারটাকে দেখলে বোঝা যায় না। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে মোহিনীর সঙ্গে তার পরিচয়। মোহিনী কেন জানি আরেফিনকে ভালোবেসে ফেলে। আরেফিনের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি তাকে বিয়ে করেন। মোহিনীকে বার বার তার পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে বলতে চেয়েছেন। কিন্তু মোহিনী কোনো কথা শুনতে চাননি। তিনি বলেছেন, আমি তো তোমাকে বিয়ে করব। তোমার পরিবারকে নয়। পরিবার দেখে কি লাভ?

আরেফিন বিয়ের পর থেকে অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। বিয়ের পর মোহিনীকে নিয়ে যে গ্রামে যাবে তা হয়ে ওঠেনি। কারণ আরেফিনের মা-বাবা কিংবা ওর ঘরবাড়ি দেখলে মোহিনীর কি প্রতিক্রিয়া হবে তা চিন্তা করেই তার অস্থির সময় কাটে। নিজেকে বড় ছোট মনে হয় আরেফিনের। মোহিনীর পাশে তাকে বড়ই বেমানান মনে হয়। তাছাড়া সে যে চাকরি করে সেটাও মোহিনীদের স্ট্যাটাসের সঙ্গে যায় না।

মোহিনী আরেফিনকে কয়েকবারই বলেছিলেন, তাদের সু ফ্যাক্টরিতে তাকে যোগ দিতে। কিন্তু মোহিনী যে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সে প্রতিষ্ঠানে তিনি সাধারণ একজন কর্মকর্তা হয়ে কি করবেন? তাই তিনি যোগ দেননি। যদিও মোহিনী বলেছিলেন, তোমাকে প্রথমে কাজটা শিখতে হবে। ব্যবসাটা বুঝতে হবে। আত্মস্থ করতে হবে। নিজের আয়ত্তে নিতে হবে। ব্যবসাটাকে নিজের মনে করতে হবে। তারপর তোমাকে এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে আমরা নিয়োগ দিতে পারি। তার আগে নয়।

মোহিনীর এই প্রস্তাবে রাজি হননি আরেফিন। তিনি বলেছেন, আমি আসলে ব্যবসা বুঝি না। ব্যবসায় মন বসাতে পারব না। লাভক্ষতির হিসাব আমার ভালো লাগে না। আমি আমার নিজের মতো করেই কাজ করি। দেখি আমি কতটা কি করতে পারি।

আরেফিনের অগ্রগতি মন্থর। তিনি আগাচ্ছেন খুব ধীরে। এতে তার ভেতরে হতাশা তৈরি হয়। তিনি হীনমন্নতায় ভোগেন। নিজেকে বড় ছোট মনে হয় তার। আরেফিন যে ফ্ল্যাটটিতে থাকেন সেটি মোহিনীর কেনা। বনানীতে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি দুজনের জন্য বেশ বড়ই বলা চলে। তাদের একটি গাড়ি আছে। সেটিও মোহিনীর কেনা। বাসার বাজার আসে মোহিনীদের বাসা থেকে।
মোহিনীর বাবা মোহসীন আহমেদ প্রতি মাসে নিজের এবং মেয়ের জন্য বাজার করেন। ফলে বাসার ব্যাপারে আরেফিনকে মোটেই ভাবতে হয় না। এটাই যেন আরেফিনের কাল হয়েছে। কথায় বলে না, অধিক সুখ সবার কপালে সয় না। আরেফিনও অধিক সুখে কেমন যেন হয়ে গেছে। ছোট পরিবার থেকে উঠে এলে মনটাও বুঝি ছোটই থাকে। ছোটলকিপনা থেকেই যায়।

আরেফিন নীচু মানসিকতার গণ্ডি থেকে বের হতে পারছেন না। চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন, সবকিছু ভুলে মোহিনীকে মনেপ্রাণে ভালোবাসবেন। তাকে গভীর ভালোবাসায় আগলে রাখবেন। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন দূরত্ব বাড়ছে। এটা আরেফিনের ইচ্ছাকৃত না নয়। মানসিক দূরত্ব থেকে শারীরিক দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে তারা কেউ কাউকে আদর করেন না। গভীর আবেগ জড়িয়ে ধরেন না। ঠোটে ঠোট, শরীরে শরীর মেলান না। অথচ তাদের এখন ভরা যৌবন।

আরেফিন হাত পা ছড়িয়ে মাঠের মধ্যে বসেছেন। সিগারেট ধরিয়ে কয়েকটা টান দিয়ে আকাশের দিকে কুন্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছেন। তারপর আবার চুপচাপ বসে আছেন। সিগারেট দুই আঙুলের ফাঁকে চেপে ধরে আছেন। ধীরে ধীরে সিগারেট জ্বলছে। হঠাৎ এক পাগলা ধরনের লোক এসে তার সামনে দাঁড়িয়েছে। তার মাথায় দুটি বিশালাকারের জট। মুখভর্তি দাড়ি। জীবনে কখনো সেভ করেছে কি না কে জানে। দেখে মনে হয় না। গায়ে কাপড় খুব একটা নেই। হয়তো কখনো গোসলও ঠিকমতো করে না।

লোকটা আরেফিনের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বলল, কিরে তোর সিগারেট তো পুড়ছে। মনটাকেও ওভাবে পোড়াচ্ছিস? এমন করে মন পুড়ে কি হবে? যা যা! বাড়ি যা। মনটাকে শান্ত কর।
আরেফিন বিস্ময়ের দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার মনে প্রশ্ন, লোকটা তার মনের খবর জানে কিভাবে? তা কি সত্যিই কোনো ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে।

আরেফিন কি মনে করে যেন লোকটার দিকে হাতের সিগারেটটা এগিয়ে দেয়। ততক্ষণে লোকটা ওর সামনে থেকে উধাও। চারদিকে তাকায় সে। কোথাও নেই। নেই তো নেই। কোথায় গেলো লোকটা? চোখের সামনে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল! আর এখন নেই!

আরেফিন মনে মনে ভাবেন, আমি কি ভুল দেখলাম! না তো!

আরেফিন আবার সিগারেট টানে। একটার পর একটা সিগারেট শেষ করে। কিন্তু মন কিছুতেই স্থির হয় না। ভেতরে ভেতরে কেমন যেন ছটফটানি। হঠাৎ হঠাৎ সবকিছু কেমন খালি খালি লাগে। মাথাটা শূন্য হয়ে যায়।

কিছু সময় পর আরেকজন লোক আরেফিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। তার ভাবসাব দেখে মনে হয় কিছু বলতে চায়। কিন্তু আরেফিন তার কথা শুনতে চান না। তিনি আরেকদিকে তাকিয়ে থাকেন। আরেফিন যেদিকে তাকান লোকটা সেদিকে গিয়ে দাঁড়ায়। এক পর্যায়ে বলে, ভাই পকেটে টাকা হবে?

আরেফিন এবার বিস্ময়ের দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকান। লোকটা তখন তাকে বিনয়ের সঙ্গে বলে, আমি চাইলে আপনার কাছ থেকে মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিতে পারি। কিন্তু আমি তা করতে চাই না। কারণ, আপনাকে দেখে বড় অসহায় লাগছে।

আরেফিনের চোখেমুখে আরো বিস্ময়। তার বিস্ময় দেখে লোকটা আবার বলে, আমার ভীষণ ক্ষুধা লাগছে। টানা তিনদিন পেটে কোনো দানাপানি পড়েনি। আর চলতে পারছি না। আমাকে কিছু টাকা দেবেন। ভাত খাবো।
আরেফিন কোনো বাক্য ব্যয় না করে মানিব্যা
গ থেকে পাঁচশ’ টাকার একটি নোট বের করে লোকটার সামনে এগিয়ে দিলেন। লোকটা টাকা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বলল, ধন্যবাদ।

টাকা হাতে পেয়ে লোকটা টিএসসির দিকে চলে গেলো। আরেফিনও আর সেখানে থাকলেন না। তিনি ধীরে ধীরে শাহবাগের দিকে রওয়ানা হলেন। পাগলা লোকটার কথা তার বার বার মনে পড়ছে। লোকটা হঠাৎ এলো আবার চোখের পলকে চলে গেলো। কিন্তু সে যা বলে গেলো তা সত্যিই বিস্ময়কর। আগে কোনোদিন এ ধরনের লোক চোখে পড়েনি।

আরেফিন মনে মনে ভাবেন, ইশ! লোকটাকে যদি পেতাম! যে মনের খবর জানে তার কাছে নিশ্চয়ই মন ভালো করার ওষুধও আছে। আমি যাকে বিয়ে করেছি তার সঙ্গে কি আমার সংসারটা টিকবে? কি জানি। না টিকলে আর কী করা! জোড়াতালি দিয়ে তো আর সংসার টিকানো যায় না।

আরেফিন দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে আবার হাঁটতে থাকেন।

আরেফিনের এক বন্ধু সওগাত আলী ঢাকা ক্লাবের সদস্য। তার মোবাইলে ফোন দিয়ে বললেন, সওগাত, তুই আছিস তো! আমি কিন্তু আসছি।

সওগাত আলীর সঙ্গে কথা শেষ করে মোবাইল বন্ধ করলেন। পরপর পকেটে ঢুকিয়ে ঢাকা ক্লাবের দিকে এগিয়ে গেলেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার তিনি ঢাকা ক্লাবে গিয়েছেন। কিন্তু সেগুলো ছিল লাঞ্চ কিংবা ডিনার পার্টি। আজ যাচ্ছেন মদ খেতে। সওগাতকে আগে থেকেই তিনি বলে রেখেছেন। সওগাত আলীও প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন।

সওগাত আলী আরেফিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু। লেখাপড়া শেষ করে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। এখন বেশ কয়েকটা গার্মেন্টসের মালিক। ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবের সদস্য। টাকা পয়সা প্রচুর। প্রতিদিন সন্ধ্যায় কোনো না কোনো ক্লাবে তিনি আড্ডায় বসেন। সেই বন্ধু অনেকবার আরেফিনকে ক্লাবে দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি যাননি। আজ নিজেই তিনি বন্ধুর কাছে ক্লাবে আসার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সওসাত আলী ক্লাবে আরেফিনের জন্য অপেক্ষা করছেন। এরমধ্যে কয়েকবার ফোনে তাদের যোগাযোগ হয়েছেন। ক্লাবে গিয়ে অভ্যর্থনার সামনে দাঁড়াতেই সওগাত আলী তার কাছে এগিয়ে যান। তাকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানান। দুজন করমর্দন ও কোলাকুলি দুই-ই করেন। তারপর ক্লাবে ঢোকেন। দুই বন্ধু গল্প করেন আর মদ গেলেন। আরেফিন একে বলে পাগলা পানি। সেই পাগলা পানি উদরে পড়তে না পড়তেই অল্প কথা বলার মানুষ আরেফিনের মুখে যেন খই ফোটে। অবাক বিস্ময়ে সওগাত আলী আরেফিনকে দেখেন। আর মনে মনে বলেন, আমার বন্ধু হঠাৎ এতো কথা বলছে! হুম! বুঝেছি, পেটে মদ পড়লে বন্ধুর হুঁশ থাকে না। মুখ দিয়ে শুধু কথা বের হয়।

সওগাত আলী বন্ধুর কাছে জানতে চান মোহিনী সম্পর্কে। কেমন চলছে মোহিনী আর আরেফিনের সংসারজীবন। তারা সুখে আছে নাকি দুঃখে। এরমধ্যেই দুজনের অবস্থা ঢুলু ঢুলু। পাগলা পানির প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। মাথাটা কেমন ঘুরতে শুরু করে। পেটের কথা কী আর পেটে থাকে! মোহিনীর সঙ্গে তার খারাপ সম্পর্কের কথা জানায় বন্ধুকে। শুরু থেকেই যে তাদের বনিবনা হচ্ছে না তা সবিস্তারে বলতে থাকেন। সওগাত আলী নিজের স্ত্রীর বিষয়ে নানা কথা বলে। উভয়েই উভয়ের স্ত্রীর বিষয়ে বলে যেন সীমাহীন আনন্দ উপভোগ করেন।

অন্যের কাছে স্ত্রীর বদনাম করে যে এতো আনন্দ পাওয়া যায় তা আরেফিন আজ প্রথম টের পেলেন।

 

চলবে...

 

আরও পড়ুন:

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

 

 

Header Ad

সৌদির যেকোনো ভিসা থাকলেই ওমরাহ পালন করা যাবে

ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ওমরাহ পালনে বিদেশিদের জন্য ভিসা ব্যবস্থাপনা আরও সহজ করেছে সৌদি আরব। এখন থেকে যেকোনো ধরনের ভিসায় সৌদি আরব গেলেই বিদেশিরা ওমরাহ পালনের অনুমতি পাবেন।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বলেছে, যেকোনো দেশ থেকে এবং যেকোনো ভিসায় সৌদি আরবে আগতরা এখন থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে ওমরাহ পালন করতে পারবেন।

মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ট্রানজিট, শ্রম ও ই-ভিসাসহ সব ভিসাধারী ব্যক্তিরা এ সুযোগ পাবেন। এছাড়া ওমরাহ পালনের অনুমতি ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ের জন্য ‘নুসুক’ অ্যাপ ব্যবহার করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার।

এদিকে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববিতে হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের ইবাদত সহজ করতে ‘ডিজিটাল ব্যাগ’ চালু করেছে সৌদি সরকার।

সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, এই ব্যাগ প্রোগ্রাম হজ ও ওমরাহযাত্রীদের জীবনমান সহজ করবে। তাদের হজ ও ওমরাহ পালন সহজ করবে। মুসল্লিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে এর মাধ্যমে। বিশেষ করে কখন তারা কোন বিধান পালন করবে, সে বিষয়ে সতর্ক করা হবে।

নাটোরে বোনের বৌভাতে গিয়ে একে একে তিন ভাইয়ের মৃত্যু

নিহত জাওহার আমিন লাদেন। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের বড়াইগ্রামে মামাতো বোনের বউভাতের অনুষ্ঠানে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জাওহার আমিন লাদেন (১৮) নামে আরও এক কলেজছাত্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা গেছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন প্রাণ হারালেন।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ এ চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়

নিহত জাওহার বড়াইগ্রামের গোপালপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা রুহুল আমিনের ছেলে।

জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল মামাতো বোনের বৌভাতের অনুষ্ঠানে যায় তিন ভাই। পরে মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়াতে বের হন তারা। পথে বড়াইগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে তিনজনই গুরুতর আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মামাতো ভাই আকিব হাসান (১৫) ও খায়রুল বাশার ছাগির (১৭) মারা যায়। বুধবার রাতে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেক ভাই জাওহারের মৃত্যু হয়।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম খান বলেন, গত ১৫ এপ্রিল উপজেলার ধামানিয়াপাড়া গ্রামে মামাতো বোনের বৌভাতের অনুষ্ঠানে গিয়ে তিন মামাতো-ফুফাতো ভাই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে তিনজন গুরুতর আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনই মারা গেছেন।

জনপ্রতি ১২-১৪ লাখ চুক্তিতে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নফাঁস, গ্রেপ্তার ৫

গ্রেপ্তার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের পাঁচ সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপরই বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। চক্রটি এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কয়েকশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে দুইজন ঢাবি শিক্ষার্থী ও তিনজন পরীক্ষার্থী।

ডিবি জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে বসে এ পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করতেন তারা। পরীক্ষা শুরুর আগেই পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হতো উত্তরপত্র।

গ্রেপ্তাররা হলেন- ঢাবি শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন (২৬) ও সুজন চন্দ্র রায় (২৫) এবং পরীক্ষার্থী মনিষ গাইন (৩৯), পংকজ গাইন (৩০) ও লাভলী মণ্ডল (৩০)।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

ডিবিপ্রধান বলেন, গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ জেলার সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এ পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তরপত্র ও ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাতজন ও রাজবাড়ীতে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।

ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ছবি: সংগৃহীত

এ ঘটনায় দুই জেলায় আলাদাভাবে মামলা করে সংশ্লিষ্টরা। রাজবাড়ীতে আটক হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তিনি জানান, কীভাবে এবং কখন তার মোবাইলে উত্তরপত্র এসেছে। মাদারীপুরে গ্রেপ্তার হওয়া পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জামিনে বের হয়ে যান। ঘটনাটি তদন্তের জন্য মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাসুদ আলমের অনুরোধে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ তদন্তে নামে।

মাঠে নেমে গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন ও সুজন চন্দ্রকে। তারা দুজনেই ঢাবির জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

তারা গোয়েন্দা পুলিশকে জানান, পরীক্ষার আগেই তারা প্রশ্ন সমাধানের জন্য পেয়েছেন। এ প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যোতির্ময় গাইনের চাচা অসিম গাইনের মাধ্যমে।

প্রশ্ন প্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাসে তাদের দিয়ে প্রশ্ন সমাধান করান অসিম। এ প্রস্তাবে জ্যোতির্ময় ও সুজনসহ সাতজন ঢাবির জগন্নাথ হলের জ্যোতির্ময়গুহ ঠাকুরতা ভবনের ২২৪ রুমে বসে তারা প্রশ্নের সমাধান করে পাঠান। অসিম তার ভাতিজা জ্যোতির্ময় গাইনকে প্রশ্ন সামাধানের দায়িত্ব দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের পাঁচ সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, তিনি পরীক্ষার দুই থেকে তিন মাস আগেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স শেষের পথে, এমন পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন। তাদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন।

পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগেই প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন অসিম গাইন। তাদের সমাধান করে দেওয়া প্রশ্নের মধ্যে ৭২ থেকে ৭৫টিই মিলেছে।

ডিবি প্রধান আরও বলেন, আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত যে প্রমাণ পেয়েছি, তাতে এ চক্রের হোতা অসিম গাইন। তার বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। তিনি আগেও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। তিনি অল্পদিনে কয়েকশ’ কোটি টাকা আয় করেছেন। এ টাকা দিয়ে তার গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকা অসিমের মানবপাচার, হুন্ডি ব্যবসা ও ডিশের ব্যবসা রয়েছে। যেখানে তিনি প্রশ্ন ফাঁস করে আয় করা টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেপ্তার করলে কীভাবে প্রশ্নগুলো পান, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারব।

এ ঘটনায় দুজনকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। যারা প্রশ্নের সমাধান করেছেন, আদালতে তারাও স্বীকার করেছেন। যারা প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন, তারাও স্বীকার করেছেন। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের পরীক্ষা বাতিলের অনুরোধ জানানো হবে কি-না, এ প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হারুন বলেন, আমরা এ মামলার তদন্তে নেমে যা যা পেয়েছি সবকিছুই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন পরীক্ষা বাতিল করবেন না-কি বহাল রাখবেন।

সর্বশেষ সংবাদ

সৌদির যেকোনো ভিসা থাকলেই ওমরাহ পালন করা যাবে
নাটোরে বোনের বৌভাতে গিয়ে একে একে তিন ভাইয়ের মৃত্যু
জনপ্রতি ১২-১৪ লাখ চুক্তিতে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নফাঁস, গ্রেপ্তার ৫
কুড়িগ্রামে হিট স্ট্রোকে নারীর মৃত্যু
রবিবার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারও চলবে ক্লাস
বাংলাদেশের উন্নতি দেখে এখন লজ্জিত হই: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
মৌসুমের সর্বোচ্চ ৩৯.২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুড়ছে নওগাঁ
চেন্নাইয়ের হয়ে খেলা সবসময় স্বপ্ন ছিল: মোস্তাফিজ
বৃষ্টি কামনায় টাঙ্গাইলে ইস্তিস্কার নামাজ আদায়
মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে আরও ৬ ধাপ পেছালো বাংলাদেশ
বৃষ্টি কবে হবে, জানাল আবহাওয়া অফিস
এফডিসিতে ইউটিউবার প্রবেশ নিষিদ্ধ চাইলেন অঞ্জনা
অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা, ক্ষোভে বাসে আগুন দিল শিক্ষার্থীরা
থাইল্যান্ডে হিট স্ট্রোকে ৩০ জনের মৃত্যু
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ‘এমপিরাজ’ তৈরি হয়েছে: রিজভী
অনুমতি মিললে ঈদের আগেই গরু আমদানি সম্ভব: ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত
আবারও ঢাকাই সিনেমায় কলকাতার পাওলি দাম
ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় সাবেক কৃষকলীগ নেতাসহ নিহত ২
গোবিন্দগঞ্জে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়