শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা

 

সোহওয়ার্দী উদ্যানের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন আরেফিন। তিনি ছাড়া উদ্যানে আর দ্বিতীয় মানুষ নেই। ভরদুপুরে উদ্যানে আরো মানুষ থাকার কথা। অনেকেই গরমের উত্তাপ সইতে না পেরে উদ্যানে গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নেয়। তরুণ ছেলেমেয়েরাও প্রেম করতে যায় উদ্যানে। আজ কেন নেই তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি চোখ বন্ধ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি তার নিজের জীবন, তার স্ত্রীর জীবন এবং সংসার জীবন নিয়ে ভাবেন।

দাম্পত্য জীবনে পা দেয়ার পর তার মনে হয়, জীবনটা একেবারে শেকলে বাঁধা। বাধাধরা জীবন। এই জীবন তার জন্য নয়। কেন তিনি শুধু শুধু একটা মেয়েকে ভালোবাসলেন; তাকে বিয়ে করলেন! বিয়ের আগেও যদি কোনোভাবে বুঝতে পারতেন তাহলে তিনি বিয়েই করতেন না।

আরেফিন ভাবেন, তিনি একটা ছোট পরিবারের সন্তান। তার বাবা প্রকৃত অর্থেই চাষা। তার মা পড়ালেখা না জানা এক গৃহিনী। তিনি ছাড়া পরিবারের আর কারো অক্ষরজ্ঞান নেই। গণ্ডমুর্খ বললেও ভুল বলা হবে না। আরেফিন গোবরে পদ্মফুলের মতো। স্রেফ মেধার গুণে উতরে গেছেন। তার উচিত ছিল, ছোট পরিবারের একটা মেয়েকে বিয়ে করা। তা না করে তিনি বিয়ে করেছেন বড় ঘরের মেয়েকে। শুধু বড় ঘরে বললে ভুল হবে, দুই পরিবারের মধ্যে ব্যবধান আকাশ আর পাতাল।

মোহিনীর বাবা মোহসীন আহমেদ ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী। ঢাকা শহরের তার তিনচারটা বাড়ি। বেশ কয়েকটা ফ্ল্যাট। গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক। তবে পরিবারটাকে দেখলে বোঝা যায় না। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে মোহিনীর সঙ্গে তার পরিচয়। মোহিনী কেন জানি আরেফিনকে ভালোবেসে ফেলে। আরেফিনের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি তাকে বিয়ে করেন। মোহিনীকে বার বার তার পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে বলতে চেয়েছেন। কিন্তু মোহিনী কোনো কথা শুনতে চাননি। তিনি বলেছেন, আমি তো তোমাকে বিয়ে করব। তোমার পরিবারকে নয়। পরিবার দেখে কি লাভ?

আরেফিন বিয়ের পর থেকে অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। বিয়ের পর মোহিনীকে নিয়ে যে গ্রামে যাবে তা হয়ে ওঠেনি। কারণ আরেফিনের মা-বাবা কিংবা ওর ঘরবাড়ি দেখলে মোহিনীর কি প্রতিক্রিয়া হবে তা চিন্তা করেই তার অস্থির সময় কাটে। নিজেকে বড় ছোট মনে হয় আরেফিনের। মোহিনীর পাশে তাকে বড়ই বেমানান মনে হয়। তাছাড়া সে যে চাকরি করে সেটাও মোহিনীদের স্ট্যাটাসের সঙ্গে যায় না।

মোহিনী আরেফিনকে কয়েকবারই বলেছিলেন, তাদের সু ফ্যাক্টরিতে তাকে যোগ দিতে। কিন্তু মোহিনী যে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সে প্রতিষ্ঠানে তিনি সাধারণ একজন কর্মকর্তা হয়ে কি করবেন? তাই তিনি যোগ দেননি। যদিও মোহিনী বলেছিলেন, তোমাকে প্রথমে কাজটা শিখতে হবে। ব্যবসাটা বুঝতে হবে। আত্মস্থ করতে হবে। নিজের আয়ত্তে নিতে হবে। ব্যবসাটাকে নিজের মনে করতে হবে। তারপর তোমাকে এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে আমরা নিয়োগ দিতে পারি। তার আগে নয়।

মোহিনীর এই প্রস্তাবে রাজি হননি আরেফিন। তিনি বলেছেন, আমি আসলে ব্যবসা বুঝি না। ব্যবসায় মন বসাতে পারব না। লাভক্ষতির হিসাব আমার ভালো লাগে না। আমি আমার নিজের মতো করেই কাজ করি। দেখি আমি কতটা কি করতে পারি।

আরেফিনের অগ্রগতি মন্থর। তিনি আগাচ্ছেন খুব ধীরে। এতে তার ভেতরে হতাশা তৈরি হয়। তিনি হীনমন্নতায় ভোগেন। নিজেকে বড় ছোট মনে হয় তার। আরেফিন যে ফ্ল্যাটটিতে থাকেন সেটি মোহিনীর কেনা। বনানীতে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি দুজনের জন্য বেশ বড়ই বলা চলে। তাদের একটি গাড়ি আছে। সেটিও মোহিনীর কেনা। বাসার বাজার আসে মোহিনীদের বাসা থেকে।
মোহিনীর বাবা মোহসীন আহমেদ প্রতি মাসে নিজের এবং মেয়ের জন্য বাজার করেন। ফলে বাসার ব্যাপারে আরেফিনকে মোটেই ভাবতে হয় না। এটাই যেন আরেফিনের কাল হয়েছে। কথায় বলে না, অধিক সুখ সবার কপালে সয় না। আরেফিনও অধিক সুখে কেমন যেন হয়ে গেছে। ছোট পরিবার থেকে উঠে এলে মনটাও বুঝি ছোটই থাকে। ছোটলকিপনা থেকেই যায়।

আরেফিন নীচু মানসিকতার গণ্ডি থেকে বের হতে পারছেন না। চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন, সবকিছু ভুলে মোহিনীকে মনেপ্রাণে ভালোবাসবেন। তাকে গভীর ভালোবাসায় আগলে রাখবেন। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন দূরত্ব বাড়ছে। এটা আরেফিনের ইচ্ছাকৃত না নয়। মানসিক দূরত্ব থেকে শারীরিক দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে তারা কেউ কাউকে আদর করেন না। গভীর আবেগ জড়িয়ে ধরেন না। ঠোটে ঠোট, শরীরে শরীর মেলান না। অথচ তাদের এখন ভরা যৌবন।

আরেফিন হাত পা ছড়িয়ে মাঠের মধ্যে বসেছেন। সিগারেট ধরিয়ে কয়েকটা টান দিয়ে আকাশের দিকে কুন্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছেন। তারপর আবার চুপচাপ বসে আছেন। সিগারেট দুই আঙুলের ফাঁকে চেপে ধরে আছেন। ধীরে ধীরে সিগারেট জ্বলছে। হঠাৎ এক পাগলা ধরনের লোক এসে তার সামনে দাঁড়িয়েছে। তার মাথায় দুটি বিশালাকারের জট। মুখভর্তি দাড়ি। জীবনে কখনো সেভ করেছে কি না কে জানে। দেখে মনে হয় না। গায়ে কাপড় খুব একটা নেই। হয়তো কখনো গোসলও ঠিকমতো করে না।

লোকটা আরেফিনের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বলল, কিরে তোর সিগারেট তো পুড়ছে। মনটাকেও ওভাবে পোড়াচ্ছিস? এমন করে মন পুড়ে কি হবে? যা যা! বাড়ি যা। মনটাকে শান্ত কর।
আরেফিন বিস্ময়ের দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার মনে প্রশ্ন, লোকটা তার মনের খবর জানে কিভাবে? তা কি সত্যিই কোনো ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে।

আরেফিন কি মনে করে যেন লোকটার দিকে হাতের সিগারেটটা এগিয়ে দেয়। ততক্ষণে লোকটা ওর সামনে থেকে উধাও। চারদিকে তাকায় সে। কোথাও নেই। নেই তো নেই। কোথায় গেলো লোকটা? চোখের সামনে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল! আর এখন নেই!

আরেফিন মনে মনে ভাবেন, আমি কি ভুল দেখলাম! না তো!

আরেফিন আবার সিগারেট টানে। একটার পর একটা সিগারেট শেষ করে। কিন্তু মন কিছুতেই স্থির হয় না। ভেতরে ভেতরে কেমন যেন ছটফটানি। হঠাৎ হঠাৎ সবকিছু কেমন খালি খালি লাগে। মাথাটা শূন্য হয়ে যায়।

কিছু সময় পর আরেকজন লোক আরেফিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। তার ভাবসাব দেখে মনে হয় কিছু বলতে চায়। কিন্তু আরেফিন তার কথা শুনতে চান না। তিনি আরেকদিকে তাকিয়ে থাকেন। আরেফিন যেদিকে তাকান লোকটা সেদিকে গিয়ে দাঁড়ায়। এক পর্যায়ে বলে, ভাই পকেটে টাকা হবে?

আরেফিন এবার বিস্ময়ের দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকান। লোকটা তখন তাকে বিনয়ের সঙ্গে বলে, আমি চাইলে আপনার কাছ থেকে মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিতে পারি। কিন্তু আমি তা করতে চাই না। কারণ, আপনাকে দেখে বড় অসহায় লাগছে।

আরেফিনের চোখেমুখে আরো বিস্ময়। তার বিস্ময় দেখে লোকটা আবার বলে, আমার ভীষণ ক্ষুধা লাগছে। টানা তিনদিন পেটে কোনো দানাপানি পড়েনি। আর চলতে পারছি না। আমাকে কিছু টাকা দেবেন। ভাত খাবো।
আরেফিন কোনো বাক্য ব্যয় না করে মানিব্যা
গ থেকে পাঁচশ’ টাকার একটি নোট বের করে লোকটার সামনে এগিয়ে দিলেন। লোকটা টাকা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বলল, ধন্যবাদ।

টাকা হাতে পেয়ে লোকটা টিএসসির দিকে চলে গেলো। আরেফিনও আর সেখানে থাকলেন না। তিনি ধীরে ধীরে শাহবাগের দিকে রওয়ানা হলেন। পাগলা লোকটার কথা তার বার বার মনে পড়ছে। লোকটা হঠাৎ এলো আবার চোখের পলকে চলে গেলো। কিন্তু সে যা বলে গেলো তা সত্যিই বিস্ময়কর। আগে কোনোদিন এ ধরনের লোক চোখে পড়েনি।

আরেফিন মনে মনে ভাবেন, ইশ! লোকটাকে যদি পেতাম! যে মনের খবর জানে তার কাছে নিশ্চয়ই মন ভালো করার ওষুধও আছে। আমি যাকে বিয়ে করেছি তার সঙ্গে কি আমার সংসারটা টিকবে? কি জানি। না টিকলে আর কী করা! জোড়াতালি দিয়ে তো আর সংসার টিকানো যায় না।

আরেফিন দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে আবার হাঁটতে থাকেন।

আরেফিনের এক বন্ধু সওগাত আলী ঢাকা ক্লাবের সদস্য। তার মোবাইলে ফোন দিয়ে বললেন, সওগাত, তুই আছিস তো! আমি কিন্তু আসছি।

সওগাত আলীর সঙ্গে কথা শেষ করে মোবাইল বন্ধ করলেন। পরপর পকেটে ঢুকিয়ে ঢাকা ক্লাবের দিকে এগিয়ে গেলেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার তিনি ঢাকা ক্লাবে গিয়েছেন। কিন্তু সেগুলো ছিল লাঞ্চ কিংবা ডিনার পার্টি। আজ যাচ্ছেন মদ খেতে। সওগাতকে আগে থেকেই তিনি বলে রেখেছেন। সওগাত আলীও প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন।

সওগাত আলী আরেফিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু। লেখাপড়া শেষ করে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। এখন বেশ কয়েকটা গার্মেন্টসের মালিক। ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবের সদস্য। টাকা পয়সা প্রচুর। প্রতিদিন সন্ধ্যায় কোনো না কোনো ক্লাবে তিনি আড্ডায় বসেন। সেই বন্ধু অনেকবার আরেফিনকে ক্লাবে দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি যাননি। আজ নিজেই তিনি বন্ধুর কাছে ক্লাবে আসার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সওসাত আলী ক্লাবে আরেফিনের জন্য অপেক্ষা করছেন। এরমধ্যে কয়েকবার ফোনে তাদের যোগাযোগ হয়েছেন। ক্লাবে গিয়ে অভ্যর্থনার সামনে দাঁড়াতেই সওগাত আলী তার কাছে এগিয়ে যান। তাকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানান। দুজন করমর্দন ও কোলাকুলি দুই-ই করেন। তারপর ক্লাবে ঢোকেন। দুই বন্ধু গল্প করেন আর মদ গেলেন। আরেফিন একে বলে পাগলা পানি। সেই পাগলা পানি উদরে পড়তে না পড়তেই অল্প কথা বলার মানুষ আরেফিনের মুখে যেন খই ফোটে। অবাক বিস্ময়ে সওগাত আলী আরেফিনকে দেখেন। আর মনে মনে বলেন, আমার বন্ধু হঠাৎ এতো কথা বলছে! হুম! বুঝেছি, পেটে মদ পড়লে বন্ধুর হুঁশ থাকে না। মুখ দিয়ে শুধু কথা বের হয়।

সওগাত আলী বন্ধুর কাছে জানতে চান মোহিনী সম্পর্কে। কেমন চলছে মোহিনী আর আরেফিনের সংসারজীবন। তারা সুখে আছে নাকি দুঃখে। এরমধ্যেই দুজনের অবস্থা ঢুলু ঢুলু। পাগলা পানির প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। মাথাটা কেমন ঘুরতে শুরু করে। পেটের কথা কী আর পেটে থাকে! মোহিনীর সঙ্গে তার খারাপ সম্পর্কের কথা জানায় বন্ধুকে। শুরু থেকেই যে তাদের বনিবনা হচ্ছে না তা সবিস্তারে বলতে থাকেন। সওগাত আলী নিজের স্ত্রীর বিষয়ে নানা কথা বলে। উভয়েই উভয়ের স্ত্রীর বিষয়ে বলে যেন সীমাহীন আনন্দ উপভোগ করেন।

অন্যের কাছে স্ত্রীর বদনাম করে যে এতো আনন্দ পাওয়া যায় তা আরেফিন আজ প্রথম টের পেলেন।

 

চলবে...

 

আরও পড়ুন:

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

 

 

Header Ad
Header Ad

পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’: ভারত

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গে সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রকাশের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লি থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মন্তব্যকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বলেন, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে মন্তব্য এসেছে, তা ভিত্তিহীন এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে নিপীড়ন চলে আসছে, তার প্রতি ভারতের দীর্ঘদিনের উদ্বেগের সঙ্গে এই বিষয়টির তুলনা টানার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা একেবারেই অসৎ প্রচেষ্টা। এমনকি যেসব অপরাধী ওইসব ঘটনায় জড়িত, তারা আজও বিচার এড়িয়ে চলেছে।”

এর আগে ৮ এপ্রিল, ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সুরক্ষা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমরা ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

এই মন্তব্যকেই ‘হস্তক্ষেপমূলক’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশকে দায়ী করেছেন। গত ১৬ এপ্রিল নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে এক সভায় তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একসঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি ছড়িয়েছেন।”

প্রসঙ্গত, নতুন ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আগুন লাগানো, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সড়ক অবরোধের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।

এই ইস্যু শুধু পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়—উত্তর প্রদেশসহ ভারতের আরও কিছু রাজ্যেও সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ এবং নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

Header Ad
Header Ad

দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা

পুলিশ কনস্টেবল শামীম হোসেন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্টে ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত পুলিশ কনস্টবল শামীম হোসেন (৩০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে সহকর্মীরা শয়নকক্ষের জানালা দিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।

নিহত শামীম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে। তার কনস্টবল নং ৫৩২।

চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ এসআই রমজান আলী জানান, শামীম হত অক্টোবরে দর্শনা ইমিগ্রেশনে যোগদান করে। যোগদানের পর থেকেই গত ৬ মাস ধরে নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের ২য় তলার একটি কক্ষে বাস করে আসছিলেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় কয়েকজন সহকর্মী খোঁজ নিতে গেলে শামীম হোসেনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান।

খবর পেয়ে সকালে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, সহকারী পুলিশ সুপার দামুড়হুদা -জীবননগর) সার্কেল জাকিয়া সুলতানা, দর্শনা থানার ওসি শহীদ তিতুমীর ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর বেলা ১১ টায় মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে আত্মহত্যা। তবে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

পুলিশ কনস্টেবল শামীম হোসেন ২০১৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করে।

Header Ad
Header Ad

দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর আত্রাইয়ে বিষ প্রয়োগ করে দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে সানজিদা (১৬) নামে এক কিশোরীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন নিহত কিশোরীর স্বজনেরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত কিশোরীর মামা ফজলুর রহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে ওই কিশোরীর মা খুশি বেগম, নানা মোসলেম প্রামাণিক, চাচা সাইফুল ইসলাম মন্ডল, মামা হামিদুল প্রামাণিক উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্য ফজলুর রহমান বলেন, নিহত কিশোরী সানজিদা আত্রাই উপজেলার আন্দার কোটা গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী শামসুল মন্ডলের মেয়ে। সানজিদা উপজেলার ঘোষগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা কাজের সূত্রে দীর্ঘদিন ধরে সৗদি আরবে ও আরব আমিরাতে (দুবাই) অবস্থান করছেন। শামসুল মন্ডলের স্ত্রী খুশি বেগম মেয়ে সানজিদাকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে বাস করে আসছিলেন। শামসুল বসতবাড়ির বসতভিটার উত্তর পাশে বাবা মোসলেম মন্ডলের কাছ থেকে জমি কিনে নিয়ে ৪ বছর আগে মাটির বাড়ি তৈরি করেন। সেই বাড়িতেই সানজিদা ও তার মা বসবাস করতো। পরে ওই জায়গায় পাকা বাড়ি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করলে শামসুলের বাবা মোসলেম ও ভাই সাজিম মন্ডল বাঁধ সাজে। সানজিদার দাদা শামসুলকে বসতভিটার উত্তর পাশে পাকা বাড়ি না করে দক্ষিণ পাশে নীচু জায়গায় বাড়ি করার জন্য বলে আসছিল। এ নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। সানজিদার বাবা ও ভাই বিদেশে থাকায় বাড়ি করা নিয়ে বিরোধের জেরে সানজিদা ও তার মায়ের সঙ্গে তাঁর দাদা মোসলেম ও চাচা সাজিমের প্রায় পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো। এই কলহের জেরে দাদা মোসলেম মন্ডল ও সাজিম মন্ডল হত্যার উদ্দেশ্যে গত ৯ এপ্রিল হত্যার উদ্দেশ্যে সানজিদার শরীরে বিষ প্রয়োগ করে। পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ এপ্রিল রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে সানজিদা বলে গেছে তার দাদা ও চাচা তাঁর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করেছে। তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করা আছে। এ ঘটনায় রাজশাহী রাজপাড়া থানায় একটি অপমৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে মোসলেম মন্ডল ও সাজিম মন্ডল পলাতক রয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, গত ৯ এপ্রিল সকালে সানজিদা প্রাইভেট পড়ার জন্য ঘোষগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ে যায়। প্রাইভেট পড়ে সে বেলা ১১টার দিকে বাড়িতে আসে। এ সময় সাংসারিক কাজে সানজিদার মা খুশি বেগম বাড়ির বাইরে ছিলেন। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে সানজিদার দাদা মোসলেম ও চাচা সাজিম সানজিদার ঘরের ভেতরে যায়। দাদা মোসলেম সানজিদার পাশে বসে একপর্যায়ে তাকে জাপটে ধরে এবং চাচা সাজিম পকেট থেকে বিষের ইনজেকশন বের করে তার বাম হাতের শিরায় জোর ইনজেকশন প্রয়োগ করে। তারা সানজিদাকে হুমকি দিয়ে বলে এ কথা কাউকে বললে তার মতো বাবা ও ভাইকেও হত্যা করবে। সানজিদার মা খুশি বেগম বাড়িতে এসে মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় মেয়েকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ওই দিনই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১২ এপ্রিল রাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সানজিদার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত মোসলেম ও সাজিমের ফাঁসি দাবি করা হয়।

সাজিম মন্ডলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে তা বন্ধ পাওয়ায় অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাবুদ্দীন বলেন, ‘যে মেয়েটি মারা গেছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় যোগাযোগ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় রাজশাহী রাজপাড়া থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। সেখানেই নিহত কিশোরীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’: ভারত
দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা
দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ
গত ৯ মাসে এক আকাশ ভালোবাসা অর্জন করেছি : প্রেসসচিব
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজে আগ্রহ দেখায়নি বেসরকারি চ্যানেল, দেখাবে বিটিভি
সন্ত্রাসী তালিকা থেকে তালেবানকে বাদ দিলো রাশিয়া
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, জানালেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
ব্রাজিলের ভক্তদের ‘বানরের’ সঙ্গে তুলনা, নিষেধাজ্ঞার মুখে আর্জেন্টিনা
নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?
জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ
সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক
কোলের সন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন মা
চুয়াডাঙ্গায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দু’জন নিহত
ইয়েমেনের তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৩৮
হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪
সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার
গাইবান্ধায় মাদক মামলায় ৩ যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
তোপের মুখে ওয়াক্‌ফ আইন স্থগিত করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
নিজেকে বরিশাল সিটির মেয়র ঘোষণার দাবিতে মামলা করলেন ফয়জুল করীম