রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৭  

রিলিজিয়াস কমপ্লেক্সে আমাদের শেষ গন্তব্য ছিল আমর ইবনে আল আস মসজিদ। যদিও গির্জা চত্বরের গেট থেকে মসজিদের দূরত্ব পায়ে হেঁটে পাঁচ মিনিটের বেশি নয়, তারপরেও আমরা ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আমাদের বাহনের অপেক্ষা করছিলাম; যেন মসজিদ থেকেই সরাসরি রাতের কায়রো ফেস্টিভ্যালে চলে যাওয়া যায়।

 

বাহনের চালক বয়সে তরুণ, সম্ভবত বুদ্ধিতে তরুণতর ও ইংরেজি ভাষা জ্ঞানের দিক থেকে তরুণতম। রানা ভাইয়ের কথা সে বুঝতে পারছিল না অথবা রানাভাই তাকে আমাদের অবস্থান বুঝাতে পারছিলেন না। ফলে অপেক্ষার সময় দীর্ঘ হচ্ছিল। এ সময় দেখলাম রাস্তার ওপারে ইজিপশিয়ান হস্তশিল্পের সম্ভারে সাজানো বিপণীবিতান সউক আল ফুসতাতের সামনে এক সারি পামগাছের মাথার  উপরে বেশ বড় গোল চাঁদ। সেদিন পূর্ণিমা ছিল কি না জানি না, তবে বাঁশ বাগান না থাকলেও সান্ধ্যকালীন এই চন্দ্রোদয়কে বলা যায় ‘পাম বাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই...।’

 পাম গাছের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে

কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি এসে গেলে দেড় দুই মিনিটের মধ্যে আমরা মিশরের প্রাচীনতম মসজিদের সামনে পৌঁছে গেলাম। এখানে বিশাল চত্বরে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো সমস্যা নেই। তবে নামার পরপরই লক্ষ করলাম এতক্ষণ খ্রিস্টান ও ইহুদি উপাসনালয় এলাকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও শান্ত সমাহিতভাব দেখে ধারণা হয়েছিল পুরো রিলিজিয়াস কমপ্লেক্সের চেহারাটা একই রকম হবে। কিন্তু মসজিদের সামনে নোংরা আবর্জনার স্তূপ ও খাবারের পরিত্যক্ত প্যাকেট ছড়িয়ে আছে। চত্বরে বেশ কয়েকটি বাঁধানো দ্বীপে সবুজ ঘাস পানির অভাবে বিবর্ণ হয়ে গেছে। বড় বড় স্বল্প সংখ্যক খেজুর গাছ ছাড়াও কয়েকটি সবুজ ঝোপের মতো গাছ কোনোমতে প্রাণ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদ চত্বরের ভেতরেই একটি আইল্যান্ডে বসে জমিয়ে যারা আড্ডা দিচ্ছে তাদের মনে হলো কায়রোর কিশোর গ্যাং।

 

হজরত ওমরের শাসনামলে খলিফার নির্দেশে আরব বাহিনী মিশর দখলের অভিযান চালায় আমর ইবনে আল আসের নেতৃত্বে। সেই কারণে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা আমর ইবনে আল আসকে মিশরের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে মিশর জয়ের পরে ৬৪১ খ্রিস্টাব্দেই তিনি শুরু করেছিলেন প্রথম মসজিদের নির্মাণকাজ। তার হাত ধরেই আফ্রিকায়, বিশেষ করে মিশরে ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছিল। রোমান দূর্গ ব্যাবিলনের ঠিক উত্তরে আল ফুসতাত নামের সেনা ছাউনি এলাকায় তিনি যে বসতি গড়ে তুলেছিলেন তারই সম্প্রসারিত রূপ বর্তমানের কায়রো।

আমর বিন আল আস মসজিদের প্রবেশ তোরণ

আদি নির্মাণকালে অর্থাৎ ৬৪১ খ্রিস্টাব্দে মসজিদের আয়তন ছিল দৈর্ঘ্যে ২৯ মিটার এবং প্রস্থ ১৭ মিটার। নবম শতকে এসে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের সংস্কারে এর আয়তন বাড়ানো হয়। আর বর্তমানে মসজিদের ভেতরের আয়তন সাড়ে ১৩ হাজার বর্গ মিটার। ভূমিকম্প ও আগুনে একাধিবার ধ্বংস ও ভস্মীভূত হয়েছে মসজিদ, আবার নির্মিত হয়েছে নতুন করে, ফলে প্রাচীন কাঠামো ও নির্মালশৈলীর কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। নেপোলিয়ানের মিশর আগ্রাসনের সময় ফরাসি সৈন্যেরা মিশর দখল করলে সুসভ্য বলে কথিত ফরাসিরা মসজিদের ভেতরের মেহরাব, মিম্বারসহ কাঠের কারুকাজ করা অলঙ্করণ খুলে নিয়ে জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহার করেছে।

আমর ইবনে আল আস ১৩৮০ বছর আগে নির্মিত হলেও এর পুনঃনির্মাণ, সংস্কার, পরিবর্ধন, পরিমার্জনের কাজ চলছে বছরের পর বছর ধরে। আমরাও একবিংশ শতাব্দীর নতুন সংস্কার কাজের মধ্যেই এসে পড়েছি। কাজেই মসজিদের প্রধান ফটক ও সামনের দীর্ঘ দেয়াল জুড়ে ধাতব পাইপের বেস্টনী দেওয়া। ইসলামে নারী অধিকার, নারীদের মর্যাদা ইত্যাকার  নানাবিধ গাল-গল্প প্রচলিত থাকলেও প্রধান প্রবেশ দ্বারে এসে জানা গেল এখানেও মসজিদে নারীদের প্রবেশাধিকার নেই। অতএব মাহবুবা বেগমকে বাইরে বসিয়ে রেখে আমি ও রানা ভাই একটা চক্কর দিয়ে আসার জন্যে মসজিদের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। প্রবেশ পথের পাশেই বাঁ হাতের দিকে আলখাল্লাধারী নিজের হাতে আমাদের জুতা নিয়ে খোপের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখলেন। আমরা এগিয়ে গেলাম বিশাল মসজিদের অভ্যন্তরে। 

মসজিদের একাংশ

মসজিদের বাইরেটা ঘিরে ভারতের বাদশাহী আমলের দূর্গের মতো দেয়াল এবং বিশাল তোরণ দেখে যতোটা উৎসাহিত হয়েছিলাম ভেতরটা দেখে ততোটাই হতাশ হলাম। মাঝের বেশ বড় একটা অংশ সংস্কার কাজের জন্যে ঘিরে রাখা হয়েছে। সামনের অংশ ও দুপাশের দীর্ঘ এলাকা জুড়ে কার্পেট পাতা। সারি সারি পিলারের মাথায় বাতি জ্বলছে, মাথার উপরে ঘুরছে ফ্যান। অনেকেই কার্পেটে বসে কিংবা পিলারের গায়ে লাগানো চেয়ারে বসে নামাজ পড়ছেন। এই ভর সন্ধ্যা বেলাতেও দু-চারজন মেঝেতে নরম কার্পেটে শুয়ে উপরে পাখার বাতাসে দিব্যি আরামে ঘুমিয়ে পড়েছেন।

মসজিদের দীর্ঘ কলামের সারি এবং দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার বিশালত্ব ছাড়া কোনো বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ল না। নির্মাণ বা স্থাপত্যশৈলী ছাড়া মসজিদের ভেভরে আসলে তেমন কিছু দেখার থাকে না। 
কায়রোর রঙিন আলোয় সাজানো সড়ক দ্বীপ ও পথের দুপাশে আলো ঝলমলে রাস্তা ধরে আমরা কায়রো ফেস্টিভ্যাল সিটির দিকে এগোচ্ছি। পথে ভাবছিলাম একেশ্বরবাদী তিনটি ভিন্ন এবং অনেক দেশে অনেক কালেই পরস্পরের প্রতি যুদ্ধাংদেহী তিন ধর্মের এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কীভাবে সম্ভব হয়েছে! আধুনিক মিশরের মানুষের মনে সেক্যুলারিজমের মূল মন্ত্র ঢুকিয়ে দিয়েছে?

শুধু এই এলাকায় নয়, এদেশে সব জায়গায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্ম নিয়ে অনুভূতির কোনো বাড়াবাড়ি নেই। শতকরা ৯৪ ভাগ মুসলমানের দেশে ৫ ভাগ খ্রিস্টান ও এক শতাংশের কম ইহুদি জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হয় না।  কায়রো ফেস্টিভ্যাল সিটি শুনে আমার মনে হয়েছিল হয়তো বাণিজ্য মেলার মতো অস্থায়ী কোনো উৎসব চলছে। কিন্তু উৎসব এলাকায় প্রবেশের পরে রঙিন আলোয় উদ্ভাসিত ভবনের সারি আর আঝোরে ঝরতে থাকা বর্ণবহুল ফোয়ারা পাশ কাটিয়ে বিখ্যাত চেইন শপ ‘ইকিয়া’র সামনে গাড়ি থেকে নামার পরে চমক ভাঙল। বুঝলাম এটি একটি স্থায়ী উৎসব, প্রকৃতপক্ষে কেনাকাটার মহোৎসব!

মসজিদের অভ্যন্তরে

অভিজাত আবাসিক এলাকা, রেস্টুরেন্ট রিসোর্ট, খেলাধুলা ও বিনোদনের বিপুল আয়োজন ছাড়াও ফেস্টিভ্যাল সিটি মল নামে বিশাল শপিং কমপ্লেক্সটির আয়তন আউটডোর ইনডোর মিলিয়ে সোয়া ২ লাখ বর্গ মিটার। ১ লাখ ৬০০ হাজার বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে ছোট বড় মিলিয়ে বিপণী কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩০০। ইকিয়া ছাড়াও পোশাকে মার্ক অ্যান্ড স্পেন্সার, এইচ অ্যান্ড এম, জারা, জুতা স্যান্ডেলের আদিদাস, চার্লস অ্যান্ড কিথ, নাইকি, হুশপাপি, মোবাইল ফোন নকিয়া, স্যামসুং, হুওয়াই আর খাবারের জন্য ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি, স্টারবাকের মতো বিশ্বখ্যাত ব্রান্ডের ছড়াছড়ি। এ ছাড়া কেরিফোরের মতো সব পেয়েছি সম্ভার সাজানো দোকান বা মিশরের স্থানীয় ব্রান্ডের পণ্যেরও কোনো কমতি নেই।

কথা ছিল ৮টার মধ্যে আমরা ইকিয়ার সামনে চলে এলে সৌরভ আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে। আমরা পৌঁছাবার কিছুক্ষণের মধ্যেই সৌরভ ফোন করে জানাল একটা ঝামেলায় আটকে যাওয়ায় ওর আসতে ঘণ্টাখানেক দেরি হবে। আমরা যেন এই সময়টা শপিংমলে একটু ঘুরে ফিরে কাটাই। বৈমানিক রাজি অবশ্য এরই মধ্যে এসে হাজির। একটা ঘণ্টা শপিংমলে ঘুরে কী করব ভাবতে ভাবতে সমানেই ইকিয়াতে ঢুকে পড়ালাম এবং তারপরে এক ঘণ্টারও বেশি সময় কোন দিক দিয়ে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না।

ড্রইংরুমে সোফাসেট, টেবিল, বই পুস্তকের আলমারি, জানালা দরজার পরদা, কিংবা বিছানা বালিশসহ খাট পালঙ্ক, কাপড় চোপড়ের ওয়ারড্রোব, মাথার কাছে টেবিল ল্যাম্প দিয়ে তৈরি রীতিমতো বেড রুমে ইচ্ছে করলেই শুয়ে পড়া যায়। তাও একটি দুটি নয়, বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাবে সাজানো ঘরের পরে ঘর, গোটা ১০/১২ তো হবেই। তেমনি নানা আকার-আকৃতির রান্নাঘরের সরঞ্জামসহ সাজানো একের পর এক রান্নাঘর। বারান্দা-ব্যালকনি সাজাবার গাছপালা ফুলের টব, বসার জন্যে রকিং চেয়ার, গার্ডেন চেয়ার সব কিছুই প্রস্তুত।

ইকেয়ায় সাজানো রান্নাঘর

রানা ভাই বললেন, ‘একটা পুরো বাড়ি সাজাবার জন্যে যা কিছু দরকার এখানে একবার ঢুকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হেঁটে গেলে সবই পাওয়া যাবে। পছন্দ করে অর্ডার দিয়ে যাবেন, বাড়িতে ড্র্ইং ডাইনিং বেডরুম কিচেন সব সাজিয়ে দিয়ে আসবে।’

আমি বললাম, ‘তা ঠিক, তবে পকেটে যথেষ্ট ইজিপশিয়ান পাউন্ড অথবা একটা বড় অংকের লিমিটসহ ক্রেডিট কার্ড থাকতে হবে।’

আসবাবপত্র ও রান্নার এলাকা পার হবার পরে দেখা গেল, একই চত্বরে নিজেদেরই রেস্টুরেন্ট, কফি কর্নারে শীতল কিংবা ঊষ্ণ পানীয়ের ব্যবস্থা। কেউ ক্লান্ত বাইরে বেরিয়ে যেতে চাইলেও তার দরকার হবে না। এরপর জামা-কাপড়, জুতা-ছাতা, হাতঘড়ি-মোবাইল ফোন, প্রসাধন সামগ্রী, ছোটদের পোশাক ও খেলনা, গাছ-পালা, মানুষ ও প্রাণীদের প্যাকেটজাত খাদ্য-অখাদ্যসহ একই ছাদের নিচে এত কিছু দেখতে দেখতে সত্যিই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। খবর পেলাম সৌরভ এসে পড়েছে।

আমরা ইকিয়া থেকে বেরিয়ে কায়রো ফেস্টিভ্যাল শপিংমলের সুবিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ভবনগুলোর বিভিন্ন ফ্লোরের কয়েকটা দোকনে একটু করে ঢুকে ঢুকে কোথাও পণ্য কোথাও মূল্য আবার কোথাও কিছুই না দেখে বেরিয়ে এলাম। ঘুরতে ঘুরতে আমেরিকান টুরিস্টারের সেলস সেন্টারে ট্রাভেল ব্যাগ দেখতে দেখতেই মনে হলো একটা কিনে ফেলা যায়। কায়রো আসার সময় না হলেও ফেরার সময় কাজে লাগতে পারে। তা ছাড়া যথেষ্ট পাউন্ড পকেটে না থাকলেও ক্রেডিট কার্ড তো আছেই। 

নামাঙ্কিত রুটি

দেশি-বিদেশি, ব্রান্ডেড ও স্থানীয় মিলিয়ে ফেস্টিভ্যাল মলে খাবারের দোকানের সংখ্যা ৯৫টি। আমি হয়তো সাকূল্যে ৮-১০টার নাম জানি, কাজেই কোথায় রাতের খাবার খেতে যাব তা নিয়ে আমার চিন্তার কোনো কারণ নেই। সৌরভ ও রাজি দুজনেই কায়রোর পুরোনো পথিক, কাজেই রেস্তোরাঁ নির্বাচনের দায়িত্ব তাদের। হাতে নতুন কেনা ট্রলি ব্যাগ টেনে আমরা নিসানতাসিতে এলে বুঝলাম সৌরভ জায়গাটা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল। নিসানতাসি জাতে তুর্কি বংশোদ্ভুত, রিভিউতে পাঁচে পাঁচ পাওয়া অভিজাত রেস্টুরেন্ট। আমাদের পাঁচজনের জন্যে এক প্রান্তে বেশ বড় একটা টেবিলে বসলাম। ডান দিকে কাচের জানালার ওপারে কয়েকটি রেস্টুরেন্টের নাম জ্বলছে নিয়ন সাইনে। খানিকটা সামনে ফোয়ারা থেকে ঝরা পানি প্রতি মুহূর্তে রং বদলাচ্ছে।

মিশরে তুর্কি খাবার বেশ জনপ্রিয় আর অথেন্টিক তার্কিশ ডিশের জন্যে নিসানতাসির নাম সবার শীর্ষে। আমাদের মুখোমুখি টেবিল উপচে পড়া খাবার নিয়ে বসেছিল তিন তরুণী। খাবার তৈরির অপেক্ষার সময়টা যাতে একেবারে নির্জলা না যায়, সে জন্যে আমাদের টেবিলে এসেছে ছোলা ভেজানো চা। আমি নিসানতাসির মেন্যু উল্টেপাল্টে দেখছিলাম। অপরিচিত খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে পরিচিত কোশারি, ফালাফেল, মুসাকা, বাকালাভাসহ অসংখ্য চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পেয় সুস্বাদু খাবারের ছবির সঙ্গে যে দাম উল্লেখ করা হয়েছে তা আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে হলো। হঠাৎ করেই কাছাকাছি জ্বলে ওঠা আগুনের শিখা ও মিউজিকের সঙ্গে খন্তা-ছুরির খটখটাখট তাল তরঙ্গ শুনে মেন্যু থেকে মনোযোগ ছুটে গেল। 

গ্রিলের কেরামতি

আমাদের টেবিলের কাছেই একটা গ্রিল ট্রলি চলে এসেছে তার উপরে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মোড়ানো লবণ দিয়ে ঢাকা আস্ত ভেড়ার ঠ্যাংয়ের উপরে ক্ষণে ক্ষণে জ্বলে লাফিয়ে উঠছে আগ্নিশিখা। আর উপস্থিত শেফের হাতের হাতা-চামচ সৃষ্টি করে চলেছে বারবিকিউ মিউজিক! তবে বিষয়টা বারবিকিউ নয়, শিজলার তো অবশ্যই নয়। নাম জানার আগেই আমি ছবি তুলবার জন্যে ক্যামেরা হাতে উঠে পড়েছিলাম।

সৌরভ বলল, ‘একটু অপেক্ষা করেন। আমাদের টেবিলেও একই জিনিস আসছে।’ সেই একই জিনিস আসার আগেই আমাদের টেবিলও নানা খাবারে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তবে বিস্ময়ের একটু বাকি ছিল। রেস্টুরেন্টের বেকারি থেকে সদ্য তৈরি রুটি নিয়ে শেফ মহোদয় হাজির হয়ে বললেন, ‘এই রুটিতে যার নাম লেখা আছে, তিনিই কেবল এই রুটি গ্রহণ করবেন।’

রাজি ও রানা ভাই নিসানতাসির  ডিনারে

দেখা গেল লম্বা রুটির উপরে কালোজিরা ছড়িয়ে ইংরেজিতে লেখা হেনা। কিছু পরেই বেজে উঠল আনন্দ সংগীত, তালে তালে খটাখট শব্দ তুলে আগুনের শিখা ছড়িয়ে এসে গেল গ্রিলড ল্যাম্বের বিশাল এক ট্রে। ক্ষণে ক্ষণে লাফিয়ে ওঠা আগুনের হলকা থেমে গেলে লবণের স্তর সরিয়ে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ভেতর থেকে নিপুণ শিল্পীর মতো ভেতরের মাংসের আস্ত একটি স্তূপ বের করে টেবিলে পরিবশেন করলেন কেতাদুরস্ত শেফ!  নিসানতাসির অসাধারণ একটি ডিনার শেষ করে বাসায় ফিরতে রাত প্রায় সাড়ে ১১টা বাজল। সৌরভ গাড়িটা পার্কিংয়ে নিয়ে যাওয়ার আগেই গাড়ি থেকে নেমে রানা ভাই বললেন, ‘ফলের ব্যাগটা?’

না, গাড়িতে নেই। তাহলে কি রিলিজিয়াস কমপ্লেক্স থেকে ফেস্টিভ্যাল সিটিতে আসার গাড়িতে থেকে গিয়েছিল, নাকি নিসানতাসির টেবিলের কোণায় থেকে গেছে! ঘটনা যাই হোক, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে রানা ভাইয়ের শেষ মন্তব্য, ‘খাবারের প্রত্যেক শস্য দানায় নাকি ভোক্তার নাম লেখা থাকে। এই ফলগুলোতে আমাদের কারো নাম লেখা ছিল না।’ 

চলবে... 

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৪    

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২১

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২০

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-১৯

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-১৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-১৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১১

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১০

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৯

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

এসএন 

Header Ad
Header Ad

পাকিস্তানে সেনাবাহিনী-সন্ত্রাসী গোলাগুলি, দুই সেনাসদস্যসহ নিহত ১৭

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর তুমুল গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই সেনাসদস্যসহ মোট ১৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে খাইবার পাখতুনখোয়ার কারাক জেলায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে আটজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়। একই দিনে উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের দুটি স্থানে আরও দুটি অভিযান চালানো হয়।

উত্তর ওয়াজিরিস্তানে চারজন এবং দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের গোমাল জ্যাম এলাকায় তিনজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে সেনাবাহিনী। এই সংঘর্ষগুলোর একটিতে পাক বাহিনীর দুই সেনা সদস্য প্রাণ হারান।

আইএসপিআরের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, অভিযানের সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, এসব অভিযান ছিল পরিকল্পিত ও গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে।

‘পাকিস্তান ইন্সটিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ’ (PICS) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা ডিসেম্বরের তুলনায় প্রায় ৪২ শতাংশ বেড়েছে। এতে করে পুরো অঞ্চলে নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২

ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মধুপুরে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে টাঙ্গাইল-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মধুপুর পৌর এলাকার কাইতকাই রূপালী ফিলিং স্টেশনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ধনবাড়ী উপজেলা পৌর এলাকার চরভাতকুড়া গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে সিএনজি চালা হেলাল উদ্দিন (৫৫)। অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে তিনি সিএনজি যাত্রী ছিলেন।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে মধুপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. মনজুরুল হক এ বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাতে দুর্ঘটনা কবলিত সিএনজি ধনবাড়ীর দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজির চালক ঘটনা স্থলে মারা যান। এ সময় গুরুতর আহত হয় এক যাত্রী।

এরপর তাকে উদ্ধার করে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে রাতেই হাসপাতালে তিনি মারা যায়।

এ ব্যাপারে মধুপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. মনজুরুল হক জানান, নিহত সিএনজি চালকের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

অপরদিকে, অজ্ঞাত ওই যাত্রীর পরিচয় পাওয়া যায়নি, শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন।

Header Ad
Header Ad

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র হজ ফ্লাইট শুরু আগামী মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল)। ওই দিন ৪১৯ জন সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। হজের প্রথম ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

চলতি বছর ৮৭ হাজার ১০০ জন পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ২০০ জন হজযাত্রী সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৮১ হাজার ৯০০ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করবেন।

প্রথম ফ্লাইটটি রাত ২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। হজ ব্যবস্থাপনাকে নির্বিঘ্ন করতে সরকারি পর্যায়ে ১১২ জন এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৭৪৩ জন গাইড দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি ৭০ জন মোয়াল্লেম হজযাত্রীদের সার্বিক সহায়তা করবেন।

হজযাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ তিনটি এয়ারলাইনস। ৩১ মে পর্যন্ত হজের ফ্লাইট চলবে। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ১০ জুন এবং শেষ হবে ১০ জুলাই।

পবিত্র হজ উপলক্ষে এ বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিচালনা করবে ১১৮টি, সাউদিয়া ৮০টি এবং নাস এয়ারলাইনস ৩৪টি ফ্লাইট।

হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা, যা ৯ জিলহজ মসজিদে নামিরা থেকে প্রদান করা হয়। এবারও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে হজের খুতবা, এবং তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হবে ২০টি ভাষায়। 

যেসব ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হবে সেগুলো হলো- বাংলা, ফরাসি (ফ্রেঞ্চ), মালয়, উর্দু, ফারসি, চাইনিজ, তুর্কি, রাশিয়ান, হাউসা, ইংরেজি, সুইডিশ, স্প্যানিশ, সোয়াহিলি, আমহারিক, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, বসনিয়ান, মালায়লাম, ফিলিপিনো এবং জার্মান। 

উল্লেখ্য, ১৪৪৬ হিজরির ৯ জিলহজ (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের ৫ জুন) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পাকিস্তানে সেনাবাহিনী-সন্ত্রাসী গোলাগুলি, দুই সেনাসদস্যসহ নিহত ১৭
টাঙ্গাইলে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২
হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা
ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার