রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস, শেষ পর্ব

অঘ্রানের অন্ধকারে

মানিকগঞ্জ আপনগাঁও থেকে তুরি চিঠি লিখেছে। চিঠি কে নিয়ে এসেছে জানি না। অফিসের রিসেপশনে কেউ রেখে গেছে। এনভেলাপের ওপর আমার নাম, পদনাম আর পত্রিকার নাম লেখা আছে।

খাম খুললাম। ভেতরে দাগটানা এক্সারসাইজ খাতার তিনটা পাতা। প্রথম পাতায় তুরি লিখেছে, এখান থেকে বাইরে চিঠি লেখার নিয়ম নেই। ব্রাদারকে বিশেষ অনুরোধ করে অনুমতি নিয়েছি। তিনি আমার লেখা পড়েছেন।

ব্রাদার জিগ্যেস করলেন, আপনি চিঠি কাকে পাঠাতে চান?
বললাম, কায়নাত খানকে।

আপনার নাম শুনে তিনি ভুরু কুঁচকে সরু চোখে আমার দিকে তাকালেন বটে তবে অনুমতি দিয়েছেন। তাকে বলেছি এই চিঠি আপনাকে পাঠাতে পারলে আমি ভালো থাকব।
দ্বিতীয় পাতায় তুরি লিখেছে, আজ সেন্টারে আমার চতুর্দশ দিন। আজ শুক্রবার। একটা ফ্রি দিন। তবুও সকাল থেকে আমার মন খারাপ। অনেকের অভিভাবক এসেছিলেন দেখা করতে। আজ আমার সাথে দেখা করতে কেউ আসেনি। আগামী শুক্রবার ছাড়া আর দেখা করার উপায় নেই। সেন্টারের সব নিয়ম মেনে চলি। তবু আমার আর এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না। আজ দু সপ্তাহ হলো আমি খোলা আকাশ থেকে দূরে আছি। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাবা কেমন আছেন জানি না।

বুঝলাম নিরাময়কেন্দ্র থেকে দেওয়া অনুভূতি খাতায় তুরি তার নিজের কথা লিখেছে। সেই লেখা পাতা ছিঁড়ে আমাকে পাঠিয়েছে। তৃতীয় পাতায় লেখা, আজ আমার সেন্টারে অবস্থানের ১৬তম দিন। হঠাৎ আজ ভোরে মনে হলো জীবন সহজ নয়, কঠিন। আমার চিন্তার জগৎ এলোমেলো হয়ে গেছে। মন অস্থির হয়েছে। বাড়ির কথা মনে পড়ছে ভীষণভাবে। বাবার কথা ভাবছি খুব। তিনি নিশ্চয় আমার এ অবস্থার কথা শুনে কষ্ট পেয়েছেন ভীষণ। আমি আগামী শুক্রবারের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি ওইদিন আমার সাথে প্রথম দেখা করতে আসবে কেউ। বাবা আসতে পারেন, সিলভিয়া আসবে। বড়ো’পা, দুলাভাই আসবে হয়তো। আচ্ছা, কায়নাত খান কি আসবেন! আমি কিছুই জানি না। না না না না না।

আমি পরের শুক্রবার গেলাম না। সেদিন তুরির বাবা কিংবা সিলভিয়া অথবা শাবিনের মা যেতে পারেন ভেবে। আমি গেলাম তারপরের শুক্রবার।

তুরি আমাকে দেখে চমকে উঠল। আমি আসব এমন আশা করলেও সত্যি আসব সে ভাবেনি। আজ তার সাথে দেখা করতে আমি ছাড়া আর কেউ আসেনি।

ব্রাদারকে খুঁজে বের করলাম। তিনি আমাকে চিনলেন। তুরিকে সাথে নিয়ে খোলা মাঠে কিছুক্ষণ হাঁটার অনুমতি চাইলাম। ব্রাদার অনুমতি দিলেন। বেরুনোর আগে বললেন, ক্যাম্পাসের বাইরে যাবেন না। তাকে আপনার জিম্মায় দিচ্ছি। যদিও নিয়ম নেই। আপনি রেসপনসিবল পারশন। বেশি দেরি করবেন না। তাদের ক্লাস আছে।
তুরিকে নিয়ে চলে এলাম। আমরা গিয়ে মাঠের শেষ মাথায় গাছের নিচে বসলাম। ছাতিমগাছ। তুরি আমার গা ঘেঁষে বসে থাকল।
বললাম, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
তুরি বলল, জানতাম আপনি আসবেন।
কীভাবে জানতে?
মন বলছিল। আমি বুঝতে পারি। শাবিন মারা যাবে তাও বুঝতে পেরেছিলাম।
প্রসঙ্গ বদলাতে চাইলাম। বললাম, ধানের গন্ধ পাচ্ছ?
তুরি সেকথার উত্তর না দিয়ে বলল, আপনার জন্য আমার নিতল শ্রদ্ধা। আপনি এখানে আমাকে দেখতে এসেছেন। ভীষণ খুশি হয়েছি।
এখানে তোমার কষ্ট হচ্ছে?
মানিয়ে নিয়েছি। এটা অদ্ভুত ধরনের জায়গা। একেবারে অন্যরকম।
তোমাকে আর বেশিদিন এখানে থাকতে হবে না। তুমি বললে আমি নিজে এসে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাব।
একটা কথা বলি?
বলো।
আমার মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করত শাবিনকে বুকের ভেতর জাপটে ধরে পিষে মেরে ফেলি। তাকে ভীষণ ভালোবাসি।
তুরির গলা ভিজে এসেছে। সে চুপ করে আছে। সামনে দুটো গোরু ঘাস খেতে খেতে এগিয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘ নেই। ঝকঝকে আকাশ। পাখি উড়ছে। ধানক্ষেতের ওপর দিয়ে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। হেলে যাচ্ছে ধানগাছগুলো আবার সোজা হয়ে উঠছে। আমি এসব দেখছি।
নিজ হাত আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে তুরি বলল, আমার হাতটা ধরবেন?
তুরির হাত ধরলাম। নরম, কমনীয় হাত। যেন হাতের ভেতর মুরগির তুলতুলে ছানা নিয়ে বসে আছি। আরেক হাত দিয়ে চোখ মুছে তুরি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমিও মারা যাব।
চমকে উঠে বললাম, আমরা সকলেই মারা যাব।
তুরি বলল, এই আপনগাঁও থেকে বাড়ি ফেরার আগে মারা যাব।
তোমার এমন কেন মনে হচ্ছে?
ওই যে বলেছি আপনাকে, আমি বুঝতে পারি। কীভাবে পারি জানি না।
সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, এরকম কিছু ভাববে না। মন শক্ত করবে। তোমাকে কবে ছুটি দেবে আজ ব্রাদারের কাছ থেকে জেনে যাব। আমি আসব তোমাকে নিয়ে যেতে।
তুরি আমার হাত তার মাথার ওপর রাখল। গাঢ় গলায় বলল, আমাকে একটু আদর করে দিন। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
আমি ধীরে ধীরে তুরির চুলে বিলি করে দিতে থাকলাম। তুরি কাঁদছে। তার পিঠে হাত রাখলাম। আস্তে আস্তে পিঠে হাত বুলিয়ে দিলাম। সে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। তার শরীর কাঁপছে। আবার তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আশা করলাম তার কান্না থামবে। কান্না থামল না। তুরি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে গেল।

মঙ্গলবারে খবর পেলাম তুরি মারা গেছে। আপনগাঁও থেকে ব্রাদার ফোন করে জানালেন। কীভাবে মারা গেছে তা লাশ পোস্টমর্টেমের আগে বলতে পারবেন না বললেন।
তুরিকে নিয়ে আমি ভেবেছিলাম। কেন ভেবেছিলাম তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। আমার লেখা উপন্যাসের কল্পনায় লেখা তুরি বাস্তব তুরির মতো জীবন্ত হয়ে উঠেছে আমার কাছে। উপন্যাসে আমার সৃষ্ট তুরি আর বাস্তবের রক্তমাংসের তুরি-দুই তুরিকে মিশিয়ে ফেলেছি। তুরির নোটবুকে যা পড়েছি আর আমি যা লিখেছি মনে হয়েছে সবটায় যেন তুরির জীবনে ঘটেছে। আমি কল্পনা করে কিছু বানায়নি।
উপন্যাস লিখতে লিখতে তুরি চরিত্রকে ভালোবেসেছি। সেই ভালোবাসার ছায়া পড়েছে বাস্তব তুরির ওপর। এ ভালোবাসার কোনো সামাজিক নাম নেই, সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা নেই। তুরির প্রতি প্রবল আকর্ষণ বোধ করেছি। কেন করেছি তাও স্পষ্ট না। হতে পারে তার ব্যক্তিত্ব।
প্রচণ্ডভাবে চেয়েছি সে সুস্থ হয়ে উঠুক, ফিরে আসুক। এমনও ভেবেছি তুরি আর আমি কক্সবাজারে গেছি সমুদ্র সৈকতে। তুরি সমুদ্র ভালোবাসে। সন্ধ্যা পার হয়েছে। সমুদ্র সৈকতে রাত নেমে এসেছে। তবে অন্ধকার হয়নি। সৈকতে শুধু আমরা দুজন দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের পা নগ্ন। যতদূর চোখ যায় আর কেউ নেই। আকাশে লালচে গোল চাঁদ। সামনে প্রবল জোছনায় ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের ঢেউ।
তুরির পিঠে আদর করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। তুরি আমার গা ঘেঁষে কোমর জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা কেউ কথা বলছি না। সমুদ্রের ঢেউ ভেঙে পড়ার শব্দ ছাড়া কোনো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। সমুদ্রের ঢেউ এসে আমাদের দুজনের নগ্ন পা ভিজিয়ে দিচ্ছে।
রাতে হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তুরি সিগারেট জ্বালালো। আমিও সিগারেট জ্বালিয়েছি। সে আমার গলা ধরে পায়ের ওপর পা রেখে দাঁড়িয়েছে। তার ভেতর কিশোরীর চপলতা। সে নিজ ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁট ছুঁয়েছে। কিছু বুঝে ওঠার আগে ঠোঁট গোল করে আমার মুখের ভেতর সিগারেটের ধোঁয়া দিয়ে দিয়েছে।
গাড়ি নিয়ে মানিকগঞ্জে রওনা হয়েছি। তুরিকে কথা দিয়েছিলাম আমি গিয়ে তাকে আপনগাঁও থেকে নিয়ে আসব।

আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে। অসময়ের বৃষ্টি। সামনে সবকিছু সাদা হয়ে গেছে। এমন বৃষ্টি হচ্ছে যেন কোনোদিন থামবে না। আপনা আপনি আমার চোখ ভিজে এলো। চোখের কোনায় পানি জমেছে। পানির ভার বাড়ছে। একসময় কালো চশমার মোটা ফ্রেমের নিচ দিয়ে চোখের পানি ঝরঝর করে গড়িয়ে পড়ল গালে।

 

পর্ব ১৭: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ১৬: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ১৫: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ১৪: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ১৩: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ১২: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ১১: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ১০: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৯: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৮ : অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৭ : অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৬: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৫: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৪: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৩: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ২: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ১: অঘ্রানের অন্ধকারে

 

Header Ad

গোপনে দুইজনকে বিয়ে, কাউকেই অধিকার বঞ্চিত করেননি জান্নাতুল

ছবি: সংগৃহীত

একইসঙ্গে দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করছেন জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক নারী। স্ত্রীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেননি দুই স্বামীর কাউকেই। গোপনে মন জয় করে চলছিলেন দুই স্বামীর। প্রায় দুই বছর দুই স্বামীর সংসার করার পর অবশেষে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে হলফনামার মাধ্যমে গোপনে বিয়ে করেন রাজবাড়ী সদরের আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের আবু হানিফ শেখের ছেলে ইউটিউবার সাগর শেখ ও আলীপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাবা, মা ও ভাই প্রবাসে থাকায় বাবার বাড়িতে একাই বসবাস করতেন জান্নাতুল। সেখানে যাতায়াত করতেন স্বামী সাগর শেখ। সংসার জীবন ভালোই চলছিল এ দম্পতির। হঠাৎ জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় শ্বশুরবাড়ি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় সাগরের। এরই মধ্যে প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে পরিবারের সিদ্ধান্তে অন্য এক যুবককে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জান্নাতুল।

এদিকে স্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের বাড়িতে তুলে না নেয়ায় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। প্রথম স্বামী সাগরের দাবি, প্রায় দুই বছর ধরে তার সঙ্গেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক রেখে চলছিলেন জান্নাতুল।

স্ত্রীর পরিবার তাকে মেনে না নেয়ায় তার বোনের বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে একান্তে সময় কাটাতেন স্বামী-স্ত্রী। চলতি মাসের ২ নভেম্বর তারা একসঙ্গে নিজেদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন বলেও দাবি করেন সাগর।

তবে দুই সপ্তাহ আগে স্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় স্বামীর ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে পারেন সাগর। আর এতেই বাঁধে বিপত্তি। তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন জান্নাতুল। এখন দ্বিতীয় স্বামী নিয়েই সংসার করতে আগ্রহী তিনি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে ফিরে পেতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি আদালতে মামলা করেছেন সাগর।

সাগর শেখ বলেন, জান্নাতুল ও আমার বিয়ের বিষয়টি জান্নাতুলের মা ও বোন জানতো। বিয়ের পর আমাদের সংসার জীবন ভালোই কাটছিল। তবে হঠাৎ করে জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় তাদের বাড়িতে আমার যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বিয়ের চার মাসের মাথায় আমি ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির কাজে কয়েকদিনের জন্য রাজবাড়ীর বাইরে যাই।

কাজ থেকে এসে শুনি আমার স্ত্রী জান্নাতুল অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করেছে। আমি আমার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি। ওই ছেলের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক হয়নি। আমি তোমার স্ত্রী আছি, তোমারই থাকবো। আমার আম্মু দেশে আসলে আমি তোমার কাছে চলে আসবো।’

সাগর বলেন, ‘আমি জান্নাতুলদের বাড়ি যাতায়াত করতে না পারার কারণে বিভিন্ন সময় আমরা রাজবাড়ী শহরে আমার বোনের বাসায় ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতাম। ওর কলেজে আনা-নেয়াসহ সবকিছু আমিই করতাম। এমনকি গত ২ নভেম্বরও আমরা আমার বোনের বাসায় আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছি।

তবে বিবাহ বার্ষিকী পালনের দুদিন পরে আমি জানতে পারি জান্নাতুলের সঙ্গে ওই ছেলের (দ্বিতীয় স্বামীর) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চলছে। ওই ছেলে নিয়মিত জান্নাতুলের বাবার বাড়িতে এসে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাচ্ছে। এ বিষয়ে আমি জান্নাতুলকে প্রশ্ন করলে সে আমাকে গালাগালি করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে সে আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলেও জানায়।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি জান্নাতুলের মা প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছে। তিনিও এখন আমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে অস্বীকার করছেন। অথচ তার মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেম থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত সবকিছুই তিনি জানতেন।

এখন বাধ্য হয়ে আমি আমার স্ত্রীকে ফিরে পেতে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গত ১১ নভেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছি। এছাড়া ১৭ নভেম্বর রাজবাড়ীর বিজ্ঞ ১নং আমলি আদালতে মামলা করেছি।’

সাগর আরও বলেন, ‘আমাকে ডিভোর্স না দিয়ে আমার স্ত্রী অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে আমাকেও ম্যানেজ করে চলেছে, একইভাবে তার দ্বিতীয় স্বামীকেও ম্যানেজ করে চলেছে।

এটা আইন ও ধর্মীয় দুই দিক থেকেই অপরাধ। এছাড়া আমি এ পর্যন্ত আমার স্ত্রীর পেছনে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। তারপরও আমি আমার স্ত্রীকে ফেরত চাই। তাকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।’

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজী হননি জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। তবে তার দাবি, জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে তিনি জানতেন। সাগরের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তিনি জানতেন না।

জান্নতুলের দ্বিতীয় স্বামীর বাবা বলেন, ‘কোন এক সূত্রে আমার শ্বশুর জান্নাতুলদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তাকে পছন্দ করে। পরে আমি গিয়ে তার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বিয়ের দিন ধার্য হয়। বিয়ের আগের দিন সাগর নামে এক ছেলে আমার ছেলেকে ফোন করে বলে জান্নাতুলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক আছে।

সে জান্নাতুলের সঙ্গে নিজের একটি ছবিও আমার ছেলেকে পাঠায়। এরপর আমি ওই এলাকায় আমার আত্মীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের কোন সম্পর্ক ছিল না। এছাড়া জান্নাতুলকেও আমি সরাসরি প্রশ্ন করলে সেও সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে।

পরে ঘরোয়া আয়োজনে জান্নাতুলের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে হয়। এখন সাগর নামে ছেলেটি জান্নাতুলকে তার স্ত্রী হিসেবে দাবি করছে। আমি যতদূর জেনেছি সাগরের স্ত্রী ও সন্তান আছে। এখন বিষয়টি আইনগতভাবেই সমাধান হবে।

আর জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে কথা বলতে তার বাবার বাড়িতে গেলে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি।’

বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে তার মা হাচিনা বেগম বলেন, ‘সাগরের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল৷ তবে বিয়ের দুই মাসের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। আমার মেয়ে তো ছোট বুঝে নাই, যে কারণে সেসময় ওরা ডিভোর্সের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছে। এর ৪/৫ মাস পরে আমার মেয়ের আবার বিয়ে হয়েছে। সাগর আমার মেয়েকে চাপে ফেলে এতোদিন তার সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য করেছে।’

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক জানান, ‘সাগর ও জান্নাতুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তার নোটিশের একটি কপি ইউনিয়ন পরিষদে আসার কথা। এরকম কোন কপি কখনো পাননি তারা।’

তিনি বলেন, ‘সাগর আমার ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছে। আমিও খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সাগর জান্নাতুলের প্রথম স্বামী। সে সাগরকে তালাক না দিয়েই বিয়ের চার মাসের মাথায় অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করে। প্রায় দুই বছর সে চালাকি করে দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করেছে। সাগরের কাছ থেকে জান্নাতুল অনেক টাকা-পয়সা খেয়েছে বলেও আমি জানতে পেরেছি।’

আবু বক্কার বলেন, ‘সাগরের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি জান্নাতুলের বাবাকে নোটিশের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকি। তবে নোটিশ পেয়ে তিনি তার ছোটভাই ও তাদের এলাকার ইউপি সদস্য আবুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে এসে বলেন, আমি যেন পরিষদে বসে বিষয়টি সমাধান করে দেই। তবে এর ১/২ দিন পরে তিনি জানান, এ বিষয়ে তারা বসতে চান না।

আইনগতভাবে তারা বিষয়টি সমাধান করতে চান। পরে আবার তারা বসতে সম্মত হলে জান্নাতুল ও তার বাবা এবং তাদের এলাকার ইউপি সদস্য আবুল কালামসহ পরিষদের অন্য সদস্যদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদে বসেছিলাম। সাগরও সেখানে ছিল। তবে সেখানে জান্নাতুল বলে দিয়েছে সে কোনভাবেই সাগরের সঙ্গে ঘর সংসার করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা নির্যাতিত হয়। কিন্তু ছেলেরা যে কতোটুকু নির্যাতিত হয় তা এই সম্পর্কের জের দেখলে বোঝা যায়। আমাদের সমাজে ছেলেরা আরও বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। সেটা নীরবে নিভৃতে ছেলেরা সহ্য করে যাচ্ছে। আমি আশা করবো আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা বিষয়টি তুলে ধরবেন।

আপনাদের সংবাদের মাধ্যমে মানুষ যাতে সচেতন হতে পারে। আজকে আমার ইউনিয়নে এমন ঘটনা ঘটেছে। আর কোন ইউনিয়নে যেন এমন ঘটনা কোনদিন না ঘটে।’

Header Ad

শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

২৪ এর গনঅভূ্থানে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী, শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে যান বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন।

এ সময় মোবাইল ফোনে লাউডস্পিকারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমান বলেন, আব্দুল্লাহ দেশের জন্য মানুষের জন্য মানবতার কল্যাণের জন্য জীবনকে উৎস্বর্গ করে আল্লাহর দরবারে চলে গেছেন, আল্লাহ তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করুন। শহীদরা মরে না। তারা আল্লাহর জীম্মায় জীবন্ত থাকে। এ সময় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তিনি।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার বড় আঁচড়া গ্রামে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন আব্দুল্লাহর বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের খোঁজ খবর নেন,কবর জিয়ারত করেন এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।

এর আগে তিনি নাভারণ দারুল আমান ট্রাষ্টে ওলামা সম্মেলনে যোগদান করেন। পরে ২০১৬ সালে গুম হওয়া ইসলামি ছাত্র শিবিরে নেতা রেজোয়ানের বাড়িতে যান এবং খোঁজ খবর ও সমবেদনা জানান।

এসময় তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মৃত্যু বরনকারী সকলে ন্যায় বিচার পাবেন বলে পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেন। এবং গনঅভূ্থানে নিহত সকল পরিবারের সাথে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলাম আছে থাকবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোরের জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা গোলাম রসূল, সাবেক জেলা আমীর মাওলানা হাবীবুর রহমান, জেলা জামায়াতের নেতা মাওলানা আবু জাফর, মাওঃ শিহাব উদ্দিন শার্শা থানা আমীর রেজাউল ইসলাম, সেক্রেটারী মাওলানা ইউসুফ আলী ও ঝিকরগাছা থানা আমীর মাওলানা আসাদুল আলম প্রমূখ।

Header Ad

বিরামপুরে আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

দিনাজপুরের বিরামপুরে বিশনি পাহান (৫৫) নামের এক আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের ময়না মোড় এলাকার ধানক্ষেত থেকে ওই নারীর হাতবাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত বিশনি পাহান উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের বেণুপুর গ্রামের সাধন পাহানের মেয়ে।

নিহতের ভাই চরকা পাহান বলেন, আমার ছোট বোনের স্বামী বিশনি পাহানকে ছেড়ে চলে গেছেন। সে প্রতিরাতেই নেশা করতো। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই আমার বাড়িতে থাকতো আমার বোন। আমার বোন এলাকায় মানুষের জমিতে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। শুক্রবার বিকেলে এলাকার এক ব্যক্তির জমিতে ধান কাটার কাজ শেষ করে আর বাড়িতে ফেরেননি। রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। শনিবার সকালে ধানক্ষেতে হাতবাঁধা অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।

বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক জানান, এলাকাবাসীর দেওয়া খবরে ঘটনাস্থল থেকে আদিবাসী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে তাকে কে বা কাহারা হত্যা করেছে। তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গোপনে দুইজনকে বিয়ে, কাউকেই অধিকার বঞ্চিত করেননি জান্নাতুল
শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন
বিরামপুরে আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার
বিএনপির কাঁধে অনেক দ্বায়িত্ব: তারেক রহমান
'জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত'- তোফায়েল আহমেদ
৩ মাসে জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা : জ্বালানি উপদেষ্টা
জুটি বাধলেন মিঠুন চক্রবর্তী-আফসানা মিমি
দেশ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই : তারেক রহমান
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের আশঙ্কা
অক্টোবরে সড়কে প্রাণ গেছে ৪৭৫ জনের
গায়ানায় দলের সঙ্গে যোগ দিলেন সাকিব
আইপিএল নিলামের আগেই নিষিদ্ধ হলেন ভারতের ২ ক্রিকেটার
গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া
পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...
অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী
বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ
মাকে হত্যার পর থানায় হাজির ছেলে
৮ ক্রিকেটারসহ ৯ জনকে নিষিদ্ধ করলো বিসিবি