মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমছে: ড. মোয়াজ্জেম
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
সরবরাহ চেইন নষ্ট হলে নেতিবাচক পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডির) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, খাদ্য সংকটের নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সরকার প্রধান হয়ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এখনো আমাদের সেরকম পরিস্থিতি হয়নি যে এটাকে দুর্ভিক্ষ বলা যবে। ঢাকাপ্রকাশ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ সব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শাহজাহান মোল্লা।
ঢাকাপ্রকাশ: প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু দিন ধরেই বলছেন দুর্ভিক্ষ আসতে পারে। তার এই আশঙ্কার কারণ কী বলে মনে করেন?
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ যাচ্ছে। খাদ্য সরবরাহ রয়েছে, কিন্তু খাদ্য কেনার ক্ষমতা আস্তে আস্তে মানুষের কমে যাচ্ছে। ফলে এই বিষয়টাই অনেক সময় দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে যায়। বাজারে হয়ত পণ্য থাকবে কিন্তু পণ্য কেনার ক্রয় ক্ষমতা মানুষের থাকবে না। আগের দুর্ভিক্ষগুলোর ঐতিহাসিক ইঙ্গিত তাই দেয়। তবে এখনো আমাদের সে রকম পরিস্থিতি হয়নি, যে এটাকে দুর্ভিক্ষ বলা যাবে। বরং এই মুহূর্তে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য মানুষের খাদ্য কেনায় সংকোচন করতে হচ্ছে, পুষ্টি নিরাপত্তায় আঘাত পড়ছে, খাদ্য নিরাপত্তায় আঘাত পড়ছে। এরমধ্যে দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতির জন্য দারিদ্রও বাড়ছে। এরকম পরিস্থিতির জন্য, আগামী বছরের জন্য যে ধরনের অবস্থা দাঁড়াতে পারে, আমাদের যে সমস্ত পণ্য আমদানি করতে হয় বা খাদ্যের জন্য যেসমস্ত কাঁচামাল আমদানি করতে হয় সেগুলোর সরবরাহ যদি আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়, কোনো কারণে বা সেগুলোর যদি মূল্য বেড়ে যায় বা ডলারের যে রিজার্ভ তার কারণে যদি আমদানি পর্যাপ্তভাবে না করতে পারি তাহলে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
সেই প্রেক্ষাপটেই আগাম সতর্ক বাণী দিয়ে রাখা। যদি মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকে এবং খাদ্য সরবরাহ যদি এখনকার মতো না থাকে তার জন্য আগাম প্রস্তুতি দরকার। সেটার জন্য যেন মানুষ এখনই সতর্ক হয়। সতর্ক অনেকভাবে করা যায়। যারা উৎপাদন করে তারা যেন যার যতটুকু জমি আছে সেটাতেই যেন তারা উৎপাদনে যায়। যার আয় আছে, আয় থেকে কম ব্যয় করে সঞ্চয় করা।
ঢাকাপ্রকাশ: এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সরকারের কী করা দরকার?
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: সরকারের দরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরও বাড়ানো। যদি এরকম পরিস্থিতি হয় তার জন্য দরকার হলে অর্থের ব্যবস্থা রাখা। আমদানির প্রয়োজন হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো। বৈদেশিক উৎস ঋণ করা যেতে পারে। এই প্রস্তুতিগুলোর অংশ হিসেবে আগাম সতর্কবাণী হয়ত দিয়ে রাখা। নেতিবাচক পরিস্থিতির জন্য সকলে যেন প্রস্তুত থাকে। সরকার প্রধান হিসেবে তিনি এরকম একটা মেসেজ আগাম দিয়ে রাখতে চাচ্ছেন, যেন সকলে এখনই প্রস্তুত থাকেন। হঠাৎ করে যদি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আসে তখন যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আমাদের জন্য কষ্ট হবে।
এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাজারে শুধু খাদ্য সরবরাহ থাকলে চলবে না, খাদ্য কেনার সামর্থ্য থাকতে হবে। খাদ্য মূল্য যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে ফলে আগামী বছর ওই চ্যালেঞ্জটা আবারও বাড়বে। খাদ্য উৎপাদন যতটুকু হয় ততটুকুই হয়ত হবে, কিন্তু উচ্চ মূল্যের জন্য মানুষ হয়ত কিনতে পারবে না। এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরও বাড়ানো দরকার হতে পারে। সরকারকে নিজের উদ্যোগে আমাদনি করে সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার। এজন্য বৈদেশিক ঋণের সাহায্য নেওয়ার মাধ্যমে রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। টাকার যত অবমূল্যায়ন হবে তত আমদানি ব্যয় বাড়বে, তত খাদ্য মূল্য বাড়বে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার থাকা দরকার। প্রয়োজনবোধে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ করা যেতে পারে।
এনএইচবি/আরএ/