পাড়ার ক্রিকেটে ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে আজ আইসিসি আম্পায়ারিং এ ডলি সরকার
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির আম্পায়ারিং প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নারী আম্পায়ার হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ডলি রানি সরকার। এই পর্যায়ে আসার পেছনে রয়েছে এক সংগ্রামী জীবনের গল্প। বৃহত্তর বরেন্দ্র ভূমির নওগাঁ শহরের দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। ছোটবেলায় পাড়ার ক্রিকেটে ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে স্বপ্ন বোনার শুরু।
এরপর ভর্তি হন বিকেএসপিতে। জাতীয় দলের ২০ জনের ক্যাম্পেও ডাক পেয়েছিলেন, কিন্তু থামতে হয়েছে সেখানেই। পরে বিকেএসপিতেই চাকরি হয়ে গেছে, ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা আর এগোয়নি। সেই ডলি রানি সরকারই এখন আম্পায়ারিং হাল ধরে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে।
আম্পায়ারিং এ জায়গা পাবার পর ঢাকাপ্রকাশের মুখোমুখি হয়ে ডলি সরকার বলেছেন নিজের অনুভূতি আর প্রত্যাশার নানা কথা। এই একান্ত সাক্ষাতকারটি পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো-
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শামীনূর রহমান।
ঢাকাপ্রকাশ : বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির আম্পায়ারিং এ জায়গা পাওয়ায় অভিনন্দন।
ডলি সরকার : ঢাকাপ্রকাশকে ধন্যবাদ।
ঢাকাপ্রকাশ : আইসিসির আম্পায়ারিং এ যুক্ত হয়েছেন, অনুভূতিটা কেমন?
ডলি সরকার : আসলে অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা নেই কারণ অনেক অনেক খুশি এবং আনন্দিত। এত দ্রুত আমরা আইসিসি আম্পায়ারিং এ যুক্ত হতে পারবো তা প্রতাশা ছিলো না। ক্রিকেট বোর্ড আমাদের নিয়ে কাজ করছে দুই বছর হতে চলেছে। গত দুই বছর ক্রিকেট বোর্ড আমাদের বিভিন্ন জায়গায় ম্যাচ দিয়ে চেষ্টা করেছেন উপযুক্ত করার। আমরা সেই কাজটি করেছি। আজ আইসিসি আম্পায়ারিংয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছি।
ঢাকাপ্রকাশ : ক্রীড়াঙ্গনে পদচারণা শুরু হয় কখন থেকে?
ডলি সরকার : আমি ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করতাম। স্কুলে খেলতাম হ্যান্ডবল, ভলিবল, অ্যাথলেটিকে যে খেলা গুলো আছে ইভেন্টগুলোতে সেগুলো। পাড়ার সব বড় ভাইদের সঙ্গে খেলতাম। শুরুটা আমার পাড়ার বড় ভাইদের হাত ধরেই।
ঢাকা প্রকাশ : জাতীয় দলের ক্যাম্পেও ডাক পেয়েছিলেন কি?
ডলি সরকার: জাতীয় দলের ২০ জনের ক্যাম্পেও ডাক পেয়েছিলেন, কিন্তু থামতে হয়েছে সেখানেই। পরে বিকেএসপিতেই চাকরি হয়ে গেছে, ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা আর এগোয়নি। সেই ডলি রানি সরকারই এখন আম্পায়ারিং হাল ধরে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে।
ঢাকাপ্রকাশ: কোচিংয়ের হাতেখড়িটা কীভাবে হলো?
ডলি সরকার : আমি বিকেএসপির স্টুডেন্ট ছিলাম। বিকেএসপিতে থাকা অবস্থায় আমাদের ক্রিকেট ডিপার্টমেন্টের মাসুদ হাসান স্যার ছিলেন। বিশেষ করে মানজিৎ স্যার, ডলি ম্যাডাম ওনাদের সহযোগিতায় ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে তাদের হাত ধরেই কোচ হিসেবে কোচিংয়ে আসা।
ঢাকাপ্রকাশ: প্রথম কোন খেলায় আম্পায়ারিং এ অংশ নেন?
ডলি সরকার : যেহেতু আমি বিকেএসপি স্টুডেন্ট ছিলাম। ২০০৯ সাল থেকেই আম্পায়ারিং প্র্যাক্টিস এর মধ্যে ছিলাম। মেয়েদের ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দিয়ে যাত্রা শুরু করি। এছাড়া বিকেএসপিতে ছেলেদের যে ম্যাচগুলো বিশেষ করে সৌম্য বিজয়রা যখন ছিলো ওই সময় ওদের ম্যাচ আম্পায়ার ছিলাম। এছাড়া দেশের বাহিরের অনেক টিম বিকেএসপিতে খেলতে আসতেন যেমন শ্রীলঙ্কা পাকিস্তান ম্যাচগুলোতে আম্পায়ারিং করতাম।
ঢাকাপ্রকাশ : বৃহত্তর বরেন্দ্র ভূমির নওগাঁ জেলার একমাত্র কন্যা হিসেবে ক্রিকেট যখন শুরু করেছেন তখন খেলাধুলাতে আসা কতটা কঠিন ছিল?
ডলি সরকার : শুরুটা আমার পক্ষে খুব কঠিন ছিল যদি না নওগাঁ জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং পাড়ার বড় ভাই, ছোট ভাই এবং প্রতিবেশী কাকারা তারাই পাড়ায় যে সকল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হইতো সেখানে আমাকে খেলতে নিয়ে যেত ঐখান থেকে আমি তৈরি হইছি। ওনারা যদি হেল্প না করতো তাহলে এতদূর আসতে পারতাম না।
ঢাকাপ্রকাশ : বিশ্বমঞ্চে দেশের আম্পায়ারদের মাঝে নারী আম্পায়ারিং এ
ভবিষ্যৎ ভাবনা কি?
ডলি সরকার: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নিশ্চয়ই আমাদের নিয়ে বড় পরিকল্পনা বা প্লান ছিলো তাদের প্রচেষ্টায় আইসিসি প্যানেলে আমরা যুক্ত হতে পেরেছি। আমাদের চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে সেরাটা উপহার দেয়ার চেষ্টা।
ঢাকাপ্রকাশ: শিক্ষা জীবন কোথায় থেকে শুরু?
ডলি সরকার: আমার জন্মস্থান নওগাঁতে, বেড়ে উঠাও নওগাঁতে, খেলা শুরুটাও নওগাঁতে। সব কিছুই নওগাঁ কেন্দ্রিক। আমার প্রাথমিক স্কুল জীবন চকএনায়েত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিকে নওগাঁ প্যারীমোহন (পিএম) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং খেলাধুলার জন্য আমি নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করি, এইচএসসি পাশ করি নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে, গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করি বিকেএসপি থেকে, মাস্টার্স কমপ্লিট করি দেবেন্দ্র কলেজ মানিকগঞ্জ থেকে, বিপিএড কমপ্লিট করি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং এমপিএড কমপ্লিট করি উত্তরা ইউনিভার্সিটি থেকে।