ছাত্রজীবনে মহসিন হলে ছাত্রদলের ভিপি ছিলাম: চুন্নু
জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের সুর বাজছে। শনিবার দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে দলের কাউন্সিল, রওশন এরশাদকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে অপসারণসহ আরও অনেক বিষয়ে কথা হয়েছে। কেউ কেউ দাবি জানিয়েছেন রওশন এরশাদকে বহিষ্কার করার। এসব বিষয়েই শনিবার রাতে মুঠোফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তার সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
ঢাকাপ্রকাশ: জাতীয় পার্টি কি ভাগ হচ্ছে?
মুজিবুল হক চুন্নু: আমরা তো এক ভাগই আছি, আমাদের তো কেউ যায় নাই। উনার (রওশন এরশাদ) নামে যারা কাউন্সিল ডাকছে এটার তো আমাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই। আমাদের দলের তো কেউ যায় নাই ওখানে। এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। এটা আমরা জানি না। আমরা আমলেই নিচ্ছি না। আমলে নেওয়ার মতো না। বহিষ্কৃত কয়েকজন গেছে, এটা তো কোনো বিষয়ই না। সাবজেক্টই না আমাদের জন্য।
ঢাকাপ্রকাশ: কিন্তু আজকের বৈঠকে রওশন এরশাদকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন।
মুজিবুল হক চুন্নু: ইনডোর মিটিংয়ে কত কিছু হতে পারে। সেটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। ওনাকে বহিষ্কার করব কী, তিনি তো দলের কোনো পদে নাই। কীভাবে বহিষ্কার করব? উনি বিরোধীদলীয় নেতা। ওইটা ওনাকে চেঞ্জ করার জন্য এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে উনি তো দলের কোনো পদে নাই।
ঢাকাপ্রকাশ: রওশন এরশাদকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না?
মুজিবুল হক চুন্নু: এটা তো আগেই নিয়েছি। কার্যকর করার কিছু নাই। স্পিকার ফরমাল দেখবেন আইনগতভাবে ঠিক আছে কি না, এই। এটা উনি স্বীকৃতি দেবেন। স্বীকৃতি দেওয়া ছাড়া কোনো রাস্তা নাই।
ঢাকাপ্রকাশ: মসিউর রহমান রাঙ্গাকে নাকি স্থায়ী বহিষ্কার করা হচ্ছে?
মুজিবুল হক চুন্নু: স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য, প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য মিটিংয়ে সবাই মিলে একমত হয়েছে। কার্যকর করিনি, তবে রেজুলেশন নেওয়া হয়েছে। ঐক্যমত হয়েছি। কার্যকর করবেন চেয়ারম্যান। তবে সবাই দাবি করেছে।
ঢাকাপ্রকাশ: গোলাম মসীহ বলেছেন চুন্নু কে? উনি তো ছাত্রদলের নেতা ছিলেন, উনি জাতীয় পার্টির কী বুঝবেন?
মুজিবুল হক চুন্নু: সেটা ঠিক আছে। উনি বলেছেন উনি বিদ্বান মানুষ, উনি অনেক কিছু বোঝেন, আমি লেখাপড়া কম জানি। তবে উনি যে সাবজেক্টে পড়েছেন আমি একই সাবজেক্টে পড়েছি। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি ফোর্থ ব্যাচ আমি পঞ্চম ব্যাচ। কাজেই ওনার চেয়ে লেখাপড়ায় কম জানি এটা মনে হয় না। আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন ছাত্রদল থেকে মহসিন হলের ভিপি ছিলাম এটা তো ঠিকই আছে।
ঢাকাপ্রকাশ: তাহলে কাউন্সিল হচ্ছে না?
মুজিবুল হক চুন্নু: আমাদের পার্টির কাউন্সিলের এখনো সময় হয়নি। আমরা এখনো পার্টিতে সিদ্ধান্ত নেই নাই।
ঢাকাপ্রকাশ: জিএম কাদের তো কাউন্সিল ছাড়াই চেয়ারম্যান, রওশন অনুসারীরা তো সে কথাই বলছেন…
মুজিবুল হক চুন্নু: না, উনি কাউন্সিল করেই চেয়ারম্যান হয়েছে। ওরা কী বলল তাতে কী যায় আসে। অবশ্যই কাউন্সিল করে হয়েছে। কাউন্সিল হওয়ার পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হয়েছে। ওরা কী বলে না বলে এটা হ্যাডেক নাই। এরা আসলে বহিষ্কৃত লোক এটা হেডেক না। যাকে বহিষ্কার করা হয়েছে সেও কাউন্সিল ছাড়া হয়েছিল। এখন তো সে বহিষ্কৃত। রাঙ্গাও তো কাউন্সিল ছাড়া মহাসচিব হয়েছে, সে নিজেই তো বলল।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনিও তো কাউন্সিল ছাড়া মহাসচিব…
মুজিবুল হক চুন্নু: হ্যাঁ, আমি তো কাউন্সিল ছাড়া হয়েছি। এটা তো পার্টির চেয়ারম্যানের ক্ষমতা আছে।
ঢাকাপ্রকাশ: তাহলে আপনারা আজকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেখানে তো সবাই উপস্থিত…
মুজিবুল হক চুন্নু: আজকে ২০ জন এমপি ছিলেন, তারা স্বাক্ষর করেছেন। প্রেসিডিয়ামের ৪১ জনের ৩৮ জন উপস্থিত ছিলেন। এমপিদের মধ্যে তিনজন নাই। ম্যাডাম তার ছেলে আর রাঙ্গা। আর থাকে ৩ জন। একজন সেলিম ওসমান চিকিৎসাধীন। পীর মিসবাহ ডেঙ্গু থাকায় আসতে পারেননি।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনি এর আগে ঢাকাপ্রকাশ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, জাতীয় পার্টি কখনো বিএনপির সঙ্গে যাবে না। অথচ আপনাদের পার্টির চেয়ারম্যান নাকি বিএনপি এবং তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন?
মুজিবুল হক চুন্ন: এটা প্রপাগান্ডা। উনি তারেক রহমানসহ কারও সঙ্গে আলাপ করেন নাই। ফরমালি কোনো কথা হয় নাই। এগুলো পুরো ভুয়া কথা এবং প্রপাগান্ডা। আমি এখনো বলছি, বিএনপি-আওয়ামী লীগ কারও সঙ্গে জোটে যাওয়ার কোনো চিন্তা নাই। আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করব, সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। আমাদের আন্দোলন আমাদের নিজস্ব ধারায়। সরকার পতনের আন্দোলন করে এর সঙ্গে আমাদের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নাই। আমাদের আন্দোলন আমাদের সিদ্ধান্তে। জোটে যাওয়ার মতো চিন্তাভাবনা নাই। ৩০০ আসনে এককভাবে নির্বাচন করার চিন্তা করছি।
ঢাকাপ্রকাশ: তাহলে সরকার-ই কি জাতীয় পার্টিকে দিয়ে খেলছে?
মুজিবুল হক চুন্নু: এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নাই।
ঢাকাপ্রকাশ: যদি কাউন্সিল হয় তাহলে তো জাতীয় পার্টি বিভক্ত হবে…
মুজিবুল হক চুন্নু: এটার কোনো সুযোগ নাই। জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর কেউ কাউন্সিলে যায় নাই। বিভক্ত হবে কীভাবে? জাতীয় পার্টি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ৭৭টি জেলার সভাপতি, সেক্রেটারি, কো-চেয়ারম্যান একজন ব্যক্তিও যায় নাই। ভাঙার সুযোগ নাই।
ঢাকাপ্রকাশ: কাউন্সিল যদি হয়…
মুজিবুল হক চুন্নু: কে করবে? আমি মহাসচিব, আমরা তো কাউন্সিলের তারিখ দেই নাই। বাংলাদেশে আরও ৪-৫টি জাতীয় পার্টি নামে সংগঠন আছে। এখন কেউ যদি জাতীয় পার্টির নামে আর একটা কমিটি করতে চায় করতে পারে। সেটা তে আমাদের সম্পর্ক নাই। জাতীয় পার্টি রেজিস্ট্রার্ড সংগঠন, লাঙল মার্কা সেটা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কাউন্সিল আমরা ডাকি নাই।
ঢাকাপ্রকাশ: তাহলে প্রধান পৃষ্ঠপোষক যে কাউন্সিল ডাকলেন সেটা কি অবৈধ?
মুজিবুল হক চুন্ন: অবশ্যই অবৈধ, অগঠনতান্ত্রিক। ওনার কোনো এখতিয়ার নাই কাউন্সিল ডাকার।
ঢাকাপ্রকাশ: তাহলে রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কেউ না?
মুজিবুল হক চুন্নু: না, উনি পার্টির কেউ না। উনি তো পার্টির কোনো পদে নাই। আমরা ওনাকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক করে রাখছি অলংকার পদ হিসেবে।
ঢাকাপ্রকাশ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মুজিবুল হক চুন্নু: আপনাকেও ধন্যবাদ।
এসজি/এএস