জাপোরিশায় আবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের জাপোরিশা শহরে মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলায় বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এক জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দেশটির জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, সরকারি ভবন লক্ষ্য করে কমপক্ষে ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, উদ্ধারকর্মীরা প্রায় ১০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়া একটি আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
জাপোরিশার আঞ্চলিক গভর্নরের একটি টেলিগ্রাম পোস্ট থেকে জানা যায়, এতে একটি স্কুলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মস্কো এখনো এ ঘটনায় কোনো মন্তব্য করেনি।
এর আগে ইউক্রেনে মঙ্গলবার সকালেও বিমান হামলার সতর্ক সংকেত হিসেবে বাজানো সাইরেন বাজানোর শব্দ শোনা গেছে। বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিয়েছেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ইউক্রেনের রাজধানীসহ আরো বেশ কিছু এলাকা লক্ষ্য করে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পরের দিনই বোমা হামলার এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, সোমবার রাশিয়ার ওই হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া, ইউক্রেন জুড়ে আরও ১০৫ জন আহত হয়েছে বলেও জানানো হয়।
বিবিসি জানায়, গতকাল রাশিয়ার হামলার সময়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি জানান, মঙ্গলবারও হামলার আশঙ্কায় কিয়েভের একটি ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিং এলাকা থেকে খবর প্রচার করছেন।
অ্যাপোস্ট্রফ টিভি নিউজ সার্ভিস নামে একটি গণমাধ্যম জানিয়েছে যে, বোমারু বিমান থেকে সোমবার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। হুঁশিয়ার করে বলা হচ্ছে যে, এ ধরনের আরও হামলা আসতে পারে।
ইউক্রেনের জাপোরিশা শহরের কর্তৃপক্ষ বলছে, শহরটির বেশ কিছু অবকাঠামোতে রাতভর রাশিয়া গুলি চালিয়েছে। এতে একটি স্কুল, একটি হাসপাতাল এবং আবাসিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে গুলি শুরু করে রাশিয়া। তবে এতে ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।
মঙ্গলবার সকালে টেলিগ্রামে সেন্ট্রাল ভিনিৎসিয়া এলাকা গভর্নর সেরহি বরজভ দাবি করেন, সেখানকার লেডিজিন পাওয়ার স্টেশনে ইরানে তৈরি শাহিদ-১৩৬ কামিকেজ ড্রোনের মাধ্যমে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
ভোরে, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঁচটি শাহিদ-১৩৬ কামিকেজ ড্রোনকে ভূপাতিত করেছে। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের অপারেশনাল কমান্ড বলেন, ওডেসা এলাকাতে আরো তিনটি ড্রোনকে ভূপাতিত করা হয়েছে।
ভলোদিমির জেলেনস্কি এরইমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে টেলিফোনে আলাপ করেছেন। সেখানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব এবং ইউক্রেনের সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
রাশিয়ার হামলার কারণে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পর, জেলেনস্কি স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাসিন্দাদের জন্য ‘কাপড় ধোয়া ও ইস্ত্রি করা’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উপর চাপ কমানো যায় এবং এই বিদ্যুৎ অন্যরা ব্যবহারের সুযোগ পান।
হামলার পর ইউক্রেনের সেতুগুলো অন্ধকারে ডুবে যায় এবং কিয়েভে রাস্তার আলো কমিয়ে আনা হয়। এই সময়ে ওডেসা এবং অন্যান্য শহরগুলি তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল।
ইউক্রেনীয় শক্তি সংস্থা কিয়েভ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের তাদের ‘দৃঢ় সমর্থন’-এর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে যে, তারা নিয়মিত শরতের দিনের তুলনায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে।
সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এবং জনপ্রিয় ফেসবুক ব্লগার সার্জ মার্কো, বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলাকে ‘কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্রের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং অপরিকল্পিত ব্যবহার’ বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, রাশিয়ানদের উজ্জীবিত করার যে প্রাথমিক উদ্দেশে এটি করা হয়েছে তাতে এটি কোন পরিবর্তন আনবে না।
টেলিগ্রামে সামরিক বিশেষজ্ঞ ওলেক্সান্ডার কোভালেঙ্কো বলেছেন যে, এটি পুতিনের শাসনামলের ’রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনির মতো মনে হলেও এটা আসলে মৃত্যুযন্ত্রণার মতো।’
এমএমএ/