ফিলিস্তিনের মসজিদে লাউডস্পিকারে হানুকা সঙ্গীত গাইলো ইহুদিসেনারা
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নৃসংশ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী । এই হামলায় এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন । নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু । শুরুতে বিমান হামলা চালালেও এখন স্থল পথেও হামলা চালাচ্ছে দখলদার বাহিনীরা। গত অক্টোবর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরেও বর্বরতা বেড়েছে ইসরায়েলি বাহিনীর । দখলদার সেনাদের অভিযান সেখানে সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবার পশ্চিম তীরের একটি মসজিদে প্রবেশ করে লাউডস্পিকারে ইহুদিদের প্রার্থনা পাঠসহ হানুকা সঙ্গীত গেয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। এই ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে।
חיילי צה"ל שרים בכריזה של מואזין בג'נין pic.twitter.com/VD822DSOPs
— הארץ חדשות (@haaretznewsv) December 14, 2023
অবশ্য ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে এবং অভিযুক্তদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের একটি মসজিদে মাইক্রোফোনে গান গাওয়া এবং প্রার্থনা করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সৈন্যদের আচরণের নিন্দা করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
জেনিন শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় এই ঘটনাটি ঘটেছে। ওই অভিযানে এখন পর্যন্ত ১১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
আইডিএফ বলেছে, অভিযুক্ত সৈন্যদের বিরুদ্ধে ‘নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। এছাড়া গাজায় চিত্রায়িত হওয়া অনুরূপ ঘটনার ক্ষেত্রেও তারা একই পদক্ষেপ নেবে।
বিবিসি বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজগুলোতে মসজিদের ভেতরের কিছু দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। একটি ভিডিও ফুটেজে, মসজিদের মিনারে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে হিব্রু ভাষায় হানুকা গান গাইতে শোনা যায়। ইহুদিদের উৎসবের সঙ্গে যুক্ত এই গানটি গাওয়ার সময় ভিডিওধারণকারী ব্যক্তি হাসছিলেন এবং তাকেও গান গাইতে শোনা যায়।
এছাড়া অন্যান্য ভিডিও ক্লিপে মসজিদের ভেতরে সৈন্যদের মাইক্রোফোনের সামনে ইহুদি প্রার্থনা পাঠ করতে দেখা যাচ্ছে। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে ‘(মসজিদের) পবিত্রতাকে উপহাস’ বলে নিন্দা করেছে।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, সৈন্যরা ‘ধর্মীয় স্থাপনার মধ্যে আইডিএফ আচরণবিধির বিরুদ্ধে কাজ করেছে’। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দায়ীদের ‘অপারেশনাল কার্যকলাপ থেকে অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে’।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে: ‘ভিডিওগুলোতে সৈন্যদের যে আচরণ করতে দেখা গেছে তা অত্যন্ত গুরুতর এবং আইডিএফ-এর মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিরোধী।’
বিবিসি বলছে, জেনিন শহরের এসব ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বেশ কিছু ভিডিও সামনে এসেছে যেখানে একজন সৈনিককে খেলনার দোকান ভাঙতে, অন্য ঘটনায় সৈন্যদের লরির পেছনে থাকা জিনিসপত্রে আগুন দিতে; এবং অন্য একটি ভিডিওতে ব্যক্তিগত বাসস্থানে নারীদের পোশাক তন্ন তন্ন করতে দেখা যায়।
গত রোববার আইডিএফ মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি সৈন্যদের এই ধরনের আচরণের নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী আইডিএফের মূল্যবোধ ও চেতনা অনুযায়ী কাজ করে। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের পেশাগতভাবে এবং নৈতিকভাবে কাজ করতে হবে, এবং আমরা এটি নিয়ে কোনও আপস করব না।’
এদিকে, জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনী গত মঙ্গলবার থেকে সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, শহরে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ১১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন ১৩ বছর বয়সী বালকও রয়েছে।
তবে ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা সেখানে শরণার্থী শিবিরের ঘরে ঘরে অনুসন্ধান চালিয়েছে এবং কয়েক ডজন অস্ত্র, বিস্ফোরক পরীক্ষাগার, টানেল শ্যাফ্ট এবং পর্যবেক্ষণ পোস্ট পেয়েছে। শত শত সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।