গাজায় প্রতি ১০ মিনিটে নিহত হচ্ছে একটি শিশু: সেভ দ্য চিলড্রেন
ছবি সংগৃহিত
গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ২০ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গড়ে তিনজনের একজন শিশু।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সেখানে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ মানুষ। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল সেভ দ্য চিলড্রেনের ফিলিস্তিনি শাখার আঞ্চলিক পরিচালক জেসন লি বলেছেন, গাজায় প্রতি ১০ মিনিটে একজন শিশু নিহত হচ্ছে।
জেরুজালেম থেকে সাক্ষাৎকার প্রদানকালে লি বলেন, "গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ২০ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গড়ে তিনজনের একজন শিশু।"
এছাড়াও লি বলেন, "জনাকীর্ণ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলতে পারার কারণে সংক্রামক রোগ বাড়ছে। এমতাবস্থায় তিনি গুটিবসন্ত ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বলে জানান।
একইসাথে গাজায় পাঠানো ত্রানবাহী ট্রাকগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার ছিল না বলে জানান লি। তিনি বরং এই পরিমাণকে 'সমুদ্রের মধ্যে একটি বিন্দু' বলে অভিহিত করেন। সেখানে আরও বেশি খাবার, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং জ্বালানির প্রয়োজন।
এদিকে বর্তমানে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, "পার্ল হারবার কিংবা ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়নি। একইভাবে ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হামলার পর ইসরায়েলও হামাসের সঙ্গে শত্রুতা বন্ধ করতে রাজি হবে না।"
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আচমকা হামলায় প্রায় ১৪০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়। একইসাথে জিম্মি করা হয় ২০০ এরও বেশি মানুষকে। জবাবে কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয় তেল আবিব।
নেতানিয়াহু মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরতির আহ্বানের মানে হচ্ছে ইসরায়েলকে হামাসের কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বান করা৷ সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে অবরুদ্ধ এলাকাটিতে যুদ্ধাপরাধসহ নানান ধরনের অপরাধের প্রবণতা আরও বাড়বে এবং সেগুলোর কোনো রেকর্ড রাখাও সম্ভব হবে না।
তবে নেতানিয়াহু এক্ষেত্রে গাজায় যুদ্ধের প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে বাইবেলের একটি লাইনও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "বাইবেলেও বলা হয়েছে, 'শান্তির জন্যও সময় রয়েছে, যুদ্ধের জন্য সময় রয়েছে।' এখন সময় যুদ্ধের।"
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রোববার (৩০ অক্টোবর) শিশু বিষয়ক এই এনজিও একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে জানানো হয়, গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রায় ৩ হাজার ৩২৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পশ্চিমতীরে মারা গেছে আরও ৩৬ শিশু।
একটি শিশুর মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু সেখানে প্রতিনিয়ত শত শত শিশু প্রাণ হারাচ্ছে। গাজায় সংঘাতের মাশুল দিতে হচ্ছে তাদের। জেসন লি বলেছেন, একমাত্র যুদ্ধবিরতিই এসব শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।
এদিকে গাজায় এখনও প্রায় এক হাজার শিশু নিখোঁজ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব শিশু হয়তো ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছে। গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে ৮ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণে প্রতিনিয়তই শিশুমৃত্যু বাড়ছে। সংস্থাটির এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে সেখানে নিহত শিশুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,১৯৫ জনে; যা ২০১৯ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে বার্ষিক সংঘাতে নিহত শিশুদের মোট সংখ্যার চেয়ে বেশি।
শুধু বিমান হামলা নয়, বরং গাজায় স্থল অভিযানের মাত্রাও বাড়াচ্ছে ইসরায়েল। এমতাবস্থায় ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়াজুড়ে শহরে শহরে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে।
এরমধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের একটি হয়েছে লন্ডনে। সেখানে দেশটির বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকারের কাছে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বিশাল মিছিল করেছে।