সৌরভকে নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির টানাটানি চলছেই
বহুদিন পরে ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ একজন আইকন পেয়েছিল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কালে কালে সেই সৌরভ সীমান্তের বেড়া পার করে গোটা বাঙালি জাতির আইকন হয়ে উঠতে পেরেছিলেন।
সৌরভের খেলার সময় শেষ। যেভাবে বিসিসিআইয়ের (বোর্ড অব ক্রিকেট কন্ট্রোল অব ইন্ডিয়া) শীর্ষ পদ থেকে তাকে সরে যেতে হয়েছে, তাতে তার প্রশাসক হিসাবেও ভবিষ্যৎ খুব একটা ঝলমলে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু সৌরভকে যেনতেন প্রকারে আইকন বানিয়ে রাখতেই হবে, অন্তত এপার বাংলার রাজনীতিতে। নাহলে প্রয়োজনের সময় কার ঘাড়ে বন্দুক রেখে ফায়ার করা যাবে? তাই ক্রীড়াজগতে এই মুহূর্তে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠা সৌরভকে নিয়ে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি চলছেই।
একদিকে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল, অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। তৃণমূল দাবি করে থাকে সৌরভ কলকাতার বাসিন্দা, তাই ঘরের লোক। আর অন্যদিকে সৌরভ তার বিসিসিআইয়ের পদ হাসিল করতে পেরেছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতা অমিত শাহের বদান্যতায়। ফলে বিজেপিরও দাবি আছে তার ওপর।
বিসিসিআই সভাপতির পদ থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই, সেই প্রসঙ্গে বারবার সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌরভকে অন্যায়ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সৌরভকে সরিয়ে দেওয়ার পর অমিত শাহের পুত্র জয় শাহকে রাখা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সৌরভ ইস্যুতে এইবার মমতাকে নিশানা করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক। বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর শাহরুখ কেন? মুখ্যমন্ত্রীকে এ প্রশ্ন করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
তিনি বলেন, সৌরভ আমাদের গর্ব। প্রত্যেকটি কাজের উপযুক্ত সময়সীমা রয়েছে। সময়কাল রয়েছে। আর সুযোগ প্রত্যেককেই দেওয়া হবে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যদি আরও ভালো কোনো জায়গায় যান, আমরাই সবচেয়ে বেশি খুশি হব। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য, সত্যি কথা বলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো কথা বলার জন্য কথা বলেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য মনে যদি বিন্দুমাত্র আবেগ থেকে থাকত, তাহলে শাহরুখ খানকে বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর না করে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে করতেন। কিন্তু তা তিনি এতদিনেও করেননি।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে উত্তরবঙ্গ সফরের যাওয়ার আগে সৌরভকে আইসিসি পদের জন্য পাঠানোর দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরেও ফের আবার সরব হন সৌরভের বিষয়ে।
তিনি বলেন, ‘তোমরা দেখেছ আমি ওকে নিয়ে প্রশ্নও করেছি। ও ভেরি মাচ এনটাইটেলড ছিল। তিনবার ডিরেক্টর ছিল। ওকে পাঠালে দেশের গৌরব বাড়ত।’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, জগমোহন ডালমিয়াও তো হয়েছিল। শরদ পাওয়ারও তো হয়েছিল। তাহলে কোন এক অজ্ঞাত কারণে আজকে সৌরভের মতো ছেলেকে বঞ্চিত করা হয়েছে? অন্য কারোর জন্য রিজার্ভ করে পজিশন রেখে দেওয়া হয়েছে, বলেও অভিযোগ মমতার।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, কোন অজানা কারণে? নিজস্ব স্বার্থপরতার কারণে দেশের সত্যিকারের যারা ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ, তাদেরকে বঞ্চিত করে, একাজ করতে পারে? তিনি আরও দাবি করেন, আজ শচিন টেন্ডুলকার এই জায়গায় থাকলে আমি তাকেও সমর্থন করতাম। আজাহার থাকলে আজাহারকেও সমর্থন করতাম। আমরা ক্রিকেটকে সর্বদা ইন্ডিয়া হিসাবে দেখি। আজ সৌরভ ভদ্র ছেলে বলে কিছু বলেনি। মুখ বুজে ওর যে ব্যাথা হয়েছে, সেই ব্যাথা বুঝতে দেয়নি। মুখ্যমন্ত্রীসহ ঘাসফুল শিবির এই বিষয়টিকে সহজভাবে নিচ্ছে না, বলেও জানানো হয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেছেন, লজ্জাহীন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এটা। কোনো একজন ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলের শোরগোল পড়ে যায়। সৌরভ গাঙ্গুলীর প্রসঙ্গে যখন মুখ্যমন্ত্রী বারবার কেন্দ্রকে প্রশ্ন করছেন, ঠিক এই সময় ভারতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার অশোক দিন্ডার প্রশ্ন— ২০১১ সালে যখন সমস্ত বাঙালিদের কেকেআর থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তখন মুখ্যমন্ত্রী কোথায় ছিলেন?
অশোক দিন্ডা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, এই মুহূর্তে সমস্ত ক্রীড়া জগতের মাথায় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা। তাই, উনি এ বিষয় নিয়ে মুখ না খোলাই ভালো।
আরএ/