তেঁতুলিয়ায় অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ বাড়ছে
রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে শাক-সবজি উৎপাদন করে কৃষকেরা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও সাধারণ মানুষের বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব শাক-সবজি খেয়ে নানান রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষজন। এদিক বিবেচনা করে সরকার নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন চাষিরা। দিনদিন স্বাস্থ্যসম্মত এই সবজির চাহিদাও বাড়ছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে সবজি উৎপাদনের জন্য চাষিদের মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। কৃষকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে কৃষক ক্লাব। ক্লাবের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে চাষিরা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন। এই সবজি বিক্রির জন্য তেঁতুলিয়া বাজারে গড়ে তোলা হয়েছে বিষমুক্ত সবজির দোকান।
পরিবেশ বান্ধব এই সবজি উৎপাদনে সহযোগিতা করছে তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত উপজেলার ৫ শতাধিক সবজি চাষিকে কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এবছর রবি মৌসুমে ১৫০ জন কৃষকের প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে বিষমুক্ত পরিবেশ বান্ধব সবজি চাষ হয়েছে। এসব সবজি ক্ষেত থেকে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে প্রায় তিন হাজার টন সবজি উৎপাদন হয়েছে। কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় তেতুঁলিয়ায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চাষিরা বলছেন, এসব সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের বিপরীতে জৈব সার ব্যবহার করছেন। জৈব সার উৎপাদনে তারা গোবর, গাছের লতা পাতা ব্যবহার করে কম্পোষ্ট সার তৈরি করেন। কিটনাশকের পরিবর্তে তারা জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করছেন। তারা বলছেন এসব বালাই নাশক নিজেরাই তৈরি করেন তারা। পেঁয়াজ রসুনের নির্যাস, ভাট ফুলের নির্যাস, নিম পাতার নির্যাসসহ আরও অনেক ধরনের উদ্ভিদ থেকে তারা নির্যাস তৈরি করে সবজি খেতে স্প্রে করে থাকেন। পোকা মাকড়ের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য তারা হাত জাল ব্যবহার করেন। সেক্স ফোরমোন ফাঁদে স্ত্রী পোকার গন্ধ যুক্ত করেন। এই গন্ধ পেয়ে অন্যান্য পোকারা এই ফাঁদে আটকে যায়। চাষিরা বলছেন পরিবেশ বান্ধব সবজি উৎপাদনে খরচ কম। ফলনও ভালো হয়। এবছর লালশাক, ডাটাশাক, সীম, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, মিষ্টিকুমড়োসহ আরও নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করছেন। এসব সবজি উৎপাদন করে তারা নির্ধারিত দোকানে পৌঁছে দেন। বিষমুক্ত সবজি চাষে শুধু পুরুষরা নয় নারি কৃষকরাও এগিয়ে এসেছে। তারা সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বাড়ির আশপাশে এবং আঙ্গিনা জুড়ে নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করছেন ।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামের চাষি মুন্নি বেগম জানান, কৃষক মাঠ স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবার বাড়ির পাশের ১০ শতক জমিতে লাউ এবং মিষ্টি কুমড়ো চাষ করি। আমার ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আমি কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করিনি। আমার নিজের পোষা ছাগল গরুর গোবর ব্যবহার করেছি। আর ভাটগাছের পাতা থেকে রস বানিয়ে গাছে ছিটিয়েছি।
তেতুঁলিয়া সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া গ্রামের হালিম উদ্দিন জানান, পরিবেশ বান্ধব বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে খরচ অনেক কম। তাই লাভ বেশি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তররের উপসহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন জানান, ২০১৮ সাল থেকে তেঁতুলিয়ায় বিষমুক্ত সবজি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রান্তিক কৃষকদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কৃষক মাঠ স্কুল নামের এই প্রতিষ্ঠান কৃষকদের বাড়িতেই পরিচালনা করা হয়। নির্দিষ্ট গ্রামের চাষিরা পরিবেশ বান্ধব সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরাই একটি ক্লাব গঠন করেন। তারা নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে থাকেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করার জন্য সবজি চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাদের সংগঠিত করে গ্রামে গ্রামে কৃষক ক্লাব গঠিত হচ্ছে। এতে তারা নিজেরা সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য কৃষকরাও নিরাপদ সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।