শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

আত্মহত্যা

আত্মহনন নয়, জেগে উঠুন নতুন উদ্যমে

শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত গান রয়েছে-
আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাখরখানি
বেচোনা বেচোনা বন্ধু তোমার চোখের মনি।
ঝিঙে বেচো পাঁচ সিকেতে, হাজার টাকায় সোনা
বন্ধু তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন বেচোনা।

অথচ আমাদের জগৎ জুড়ে স্বপ্ন বেচে দেওয়ার মেলা বসে রোজ। স্বপ্ন বেচে দেওয়ার কত শত গল্প আমাদের চারপাশে। বহু চেনা-অচেনা মানুষ রয়েছে যারা একটু একটু করে তাদের স্বপ্ন বেচে দিচ্ছে প্রতিটি দিন। বর্তমান বিশ্বে সম্পদ ও সফলতার অভাব নেই,যত অভাব কেবল শান্তির।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন-"মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে,মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।" অথচ এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে চলে যাবার কত তাড়া অনেকের।

কেন বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতাঃ সারা বিশ্বে দিন দিন আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েই চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রিভেন্টিং সুইসাইড অ্যা সোর্স ফর মিডিয়া প্রফেশনালস ২০১৭ জরিপ বলছে, প্রতিবছর বিশ্বে ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন।

এবার বলা যাক বাংলাদেশের কথা, ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) দেশের আত্মহত্যার ঘটনার তথ্য রাখে। সে তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে দেশে আত্মহত্যা করে ১০ হাজার ৭৪৯ জন। অপরদিকে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১৮ সালে দেশে ১১ হাজারের বেশি আত্মহত্যা করে। সারা বিশ্বে আত্মহত্যায় বংলাদেশের অবস্থান দশম। যা ২০১১ তে ছিল ৩৪ তম।

নিশ্চিতভাবে প্রতি বছর বাড়ছে আত্মহত্যার পরিমাণ। আত্মহত্যার কারণ খুঁজতে গেলে প্রথমে সামনে আসে অধিক মানসিক অবসাদ, ব্যক্তি জীবনে অপ্রাপ্তি, অবহেলা, সম্পর্কের বিচ্ছেদ,  পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও শারীরিক অসুস্থতা, যৌন হয়রানি, দাম্পত্য কলহ, জটিল রোগের দুঃসহ যন্ত্রণা, পরকালীন শাস্তির ভয়হীনতা, নৈতিক অবক্ষয় কিংবা আত্মহত্যার প্ররোচনায় ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। তাছাড়া মানসিকভাবে দুর্বল প্রকৃতির মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আত্মহত্যার পেছনে ব্যাক্তির পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনেকাংশে দায়ী। যারা আত্মহত্যা করে তাদের ৯০ ভাগের মধ্যেই কোনও না কোনো মানসিক রোগ দেখা যায়। অধিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বিষন্নতা, যা মানসিক রোগের অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করে স্বাস্থ্য সংস্থা। তাছাড়া নিজেকে নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতা ও অধিক আবেগ তো রয়েছেই। বিষন্নতার একটি পর্যায়ে ব্যক্তি নিজেকে সম্পূর্ণ  অযোগ্য মনে করে। অধিক মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিরা আত্মহত্যাকে ওয়েলকাম রিলিজ হিসেবে বিশ্বাস  করে।


মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতামতঃ বিশেষজ্ঞরা মনে করে আত্মহত্যা দুই ধরনের। ইম্পালসিভ সুইসাইড (হঠাৎ আত্মহত্যা) আরেকটি ডিসিসিভ সুইসাইড (পূর্বপরিকল্পিত আত্মহত্যা)। আত্মহত্যার অন্যতম কারণ "সিজোফ্রেনিয়া ",যাকে গুরুতর মানসিক সমস্যা বলা হয়। এরমধ্যে পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার, কনটাক্ট ডিসঅর্ডার, মাদকাসক্তি, ডিপ্রেশন, পারিবারিক কলহ, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা তো রয়েছেই। শিশুদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যাটি অবজারভেশন লার্নিং বা দেখে দেখে শেখা হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে অনেক মুভি, কার্টুন সিস্টেম এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন ভিডিও কন্টেন্ট দায়ী। কারণ এগুলোতে অনেক সময় আত্মহত্যাকে খোলামেলা উপস্থাপন, সমস্যা সমাধান বা মুক্তির পথ হিসেবে দেখানো হয়। কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই দৃশ্যগুলো এমনভাবে মাথায় প্রবেশ করে থাকে যে, কেউ সামান্য বকা দিলে কিংবা সমস্যা সমাধানে সহজেই সে এই পন্থাগুলো বেছে নেয়। এ বিষয়টি কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে। টেলিভিশন ও পত্রিকাগুলোতে আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে নীতিমালা মেনে না চলার বিষয়টিও রয়েছে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে আত্মহত্যা করা যায় এমন উপাদানগুলোর সহজলভ্যতা। আত্মহত্যার উপকরণগুলো হাতের কাছে থাকলে কোনো কারণে অল্পতেই ব্যক্তি হুট করে আত্মহত্যা করে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির মধ্যে আত্মহত্যার কোনো উপসর্গ আগে থেকে পরিলক্ষিত হয় না।


বিশ্ব বিখ্যাত সাহিত্যিকদের আত্মহত্যাঃ বলা হয়ে থাকে সৃজনশীলতা, বিষন্নতা ও আত্মহত্যা এই তিনের মধ্যে আন্তসম্পর্ক রয়েছে। সৃজনশীলতার একটি অন্যতম অন্ধকার দিক হলো আত্মহনন। কারণ সৃষ্টিশীল মানুষ অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে,অনেক শিল্পী, কবি, লেখকদের মনোজগতের অন্যতম একটি প্রবণতা হলো বিষন্নতা, অরাজক ও মানসিক ভারসাম্যহীনতায় আক্রান্ত হওয়া। যাকে বলা হয় 'বাইপোলার ডিসঅর্ডার। এক গবেষণায় দেখা গেছে লেখালেখি, গবেষণা ও বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে যারা লিপ্ত তারা সমাজের অন্য সকলের থেকে ৮ শতাংশ বেশি বিষন্নতা ও মানসিক ভারসাম্যহীনতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। তবে কবি-লেখকদের বেলায় এই ঝুঁকি অনেক বেশি। এবার আসা যাক আত্মহুতি দেওয়া বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিকদের কথায়:

হান্টার এস থম্পসনঃ আমেরিকান বংশোদ্ভূত হান্টার এস থম্পসনকে বলা হয় বিশ্বখ্যাত অন্যতম সেরা ঔপন্যাসিক। তিনি নিজের শেষ লেখাটির নাম দিয়েছিলেন "ফুটফল খেলার মৌসুম শেষে। এটি তিনি লিখেছিলেন স্ত্রী অনিতাকে উদ্দেশ্য করে। তার লেখাটি ছিল এমন-"আর কোন খেলা নেই। আর কোন বোমা নেই। চলতে থাকা নেই। কোন মজা নেই। সাঁতার কাটা নেই। ৬৭,৫০ এর পরও ১৭ টি বছর। আমার চাওয়ার ও দরকারের চেয়েও ১৭ টি বাড়তি বছর, বিরক্তিকর। আমি সবসময়ই উদ্দাম। কারও জন্য কোনও আনন্দ নেই। ৬৭ তুমি লোভী হয়ে যাচ্ছো। বুড়োমী দেখাও। শান্ত হও এটা ব্যাথা দিবে না। এর চারদিন পরেই স্ত্রীর সাথে কথা বলতে বলতে গুলি করে আত্মহত্যা করেন তিনি। অনেকদিন ধরে শারীরিক বিকলাঙ্গতায় ভুগছিলেন । তাঁর শেষ লেখাটিতে যেন লেখাই ছিল আত্মহত্যার কথা।

ভার্জিনিয়া উল্ফঃ ইংরেজি ভাষার প্রখ্যাত কবি ভার্জিনিয়া উল্ফ ঊনিশ শতকে মডার্নিজম চর্চাকারী ব্রিটিশ লেখকদের মধ্যে অন্যতম। তার বিখ্যাত উক্তি ‘নারী যখন ফিকশন লেখে তখন তার একটি কক্ষ আর কিছু অর্থ প্রয়োজন।’ এই কবি একদিন তার ওভারকোটের পকেটে নুড়ি পাথর বোঝাই করে হেঁটে নেমে গিয়েছিলেন খরস্রোতা পাথুরে নদীতে। আর কখনও ফিরে আসেন নি। শেষ বিদায়ের আগে তিনি তার স্বামীকে একটি চিঠি লিখেন। তার এই চিঠিটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পড়া সুইসাইড নোটগুলোর মধ্যে একটি। তার এই চিঠিটি  এখনও পড়েন বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীরা।
তার চিঠির কিছু অংশ:
প্রিয়তম
আমি বুঝতে পারছি আমি আবারও পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি এবার হয়তো এই কঠিন সময় অতিক্রান্ত হবে না। আমি নানা রকম স্বর শুনতে পাচ্ছি, কিছুতেই মনোসংযোগ করতে পারছি না। তাই যা সবচেয়ে ভালো মনে হচ্ছে সেটিই করতে যাচ্ছি।

ডেভিড ফস্টার ওয়ালেসঃ তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্প লেখক এবং ইংরেজির প্রভাষক। তার লেখা ‘ইনফিনিটি জাস্ট’ বইটি ইংরেজি ভাষার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০০ বইয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। হঠাৎ করে তিনি মেরি নামক এক কবির প্রেমে পড়েন। কিন্ত কবি মেরি এতে কোনো সারা দেন নি। মেরির ভালোবাসা না পেয়ে তিনি মাদকসহ বিভিন্ন নেশায় জড়িয়ে যান। দীর্ঘদিন হতাশাগ্রস্ত ডেভিড ফস্টার ২০০৮ সালে ৪৬ বছর বয়সে, দুইপাতার সুইসাইড নোট লিখে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।


আরও অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিকরা রয়েছেন যেমন-সিলভিয়া প্লাথ, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, অ্যান সেক্সটন, এডগার অ্যালান পো,জন কেনেডি টুল।

আত্মাহুতি থেকে ফিরে আসা কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বঃ 

বিশ্ব বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার’ মুভি এবং বইটির কথা আমরা কম বেশি সকলেই শুনেছি, দেখেছি। বিশ্বের বিখ্যাত বইগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি বই। যে বইটি  পৃথিবীর ৬৫টি  ভাষায় অনুবাদ করে সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। হ্যারি পটারের সফল এবং বিখ্যাত লেখক জে. কে রাউলিং। যিনি মানসিক অবসাদ এবং অর্থাভাবে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তার মনে হয়েছিল এ সমাজে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তিনি মনে করতেন তিনি চরমভাবে ব্যর্থ একজন মানুষ। নিজেকে প্রচণ্ড রকম ব্যর্থ মনে করা মানুষটিই আজ পৃথিবীর কাছে নিজেকে তুলে ধরেছেন অন্যতম একজন সফল মানুষ হিসেবে।


ওপার বাংলার কমেডি শো মিরাক্কেলের মীর আমাদের সকলের পরিচিত। যিনি কি-না ৪ বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিছু একটার পেছনে ছুটতে থাকা বা হতাশা তাকে গ্রাস করে ফেলেছিল পুরোপুরি। তবে সেই মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। আজ সেই মানুষটিই অন্য সকল মানুষদের হাসিয়ে বেড়াচ্ছেন, মন ভালো করে দিচ্ছেন আনন্দের ফেরিওয়ালার মতো।


বিখ্যাত সিঙ্গার কৈলাশ খের হতাশার এক পর্যায় এসে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এক সময় তার মনে হলো সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল এবং জীবনের অর্থবহতা খুঁজে বের করতে হবে। তার হতাশাকেই তিনি বেঁচে থাকার অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করলেন। অনির্বচনীয় যন্ত্রণা এবং হতাশা থেকে নিজেকে নতুন করে পরিচালনা করেছেন।


এখন এরা অন্যদের অর্থবহ সার্থক জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করেন। আমরা কেউ ব্যর্থ নই,কেবল সঠিক সময়ের অপেক্ষায়।


পরিবার প্রিয়জনের ভূমিকাঃ জীবনের সকল ক্ষেত্রে পরিবার বা প্রিয় মানুষটির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অন্য দেশগুলোতে বয়স্কদের আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। তবে আমদের দেশে কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। তাই পরিবারকে সন্তানের কাছে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহজ হতে হবে। প্রায়ই দেখা যায় আমাদের দেশে যখন বড় ধরনের পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফলাফল দেওয়া হয়, তখন একসঙ্গে অনেকগুলো ছেলে-মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কারণ, হয়তো বাবা-মা পরিবার ও তার পরিবেশ থেকে সহানুভূতিশীল আচরণ সে পায়নি। তার ফলাফলের কারণে তাকে তীব্রভাবে সমালোচিত করা হয়েছে। যা সে গ্রহণ করতে পারেনি ফলে ঝোঁকের বশে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

শিশুদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা সফলতার সঙ্গে ব্যর্থতাকেও মেনে নিতে পারে। আত্মহত্যার উপকরণগুলোর সহজলভ্যতাও কমানো জরুরি। পাশাপাশি পরিবারকে বুঝতে হবে বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে -মেয়েরা অনেক আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল হয়ে থাকে। মাত্রা বজায় রেখে সন্তানকে শাসন করুন। পরিবারের ছোট থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত কারও সমস্যাকে ছোট করে না দেখে সতর্ক হতে হবে। পরিবারের পাশে থেকে পরিবারকে সময় দিন। সকল সম্পর্ককে প্রাধান্য দিন, আগলে রাখুন। প্রিয়জন এবং আপনার পাশের মানুষটিকে শুনুন ও তার মনের যত্ন নিন। কেউ বিষন্নতায় ভুগলে ‘মন খারাপ করো না’, ‘ভালো খাবার খাও’, ‘আনন্দ করো’, ‘বেড়াও’, ‘বই পড়’ এসব না বলে তাকে অবশ্যই একজন মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন করা উচিত। তার মাধ্যমে সাইকোথেরাপি দিন। অবহেলা নয়, প্রতিটি মানুষের সচেতনতাই বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেকগুলো জীবন।


আত্মহত্যার সমাধানঃ
Sometimes you win, sometimes you learn. অর্থাৎ আপনার হেরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুযোগ আছে-জিতে যাওয়ার নয়তো শিখে যাওয়ার। অথচ শিখতে পারার সুযোগটাকে আমরা ভুল করে হেরে যাওয়া বলি। জীবনের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে আত্মহনন কোনো সমাধান নয়। চিন্তা করুন, সবাইকে কি একইসময়ে-একইসাথে গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে? না, গন্তব্যে পৌঁছানোই আমাদের আসল উদ্দেশ্য। সবার সঙ্গে আপনি পৌঁছাতে পারছেন না তবে এটিকে বিরতি ভাবুন, বিশ্রাম নিন অতপর উঠে দাঁড়ান। হয়তো একদিন আপনিই হবেন অন্যতম একজন সফল ব্যক্তি।

বিশ্বখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ও লেখক  জর্জ উইনবার্গের একটি বিখ্যাত উক্তি ‘আশা কখনও তোমাকে ছাড়ে না, বরং তুমিই তাকে ছেড়ে দাও।’ একটি আত্মহত্যার প্রভাব কেবল একজন ব্যক্তির জীবননাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট পরিবার, ঘনিষ্ঠ জন, সমাজে এক ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনে।


আত্মহত্যা পুরোপুরি প্রতিরোধ করা না গেলেও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এর প্রতিরোধ করার দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রের, চিকিৎসকের কিংবা মনোবিজ্ঞানীর নয়। সমাজ, পরিবার, আপনার এবং প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব এটি। বিকল্প ভাবুন। মৃত্যু নয়, জীবনই হতে পারে আপনার সমাধান। আত্মহত্যা নয়, আপনি জীবনের পথকে বেছে নিন। আপনার শক্তি সফলতার পথকে খুঁজে বের করুন। আত্মহত্যা কেবল দুর্বল মানসিকতার উদাহরণ, সমাধান নয়।

আমরা মনে করি, কেবল শরীরের যত্ন নেওয়া উচিত। কিন্তু শরীর এবং মন দুটোরই যত্ন সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রবণতা কমিয়ে আনতে শিশুকাল থেকে মা- বাবার আন্তরিক আচরণ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। মা-বাবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ সন্তানের আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

জীবনে আনন্দ, ব্যর্থতা থাকবেই। সকল ব্যর্থতার গল্পকে উঠে দাঁড়ানোর গল্পতে পরিণত করুন। আর একটিও আত্মহনন নয় বরং ধৈর্য ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি সুস্থ, সুন্দর পৃথিবী গড়াই আমাদের কাম্য। বেঁচে থাকলে একদিন আলো ও আনন্দের উৎসবে আমরা সকলে যুক্ত হতে পারবো।

Header Ad
Header Ad

ইয়েমেনের বিমানবন্দর-বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইসরায়েলি বিমান হামলা  

ছবি: সংগৃহীত

ইয়েমেনের রাজধানী সানার বিমানবন্দর, সেনাবাহিনীর ঘাঁটি ও অন্য একটি শহরের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। সানা ছাড়াও দেশটির বন্দরনগরী হুদাইদাহতেও বিমান হামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথিদের ও ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি পরিচালিত আল-মাসিরাহ টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সানা বিমানবন্দর ও এর পার্শ্ববর্তী আল-দাইলামি সেনা ঘাঁটি এবং হুদাইদাহর একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করেছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। ইসরায়েলি এই হামলার জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, রাজধানী সানা ও হুদাইদাহ শহরে হামলার ঘটনাকে ‘‘ইসরায়েলি আগ্রাসন’’ বলে অভিহিত করেছে আল-মাসিরাহ টেলিভিশন। এই হামলার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।

প্রত্যক্ষদর্শী ও হুথি বিদ্রোহীরা বলেছেন, রাজধানী সানার একটি বিমানবন্দর ও সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এছাড়া পশ্চিমাঞ্চলীয় বন্দরনগরী হুদাইদাহর একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও হামলা করা হয়েছে।

তবে ইসরায়েলি হামলায় ইয়েমেনে কোনও হতাহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। কয়েকদিন আগে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। এরপর থেকেই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে।

গত বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের প্রথম মাস থেকেই ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আসছে ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। গত সপ্তাহে হুথিদের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে এক ডজনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলও হুথিদের বিরুদ্ধে দফায় দফায় হামলা করছে।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছিলেন, হুথিদের বিরুদ্ধে ‘‘কঠোর আঘাত’’ হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতৃত্বকে নির্মুল করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

সুপ্রিম কোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত

 

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, বিচারপতি ভবন, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের বাসভবন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ভবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমেদের সই করা একটি সার্কুলারে এ তথ্য জানানো হয়।

সার্কুলারে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দেশের বিচার অঙ্গনের সর্বোচ্চ স্থান। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় এবং সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের মাননীয় বিচারপতি মহোদয়গণ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকেন। এ ছাড়া দেশের বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলার নথিসহ কয়েক লাখ মামলার নথি অত্র কোর্টে রক্ষিত আছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিচারপ্রার্থী জনগণকে বিচারিকসেবা প্রদান করা এবং বিভিন্ন মামলার নথি সংরক্ষণের নিশ্চয়তা প্রদানের নিমিত্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কম্পাউন্ড, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, বিচারপতি ভবন, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের মাননীয় বিচারপতি মহোদয়গণের বাসভবন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, অ্যাটর্নি জেনারেরের কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ভবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা অতীব জরুরি।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কম্পাউন্ড, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, বিচারপতি ভবন, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের মাননীয় বিচারপতি মহোদয়গণের বাসভবন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, সু্প্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন ভবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারকরণের নিমিত্ত জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েনপূর্বক সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ এ বিষয়ে আনুষঙ্গিক কার্য সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

Header Ad
Header Ad

তিব্বতে ‘বিশ্বের বৃহত্তম’ জলবিদ্যুৎ বাঁধ তৈরি করবে চীন  

ছবি: সংগৃহীত

তিব্বতে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে চীন। তিব্বত মালভূমির পূর্ব পাশে এই প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নিম্নপ্রবাহে ভারত ও বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ইয়ারলুং জাংপো নদীর নিম্নপ্রবাহে এই বাঁধ তৈরি হবে বলে। চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, এ প্রকল্প থেকে বার্ষিক ৩০ হাজার কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।

বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চীনের মধ্যাঞ্চলীয় থ্রি গর্জেস বাঁধ। এই প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক ৮ হাজার ৮২০ কিলোওয়াট-ঘণ্টা।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই প্রকল্পটি চীনের শূন্য কার্বন লক্ষ্য পূরণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। আর প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোকে উজ্জীবিত করবে এবং তিব্বতে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র প্রসারিত হবে।

প্রকৌশলগত খরচসহ এই বাঁধ নির্মাণের সার্বিক ব্যয় থ্রি গর্জেস বাঁধ প্রকল্পকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। থ্রি গর্জেস বাঁধ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছিল ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ডলার। এই প্রকল্পের কারণে বাস্তুচ্যুত ১৪ লাখ মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। ফলে এই প্রকল্পের মোট ব্যয় বাজেটের চারগুণের বেশি ছিল।

তিব্বতের প্রকল্পের কারণে কত মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে আর এটি স্থানীয় আবাসনকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করবে কর্তৃপক্ষ তার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। তবে চীনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিব্বতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো পরিবেশের ওপর বা নিম্নপ্রবাহে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলবে না।

চীন এমন দাবি করলেও ভারত ও বাংলাদেশ এ বাঁধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রভাবে স্থানীয় আবাসনের পাশাপাশি নিম্নপ্রবাহের নদীগুলোর পানি প্রবাহ ও গতিপথকেও প্রভাবিত করবে। এতে দুই দেশের লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ইয়েমেনের বিমানবন্দর-বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইসরায়েলি বিমান হামলা  
সুপ্রিম কোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
তিব্বতে ‘বিশ্বের বৃহত্তম’ জলবিদ্যুৎ বাঁধ তৈরি করবে চীন  
ফায়ার ফাইটার নয়ন এর বাড়ীতে শোকের মাতম চলছে
চট্টগ্রামের এক ইঞ্চি মাটিতে হাত দিলে কারও চোখ থাকবে না: ব্যারিস্টার ফুয়াদ  
সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে নষ্ট জাহাজ, মাঝপথে আটকা ৭১ যাত্রী
তিতাসের ১৬ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন
দর্শনা চেকপোস্টে ভারতীয় মদসহ এক ভুয়া পুলিশ আটক
আগুনে পুড়ল ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, যেখানে অফিস করবেন আসিফ মাহমুদ
অবৈধ বালু ঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, পালিয়ে গেল বালুখেকোরা  
নসরুল হামিদের ৯৮ ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন: দুদকের মামলা
ত্রিপুরা পল্লীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার
সচিবালয় কিভাবে আওয়ামী মুক্ত করতে হয় সেটা ছাত্র জনতা জানে: হাসনাত আব্দুল্লাহ
অবৈধ বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ৩১ জানুয়ারির পর
সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ড তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি
টাঙ্গাইলে ২৭ মামলার আসামিসহ ডাকাতচক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার  
তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে সাদ অনুসারীদের অনুরোধ
দেশের অবস্থা ভালো না, শেখ হাসিনা আবারও আসবে: সোলায়মান সেলিম
রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক হলেন মোঃ সুবক্তগীন
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি মির্জা ফখরুলের