বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫ | ২৬ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

আত্মহত্যা

আত্মহনন নয়, জেগে উঠুন নতুন উদ্যমে

শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত গান রয়েছে-
আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাখরখানি
বেচোনা বেচোনা বন্ধু তোমার চোখের মনি।
ঝিঙে বেচো পাঁচ সিকেতে, হাজার টাকায় সোনা
বন্ধু তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন বেচোনা।

অথচ আমাদের জগৎ জুড়ে স্বপ্ন বেচে দেওয়ার মেলা বসে রোজ। স্বপ্ন বেচে দেওয়ার কত শত গল্প আমাদের চারপাশে। বহু চেনা-অচেনা মানুষ রয়েছে যারা একটু একটু করে তাদের স্বপ্ন বেচে দিচ্ছে প্রতিটি দিন। বর্তমান বিশ্বে সম্পদ ও সফলতার অভাব নেই,যত অভাব কেবল শান্তির।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন-"মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে,মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।" অথচ এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে চলে যাবার কত তাড়া অনেকের।

কেন বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতাঃ সারা বিশ্বে দিন দিন আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েই চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রিভেন্টিং সুইসাইড অ্যা সোর্স ফর মিডিয়া প্রফেশনালস ২০১৭ জরিপ বলছে, প্রতিবছর বিশ্বে ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন।

এবার বলা যাক বাংলাদেশের কথা, ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) দেশের আত্মহত্যার ঘটনার তথ্য রাখে। সে তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে দেশে আত্মহত্যা করে ১০ হাজার ৭৪৯ জন। অপরদিকে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১৮ সালে দেশে ১১ হাজারের বেশি আত্মহত্যা করে। সারা বিশ্বে আত্মহত্যায় বংলাদেশের অবস্থান দশম। যা ২০১১ তে ছিল ৩৪ তম।

নিশ্চিতভাবে প্রতি বছর বাড়ছে আত্মহত্যার পরিমাণ। আত্মহত্যার কারণ খুঁজতে গেলে প্রথমে সামনে আসে অধিক মানসিক অবসাদ, ব্যক্তি জীবনে অপ্রাপ্তি, অবহেলা, সম্পর্কের বিচ্ছেদ,  পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও শারীরিক অসুস্থতা, যৌন হয়রানি, দাম্পত্য কলহ, জটিল রোগের দুঃসহ যন্ত্রণা, পরকালীন শাস্তির ভয়হীনতা, নৈতিক অবক্ষয় কিংবা আত্মহত্যার প্ররোচনায় ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। তাছাড়া মানসিকভাবে দুর্বল প্রকৃতির মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আত্মহত্যার পেছনে ব্যাক্তির পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনেকাংশে দায়ী। যারা আত্মহত্যা করে তাদের ৯০ ভাগের মধ্যেই কোনও না কোনো মানসিক রোগ দেখা যায়। অধিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বিষন্নতা, যা মানসিক রোগের অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করে স্বাস্থ্য সংস্থা। তাছাড়া নিজেকে নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতা ও অধিক আবেগ তো রয়েছেই। বিষন্নতার একটি পর্যায়ে ব্যক্তি নিজেকে সম্পূর্ণ  অযোগ্য মনে করে। অধিক মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিরা আত্মহত্যাকে ওয়েলকাম রিলিজ হিসেবে বিশ্বাস  করে।


মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতামতঃ বিশেষজ্ঞরা মনে করে আত্মহত্যা দুই ধরনের। ইম্পালসিভ সুইসাইড (হঠাৎ আত্মহত্যা) আরেকটি ডিসিসিভ সুইসাইড (পূর্বপরিকল্পিত আত্মহত্যা)। আত্মহত্যার অন্যতম কারণ "সিজোফ্রেনিয়া ",যাকে গুরুতর মানসিক সমস্যা বলা হয়। এরমধ্যে পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার, কনটাক্ট ডিসঅর্ডার, মাদকাসক্তি, ডিপ্রেশন, পারিবারিক কলহ, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা তো রয়েছেই। শিশুদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যাটি অবজারভেশন লার্নিং বা দেখে দেখে শেখা হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে অনেক মুভি, কার্টুন সিস্টেম এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন ভিডিও কন্টেন্ট দায়ী। কারণ এগুলোতে অনেক সময় আত্মহত্যাকে খোলামেলা উপস্থাপন, সমস্যা সমাধান বা মুক্তির পথ হিসেবে দেখানো হয়। কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই দৃশ্যগুলো এমনভাবে মাথায় প্রবেশ করে থাকে যে, কেউ সামান্য বকা দিলে কিংবা সমস্যা সমাধানে সহজেই সে এই পন্থাগুলো বেছে নেয়। এ বিষয়টি কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে। টেলিভিশন ও পত্রিকাগুলোতে আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে নীতিমালা মেনে না চলার বিষয়টিও রয়েছে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে আত্মহত্যা করা যায় এমন উপাদানগুলোর সহজলভ্যতা। আত্মহত্যার উপকরণগুলো হাতের কাছে থাকলে কোনো কারণে অল্পতেই ব্যক্তি হুট করে আত্মহত্যা করে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির মধ্যে আত্মহত্যার কোনো উপসর্গ আগে থেকে পরিলক্ষিত হয় না।


বিশ্ব বিখ্যাত সাহিত্যিকদের আত্মহত্যাঃ বলা হয়ে থাকে সৃজনশীলতা, বিষন্নতা ও আত্মহত্যা এই তিনের মধ্যে আন্তসম্পর্ক রয়েছে। সৃজনশীলতার একটি অন্যতম অন্ধকার দিক হলো আত্মহনন। কারণ সৃষ্টিশীল মানুষ অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে,অনেক শিল্পী, কবি, লেখকদের মনোজগতের অন্যতম একটি প্রবণতা হলো বিষন্নতা, অরাজক ও মানসিক ভারসাম্যহীনতায় আক্রান্ত হওয়া। যাকে বলা হয় 'বাইপোলার ডিসঅর্ডার। এক গবেষণায় দেখা গেছে লেখালেখি, গবেষণা ও বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে যারা লিপ্ত তারা সমাজের অন্য সকলের থেকে ৮ শতাংশ বেশি বিষন্নতা ও মানসিক ভারসাম্যহীনতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। তবে কবি-লেখকদের বেলায় এই ঝুঁকি অনেক বেশি। এবার আসা যাক আত্মহুতি দেওয়া বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিকদের কথায়:

হান্টার এস থম্পসনঃ আমেরিকান বংশোদ্ভূত হান্টার এস থম্পসনকে বলা হয় বিশ্বখ্যাত অন্যতম সেরা ঔপন্যাসিক। তিনি নিজের শেষ লেখাটির নাম দিয়েছিলেন "ফুটফল খেলার মৌসুম শেষে। এটি তিনি লিখেছিলেন স্ত্রী অনিতাকে উদ্দেশ্য করে। তার লেখাটি ছিল এমন-"আর কোন খেলা নেই। আর কোন বোমা নেই। চলতে থাকা নেই। কোন মজা নেই। সাঁতার কাটা নেই। ৬৭,৫০ এর পরও ১৭ টি বছর। আমার চাওয়ার ও দরকারের চেয়েও ১৭ টি বাড়তি বছর, বিরক্তিকর। আমি সবসময়ই উদ্দাম। কারও জন্য কোনও আনন্দ নেই। ৬৭ তুমি লোভী হয়ে যাচ্ছো। বুড়োমী দেখাও। শান্ত হও এটা ব্যাথা দিবে না। এর চারদিন পরেই স্ত্রীর সাথে কথা বলতে বলতে গুলি করে আত্মহত্যা করেন তিনি। অনেকদিন ধরে শারীরিক বিকলাঙ্গতায় ভুগছিলেন । তাঁর শেষ লেখাটিতে যেন লেখাই ছিল আত্মহত্যার কথা।

ভার্জিনিয়া উল্ফঃ ইংরেজি ভাষার প্রখ্যাত কবি ভার্জিনিয়া উল্ফ ঊনিশ শতকে মডার্নিজম চর্চাকারী ব্রিটিশ লেখকদের মধ্যে অন্যতম। তার বিখ্যাত উক্তি ‘নারী যখন ফিকশন লেখে তখন তার একটি কক্ষ আর কিছু অর্থ প্রয়োজন।’ এই কবি একদিন তার ওভারকোটের পকেটে নুড়ি পাথর বোঝাই করে হেঁটে নেমে গিয়েছিলেন খরস্রোতা পাথুরে নদীতে। আর কখনও ফিরে আসেন নি। শেষ বিদায়ের আগে তিনি তার স্বামীকে একটি চিঠি লিখেন। তার এই চিঠিটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পড়া সুইসাইড নোটগুলোর মধ্যে একটি। তার এই চিঠিটি  এখনও পড়েন বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীরা।
তার চিঠির কিছু অংশ:
প্রিয়তম
আমি বুঝতে পারছি আমি আবারও পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি এবার হয়তো এই কঠিন সময় অতিক্রান্ত হবে না। আমি নানা রকম স্বর শুনতে পাচ্ছি, কিছুতেই মনোসংযোগ করতে পারছি না। তাই যা সবচেয়ে ভালো মনে হচ্ছে সেটিই করতে যাচ্ছি।

ডেভিড ফস্টার ওয়ালেসঃ তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্প লেখক এবং ইংরেজির প্রভাষক। তার লেখা ‘ইনফিনিটি জাস্ট’ বইটি ইংরেজি ভাষার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০০ বইয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। হঠাৎ করে তিনি মেরি নামক এক কবির প্রেমে পড়েন। কিন্ত কবি মেরি এতে কোনো সারা দেন নি। মেরির ভালোবাসা না পেয়ে তিনি মাদকসহ বিভিন্ন নেশায় জড়িয়ে যান। দীর্ঘদিন হতাশাগ্রস্ত ডেভিড ফস্টার ২০০৮ সালে ৪৬ বছর বয়সে, দুইপাতার সুইসাইড নোট লিখে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।


আরও অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিকরা রয়েছেন যেমন-সিলভিয়া প্লাথ, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, অ্যান সেক্সটন, এডগার অ্যালান পো,জন কেনেডি টুল।

আত্মাহুতি থেকে ফিরে আসা কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বঃ 

বিশ্ব বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার’ মুভি এবং বইটির কথা আমরা কম বেশি সকলেই শুনেছি, দেখেছি। বিশ্বের বিখ্যাত বইগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি বই। যে বইটি  পৃথিবীর ৬৫টি  ভাষায় অনুবাদ করে সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। হ্যারি পটারের সফল এবং বিখ্যাত লেখক জে. কে রাউলিং। যিনি মানসিক অবসাদ এবং অর্থাভাবে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তার মনে হয়েছিল এ সমাজে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তিনি মনে করতেন তিনি চরমভাবে ব্যর্থ একজন মানুষ। নিজেকে প্রচণ্ড রকম ব্যর্থ মনে করা মানুষটিই আজ পৃথিবীর কাছে নিজেকে তুলে ধরেছেন অন্যতম একজন সফল মানুষ হিসেবে।


ওপার বাংলার কমেডি শো মিরাক্কেলের মীর আমাদের সকলের পরিচিত। যিনি কি-না ৪ বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিছু একটার পেছনে ছুটতে থাকা বা হতাশা তাকে গ্রাস করে ফেলেছিল পুরোপুরি। তবে সেই মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। আজ সেই মানুষটিই অন্য সকল মানুষদের হাসিয়ে বেড়াচ্ছেন, মন ভালো করে দিচ্ছেন আনন্দের ফেরিওয়ালার মতো।


বিখ্যাত সিঙ্গার কৈলাশ খের হতাশার এক পর্যায় এসে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এক সময় তার মনে হলো সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল এবং জীবনের অর্থবহতা খুঁজে বের করতে হবে। তার হতাশাকেই তিনি বেঁচে থাকার অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করলেন। অনির্বচনীয় যন্ত্রণা এবং হতাশা থেকে নিজেকে নতুন করে পরিচালনা করেছেন।


এখন এরা অন্যদের অর্থবহ সার্থক জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করেন। আমরা কেউ ব্যর্থ নই,কেবল সঠিক সময়ের অপেক্ষায়।


পরিবার প্রিয়জনের ভূমিকাঃ জীবনের সকল ক্ষেত্রে পরিবার বা প্রিয় মানুষটির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অন্য দেশগুলোতে বয়স্কদের আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। তবে আমদের দেশে কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। তাই পরিবারকে সন্তানের কাছে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহজ হতে হবে। প্রায়ই দেখা যায় আমাদের দেশে যখন বড় ধরনের পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফলাফল দেওয়া হয়, তখন একসঙ্গে অনেকগুলো ছেলে-মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কারণ, হয়তো বাবা-মা পরিবার ও তার পরিবেশ থেকে সহানুভূতিশীল আচরণ সে পায়নি। তার ফলাফলের কারণে তাকে তীব্রভাবে সমালোচিত করা হয়েছে। যা সে গ্রহণ করতে পারেনি ফলে ঝোঁকের বশে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

শিশুদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা সফলতার সঙ্গে ব্যর্থতাকেও মেনে নিতে পারে। আত্মহত্যার উপকরণগুলোর সহজলভ্যতাও কমানো জরুরি। পাশাপাশি পরিবারকে বুঝতে হবে বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে -মেয়েরা অনেক আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল হয়ে থাকে। মাত্রা বজায় রেখে সন্তানকে শাসন করুন। পরিবারের ছোট থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত কারও সমস্যাকে ছোট করে না দেখে সতর্ক হতে হবে। পরিবারের পাশে থেকে পরিবারকে সময় দিন। সকল সম্পর্ককে প্রাধান্য দিন, আগলে রাখুন। প্রিয়জন এবং আপনার পাশের মানুষটিকে শুনুন ও তার মনের যত্ন নিন। কেউ বিষন্নতায় ভুগলে ‘মন খারাপ করো না’, ‘ভালো খাবার খাও’, ‘আনন্দ করো’, ‘বেড়াও’, ‘বই পড়’ এসব না বলে তাকে অবশ্যই একজন মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন করা উচিত। তার মাধ্যমে সাইকোথেরাপি দিন। অবহেলা নয়, প্রতিটি মানুষের সচেতনতাই বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেকগুলো জীবন।


আত্মহত্যার সমাধানঃ
Sometimes you win, sometimes you learn. অর্থাৎ আপনার হেরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুযোগ আছে-জিতে যাওয়ার নয়তো শিখে যাওয়ার। অথচ শিখতে পারার সুযোগটাকে আমরা ভুল করে হেরে যাওয়া বলি। জীবনের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে আত্মহনন কোনো সমাধান নয়। চিন্তা করুন, সবাইকে কি একইসময়ে-একইসাথে গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে? না, গন্তব্যে পৌঁছানোই আমাদের আসল উদ্দেশ্য। সবার সঙ্গে আপনি পৌঁছাতে পারছেন না তবে এটিকে বিরতি ভাবুন, বিশ্রাম নিন অতপর উঠে দাঁড়ান। হয়তো একদিন আপনিই হবেন অন্যতম একজন সফল ব্যক্তি।

বিশ্বখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ও লেখক  জর্জ উইনবার্গের একটি বিখ্যাত উক্তি ‘আশা কখনও তোমাকে ছাড়ে না, বরং তুমিই তাকে ছেড়ে দাও।’ একটি আত্মহত্যার প্রভাব কেবল একজন ব্যক্তির জীবননাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট পরিবার, ঘনিষ্ঠ জন, সমাজে এক ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনে।


আত্মহত্যা পুরোপুরি প্রতিরোধ করা না গেলেও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এর প্রতিরোধ করার দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রের, চিকিৎসকের কিংবা মনোবিজ্ঞানীর নয়। সমাজ, পরিবার, আপনার এবং প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব এটি। বিকল্প ভাবুন। মৃত্যু নয়, জীবনই হতে পারে আপনার সমাধান। আত্মহত্যা নয়, আপনি জীবনের পথকে বেছে নিন। আপনার শক্তি সফলতার পথকে খুঁজে বের করুন। আত্মহত্যা কেবল দুর্বল মানসিকতার উদাহরণ, সমাধান নয়।

আমরা মনে করি, কেবল শরীরের যত্ন নেওয়া উচিত। কিন্তু শরীর এবং মন দুটোরই যত্ন সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রবণতা কমিয়ে আনতে শিশুকাল থেকে মা- বাবার আন্তরিক আচরণ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। মা-বাবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ সন্তানের আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

জীবনে আনন্দ, ব্যর্থতা থাকবেই। সকল ব্যর্থতার গল্পকে উঠে দাঁড়ানোর গল্পতে পরিণত করুন। আর একটিও আত্মহনন নয় বরং ধৈর্য ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি সুস্থ, সুন্দর পৃথিবী গড়াই আমাদের কাম্য। বেঁচে থাকলে একদিন আলো ও আনন্দের উৎসবে আমরা সকলে যুক্ত হতে পারবো।

Header Ad
Header Ad

সাবেক মেয়র তাপসের সন্ধান দিলেন ডিবি হারুন

শেখ ফজলে নূর তাপস (বামে) এবং হারুন অর রশিদ। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা অনেকেই দেশ ছেড়েছেন। পরিস্থিতি আরো তীব্র হওয়ার আগেই পালিয়ে গিয়েছিলেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তাদের মধ্যে ছিলেন শেখ পরিবারের সদস্য এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

তাপসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে, যা তাকে বিতর্কের মুখে ফেলেছে। বর্তমানে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন, কী করছেন—এই বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। তার অবস্থান নিয়ে সম্প্রতি নতুন তথ্য দিয়েছেন আরেক বিতর্কিত ও পালাতক সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ।

কানাডার নাগরিক টিভির বার্তা প্রধান নাজমুস সাকিব সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার করেন, যেখানে হারুন অর রশিদের একটি কল রেকর্ড প্রকাশ করা হয়। ওই কল রেকর্ডে জানা যায়, সাবেক মেয়র শেখ তাপস বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন এবং সেখানে তিনি ভিসা ছাড়াই রয়েছেন।

জানা গেছে, শেখ তাপস ৩ আগস্ট, ২০২৩-এ ঢাকা ছাড়েন। সেদিন বিমানবন্দরে তাকে আটক করা হলেও তিনি তার পরিবারকে যুক্তরাজ্যে পাঠিয়ে দেন এবং রাতের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর চলে যান।

এদিকে, হারুন অর রশিদও বর্তমানে পালাতক অবস্থায় আছেন। তার অবস্থান পরিষ্কার নয়, তবে জানা গেছে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের লং আইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। ৫ আগস্টের পর তিনি সেখানে পালিয়ে যান।

তাপসের মতো, হারুনও সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের মুখে ছিলেন, এবং তার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জনমনে বেশ আলোচিত হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলে ঘর ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধদের নামাজ আদায়

টাঙ্গাইলে ঘর ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে নামাজ আদায় করেছেন বিক্ষুব্ধরা। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের মধুপুরে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে বনবিভাগের লোকজন সুমাইয়া নামে এক নওমুসলিম নারীর ঘর ভেঙে দেয়। এতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে বুধবার (৯ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫ টায় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ আদায় করেন স্থানীয়রা।

এর পর প্রশাসনের আশ্বাসে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে অবরোধটি তুলে নেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এর আগে সকালে বন বিভাগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় ওই নওমুসলিম নারীর বাড়ি-ঘর ভেঙে দেয়।

জানা যায়, উপজেলার গাছাবাড়ী এলাকায় এক খৃষ্টধর্মীয় গারো নারী কয়েক বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে সুমাইয়া শেখ নামের ওই নারী পঁচিশ মাইল এলাকায় ফারুক হোসেন নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে বিনা ভাড়ায় বসবাস করে আসছেন।

স্থানীয়রা ওই নারীর প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে অর্থ দিয়ে পঁচিশ মাইল বাসস্ট্যান্ডের কাছে বসতিপূর্ণ এলাকায় ৩ শতাংশ জমির দখলস্বত্ব কিনে দিয়ে ঘর নির্মাণ করে দেন। সেই ঘরটির নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি।

এর মধ্যেই বুধবার সকালে বন বিভাগ সুমাইয়ার ঘরটি ভেঙে দেয়। পর স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হরে আছরের নামাজের পর থেকেই জলছত্র থেকে পঁচিশ মাইল এলাকায় ঘর ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে মাগরিবের নামাজ আদায় করে। পরে পঁচিশ মাইল বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা।

সমাবেশে বক্তব্য দেন- বিএডিসি মসজিদের ইমাম ইব্রাহীম তকী, মুফতি আরিফ আদনান, পঁচিশ মাইল জামে মসজিদের খতিব আব্দুল বাছেদ, মুফতি মাসুম বিল্লাহ, ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ, আব্দুস সামাদ খান, আবু হানিফ, হাফেজ সোহাইল আহমেদ প্রমুখ।

ভুক্তভোগী নওমুসলিম সুমাইয়া শেখ জানান, ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় আমি এখন অসহায়। বর্তমানে এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছি। স্থানীয়রা অনুদান ও যাকাতের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করায় ঘর নির্মাণ করতেছি, এখনো কাজ শেষ হয়নি।

তিনি আরও বলেন- ঘরটি সরিয়ে নিতে আমাকে কোন প্রকার নোটিশ দেওয়া হয়নি। হঠাৎ করেই আমার ঘর ভেঙে দিয়েছে বনবিভাগ। অথচ চারদিকে শতশত বাড়ি ঘর, সেগুলো ভেঙে ফেলেনি। ঘরটি ভেঙে ফেলায় থাকার জায়গা আর রইল না।

উপজেলার গাছাবাড়ী বিটের বন কর্মকর্তা আব্দুল কদ্দুছ জানান, রেঞ্জ অফিস থেকে আমাকে বলেছে তাই আমি উচ্ছেদ অভিযানে গিয়েছি। আমি নতুন এসেছি, তাই বেশি কিছুই জানি না।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জুবায়ের হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে রয়েছি, বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নিয়েছেন এবং স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে।

Header Ad
Header Ad

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পেলেন ড. খলিলুর রহমান

ড. খলিলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে একই সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে খলিলুর রহমানকে এই নতুন দায়িত্ব দেয়ার কথা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এখন থেকে খলিলুর রহমানের পদবি হবে ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ’। এর পাশাপাশি তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনেও সাহায্য করবেন।

গত বছরের ১৯ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে নিয়োগ পান খলিলুর রহমান। খলিলুর রহমান উপদেষ্টার মর্যাদা, বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলে সেদিন এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছিল। আজ তার নতুন পদায়নের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সেই প্রজ্ঞাপনের অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত থাকবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সাবেক মেয়র তাপসের সন্ধান দিলেন ডিবি হারুন
টাঙ্গাইলে ঘর ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধদের নামাজ আদায়
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পেলেন ড. খলিলুর রহমান
ভারতে ৫ বছর সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ৬ নারী
বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল ভারত
২১ এপ্রিল কাতার সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
১৬২ জনকে নিয়োগ দেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর
বিমানে সহযাত্রীর শরীরে মূত্রত্যাগ করলেন ভারতীয় মাতাল যাত্রী!
এ বছর ৩৬ টাকায় ধান ও ৪৯ টাকায় চাল কিনবে সরকার
আওয়ামী লীগের বিচার এবং নিবন্ধন বাতিলে একমত হেফাজত ও এনসিপি
দুর্বল শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করা হবে: গভর্নর
গুলশানের এক কিলোমিটার রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করল ডিএনসিসি
যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশের জবাবে ৮৪ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করল চীন
মুজিববর্ষে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়, শেখ হাসিনা-রেহানার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক
১৫ কোটি বাজেটের ‘বরবাদ’-এ শাকিবের পারিশ্রমিক ১ কোটি ২০ লাখ টাকা
‘অতি গোপনীয় অভিযোগ’ নিয়ে দুদকে হাসনাত-সারজিস
ডিসেম্বরের আগে সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চাওয়া হবে: সালাহ উদ্দিন
ঈদযাত্রায় সড়কে ৩১৫ দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
উদ্ধার করা সওজের জমি দখলে নিল সমন্বয়করা!
নবাব শেখের ভাইরাল সেই ‘চলমান-খাট’ নিয়ে গেছে পুলিশ