ব্লক চেইন অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন মেস বুক
লেখা ও ছবি : মো. বাবুল হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
‘বাংলাদেশ ব্লক চেইন অলিম্পিয়াড’ হলো অলিম্পিকের আদলে একটি বিশ্ব মানের প্রতিযোগিতা। ব্লক চেইন হলো, তথ্য সংরক্ষণের নিরাপদ ও উন্মুক্ত পদ্ধতি। তাতে কম্পিউটার প্রগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ব্লক আকারে একটির পর একটি চেইনে সংরক্ষণ করা যায় তথ্যাদি। ফলে তথ্য মালিকানা সংরক্ষিত থাকে। এই ব্লক চেইনে তথ্য সংরক্ষণ করলে কোনো ব্লকের তথ্য পরিবর্তন করতে চাইলে, চেইনের প্রতিটি ব্লক পরিবর্তন করতে হয়। এটি অসম্ভব। ফলে তথ্য বদলানো যায় না কোনোভাবে, হ্যাকিংয়েও।
তৃতীয় এই ব্লক চেইন অলিম্পিয়াডে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নাম ‘মেস বুক’। গতকাল বুধবার মানে ৮ জুন তারা সবাইকে হারিয়ে দিয়েছেন। গিয়েছেন ঢাকায়ও। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশে ফাইনালে লড়েছেন। মূল দুজন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসসি)’র মেধাবী ছাত্র। অস্টম ব্যাচের আহমেদ সাজ্জাদ, অন্যজন তার বন্ধু রাজীব রায়হান। দলের বাকিরা ঢাকার নামকরা ও প্রধান বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভাসিটির ছাত্রী মীম ইয়া জান্নাত ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদয় সাহা। টিম লিডার সাজ্জাদ। চ্যাম্পিয়ন প্রজেক্টটি হলো-‘রিয়েল ট্রাস্ট প্রজেক্ট’। প্রজেক্টটিতে ব্লক চেইন টেকনোলজিতে রিয়েল এস্টেট বা আবাসন খাতে কাজ করা যাবে।
বাংলাদেশ ব্লক চেইন অলিম্পিয়াড ২০২০ সালে শুরু। এবার ৬ থেকে ৮ জুন টানা তিনদিন হয়েছে। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে আয়োজন করেছে। স্টুডেন্ট ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৫০টি দল লড়েছে। প্রতিটি চারজনের। প্রফেশনাল ক্যাটাগরিতে মোট ১০টি দল। প্রতিযোগিতায় মোট ১৮০টি প্রজেক্ট প্রপজাল জমা পড়েছে। সেরাগুলোর প্রজেক্ট প্রদর্শনী হয়েছে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের প্রদর্শনী হলে। শিক্ষার্থী ক্যাটাগরিতে ‘মেস বুক’ আর প্রফেশনাল ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন টিম ‘লেভর’।
মেস বুকের টিম লিডার সাজ্জাদ বলেছেন, ‘সবার শিক্ষকদের সহযোগিতা, অনুপ্রেরণা আমাদের ভালো করার স্পৃহাকে বেগবান করেছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমার খুব ভালো লাগছে। চ্যাম্পিয়নশিপের প্রাপ্তি আমাদের আরো ভালো কাজ করার উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে।’
রাজীব বলেছেন, ‘আমিও খুব আনন্দিত। অসাধারণ মুহূর্ত গেল আমাদের। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেশ ও দেশের বাইরে এভাবে উপস্থাপন করে যেতে চাই। এ অর্জনের মাধ্যমে জুনিয়রা অনুপ্রাণিত হবে। এ ধরণের প্রতিযোগিতা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বে আরো বেশি সংযুক্ত করবে।’
তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনকে বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি ফেয়ার, প্রগ্রামিং কনটেস্ট, প্রযুক্তির বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন বাড়াতে হবে। যেহেতু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সেক্ষেত্রে সুযোগ বাড়ানো সহজ। কার্যকরও। সুযোগ তৈরি করতে হবে।’
তাদের উপাচার্য অসাধারণ এই অর্জনে খুব খুশি, ‘ওরা আমাদের রত্ম। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে আনন্দিত, পুলকিত, গর্ববোধ করছি। এ অর্জন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ও পুরো পাবনার গর্ব। আমি প্রত্যাশা করি, ছেলে, মেয়েরা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তাদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে।’
শিক্ষার্থী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড ও দুই লাখ টাকা প্রাইজমানি পেয়েছে মেস বুক। লেভর পেশাদার দল বলে সেখানে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা ও ক্রেস্ট জয় করেছে। ছাত্র, ছাত্রী বিভাগে প্রতিযোগিতার বাকি দুটি সেরা দল ‘ব্লু কৃষ্টাল’ ও ‘স্পন্দন’। তারা ক্রেস্ট ও প্রাইজ মানি জয় করেছেন।
ছবি : মেস বুকের তিন সদস্য ও তারা অতিথি এবং বিচারকদের কাছ থেকে পুরস্কার জয় করে নিচ্ছেন।
ওএস।