আগামীর শিশুদের স্বপ্নগুলো অনেক বড়
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখা শেখানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ও বাংলাদেশীদের দানে চলে ‘আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন’। আছে ১৭টি বিদ্যালয়। এডটেক, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, দাবা প্রশিক্ষণ, শিক্ষাসফর, মায়েদের সেলাই প্রশিক্ষণসহ হাতে-কলমে বিজ্ঞান অনেক কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন তারা। আগামী নিয়ে বলেছেন জেনারেল ম্যানেজার সমীরন গ্রেগরি। আলাপ করেছেন ওমর শাহেদ
আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন বা এইএফের শুরু কীভাবে?
আমাদের প্রতিষ্ঠাতা বাবু এস. রহমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। এখানে মানে আমাদের বাংলাদেশে ১৯৮৮ বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছিল। তখন ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। তিনি ও তার সঙ্গে যারা আছেন-ড. সাবির মজুমদার, ড. আবু হাসান, তারা প্রবাসী। দুর্যোগে তারা দেশের মানুষকে সাহায্য করলেন। পরে দেখলেন, আমাদের দেশের শিক্ষার অবস্থা ও মান খারাপ। এখানে যারা ছাত্র, ছাত্রী আছে গরীব পরিবারের; লেখাপড়া কিছুই জানে না। চিন্তা করলেন, কীভাবে দেশের জন্য এই খাতে আমরা কাজ করতে পারি? সুবিধাবঞ্চিতরা, টাকা-পয়সার অভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছে না যারা, তাদের কীভাবে শিক্ষাদান করা যায়? পড়ালেখা মানুষের জীবনে অনেক বড় বিষয়। যত কিছুই করি, শিক্ষা ছাড়া তো কারো কোনো কিছু হয় না। একটি জাতির পড়ালেখা ছাড়া কোনো উন্নতি সম্ভব নয়। ফলে ভাবলেন, দেশকে যদি এগিয়ে নিতে হয়, তাহলে শিক্ষিত হতে হবে সবাইকেই। সে কারণেই বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা, সমর্থন ও কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষিত করতে, যেভাবে তারা অথনৈতিক ক্ষেত্রেও স্বাবলম্বী হতে পারবে, সেজন্য বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক প্রকল্প একে, একে নিয়ে তারা সবাই কাজ করতে শুরু করলেন।
প্রথম বিদ্যালয়?
শিক্ষা ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাহায্য করতে প্রথমে একটি বিদ্যালয়ে কাজ শুরু করলেন। সেটি কুমিল্লাতে ছিল। ২০০৩ সালে। এভাবেই শুরু। তারপর দেখা গেল যে, চাহিদা তো অনেক আছে। অসংখ্য শিশু আছে। ফলে বললেন, এই শিশুদের সাহায্য করতে আমরা একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করব। তারা তিনজনই ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে দেশে পাঠাতেন। প্রবাসী বাংলাদেশী পুরুষ ও নারীরা মিলে দেশের জন্য কাজ করতে লাগলেন। তারপর দেখলেন, বাংলাদেশে টাকা পাঠানো খুব সমস্যা। যেহেতু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করতে চান, ফলে টাকাগুলো পাঠানোর ক্ষেত্রে দেখা গেল, বড় অংকে দেওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে তারা চিন্তা করলেন, কিছু একটি করা যায় কী, যাতে আমরা টাকা পাঠাতে ও সহযোগিতা করে যেতে পারব। বাবু এস. রহমান ও তার বন্ধুরা দেশে পরিচিত সার্কেলগুলোতে অনেক কথা বলেছেন। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘আগামী ইনকরপোরেশন।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রেজিস্ট্রার্ড। এটিই আমাদের ‘আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন’র প্যারেন্ট অর্গানাইজেশন। দেশে আগামীর শুরুতে একটি কমিটি গঠন করা হলো। ড. মোহাম্মদ মসিউজ্জামান (দেশে এই কমিটির আগ পর্যন্ত আগামীর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক প্রধান) হলেন প্রেসিডেন্ট। তার মতো আরো সাতজনকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হলো। তারপর অনেক মেম্বার সংগ্রহ করা হলো। আমাদের আগামীর কাজ শুরু হলো।
উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক ড. জেবা ইসলাম সেরাজ কীভাবে যুক্ত হলেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জেবা ইসলাম সেরাজ। শেলটেকের মালিক তৌফিক এম. সেরাজের স্ত্রী। কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ নাফিসা খানমের হলিক্রম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী। নাফিসা খানম ঢাকার বিখ্যাত ও সেরা মেয়েদের কলেজ হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। আগামীর সাবেক নির্বাহী পরিচালক। এখন আমাদের শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রকল্পের প্রধান। যেহেতু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করি, অধ্যাপক ড. জেবা ইসলাম সেরাজ আগ্রহের সঙ্গেই উপদেষ্টা হলেন।
তার ভূমিকা?
তার সঙ্গে ফোনে আমার অনেকবার কাজের সূত্রে কথা হয়েছে। তিনি এখানে ফান্ডিং করেন। বিভিন্ন পরামর্শ দেন। আমাদের এক্সিকিউটিভ কমিটির সঙ্গে কাজ করেন। নাফিসা খানম ম্যাডামের সঙ্গে তার সম্পর্ক আজীবনের। অধ্যাপক ড. জেবা ইসলাম সেরাজ আগামীর শিশুদের জন্য অনেক বিজ্ঞানের বই দান করেছেন। প্রতি বছর শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং দাতব্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রকল্পগুলোতে তিনি প্রচুর অনুদান প্রদান করেন।
নাফিসা খানম?
পুরোপুরিভাবে আগামীর জন্য একজন উৎসর্গী প্রাণ। আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন বলতে তার কাছে অন্যরকম কাজ। খুব প্যাশন থেকে বাচ্চাদের জন্য তিনি কাজ করেন। সারাক্ষণ তাদের জন্য, তাদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে থাকতে চান তিনি। তিনি আমাদের সব কাজ করেন প্রয়োজনে।
আগামীর প্রথম দিকের জীবন?
২০০৩ সাল থেকেই আগামীর কিছু, কিছু কার্যক্রম চলছিল। ২০১০ সাল থেকে আরেকটু বড় আকারে শুরু হলো। ২০১১ সালে তো আমরা আরজিএসি থেকে সার্টিফিকেট পেলাম। রেজিস্টার্ড করা হলো। তারপর প্রতিষ্ঠানের শুরু হলো ও বাংলাদেশে আমাদের পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হলো।
প্রধান প্রকল্প?
মূল ‘স্কুল প্রগ্রাম’। আমাদের সাতটি প্রগ্রাম আছে। এগুলোকে ‘প্রপোজাল, প্রজেক্ট অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভ’, আমরা সংক্ষেপে ‘পিপিআই’ বলছি। পিপিআইগুলো এক, একটি এক, এক কর্মএলাকাতে একেক চাহিদানুসারে করা হয়। স্কুলই আমাদের ফ্ল্যাগশিপ বা মূল কার্যক্রম। আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশনের এখন ১৭টি বিদ্যালয় নিয়ে কাজ করছে। আমরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ফান্ড দেই। ফলে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাদের বিভিন্ন খাতে আগামীর টাকাগুলো খরচ হয়। টিফিন আছে। স্টেশনারি বাবদ টাকা লাগে। শিক্ষকদের বেতন দেই। কোনো, কোনো বিদ্যালয়ের ভাড়া আমাদের দিতে হয়। সবই স্কুল প্রগ্রামে প্রদান করা হয়। আমরা বিদ্যালয়গুলোকে সহায়তা ও সমর্থন প্রদান করি। তাদের আমাদের মনিটরিং করতে হয়। বছরে দুই থেকে তিনবার মনিটরিং করি-আমাদের ফান্ডিং কেমনভাবে চলছে? বিদ্যালয়ের কোনো সমস্যা আছে কী না-ইত্যাদি সব বিষয় দেখা হয়। আমাদের স্কুল প্রগ্রাম মনিটরিং টিম আছে। ম্যানেজার আছেন। এখন এই প্রকল্পে দুজন পূর্ণকালীন ও দুজন ইন্টার্ন কাজ করছেন। পার্ট-টাইম স্টাফ আছেন। আমরা আমাদের বিদ্যালয়গুলোকে নিয়মিত সহায়তা ও সমর্থন প্রদান করে যাই।
কিভাবে ফান্ড করেন?
আগামী সরাসরি কোনো ফান্ড খরচ করে না, করতে পারেও না। বিদ্যালয়গুলো করে। এখানে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া আছে। এই যে স্কুলগুলো এলো, কীভাবে আমরা ফান্ডের জন্য বাছাই করব? আমরা একটি বিজ্ঞাপন দেই আমাদের ওয়েবসাইটে (www.agami.org), ফেসবুক পেইজে (www.facebook.com/AgamiEducationFoundation)। নিজেরাও সবসময় খোঁজখবর নেই। নানাভাবে বিভিন্ন লিংকে দেওয়া হয়। এরপর সুবিধাবঞ্চিত বিদ্যালয়গুলো অনুদানের আবেদন করে। তারা লেখেন-‘আমাদের বিদ্যালয় আছে, সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোররা পড়ালেখা করে। সাহায্য পেলে ভালো হয়।’ আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশনের এজন্য একটি নির্দিষ্ট আবেদন ফরম আছে। তারা পূরণ করে জমা দেন। আমাদের একটি টিম আছে, বাছাই করেন-বিদ্যালয়গুলোর কী, কী খাতে টাকা লাগবে? ছাত্র, ছাত্রীর সংখ্যা কত? কী, কী প্রয়োজন আছে-ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে তাদের ও আমাদের মাধ্যমে যে ফান্ডিং রিকয়ারমেন্ট আসে, সব মিলিয়ে অ্যানালাইসিস করা হয়। তাদের মানও অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। যাছাই, বাছাই করে, সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। তারপর আমরা ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশনে যাই। এভাবে স্কুলগুলো বাছাই করা হয় ও মূল শর্ট লিস্টটি নিয়ে ডোনারদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমেরিকা থেকে অনুমোদিত হয়ে এলে আমরা ফান্ডিং রিলিজ করি বা টাকাগুলো প্রদান করি। আমরা তাদেরকে প্রয়োজনানুসারে ধারাবাহিক সাপোর্ট দেই। এই প্রক্রিয়াতে আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন সারা বাংলাদেশের মোট ৫০টি বিদ্যালয়কে আজ পর্যন্ত অনুদান দিয়েছে। কোনো স্কুল এক বছর, কোনোটি দুই বছর, তিন বছর, কোনোটি ১০ বছর ধরে আগামীর অনুদানে চলছে। সে কারণে আমাদের ছাত্র, ছাত্রীর সংখ্যা ২০০৩ সাল থেকে হিসেব করলে অনেক। প্রকল্পটির আগামীর সাইটের লিংক হলো-www.agami.org/school-program।
কিভাবে বিদ্যালয়গুলোতে আগামী কাজ করে?
যে বিদ্যালয়টি বেশি জরাজীর্ণ, তাকে আমরা কতটা সাপোর্ট বা সাহায্য করতে পারলাম-এই আমাদের বিবেচ্য। যাদের অবস্থা বেশি খারাপ, তাদের বেশি সাপোর্ট লাগে। এভাবে চিন্তা ও কাজ করি। এই প্রক্রিয়াতে আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন কাজ করে চলেছে। তাদের শিক্ষার মানের উন্নয়নের জন্য, ছাত্র, ছাত্রীদের ভবিষ্যত গড়তে কী, কী করছি সেটি আগামীর কর্মপ্রক্রিয়া।
অন্য একটি প্রকল্প?
আমাদের আরেকটি নিয়মিত প্রকল্প-টিচার্স ট্রেনিং বা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান। যেহেতু এই বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের বেতন তেমন ভালো নয়, কেউ হাই স্যালারি পান না। অত পড়ালেখা জানেন না কেউ, দক্ষও নন। ফলে তাদের প্রশিক্ষণগুলো দরকার হয়। তারা তো সরকারী প্রশিক্ষণও পান না ওভাবে। আগ্রহ আর প্রয়োজনই তাদের সম্বল। সেজন্য আমাদের এই টিচার্স ট্রেনিং প্রগ্রাম আছে। এখানে আসলে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সব বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ তবে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন। কার্যক্রমগুলো নির্ভর করে শিক্ষকদের কোন, কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রয়োজন হচ্ছে। কোন জায়গায় তাদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দরকার, সেগুলো অ্যানালাইসিস করার পর ট্রেনিংগুলো অ্যারেঞ্জ করা হয়। এজন্য আমাদের ‘টিচার্স ট্রেনিং টিম’ আছে। এই প্রকল্পে আমাদের ডিজিটাল কনটেন্টগুলো ব্যবহার করাও শেখাই। আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব নাফিসা খানম আমাদের দলটির প্রধান প্রশিক্ষক। আমরা বলি ‘টিচার্স ট্রেনিং লিড’। তার সঙ্গে বেতনভোগী স্টাফ নুসরাত আছে। তারা এই বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষণের আয়োজন ও প্রদানের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এছাড়া প্রধান শিক্ষকদের লিডারশিপ ও ম্যানেজমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকদের হাতে-কলমে শিখন-শেখানো, শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা প্রশিক্ষণ, তাদের ও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো প্রদান করা হয়। ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন শিক্ষাক্রমে যেসব পরিবর্তন নিয়ে আসছেন মানে তাদের ‘শিখনকালীন মূল্যায়ন’ ও ‘ শিক্ষার্থীকেন্দ্রীক ইন্টারঅ্যাকটিভ’ পদ্ধতির সফল বাস্তবায়নে ২০২০ থেকে নিজস্ব ট্রেনিং ম্যানুয়াল ও পাঠ-পরিকল্পনা ডেভেলপ করে শিক্ষকদের হাতে দেয়া হচ্ছে আগামীতে। অনলাইনে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক ক্লাস নেয়া হয়। বহু বছর থেকে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করার উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বরণ্যে বাঙালি প্রবাসী সালমান খানের খান অ্যাকাডেমির (www.khanacademy.org) মাধ্যমে। তাদের সাহায্যে আমাদের ৫০-৬০ শতাংশ শিক্ষক এখন ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করে ক্লাস নিতে সক্ষম। বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক প্রশিক্ষণ টিম বিপুল পরিমাণে স্মার্ট ফোন, প্রতি বিদ্যালয়ে অন্তত একটি ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর দান করেছে। নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষকদের মূল্যায়ন ও ফিডব্যাক দেয়া হয়ে থাকে আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশনে।
ইমপ্রুভিং ইংলিশ টিচিং?
আমাদের আরেকটি প্রকল্প। আগামী বলে ‘ইমপ্রুভিং ইংলিশ টিচিং’ বা ‘আইইটি’। এক কথায়, তারা শ্রেণীকক্ষে সুবিধাবঞ্চিত ছাত্র, ছাত্রী; তাদের ইংরেজি কীভাবে পড়াবেন? কীভাবে পড়ালে তাড়াতাড়ি শিখতে পারবে? নিজেরা কিভাবে এই প্রক্রিয়াটি শিখবেন? ইংরেজিতে ভালো হবেন? তাদের সবার জন্য আগামীর আইইটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকানুসারে ছাত্র, ছাত্রীদের মানের ভিত্তিতে তৈরি ও প্রশিক্ষণ প্রদান। প্রয়োজনের ভিত্তিতে প্রশিক্ষণটি দেওয়া হয়। প্রতিটি প্রকল্পের মতো এখানেও আমাদের একজন প্রধান আছেন। যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তাহসিন রউফ। বাংলাদেশে আমাদের ম্যানেজার স্টাফ ইসরাত শারমীন। লিংক হলো-www.agami.org/agami-in-action/2021/8/27/a-new-project-improving-english-teaching-iet
খান একাডেমির সঙ্গে আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন কীভাবে কাজ করে?
আমাদের খান একাডেমি (https://www.khanacademy.org), তাদের বাংলা সাইট হলো (https://bn.khanacademy.org)। আগামী ও খান একাডেমির কাজ, এই পিপিআই ‘এডুকেশন টেকনোলজি’ হয়ে গিয়েছে। আমরা বলি ’এডটেক’। খান একাডেমি আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ প্রদান করেনি বা এই প্রকল্পের কোনো ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে দেয়নি। আমরা তাদের কনটেন্টগলো ব্যবহার করি। খান একাডেমি আমাদের সঙ্গে এডটেক প্রগ্রামে কাজ করেন। আমাদের এডটেক প্রকল্পটির ম্যানেজার আইইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র বি. এম. ফজলে রাব্বি। প্রগ্রামের পরিচালক-দিলরুবা চৌধুরী, ইউএসএ থাকেন। আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশনের অন্যতম ডিরেক্টর ও প্রগ্রামটির লিড। অন্য প্রকল্প প্রধানদের মতো এডটেকের প্রধান হিসেবে পুরো কাজ দেখাশোনা করেন। এডটেকের অনেক স্টাফ আছেন। পার্ট-টাইম, ফুলটাইম মিলে ১৩ জন কাজ করছেন। এটি আমাদের আরেকটি বড় প্রকল্প। মূলত গণিত, বিজ্ঞানের। সম্প্রতি তারা ইংরেজি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে ছোট, ছোট ভিডিও তৈরি করেন। আমাদের ওয়েবসাইটে গেলে সবই জানা হবে। খান একাডেমির সঙ্গে সাহায্য প্রক্রিয়ায় https://www.youtube.com/user/KhanAcademyBangla/videos- সাইটে সহজ, শিক্ষামূলক ভিডিওগুলো তৈরি করে আপলোড করেন তারা। তবে সব ডিজিটাল কনটেন্টই আমাদের টিমের তৈরি। সারা বাংলাদেশের ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষকরা সবাই এই ভিডিওগুলো দেখে অনেক কিছু শিখতে, জানতে পারেন। এই কার্যক্রমটিও বিনামূল্যে, সবার জন্য উন্মুক্ত। বিনামূল্যে সব কাজ করি বলে আমাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফান্ডিং আসে। ইউএসএ থেকে ফান্ডিং হয়, বাংলাদেশে কোনো, কোনো কম্পানি, কোনো, কোনো নামকরা ব্যক্তিত্ব আমাদের স্পন্সর করেন। আমাদের সব কাজই সবার জন্য উন্মুক্ত। এডটেক প্রকল্পে ইউনিসেফ, বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে। করোনাভাইরাসের আক্রমণের সময় সংসদ টিভিতে ঘরবন্দী ছাত্র, ছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে যে ক্লাসগুলো হলো, সেগুলোর গণিতের ভিডিওগুলো আমাদের এডটেক টিম তৈরি করেছে। অনেকগুলো অর্গানাইজেশনের মধ্যে এই সময় আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন ছিল।
‘লাইফ ইজ ফান’?
আরেকটি প্রকল্প। লাইফ ইজ ফান-www.agami.org/life-is-fun। এই প্রকল্পের টিমটি এখন পর্যন্ত ঢাকাতে সাপোর্ট দিচ্ছে। বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে তারা তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান বইগুলোর যে বিষয়গুলো প্র্যাকটিক্যাল বা হাতে-কলমে করা যায়, সে কাজগুলো করে। যেমন-মাটি, পানি ইত্যাদি ধরণের বিষয়গুলোর ওপর তারা স্কুলগুলোতে প্র্যাকটিক্যাল সেশন বা হাতেকলমে শিক্ষা-কার্যক্রম প্রদান করে। প্র্যাকটিক্যাল সেশনগুলো নেবার জন্য আমাদের এখানে ইন্টার্ন আছে ৮ থেকে ১০ জন। তারা নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রী। এখানে আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. নেহেরীন মজিদ, বাংলাদেশে থাকেন। বুয়েট থেকে পাশ, অত্যন্ত মেধাবী; তিনি কাজ করছেন। লাইফ ইজ ফান প্রগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক ছাত্র, ছাত্রীরা ওদের প্রয়োজনানুসারে সেশনগুলো নেয়। তারা তিনজন বা চারজন একটি দলে গিয়ে বইয়ের ওদের বিষয়গুলো করে দেখায়। সেশনগুলো খুব মজার। ছাত্র, ছাত্রীরা খুব আগ্রহ নিয়ে দেখে, শেখে। তাদের বিজ্ঞানভীতি কমে। শিক্ষকদেরও উপকার এবং শেখা হয়। তারা তো সচরাচর সায়েন্স বা বিজ্ঞান বললেই অজ্ঞান হয়ে যায় কিন্তু বিজ্ঞান যে কত মজার, বিষয়গুলো যে কত দারুণ, সেই কাজগুলোই করে তারা নিয়মিত। ছাত্র, ছাত্রীদের বিজ্ঞানের ভয় দূর ও আগ্রহ সৃষ্টি করাই এই পিপিআইয়ের মূল লক্ষ্য। তাদের বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলার জন্য যত সহজ ও উদ্দীপক উপায়ে বিজ্ঞানকে বিষয়ভিত্তিতে উপস্থাপন করা যায়-আমাদের ইন্টার্নরা তাদের ক্লাসে, ক্লাসে করে দেখায়।
স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে যে কাজ করছেন?
আরেকটি প্রগ্রাম- নাম ‘হেলথ ফর এডুকেশন’। আমাদের ছাত্র, ছাত্রীরা পড়ালেখা তো অবশ্যই করবে কিন্তু স্বাস্থ্য তাদের সবার জীবনে বড় বিষয়। তাই বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আমাদের স্বাস্থ্য ক্যাম্পগুলো হয়। এজন্য আমাদের ‘প্লাটফর্ম’ নামের মেডিক্যালের ছাত্র, ছাত্রদের স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠনটির সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি আছে। আমাদের সঙ্গে বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে প্রয়োজনানুসারে সবার জন্য তারা ‘জেনারেল ক্যাম্প’ করে। ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকদের ‘আই ক্যাম্প’, ‘ডেন্টাল ক্যাম্প’ আছে। ‘মেডিসিন ক্যাম্প’ বাচ্চাদের জন্য। তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দেয়। যদি কোনো সিরিয়াস বা গুরুতর অসুখ পায়, তাকে ভালো চিকিৎসকের কাছে রেফার করে। হাসপাতালের সাহায্য দেয়। এ ধরণের সেবা আমাদের প্রতিটি বিদ্যালয়েই নিয়মিত আয়োজন করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মাঝে, মধ্যে আসেন। আমরা ছাত্র, ছাত্রীদের বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা সবার সহযোগিতায় নিশ্চিত করছি। করোনাভাইরাসের আক্রমণে কভিড ১৯ মহামারি রোগের সময় আমরা হটলাইন সার্ভিস চালু করেছিলাম শিক্ষকদের নিয়ে ওরিয়েনটেশনের মাধ্যমে। কী ধরণের সাহায্য প্রয়োজন শিশু, ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষকদের-এই সার্ভিসে দিয়েছি।
স্কুলগুলো কেমন?
প্রথম থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্তও আছে। কোনো, কোনো স্কুলে আমরা ১০ বছর সাপোর্ট দিচ্ছি। যে শিশু ছাত্রটি আমাদের সাহায্য করা একটি বিশেষ বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে, সে এখন ক্লাস টেনে পড়ছে। এসএসসি পাশ করে কেউ, কোনো মেয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে। আছে। অনেক ছাত্র, ছাত্রী আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে। কেননা, আমরা তাদের ভালোবাসি। কোনো বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ব্যবস্থা কখনো আমাদের ওভাবে তৈরি করা হয়নি। তবে যৌথভাবে বিদ্যালয় তৈরি করেছি। যেমন খাগড়াছড়িতে একটি বিদ্যালয় আছে। আইডিএলসির কোলাবরেশনে গড়েছি। নাম ‘আগামীর পাঠশালা’। আমাদের সঙ্গে তাদের এখন আর কোলাবরেশন নেই। তবে আমরা গর্বিত। এখানে প্রধানত আদিবাসী ছাত্র, ছাত্রীরা পড়ে। আমাদের আরো কটি বিদ্যালয় সম্প্রতি শুরু হয়েছে। একটি-‘এলিফেন্ট হিল ট্র্যাক স্কুল’। খাগড়াছড়িতে। আমি আপনাকে বিদ্যালয়ের তালিকাটি দিতে পারবো, কোথায় কোন বিদ্যালয় আছে? কত ছাত্র, ছাত্রী? আমাদের বিদ্যালয়গুলো খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, নেত্রকোনা ও ঢাকার ভেতরে। ঢাকায় আটটি বিদ্যাল।
তাদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশে কার্যক্রম আছে?
কার্যক্রমটিকে বলি ‘কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ’ বা ‘এক্সটা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ’, বাংলায় ‘সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম’। এখানে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাগুলো হয়। বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত সায়েন্স ফেয়ার বা বিজ্ঞান মেলা করি। আর্ট কম্পিটিশন, কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হয়। গানের প্রতিযোগিতা আছে। আমাদের সুবিধাবঞ্চিত ছাত্র, ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষাসফর আয়োজন করি।
নতুন কোনো প্রকল্প?
‘আগামী চেস গিল্ড’ নামে একটি পিপিই চালু করেছি, পাইলটিং অবস্থায়। আমাদের বাচ্চাদেরকে দাবা খেলা শেখানো হয়। আয়োজন করা হয়। ব্রেন ডেভেলপমেন্ট বা মস্তিস্কের উন্নয়নে দাবা খুব সাহায্য করে। এজন্য দুই বছরের একটি চেস কোর্স তিনটি স্কুলে প্রাথমিকভাবে শুরু করেছি। দুজন দাবা প্রশিক্ষক আছেন, সার্টিফাইড ট্রেইনার। তারা শিশুদেরকে দাবা খেলার প্রশিক্ষণগুলো দিচ্ছেন, কোর্সটি করাচ্ছেন। মোটের ওপর তাদের ক্লাস নিচ্ছেন। সপ্তাহে তিনদিন করে এক, একজন ক্লাস নেন। যাদের ক্লাস নিয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেক ছাত্র, ছাত্রী ভালো করছে। বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন যে টুর্নামেন্টগুলো আয়োজন করে, আমরা অংশগ্রহণ করি। প্রশিক্ষক ও শিশুদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তারা খুব প্রতিশ্রুতিশীল। এখান থেকে ইন্টারন্যাশনাল রেটিংয়ের খেলোয়াড় পেয়ে যাব।
কর্মমুখী প্রকল্প?
আমাদের ‘আগামী নিটিং পিপিই’ নামের কর্মমুখী প্রকল্পটি আছে। সেলাই প্রশিক্ষণ প্রদান। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের কীভাবে কাপড় কাটতে হয়, কীভাবে পোশাক বানাতে হয় সব শেখানো হয়। আমাদের বিদ্যালয়গুলোর ছাত্র, ছাত্রীদের অনেক মায়েরা আছেন, প্রশিক্ষণটি গ্রহণ করছেন। এরপর তারাই নানা ধরণের সেলাইয়ের কাজ, পোশাক, শিল্পদ্রব্য তৈরি করছেন। নানা জায়গায় বিক্রি করছেন। পরিবারে ভালোভাবে সাহায্য করছেন। বিদ্যালয়গুলোর কয়েকটিতে তাদের জন্য কটি সেলাই মেশিন কিনে রেখেছি। নতুন কতগুলো কেনার পরিকল্পনা আছে। তাদের প্রশিক্ষকদের বেতন দেই।
আর কার্যক্রম?
https://www.charity.ebay.com/charity/i/Agami-Incorporated/195794 নামে আমাদের এই সাইটে যেতে পারেন। ও, আবেদন প্রক্রিয়াটি পাবেন https://www.agami.org/agami-events/2022/8/23/grant-writing. এই প্রক্রিয়াটি পড়তে পারেন-https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSc6D7KCYWHfJ9IW8S6bJOnNzP4ZpwLsL1KBQPEF1Jg2E4tUzw/viewform. অনুদানের লিংক হলো https://www.agami.org/donate.
স্বেচ্ছাসেবক?
আমাদের ছাত্র, ছাত্রীরা। ছাত্রজীবন শেষে তারা কীভাবে আমাদের সঙ্গে কন্ট্রিবিউট বা চাকরি করবে এই নিয়ে পরিকল্পনা করছি। তারা আমাদের সঙ্গে প্রথম থেকে কাজ করছে।
কোথায় বেশি কাজ করছে?
আমাদের ‘লাইব্রেরি পিপিই’তে। ২৮ থেকে ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবকরাই এখন প্রকল্পটি দেখাশোনা করে। তারা আমাদের ছাত্র, ছাত্রীদের লিটারেসি বা স্বাক্ষরতা উন্নয়নে কাজ করে। স্কুলগুলোতে গিয়ে শিশুদের কোন, কোন জায়গায় দুর্বলতা, সেগুলো গল্পের বই পড়ানো, গল্প করা, আলোচনা ইত্যাদিতে অ্যানালাইসিস করে। আমাদের কাছে রিপোর্টগুলো জমা দেয়। এরপর প্রয়োজনানুসারে উন্নয়নের জন্য নানা ধরণের বই ও সিনেমা দেখানো হয়। আমরা দেখেছি, শিশুদের উচ্চারণ, বানান ইত্যাদিতে সমস্যা থাকে। শব্দের অর্থ বুঝতে সমস্যা হয়। ভালোভাবে অনেকে সুন্দরভাবে কথাও বলতে পারে না। তাদের মধ্যে নেতৃত্ব দক্ষতা থাকে না। এমন অনেক শিশু আছে, যারা জীবনে মানুষের সামনে এসে কথা বলেনি। তাকে সামনে নিয়ে আসা ও বিকাশ ঘটানো, নানা ধরণের যোগ্যতা তৈরি করে দেওয়া-এমন সমস্যাগুলো সমাধানেও তারা কাজ করে। নানা ধরণের কাজ দেয়, উপস্থাপন দক্ষতা তৈরি করে দেয়। এও এক চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে তারা বইগুলো দেয় ও নিদিষ্ট সময় ছাত্র, ছাত্রীদের বেঁধে দেয়। এগুলো গল্প, কবিতা, ছড়ার বই, যে ক্লাসের জন্য যেটি প্রযোজ্য হয়। এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ বা একটি মাস সময় দেয় দরকারে। টেস্ট বা পরীক্ষা নেয়। খাতা দেখে। বইগুলো ফেরত আনে। তাদেরকে নিয়ে প্রগ্রাম করে। শিশুদের দেখানোর পরিকল্পনায় তাদের উপযোগী ছবিগুলো এজন্য আমরা যোগাড় করি। সেগুলো নিয়ে তারা চলচ্চিত্র উৎসব করে। আগামীর প্রজেক্টরে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ছবিগুলো দেখায়। দেখে বাচ্চারা শিক্ষিত হয়। তাদের একজন হতে হলে-https://www.agami.org/volunteer. আমাদের নির্বাহী কমিটির সবাইও স্বেচ্ছাসেবক। তারা অনেক বড় দায়, দায়িত্ব পালন করেন।
আপনারা কারা?
আমাদের যে তিনজন প্রতিষ্ঠাতা আছেন, তারা যে স্বপ্ন দেখেছেন, বাস্তবে রূপ দিয়েছেন এবং হাজার, হাজার ছেলেমেয়ের জীবন এবং ভবিষ্যত গড়ে দিয়েছেন মানুষের দানে ও সাহায্যে। আগামীতে আমি ২০১৯ সালের জুনে যোগ দিয়েছি। আমাদের সঙ্গে অনেকে এসেছেন। বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নকারী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকৌশলী দলের প্রধান, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী অন্যতম।
পরিচালকরা?
আমাদের পরিচালকরা, বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে আছেন, আগামীর সব কার্যক্রমে রয়েছেন। ফ্রি অব কস্ট তারা সার্ভিস দেন। বলেন, ‘ভলান্টিয়ারি সার্ভিস’। সবার ব্যাকগ্রাইন্ড খুব ভালো। প্রত্যেকেই হাইলি কোয়ালিফাউড। আমার কাছে সবচেয়ে মোটিভেটিং বা প্রেষণাদায়ক মনে হয়, আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশনে যারা এক্সিকিউটিভ কমিটিতে আছেন, বিভিন্ন প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবাদান করেন। সবাই এখানে প্রতিষ্ঠানটিকে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই সময় দিচ্ছেন। অনেকে আছেন, দিনে তিন থেকে চার ঘন্টা সময় দেন। নির্বাহী কমিটির সদস্যরা স্বোচ্ছাসেবাদানের মাধ্যমে প্রথম থেকে আগামীতে কাজ করে চলেছেন। কোনো আর্থিক পারিশ্রমিক পান না, নেন না। পিপিআই বা ‘প্রজেক্ট, প্রগ্রাম অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভ’গুলোর প্রধানরাও ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেন।
এভাবে ভলানটিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবী হবার কারণ? তাদের অনেক পয়সা আছে?
পয়সা তো অনেকেরই আছে কিন্তু সবাই তো এই কাজ করেন না। তাই না? একটি কারণ হলো-তারা দেশের জন্য নিঃস্বার্থে কাজ করছেন। শিশুদের মধ্যে যারা সত্যিকারভাবে শিক্ষার সুবিধা লাভ করতে পারছে না, পেলে অনেক দূর এগুতে পারত, তাদের জীবনগুলো বদলে দিচ্ছেন তারা সবাই। তাদের জন্য মহান মানুষগুলোর ভালোবাসা অনেক দেখেছি। আমাদের নিবার্হী মানুষগুলো অনেকে সামর্থ্যবান। সবাই যে এক রকম সামর্থ্য রাখেন, সেটি নয়। তবে বেশ ভালো স্বচ্ছল তারা। তারা চিন্তা করেছেন, নিজে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন ও সে কারণেই এত দূর এগিয়েছেন, ফলে অন্যদের প্রতি, সব হারানো মানুষগুলোর প্রতি তাদের দায়বোধ আছে। তাই সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য, তাদের নিয়ে কাজ করছেন।
আগামীর সাফল্য?
এখন পর্যন্ত বিনামূল্যে লেখাপড়াসহ জীবনের সবদিকে নানাভাবে আমরা সুবিধাবঞ্চিতদের সাহায্য করেছি। অনেক ছাত্র, ছাত্রী আছে। হয়তো তারা আগামীর বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি না হলে পড়ালেখা করতই না, করতে পারত না। এই হিসেবেও আমাদের অনেক ছাত্র, ছাত্রী আছে, যারা এসএসসি পাশ করেছে। কর্মক্ষেত্রে চলে গিয়েছে। লেখাপড়া সম্পন্ন করেছে, আছে। এমন কিছু ছাত্র, ছাত্রী এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। কয়েকজন ভালো জায়গায় পড়ে। আমাদের সাপোর্ট নিয়ে কয়েকজন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হয়েছে। একজন চিকিৎসক হয়েছে এমবিবিএস পাশ। এরকম অসাধারণ সফল কয়েকজন আছে, যারা কোনো না কোনোভাবে আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশনের সাপোর্ট নিয়েছে। আমরা যে স্কুলগুলোকে সাপোর্ট করি, সেগুলো থেকে তারা সবাই সাপোর্ট নিয়ে লেখাপড়া করেছে। তারা শিক্ষাবৃত্তি লাভ করেছে। কথার কথা, আমরা একটি স্কুলকে সাপোর্ট দেই, ফান্ডিং করি। তারা আবার তাদের ভালো ছাত্র, ছাত্রীদের স্কলারশিপ দেয়। এমন প্রগ্রাম আছে আগামীর সঙ্গে কানেকটেড। এভাবেই ওরা লেখাপড়া করতে পেরেছে।
আগামীর অসুবিধা কী?
ফান্ডিংয়ের সমস্যাটি। এই অসুবিধা আছেই। স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশে আমরা যদি আরো বেশি ফান্ড তুলতে পারতাম, তাহলে আরো বেশি মানুষকে, আরো বেশি স্কুলকে সাহায্য দিতে পারতাম। তাহলে আমাদের কার্যক্রমগুলো আরো অনেক বাড়াতে পারতাম। সমস্যাটি আছে। লোকাল ফান্ডিংয়ের দিকে আমাদের আরো মনোযোগী হতে হবে। যদি এই সাহায্যও যোগাড় করতে পারি, তাহলে আমরা আরো বেশি পড়ালেখার পরিবেশ তৈরি করতে পারব। বেশি স্কুল নিতে পারব। বেশি স্কুল নেওয়া মানে, আরো বেশি ছাত্র, ছাত্রীকে সাহায্য করতে পারা। আমাদের টার্গেট আছে, একসময় সারা বাংলাদেশের সবগুলো জেলায় যাব। প্রতিটি জেলাকে রিচ করব, পরিকল্পনাটি আছে।
শিশুরা-যাদের পেটে ভাত নেই, তাদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ কেমন? কেন?
আগামীর শিশুদের স্বপ্নগুলো তো অনেক বড়। তারাও তো স্বপ্ন দেখে। আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন তাদের স্বপ্নগুলো দেখতে শেখায়। তাদের পাশে থাকে। আমি নিজে বেশ কয়েকটি স্কুল ভিজিট করে শিশুদের সঙ্গে কথা বলেছি। জেনেছি, তারাও আসলে আর সব মানুষের মতো। কেউ ডাক্তার হতে চায়, কেউ শিক্ষক হতে চায়, কেউ সাংবাদিক। জীবনের স্বপ্নগুলোকে পূরণ করতে তাদের প্রত্যেককে যে রাস্তাটি পার হতে হবে, যে জার্নিটি আছে, পূরণের জন্যই আসলে আমাদের সবাইকে তাদের সাপোর্ট দেওয়া দরকার। সত্যটি আমরা সবসময় অনুভব করি। এজন্যই আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন।
সুবিধাবঞ্চিত বিদ্যালয়গুলোর দৈনদশা বা খারাপ অবস্থার গড় চিত্র কেমন?
অর্থনৈতিকভাবে ওরা অনেক ভালনারেবল বা ভঙ্গুর অবস্থায়। আমাদের ছাত্র, ছাত্রীদের বাবারা কেউ রিকশা চালান। কেউ সবজি বিক্রেতা, মাছ বিক্রি করেন। তাদের মায়েরা বাসাবাড়িতে কাজ করেন-এই ধরণের পরিবারগুলোর সন্তান ওরা।
(১৪ মে, ২০২২, ৩৩/সি, লেক সার্কাস, কলাবাগান, ঢাকা ১২০৫)