এক পাশে তার জারুল গাছে
লেখা ও ছবি : ইমরুল কায়েস, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
কবি আহসান হাবীব ‘স্বদেশ’ কবিতায় লিখেছেন-‘এই ছবিটি চেনা/মনের মধ্যে যখন খুশি/এই ছবিটি আঁকি/এক পাশে তার জারুল গাছে/দুটি হলুদ পাখি।’এই জারুলের অনেক গুণ, গুণে ভরা গাছ। কাঠ অত্যন্ত শক্ত, মূল্যবান। ঘরের আসবাবপত্রসহ বহুবিধ উপকরণে সুব্যবহৃত। জারুল বৃক্ষের ভেজষ গুণ রয়েছে। জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতায় উপকারী।
এখন গ্রীষ্মের প্রখর রোদ্দুর। জারুল গাঢ় বেগুনি ফুলের রঙের বন্যা বয়ে যাচ্ছে সর্বত্র।
আমাদের ক্যাম্পাস বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সেজেছে বেগুনি জারুল ফুলে। প্রচন্ড খরতাপে চারদিকে প্রশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে। হালকা বাতাসে, সবুজ পাতার ফাঁকে মাথা তুলেছে বেগুনি পাপড়িগুলো। সৃষ্টিকর্তার এই দৃষ্টিনন্দন সৃষ্টিগুলো যেকারো চোখ ভরিয়ে তুলবে। আমরাও বেগুনি জারুলের সৌন্দর্যে মেতেছি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল রোডেটি মেয়েদের পাড়া। এই পথে সারি, সারি জারুল গাছ আছে। গাছে, গাছে শোভা পাচ্ছে বেগুনি জারুল ফুল। গ্রীষ্মের শুরু থেকে তারা মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। ফুলে ভরা জারুল গাছগুলো অধ্যাপক, ছাত্র-ছাত্রী ও দশনার্থীদের মুদ্ধ করে চলেছে। মন ভরে দেখছেন সবাই। কেউ, কেউ মোবাইলে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। কেউবা ভিডিও করে শেয়ার করছেন। সঙ্গে মনের অনুভূতি লিখছেন অনেকে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের মন মুহূর্তেই মন ভালো করে দেয় হলটির পাশের জারুল গাছের সারি, তাদের ফুলের শোভা। আগে কখনো এত জারুল গাছ কোথাও আমরা কেউ দেখিনি। আমাদের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই প্রথম দেখলাম।’ আরো বললেন, ‘শেখ হাসিনা হলের রোডটি ফাল্গুনে পলাশ ফুলে আগুন রাঙা হয়ে ওঠে। এবার ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় চারপাশই সবুজে ভরেছে। রাস্তায়, রাস্তায় পড়ে আছে ঝড়া জারুল ফুল। গাছে, গাছে ফুটেছে অসংখ্য। এই পথে প্রবেশ করতেই আমাদের সবার মনে রোমাঞ্চ ও ভালোবাসা, সুখের অনুভূতি জন্ম লাভ করে।’
আমরা এবার জারুলের গুণগান গাই। তার জীবনে যাই-জারুল ফুলের বেগুনি বর্ণ। যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি সুন্দর। পাঁপড়ি নমনীয় ও কোমল। ছয়টি মুক্ত পাঁপড়িতে একটি ফুল জন্ম নেয়। রঙ বেগুনি। অনেক সময় সাদার কাছাকাছি এসে পৌঁছায়। জারুলের খাতাপত্রে বৈজ্ঞানিক নাম ‘ল্যাগেরস্ত্রেমিয়া স্পেচৌজা’। নামটি ল্যাটিন। এই জারুলকে আবিস্কার করেছেন কার্ল লিনিয়াস। তাকে এশিয়ার পূর্ব অংশ থেকে জারুল গাছ এনে নিয়েছেন প্রকৃতিবাদী মাগনোস ফন লাগাশঠুন। তার নামের প্রথম অংশ থেকে মিলিয়ে বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশ রেখেছেন বিজ্ঞানী। পরের অংশ স্পেচৌজার মানে হলো সুন্দর।
এই গাছের জন্ম এশিয়ার গ্রীস্মমন্ডলীয় দক্ষিণে। বাংলাদেশের নিম্মাঞ্চলগুলোতে জন্মে। এই অংশের বলে ভারতীয় উপমহাদেশেরই গাছ জারুল। চীন, মালয়শিয়া ইত্যাদি দেশেও অনেক আছে। শীতে পাতাশূন্য অবস্থায় পড়ে থাকে। গ্রীস্মে তার নবজন্ম ঘটে। তখন ফুল ফোটে, পাতা গজায়। বসন্তেও গাছে গাঢ় পাতা দেখা যায়। শরতেও তাই। আমাদের বরিশালের কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতাতেও আছে বন্দনা-‘এই পৃথিবীর এক স্থানে আছে/ সবচেয়ে সুন্দর করুণ/ সেখানে সবুজ ডাঙ্গা ভরে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল/ সেখানে গাছের নাম : কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল।’
ওএস।