প্রথম ইরাজমুজ মুন্ডুজ ‘সুলতানা চৌধুরী’
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নামে মেয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জন্মস্থান গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ও সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পালকে অনন্য গৌরব অর্জিত হয়েছে।
অ্যাপ্লাইড কেমিষ্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এসিসিএ) বিভাগের অসাধারণ ফলাফলের অধিকারী সুলতানা চৌধুরী তার বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে গিয়েছেন ইউরোপে। লাভ করেছেন ‘এরাজমুজ মুন্ডুজ জয়েন্ট মাস্টার্স’। এটি ল্যাটিন (উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর প্রধান ভাষা)’য় দেওয়া বিশ্বের অন্যতম শিক্ষা বৃত্তি। বিভিন্ন দেশের বহু উচ্চতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাস্টার্সের পরে এই মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
বৃত্তিটি তারাই লাভ করেন, যারা তাদের শিক্ষাজীবনে অসাধারণ ফলাফলের ভিত্তিতে বিশিষ্ট ও সম্মানিত আসন লাভ করেছেন। এর বাদেও তাদের জীবনে বিভিন্ন উপাদানের ভালোভাবে মিশ্রণ ঘটেছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের অসাধারণ মেধাবী ও যোগ্য ছাত্র, ছাত্রীরা মাস্টার্স পর্যায়ের এরাজমুজ মুন্ডুজের জন্য আবেদন করতে পারেন। অতিরিক্ত হলো, শিক্ষাবৃত্তিটি সেরা ছাত্র, ছাত্রীদের জন্য সহজলভ্য করা হয়েছে।
প্রতি বছর এই বৃত্তির ক্যাটালগ উন্নততর করা হয়। এখন যে শিক্ষাবৃত্তিগুলো আছে, সেগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রদান করা। সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় প্রতি শিক্ষাবর্ষের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি সেশনে। এই সময় সাধারণত আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। তারপর তারা খুব দ্রুতই সেই বছরের শিক্ষাবর্ষের জন্য পড়ালেখা শুরু করতে পারেন। সরাসরি আবেদন করতে পারেন ছাত্র, ছাত্রীরা নিয়মমাফিক। জানতে পারেন সবই।
সুলতানা চৌধুরী তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই ও ঢাকাপ্রকাশ ২৪.কমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সফিকুল আহসান ইমনকে জানিয়েছেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হিসেবে ‘ইরাজমুজ মুন্ডুজ শিক্ষাবৃত্তি’ লাভ করে স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত গর্বিত। ইউরোপের সবচেয়ে লোভনীয় শিক্ষাবৃত্তিটিতে বিনাপয়সায় লেখাপড়া করতে পারবো। স্পেন ও পর্তুগালের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে যাচ্ছি। হাতে-কলমে শিখতে ও গবেষণা করতে পারবো। ফলে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মা, বাবাকে ধন্যবাদ। আমার বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককের কাছে কৃতজ্ঞ। লেগে থেকে, অদম্য আগ্রহ আর জেদের কারণে আজকে আমিই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ইরাজমুজ মুন্ডুজ স্কলার’।”
কীভাবে আমরা ইরাজমুজ মুন্ডুজ স্কলার হবো আপনার মতো-প্রিয় ছোট ভাইয়ের এই প্রশ্নের জবাবে হেসে দিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রীটি। এরপর খানিক ভাবলেন। তারপর বললেন, ‘ইরাজমুজ মুন্ডুজ স্কলারশিপের আবেদন করতে হলে খুব ভালো অ্যাকাডেমিক ফলাফল লাগবে। বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট ইংরেজিতে ও সেমিস্টার পদ্ধতিতে বলে সারা বিশ্বের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রহণযোগ্য।’
এই শিক্ষাবৃত্তিতে অনেকগুলো দেশ ও সরকারের অংশগ্রহণ রয়েছে। তারা জীবনবীমা, স্বাস্থ্যবীমা, বিমানভাড়াসহ সবই দেন। প্রিয় ছাত্রীর এই অনন্য শিক্ষাবৃত্তি লাভের খবরে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকরাই খুব খুশি হয়েছেন।
সুলতানা চৌধুরীর নিজের বিভাগ এসিসিই’র বিভাগীয় প্রধান এখন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান। তাকে অনুভূতি জানার জন্য প্রশ্ন করলে সাংবাদিককে উত্তর করেছেন, ‘জীবনের পথে, লেখাপড়ার ভুবনে সুলতানার এই সাফল্য আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে অনুপ্রাণিত করছে। বিশ্বের পরিমন্ডলে যেকোনো ছাত্র, ছাত্রীর সাফল্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আমরা শিক্ষক হিসেবে নিজেদের সফল ভাবি। আমি অন্তর থেকে তার ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করি। অন্যরা তার মতো হোক এই আশা করি।’
ওএস।