কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল
লেখা ও ছবি : চৌধুরী মাসাবি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
আজ সোমবার কুুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে এক অনন্য দিন। জন্মদিনে ছাত্র, ছাত্রীদের ভালোমন্দ খাওয়াতে পারেননি, তাদের নাচ, গান, কনসার্টের আয়োজন করতে পারেননি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আবদুল মঈন। তবে তিনি ও তারা মিলে এনেছেন বাংলাদেশের গর্ব, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও অসাধারণ শিশু সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে।
আজ বহু বছরের অর্জন হিসেবে মনে রাখার মতো এই অয়োজনে এসেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য এই অধ্যাপক।
কলা ও মানসিক অনুষদ অনুষদ ‘সমকালীন সাহিত্য প্রসঙ্গে’ নামের বিশেষ একটি আলোচনা সভার মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে দাওয়াত করে এনেছেন অবিশ্বাস্য জীবনবোধসম্পন্ন এই মানুষটিকে।
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘আমার দুঃখ হয়, মুক্তিযুদ্ধের ওপর সে রকম অতি উচ্চমানের কোনো লেখা হয়নি। আমার ভাই অধ্যাপক ড. হ হুমায়ূন আহমেদের জোছনা ও জননীর গল্প আছে। এই মহান মুক্তিযুদ্ধ দেশের সব অংশের সব শ্রেণীর সব মানুষকে, তাদের জীবনগুলো স্পর্শ করেছে।’
‘মুক্তিযুদ্ধ এমনই এক বিস্ময়কর ও ঐতিহাসিক অর্জন যে, স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কোনো না কোনো স্মৃতি রয়েছে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ। এই দেশের র্দুনীতি, অপরাধ নিয়ে সবাই লিখছি। ফলে খারাপ বিষয়গুলো পরিচিতি পাচ্ছে। আমি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে দেখার অপেক্ষা করছি-আমার মাতৃভূমির সত্যিকার সাহিত্য, সুন্দর, ভালো কর্মগুলো সারা বিশ্বে আমাদের সমৃদ্ধি হিসেবে পরিচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিশু সাহিত্যিক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবদন্তী অধ্যাপক, তারুণ্যের আইডল অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল আরো বলেছেন, ‘এই কাজগুলোতে আমাদের যে কোনো দোষ নেই, তা আমি মনে করি না। আমরা যে লেখাগুলো লিখি, সেগুলো পরিধিতে ছোট্ট। আমাদের এখানেও প্রচুর রোমান্স আছে। মানুষের দারিদ্র এবং কষ্টগুলো উঠে আসে। তবে পৃথিবীটিতে মানুষের যেসব নানা অভিজ্ঞতা হয়, সেগুলো আমাদের লেখায় আসে না।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ.এম. আবদুল মঈন এরপর বলেছেন, ‘আমি ভালোর পক্ষে, খারাপের পক্ষে নই।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচায সমালোচিত হওয়ার মানে, বিশ্ববিদ্যালয়টিই সমালোচিত হওয়া। যেকারো, যেকোনো কিছুর সমালোচনার সংস্কৃতি বাদ দিয়ে অ্যাকাডেমিক পড়ালেখা ও গবেষণার অনুশীলনের মাধ্যমে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কেই আমরা শিক্ষা ও গবেষণা এবং সংস্কৃতি চর্চায় আরো অনেক দূরে নিয়ে যেতে পারব।’
‘নিজেদের আরো ওপরের দিকে তুলতে পারবো’, বলে জানিয়েছেন তিনি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ.এম. আবদুল মঈন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসায় অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে আন্তরিক ধন্যবাদ দিয়েছেন।
আরো আলোচনা করেছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান।
এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন বাংলার সহযোগী অধ্যাপক ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম।
সভাপতি ছিলেন কলা ও কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম মাওলা।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশে কলা ও মানবিকের বিভাগগুলো এখন অনেকটা হাসি-ঠাট্টার বিষয়। বিজ্ঞান আমাদের যে মারণাস্ত্র উপহার দিয়েছে তা দান হলেও মানবিক বিষয়াবলী, সাহিত্য আমাদের মানবিক মানুষ হতে সহায়তা করে। এই চর্চাগুলো ছাড়া মানবিক মানুষ হওয়া সম্ভব হয় না।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দিয়েছেন ইংরেজির প্রধান অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস। আলোচনা করেছেন বাংলার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. জি. এম. মনিরুজ্জামান। আলোচক ছিলেন ইংরেজির অধ্যাপক ড. এম. এম. শরীফুল করিম।
সেমিনার প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন বাংলার সহকারী অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ রাজু, ইংরেজির শারমীন আক্তার।
ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী, সব অনুষদের ডিন, সব হল প্রাধ্যক্ষ, সব বিভাগের প্রধান, সব বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রায় সব ছাত্র, ছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
ওএস।