দাম বৃদ্ধি পেয়ে বাজারে আটা
সরকার বলছে দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাদ্য মজুতি রয়েছে, শঙ্কার কোনো কারণ নেই। তারপরও কয়েক দিন থেকে বাজারে আটা পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরা ব্যবসায়ীরা নেই নেই বলার পর দাম একেবারে লাগামহীন হয়ে গেছে। এক লাফেই পুষ্টিসহ কয়েকটি কোম্পানির ২ কেজির ১২৬ টাকার আটা ১৪৪ টাকা হয়ে গেছে। বেড়েছে ১৮ টাকা বা ১৪ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে ৭৯ শতাংশ।
বিভিন্ন বাজার ও সরকারি সংস্থা টিসিবি সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীতে খাদ্যপণ্যের পাইকারি বাজার কৃষিমার্কেট। বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহেরসহ অনেক বিক্রেতার কাছে আটার দাম কত— জানতে চাইলে তারা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আটা নেই। কয়েকদিন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। ২ কেজি আগে ১২৬ টাকা বিক্রি করা হলেও পৃষ্টি, এসিআইসহ অন্যান্য কোম্পানির আটা পাওয়া যাচ্ছে না। কেন নেই এমন প্রশ্নের জবাবে সেদিন তারা বলেছিলেন, সয়াবিন তেল, চিনির দশা আটাতেও। দাম বৃদ্ধির কারণে পাওয়া যাচ্ছে না। ডিলাররা শুধু দিব দিচ্ছি করে দিচ্ছে না। তাই বিক্রি করতে পারছি না।
তবে শনিবার (১২ নভেম্বর) থেকে পাওয়া যাচ্ছে ২ কেজি ১৪৪ টাকা দরে। দাম বেড়েছে ১৮ টাকা বা ১৪ শতাংশ।
এদিকে রাজধানীর অপর পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারেও একই দশা। গত কয়েক দিন থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, আটা নেই। কোম্পানি থেকে না দিলে আমরা কীভাবে বিক্রি করব। চিনির মতো হয়ে গেছে, বাজারে নেই।
এ সব দোকানে শনিবার সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ভিন্ন চিত্র। কিচেন মার্কেটের নিচতলার ভাই ভাই জেনারেল স্টোরের মালিক আবুল কাদের ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন ‘২ কেজির পুষ্টি আটা ১৪৪ টাকা। এত দাম কেন? উত্তরে বলেন, কয়েক দিন থেকে ছিল না আটা। আজ সকালে কোম্পানি থেকে দিয়েছে। তারা দাম বৃদ্ধি করেছে। আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আগের দামের কয়েক প্যাকেট এসিআই আটা আছে ১৩২ টাকা। কালকে থেকে হয়ত তাদের নতুন রেটের ১৪৪ টাকার আটা আসবে।
এদিকে একই মার্কেটের জব্বার জেনারেল স্টোরের জব্বারও বলেন, ২ কেজির পুষ্টি আটা ১৪৪ টাকা। এরচেয়ে কম দামেরটা নেই। কয়েক দিন আগেই শেষ হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, গত ২ নভেম্বর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাদ্য মজুদ আছে।’
শনিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, সর্বশেষ ৯ নভেম্বর খাদ্য মজুদ ছিল ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৩২২ টন। এরমধ্যে চালের মজুদ ছিল প্রায় ১৩ লাখ ৬৪ হাজার টন। ধান ১৩ হাজার টন। আর গমের মজুদ ছিল দুই লাখ ১৩ হাজার টন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে গমের বার্ষিক চাহিদা ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে গমের উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টন। বাকি গম বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬২ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। এই গম থেকে আটা-ময়দা তৈরি করে কয়েকটি কর্পোরেট শিল্প। এরমধ্যে বসুন্ধরা, সিটি, মেঘনা, টিকে, আকিজ এবং এসিআই। তারাই বেশি করে বিক্রি করছে বাজারে।
এদিকে আটার বাজারের অস্থিরতা সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর ওয়েবসাইডেও দেখা যায়।
টিসিবির তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি খোলা আটার দাম বেড়েছে ৭৯ শতাংশের বেশি। কারণ গত বছরের ১২ নভেম্বর এক কেজি খোলা আটার দাম ছিল ৩৩ থেকে ৬৫ টাকা। বর্তমানে তা ৬০ থেকে ৭২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর এক বছর আগের ৩৮ টাকা থেকে ৪৫ টাকার প্যাকেট আটা শনিবার বিক্রি করা হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। যেখানে চিকন চাল মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি করা হচ্ছে ৭২ টাকা।
কিন্তু বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে দুই কেজির আটা বিক্রি করা হচ্ছে ১৪৪ টাকা বা এক কেজির দাম ৭২ টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে চাল ও আটার দাম এক হয়ে গেছে।
তবে আটার চেয়ে ময়দা কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। সেই চিত্র টিসিবিও বলছে। খোলা ময়দা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি ও প্যাকেট ময়দা ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এক বছর আগে খোলা ময়দা ছিল ৪২ থেকে ৫৫ টাকা ও প্যাকেট ময়দার কেজি ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। বছরের ব্যবধানে ময়দার কেজিতে বেড়েছে ৭৯ শতাংশ।
খুচরা ব্যবসায়ীরা এই প্রতিবেদককে জানান, সয়াবিন তেল ও চিনির দশা হয়ে গেছে আটা ও ময়দায়। প্রথমে তারা বিভিন্ন অজুহাতে দিব দিচ্ছি বলে দিচ্ছে না। তারপরও দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে আমাদেরও খারাপ লাগছে।
সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থে বাজারে কাজ করছি। তাই প্রতিনিয়ত সারাদেশে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি বাজার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে গেলেই বিচিত্র চেহারা দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যে যার মতো করে দাম আদায় করছেন। অভিযানে তারা ধরা পড়ছেন। তাদের জরিমানা করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এই অজুহাতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতি মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে।
আর সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা বলেন, আমরা প্রয়োজন মতো বাজারে আটা-ময়দা বিক্রি করছি। যে যা চাচ্ছে তা দেওয়া হচ্ছে। কারওয়ানবাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হয়ত স্টক কমে গেছে। ডিলাররা চাইলে সরবরাহ করা হচ্ছে।
জেডএ/আরএ/