এলডিসি থেকে উত্তরণে উদ্বিগ্ন নন পোশাক মালিকরা
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের বের হয়ে যাওয়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন নন। কারণ এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইতিমধ্যে সরকার ও ক্রেতা দেশগুলোর সঙ্গে কাজ শুরু করেছে বিজিএমইএ। বুধবার (৫ জানুয়ারি) ‘ইআরএফ ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানে বিজিএমই-এর সভাপতি ফারুক হাসান এসব কথা বলেন।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ নিজস্ব কার্যালয়ে অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এ ডায়ালগের আয়োজন করে। সংলাপটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।
ফারুক হাসান বলেন, বর্তমানে তাদের কৌশল হচ্ছে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতিকাল অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারের সুবিধা নেওয়া। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০২৬ সালের পরে যে বাড়তি তিন বছর শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধায় রপ্তানির সুযোগ দেবে, আলোচনার মাধ্যমে তা বাড়ানো। বিজিএমইএ ইইউর কাছে ১০ বছরের জন্য এই সুবিধা চায়। এরপরে বিজিএমইএ ইইউর সঙ্গে জিএসপি প্লাস নিয়ে আলোচনা করবে। তবে পোশাক মালিকরা চান এই সময়ের মধ্যে সরকার অন্যান্য দেশের সঙ্গে মুক্ত ও অগ্রাধিকারমুলক বাণিজ্য চুক্তি করবে।
বিজিএমইএ-এর সভাপতি আরও বলেন, বিজিএমইএ সব সময় পুরো খাতের উন্নয়নে কাজ করেছে, এখনও করে চলেছে। এই সংগঠনটিতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা সকলেই পোশাক শিল্পের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, করোনার প্রভাব মোকাবেলায় পোশাক খাতের এসএমই প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন ধরনের চার্জ ও ফিস কমানো হয়েছে। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাজার ও পণ্য বহুমুখীকরণের কাজ চলছে। কৃত্রিম তন্তুর পোশাক যাতে দেশে বেশি তৈরি হয় সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গবেষণা জোরদার করা হয়েছে। এক কথায় বিজিএমএর ভুমিকা ভবিষ্যতমুখী করার চেষ্টা চলছে।
যুক্তরাষ্টের বাজারে জিএসপি বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান বলেন, বৃহত্তম এই বাজারে তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধা পেতো না। এখনও পাচ্ছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেসব শর্ত দিয়েছিলো সেগুলো পোশাক মালিকরা ও সরকার বাস্তবায়ন করেছে। কমপ্লায়েন্স বা নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে এদেশের উদ্যোক্তারা প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। বিশ্বের নিরাপদ কারখানা এখন বাংলাদেশে। ১৫৩টি গ্রীণ ফ্যাক্টরি রয়েছে দেশে। দেশটির জিএসপি সুবিধা দেওয়ার সঙ্গে শুধু শর্ত বাস্তবায়ন নয়, রাজনীতিও জড়িত।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ব্যবসায় পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত। তবে ব্যবসায়ীদের কাজ তারা করছেন। আমরা কোনো বাজার হারাতে চাই না।
আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আগামী নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ী হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রত্যাশা যে কারখানায় উৎপাদন ও পণ্যের সরবরাহ ব্যহত হয়, এমন কোনো কর্মসূচি যাতে তারা না নেয়। তিনি বলেন, অনেকে অভিযোগ করেন যে, ব্যবসায়ীরা নতুন বাজার, পণ্য, ডিজাইনে যাচ্ছেন না। কিন্তু যাওয়ার সুযোগ কোথায়। কাস্টমসের জটিলতার মত অনেক জটিলতার পেছনে ব্যবসায়ীদের দৌড়াতে হয়। ফলে এ ধরনের বিধি বিধান সহজ করে দিলে ব্যবসা সহজ হবে।
করোনার প্রভাব মোকাবেলার প্রণোদনার ঋণ পরিশোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক কারখানা ইতিমধ্যে ঋণের কিস্তি দেওয়া শুরু করেছে। আর কিছু প্রতিষ্ঠান পারছে না। কারণ ওইসব প্রতিষ্ঠানের ক্রেতারা মূল্য পরিশোধ করেনি। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় সময় দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
পোশাকের ন্যুনতম দর বিষয়ে তিনি বলেন, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ যৌথভাবে একটি কমিটি করেছে। এ কাজটি হবে, তবে সময় লাগবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, সেইসব কারখানাকে ব্যাংক ঋণ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
মহামারি করোনার বিস্তার সফলভাবে মোকাবিলা করায় আমরা নতুন অর্ডার পাচ্ছি উল্লেখ করে সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বিস্তার লাভ করছে। তাই দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধে আগেই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এই অবস্থা থেকে আমরা যেন পিছলে না যাই। আগেই আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ইআরএফের সহ-সভাপতি এম শফিকুল আলম, সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা।