একনেকে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ প্রকল্প অনুমোদন
৫ লাখ ভূমি-গৃহহীন পাবে ঘর
সারা দেশের ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় ৪ লাখ ৮৬ হাজার পরিবারকে পাকা ঘর করে দেওয়া হবে। এজন্য তাদের প্রত্যেককে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিতে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটি চতুর্থ সংশোধন করা হলো।
এটিসহ মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ২১১ কোটি টাকা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব তথ্য জানান। এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড, শামসুল আলমসহ বিভিন্ন সচিব উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ন-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১ হাজার ১৬৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এরপর কয়েকবার সংশোধন করা হয়েছে। কাজের পরিধি বাড়ার ফলে চতুর্থবারের মতো সংশোধন করা হলো। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১১ হাজার ১৪২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এতে পাঁচ লাখ মানুষকে পাকা বাড়ি দিতে সরকার আরও ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয় করবে। প্রকল্পটির মেয়াদও বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন ধরা হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। ১০৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শুরু করেছিলেন। মাঝে অন্যরা বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার গুরুত্ব দিয়ে এটা চালু করেন। নানা কারণে এর ব্যয় বাড়ছে। আরও বাড়লে সমস্যা নিই। কারণ কেউ যাতে আশ্রয়হীন না থাকে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ১৪৯টি পাকা ব্যারাক, চরাঞ্চলে ৫ হাজার ৭৮টি সিআইসিট ব্যারাক, ৪ হাজার ৩৯৩টি সেমিপাকা ব্যারাক নির্মাণ এবং ৬০টি বহুতল ভবন নির্মাণ হবে। ১ হাজার ১২০টি কমিউনিটি সেন্টার, ৫৮০টি বিশেষ ডিজাইনের ঘর, ৫৬৫টি ঘাটলা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বক্স কালভার্ট, পাকা ড্রেন ও স্লপ প্রোটেকশন নির্মাণ করা হবে। সব প্রকল্প গ্রামে অগভীর-গভীর নলকূপ ও অভ্যন্তরীণ রাস্তাও থাকবে।
সভায় অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্প। ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। সভায় ৫৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল মীরসরাই ১ম প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য লজিস্টিকস ও ফ্লিট মেইনটেন্যান্স ফ্যাসিলিটিস গড়ে তোলা (১ম সংশোধিত) সংশোধিত প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের জুনে শেষ করতে হবে।
৭২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ককে জাতীয় মহাসড়ক মানে ৪-লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি ডিসেম্বর ২০২১ থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন (১ম পর্যায়, ১ম সংশোধিত) প্রকল্পে ৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। ২০২২ সালের জুনে শেষ করতে হবে।
‘মোবাইল গেইম ও এ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনে এটি শেষ করতে হবে।
৭৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনা জেলার অধীন পোল্ডার ৪৩/১ ও ৪৪বি পুনর্বাসন এবং ঝুঁকিপূর্ণ অংশ পায়রা নদীর ভাঙন থেকে প্রতিরক্ষা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালে এটি শেষ করতে হবে।
১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর ভাঙনরোধ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের জুনে এটি শেষ করতে হবে।
এছাড়া সভায় ২০২৩ সালে শেষ করতে ‘পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মীরসরাই-১ম পর্যায় সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। যা ২০২৩ সালের জুনে শেষ করতে হবে।
জেডএ/এএস