সোয়ান গ্রুপের বিরুদ্ধে ৩৭ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা
এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর সোয়ান গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ১৩৬.০৫ কোটি টাকার গোপন বিক্রয় হিসাব জব্দ করেছে। এতে সরকারের প্রায় ৩৬ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকার ভ্যাট ফাঁকি সংঘটিত হয়েছে মর্মে তদন্তে উদ্ঘাটিত হয়েছে।
মঙ্গলবার ( ৪ জানুয়ারি) সোয়ান গ্রুপেরে এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোয়ান ইন্ডাষ্ট্রিজ লি. (ফোম) প্রতিষ্ঠানটি যুগিরচালা, মৌচাক, কালিয়াকৈর, গাজীপুরে অবস্থিত। এর মুসক নিবন্ধন নং-০০০১৪৭৪৩৭-০১০৩। এর দ্বিতীয়টি সোয়ান কেমিক্যালস লি. প্রতিষ্ঠানটি যুগিরচালা, মৌচাক, কালিয়াকৈর, গাজীপুরে অবস্থিত। এর মুসক নিবন্ধন নং- ০০০১৫২২২৮-০১০৩। অন্যটি সোয়ান ইন্ডাষ্ট্রিজ লি. (ম্যাট্রেস), প্রতিষ্ঠানটি ২০০/এ, তেজগাঁও, শি/এ, ঢাকাতে অবস্থিত। এর মুসক নিবন্ধন নং- ০০০১৪৭৩২২-০২০৩।
প্রতিষ্ঠান ৩ টি মূলত ফোম, ম্যাট্রেস, কেমিক্যালস ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জপনান, প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত সেবা বিক্রি গোপন করে চালান ব্যতীত সেবা সরবরাহ করে দীর্ঘ দিন যাবৎ সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে মর্মে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার উপ-পরিচালক জনাব মোহাম্মদ সাজেদুল হক এর নেতৃত্বে গত ২৩/১১/২০২১ তারিখে প্রতিষ্ঠানটির গ্রুপের প্রধান কার্যালয় গুলশান গ্রেস, হাউস-ডিডাব্লিউএস (সি)-০৮, গুলশান-১ ঢাকা-১২১২ এ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে গোয়েন্দার দল দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে মাসিক দাখিলপত্রে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে ধারণকৃত তথ্যাদি যাচাই করে সেবা বিক্রি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি লুকায়িত অবস্থায় আটক করা হয়।
এসব তথ্য ভ্যাট দলিলাদির সঙ্গে ব্যাপক অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়।
তদন্ত অনুসারে, সোয়ান ইন্ডাষ্ট্রিজ লি. (ফোম) প্রতিষ্ঠানটি জানুয়ারি/২০১৬ হতে নভেম্বর/২০২১ পর্যন্ত সময়ে ১০৫ কোটি ৬০ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩৮ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট সার্কেল (গাজীপুর-৩) এ মাসিক রিটার্নে ৩১,১৬,০৪,২৩৪ টাকা বিক্রয় হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ৭৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৪ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এক্ষেত্রে ১১ কোটি ১৬লাখ ৭১ হাজার ৮৯৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ৯ কোটি ২১ লাখ ২১ হাজার ৮৯৯ টাকা সুদ প্রযোজ্য।
এছাড়া, সোয়ান কেমিক্যালস লি. প্রতিষ্ঠানটি জানুয়ারি ২০১৬ হতে নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত মোট ৪৭ কোটি ৬ লাখ ৩ হাজার ৩৩৯ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে।তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট সার্কেল (গাজীপুর-৩) এ মাসিক রিটার্নে ২৯ কোটি ১৩ লাখ ১০হাজার ৯২২ টাকা বিক্রিয় হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় মোট ১৭ কোটি ৯৩ লাখ ১৯ হাজার ৪১৭ টাকা।
প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এক্ষেত্রে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৯৭ হাজার ৯১৩ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে মোট ২ কোটি ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৫৪ টাকা সুদ প্রযোজ্য।
তাছাড়া, সোয়ান ইন্ডাষ্ট্রিজ লি. (ম্যাট্রেস) প্রতিষ্ঠানটি জানুয়ারি ২০১৬ হতে নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত সময়ে ৮৬ কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪৯ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট সার্কেল (তেজগাঁও) এ মাসিক রিটার্নে ৪২ কোটি ৭৪ লাখ ৩ হাজার ৭৮৭ টাকা বিক্রয় হিসাব প্রদর্শন করেছে।
রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় মোট ৪৩ কোটি ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬২ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এক্ষেত্রে মোট ৬ কোটি ৫৪ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮৪ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে।
এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে মোট ৫ কোটি ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫২ টাকা সুদ প্রযোজ্য।
বর্ণিত তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠান তিনটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ২০ কোটি ৪০ রাখ ৬৯ হাজার ৪৯৩ টাকা এবং সুদ বাবদ মোট ১৬ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ২০৫ টাকাসহ সর্বমোট ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ ১৯ হাজার ৬৯৮ টাকা রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়।
তদন্তে পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনের মধ্যে দুইটি সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর ও অন্যটি ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হবে।
এমএমএ/