বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ঘরে ফেরা’ তহবিল
করোনায় কর্মহীনরা পাবেন ৫ লাখ টাকা ঋণ
করোনা মহামারিতে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন এমন জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে ‘ঘরে ফেরা’ নামে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ৬ শতাংশ সুদে জামানত ছাড়া সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে কর্মহীনদের। এর মেয়াদ হবে আগামী ২০২৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সরকারি তফসিলভুক্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণ বিতরণ করা হবে।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল হাকিমের সই করা এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে শহরকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ হঠাৎ কর্ম হারিয়ে গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এ সব মানুষের অধিকাংশই এখন গ্রামে অবস্থান করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা করা প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধার আওতায় এ জনগোষ্ঠীকে আনা একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জনগোষ্ঠীর জন্য গ্রামেই উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, গ্রামাঞ্চলে আয় উৎসাহী কর্মকাণ্ড গতিশীল করার লক্ষ্যে স্বল্প সুদে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করা আবশ্যক। কোভিড-১৯ মহামারি ও অন্যান্য কারণে কর্মজীবি, শ্রমজীবি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ আয় উৎস কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ব্যক্তিদের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে ৫০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
স্কিমের নীতিমালাসমূহ
এ স্কিমে সরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক অংশগ্রহণ করতে পারবে। এ ছাড়া বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকও অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে তাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগে আবেদন করতে হবে।
ব্যাংকগুলো কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ও সক্ষমতার ভিত্তিতে কৃষি ঋণ বিভাগ তহবিল বরাদ্দ করবে।
অংশগ্রহণকারী ব্যাংক এ স্কিমের আওতায় সময়ে সময়ে ঋণ বিতরণের সক্ষমতা পর্যালোচনা করে প্রয়োজন বোধে বরাদ্দ করা তহবিলের পরিমাণ পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের পর তহবিলের সমপরিমাণ অর্থায়ন করা হবে।গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ
এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংক তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক অর্থাৎ শাখা, উপশাখা, এজেন্ট, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ ও আদায় করতে পারবে। প্রয়োজন বোধে শাখা প্রতি একজন আউটসোর্সিং ঋণ ও আদায় কার্যক্রমের জন্য সহায়তা নিতে পারবে। তবে এ ঋণ প্রদান কার্যক্রমে এনজিও, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে ফেসিলিটেটর এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
এ স্কিমের আওতায় সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারবে। তবে কেউ খেলাপি হলে নতুন ঋণ নিতে ও সমন্বয় করতে পারবে না। স্কিমের আওতায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শূণ্য দশমিক ৫ শতাংশ সুদ বা মুনাফা হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। গ্রাহক পর্যায়ে সুদ বা মুনাফা হার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ (সরল সুদ হারে)। এ সুদ হার সবার জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে কোনো নিরাপত্তা জামানত গ্রহণ করা যাবে না। স্কিমের ১০ শতাংশ ঋণ পাবেন নারীরা।
ঋণের খাতস্বল্প পুঁজির স্থানীয় ব্যবসা, পরিবহন খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি যানবাহন ক্রয়, ক্ষুদ্র প্রকৌশল শিল্প, মৎস্য চাষ, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন, তথ্যপ্রযুক্তি সেবাকেন্দ্র ও অন্যান্য সেবা উৎসারী কর্মকাণ্ড, বসতঘর নির্মাণ/সংস্কার, সবজি ও ফলের বাগান, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ফসল বিপণন।
এ ছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করে এমন কর্মকাণ্ড- যেমন ছোট ছোট ব্যবসা, বিশেষ করে ধান ভাঙানো, চিড়া, মুড়ি তৈরি, নৌকা ক্রয়, মৌমাছি পালন, সেলাই মেশিন ক্রয়, কৃত্রিম গহনা তৈরি, মোমবাতি তৈরি, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এমন ক্ষেত্রে এ স্কিমের আওতায় ঋণ দেওয়া যাবে। সরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের মেয়াদঋণের পরিমাণ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত তিন মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ২ বছর বা ২৪ মাস। ঋণের পরিমাণ ২ লাখ টাকার বেশি তবে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৩ বছর বা ৩৬ মাস।স্কিমের অর্থ নির্ধারিত খাতের বাইরে বিনিয়োগ করলে অতিরিক্ত ২ শতাংশ হারে জরিমানাসহ এককালীন আদায় করা হবে।
গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে ৬ শতাংশের অতিরিক্ত সুদ নিলে অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে জরিমানাসহ এককালীন আদায় করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদেরও ১০ শতাংশ ঋণ প্রদান করতে হবে। ইসলামী ব্যাংকগুলোও শরিয়াভিত্তিক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ করতে পাবে প্রজ্ঞাপনে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেডএ/এমএমএ/