ভাঙাচোরা সড়ক উপেক্ষা করেই বাণিজ্য মেলায় ক্রেতারা
ঢাকাপ্রকাশ
ভাঙাচোরা সড়ক আর ধুলাদূষণ উপেক্ষা করেই বিআরটিসি (আর্টিকুলেটেড) ৩০টি বাসে চেপে বাণিজ্য মেলায় যাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা, বিক্রেতা এবং দর্শনার্থীরা। মেলার তৃতীয় দিন সোমবার (৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুড়িল বিশ্বরোড মোড় থেকে মেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলি ছিল প্রায় পূর্ণ, যদিও কুড়িল থেকে মেলা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে সাধারণ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে কিছুটা ভোগান্তি।
রাজধানী থেকে মেলার নতুন স্থানে যাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে বিশ্বরোড-কাঞ্জনব্রিজ সড়ক। পথে নির্মাণাধীন রয়েছে কয়েকটি আন্ডারপাস এবং বেশ কয়েকটি স্থানে সড়কের ভাঙাচোরা দশা। এছাড়াও ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন এবং সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় ফিরতি পথে সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক যানজট।
সড়কে উন্নয়নকাজ চলতে থাকায় এই পথে চারদিকে সমানে উড়ছে ধুলাবালু। রাস্তা-ঘাট থেকে অলিগলি সর্বত্রই ধুলার রাজত্ব। এছাড়া রাস্তায় চলছে মাটি ও নির্মাণসামগ্রী বহনকারী গাড়ি। আধঘণ্টার পথে সময় যাচ্ছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। আবার কোথাও রাস্তার কিছু অংশ বন্ধ করে কাজ করা হচ্ছে। ফলে সেসব জায়গায় গাড়ির চাপ তৈরি হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপরই তৈরি হচ্ছে যানজট।
প্রথা অনুযায়ী এবারও ১ জানুয়ারি ২৬তম বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে রাজধানীর পূর্বাচলের ৪নং সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি)। কিন্তু, মেলায় সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য সচরাচর কোনো পরিবহন নেই। দীর্ঘ এই পথে সাধারণ মানুষের একমাত্র শেষ ভরসা বিআরটিসি (আর্টিকুলেটেড) বাস ও রিকশা।
বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে আয়োজক সংন্থা রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ইপিবি) এই পথে ৩০টি বাসের ব্যবস্থা করেছে। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। জানা যায়, দিনে পনের থেকে বিশ মিনিট পরপর এই সড়কে বাস চলাচল করছে আর বিকালের পর থেকে দশ মিনিট পরপরই পাওয়া যাচ্ছে মেলাগামী বাস। মেলায় ক্রেতা থাকা পর্যন্ত রয়েছে বাসের ব্যবস্থা।
নির্ধারিত ৩০টাকা ভাড়া দিয়েই বাণিজ্য মেলায় এসেছেন বলে ঢাকাপ্রকাশকে জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মারিয়া সালাম। তিনি বলেন, মেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত কাউন্টারে বাস অপেক্ষা করে। সব যাত্রী নিয়ে রাত ১১টার পরে বাসগুলি কুড়িল পর্যন্ত যায়।
তিনি আরও বলেন, মেলা দেখতে এসেছিলাম, কেমনভাবে সেজেছে তা দেখার সুযোগ হলো। তবে তেমন কিছু এখনো কিনি নি।
দেখা যায়, দর্শনার্থীরা বিভিন্ন স্টল, প্যাভিলিয়ন ঘুরে পছন্দের জিনিস দেখছেন। তবে তেমন কোনো জিনিস বিক্রি হচ্ছে না বলে বিক্রেতারা জানান।
এ সময় মিরপুর থেকে আসা জাহেদুল ইসলাম বলেন, এতো দূরে আসতে অনেক ঝামেলা হয়েছে। বিআরটিসির গাড়িতে এসেছি এবং সময় লেগেছে প্রায় তিন ঘণ্টা। আগে জানলে আসতাম না।
এদিকে কাঞ্চন ব্রিজ থেকে মেলা প্রাঙ্গণের রাস্তাটিও প্রসারিত নয়। ফলে সেখানে ইজিবাইক ও ভ্যান-রিকশার যানজট তৈরি হচ্ছে। আবার মেলা থেকে ফেরার পথে কাঞ্চন ব্রিজের নিচের রাস্তায় ইউটার্নের কারণে দীর্ঘ যানজট হচ্ছে।
বিআরটি থেকে জানানো হয়েছে মতিঝিল, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর থেকে বাস মেলা পর্যন্ত চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত লোকাল বাসে যাওয়ার পর কুড়িল থেকে টিকিটের মাধ্যমে বাণিজ্য মেলায় যাওয়া যাচ্ছে বলে জানান মতিঝিল ডিপো ম্যানেজার মাসুদ তালুকদার। তিনি আরও বলেন, ওই সব রুটে আগে থেকে বাস যাতায়াত করত। মেলা উপলক্ষে সেবা দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মেলা পর্যন্ত যাতায়াতের সুযোগ করা হয়েছে।
ইপিবি জানায়, প্রতিদিন মেলা সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। মেলার প্রবেশ মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের ৪০ টাকা, শিশুদের ২০ টাকা। তবে প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো প্রবেশ ফি লাগবে না।
উল্লেখ্য, দেশের রপ্তানি পণ্যের প্রবৃদ্ধি ও বাজার বৈচিত্রের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে শেরে-ই বাংলা নগরে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে আসছে। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালে মেলার ব্যবস্থা করা হয়নি।