রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১০ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

বিজয় অর্জনের গৌরবগাঁথা

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল বাঙালির সামনে স্বাধীনতার নতুন সূর্য। এই দিন রেসকোর্স ময়দানে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করেছিল পরাজিত পাকিস্তান বাহিনী। বীর বাঙালি অস্ত্র ধরেছিল ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ সাহসী উচ্চারণ বুকে নিয়ে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পরে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। উচ্চারিত হয়েছিল ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’- বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতিতে উড়েছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। এই দিন স্বাধীন দেশের অস্তিত্ব নিয়ে পতাকার মতো উড়ছে ৫১ বছর ধরে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশে ফিরে আসা স্বাধীনতা অর্জনের আর একমাত্রা। তিনি এসে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ৯ই মে রাজশাহী মাদ্রাসার মাঠে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমার ভাইয়েরা ও বোনেরা, আজ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু বড় ত্যাগের বিনিময়ে। এত রক্ত কোন দেশ কোনদিন কোন জাতি দেয়নি, যা আজ আমার বাংলার মানুষকে দিতে হয়েছে। আজ ঘরে ঘরে, গ্রামে গ্রামে মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। জালেমরা রাস্তাঘাট ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। চালের গুদাম ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার সরকারি কর্মচারীদের গুলি করে হত্যা করেছে। আমার পুলিশ ভাইদের, বিডিআর, সামরিক বাহিনীর ছেলেদের গুলি করে হত্যা করেছে। হত্যা করেছে আমার ছাত্র, আমার যুবক, আমার কৃষক, আমার বুদ্ধিজীবী, আমার সাংবাদিকদের। ............ আমি কি চাই? আমি চাই আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কি চাই? আমার বাংলার বেকার কাজ পাক। আমি কি চাই? আামার বাংলার মানুষ সুখী হোক। আমি কি চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসে খেলে বেড়াক। আমি কি চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণ ভরে হাসুক। কিন্তু বড় দুঃখ ভাই, জালেমরা কিছুই রেখে যায়নি। সমস্ত নোটগুলি পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়ে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রা, বিশ্বাস করুন, যেদিন আমি এসে সরকার নিলাম এক পয়সার বৈদেশিক মুদ্রাও পাইনি।'

বিজয় লাভের পরে এই ছিল বাংলাদেশের পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের বিজয় গৌরব ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্বে। ৫০তম বিজয় দিবস বাঙালির বাংলাদেশের বিশ্বজুড়ে গৌরব অর্জনের দিন। বিজয় দিবস বাঙালি একটি দিনে সীমাবদ্ধ রাখেনি। বিজয়ের বহুমাত্রিক মাত্রায় বাংলাদেশের নানামুখী বিজয়-অর্জন আজকের বিশ্বে দৃশ্যমান প্রেক্ষাপট।

১৯১৩ সালে বাংলা ভাষার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করে। ১৯৭৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন। সেদিন তিনি বাংলা ভাষাকে পুরো বিশ্বের সামনে মর্যাদার অবস্থানে তুলে ধরেছিলেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই গৌরবময় অর্জন ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক বিজয়। পাশাপাশি জাতিসত্তার অস্তিত্তে¡র প্রশ্নে এই বিজয় ছিল দিগন্তছোঁয়ার স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান করেছেন তিনি বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেছেন। বাংলা এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের সরকারি ভাষা হয়নি। সেটা সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রেখেছেন। এটাই নেতৃত্বের সাহসী দৃঢ়তা। বিজয় দিবসকে একদিনে সীমাবদ্ধ না রাখার অঙ্গীকার। এভাবে আমাদের বিজয়ের অর্জন ছড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে।

তিনি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘বিশ্বের ২৫ কোটি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাবি উত্থাপন করেছি। ... আজ সারা বিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।’ এভাবে বিজয়ের অর্জনের মাত্রাকে বহুমুখী করে বাংলাদেশের পথচলা হিমালয় শীর্ষের উচ্চতা লাভ করবে। পরবর্তী প্রজন্ম শিখবে দেশের মর্যাদার প্রশ্নে আপোষ করতে নেই। দেশ ও জাতিসত্ত্বা বেঁচে থাকার মৌলিক সত্য।

জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘যে মহান আদর্শ জাতিসংঘের সনদে রক্ষিত আছে আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছে। শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে আজকের বাংলাদেশ মানবিক বোধের চেতনায় শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার দেশ। বিজয়ের এও এক বিশাল অর্জন।

১৯৯৯ সালে বিজয়ের আর এক অর্জন ঘটেছে যেদিন ইউনেস্কো কর্তৃক আমাদের ২১শে ফেব্রæয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাঙালি মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য জীবন উৎসর্গ করে যে গৌরব অর্জন করেছিল ইউনেস্কোর এই ঘোষণার মাধ্যমে সে মর্যাদার দর্শন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এই বিজয় অর্জনের সূচনা হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি। সেদিন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানকে চিঠির মাধ্যমে বাঙালির শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করার আবেদন করেছিলেন। জাতিসংঘ থেকে জানানো হয়েছিল বিষয়টি ইউনেস্কোর এখতিয়ারভুক্ত। সেখানে পাঠাতে হবে। রফিকুল ইসলাম রীতি অনুযায়ী নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবেদন পত্র সেখানে পাঠান। ইউনেস্কো থেকে জানানো হয় প্রস্তাবটি বাংলাদেশের সরকারের কাছ থেকে আসতে হবে। এরমধ্যে বেশ লম্বা সময় গড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে প্রস্তাব পাঠানোর সময় ছিল মাত্র ২ দিন। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে এক সুদূরপ্রসারী বিজয় অর্জন করেছেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, ইউনেস্কোতে যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে হবে তা আপনারা দ্রুত পাঠিয়ে দিন। ফাইলের ফর্মালিটিজ পরে সম্পন্ন করবেন।

গৌরব অর্জনে এ এক অসাধারণ সিদ্ধান্ত ছিল। ইউনেস্কোর জেনারেল কনফারেন্সে প্রস্তাবটি সেই সভায় উত্থাপিত না হলে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ প্রস্তাব উত্থাপন ভবিষ্যতে আর হতো না। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ১৮৮টি দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পাশ হয় মাতৃভাষা দিবসের এই প্রস্তাব। বিশ্বজুড়ে গণমানুষের কাছে পৌঁছে গেছে মাতৃভাষার মর্যাদার এই বার্তা। গৌরবে মহীয়ান হয়েছে বাংলাদেশ। ৭১-এর বিজয় দিবস প্রবহমান ধারায় রক্ষা করে চলেছে বিজয়ের গৌরব। এই পর্যায়ে আরও একটি দিন অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। কানাডার বিভিন্ন প্রদেশ, যেমন ওন্টারিওর টরোন্টো সিটি, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারে সিটি, ভ্যাঙ্কুভার, রিচমন্ড সিটিসহ আরও অনেক শহরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সরকারিভাবে পালিত হয় ২০০৭ সাল থেকে। অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পার্লামেন্টে দিবসটি সরকারিভাবে পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। বাংলাদেশ মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য জীবনদানকারী দেশ। পৃথিবীজুড়ে বিলুপ্ত হচ্ছে অনেক নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা। সব দেশের সামনে এখন আশার আলো নিয়ে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ গৌরবময় বিজয় অর্জনের আর একটি অন্যতম মাত্রা। বিশ্বের অগণিত মানুষের অধিকারের প্রশ্নে উচ্চারিত হবে এই ভাষণের পংক্তিসমূহ। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবরে প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দপ্তরে মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ঘোষণা দিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি ‘বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে ‘ ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ। ইউনেস্কো জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি ইতিহাসের বড়ো সময় ধরে বিশ্বজুড়ে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি করেছে। ইউনেস্কোর মাধ্যমে বাঙালির অর্জন বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য। যে ঐতিহ্য মানবজাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। অনুপ্রেরণা প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের ভেতর দিয়ে মানুষের মানবিক অধিকারকে সুরক্ষিত করে। বলতেই হবে বাঙালির বিজয় দিবসের বহুমাত্রা নিয়ে ৭ই মার্চের এই ভাষণ বিজয়ের গৌরবগাঁথা।

বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণ শুরু করেছিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার’ সম্বোধন করে। ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত ভাষণ বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠস্বর ধ্বনিত হবে বিশ্বজুড়ে। তিনি বিশ্ববাসীকে জড়ো করে বলছেন, ভাইয়েরা আমার। ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড কর্মসূচির অ্যাডভাইজরি কমিটির ১৫ জন সদস্য দুই বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ঐতিহাসিক দলিলসমূহ গভীর পর্যবেক্ষণের আওতায় এনে যে সিদ্ধান্ত দিল তাতে বাঙালির দরজা খুলে গেছে বিশ্ববাসীর সামনে। যেভাবে বিশ্বের মানুষ আব্রাহাম লিঙ্কনের ভাষণ স্মরণ করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চেতনায় For the People, By the People, Of the People. মানুষের প্রতিরোধের জায়গা জোরদার হয়ে ওঠে নেতৃত্বের অমর বাণী থেকে। বাংলাদেশও এই জায়গাটি তৈরি করেছে।

ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ Jacob F. Field একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন ‘We shall Fight on The Beaches – The Speeches That Inspired History’ শিরোনামে। গ্রন্থটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘The Struggle This Time is the Struggle for Independence’ শিরোনামে। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থটি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছেছে।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে ভারতের পশ্চিম বাংলায় এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সব মিলিয়ে ১৬২টি ছিটমহল সৃষ্টি হয়েছিল। এসবের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের অংশে ছিল ভারতের ১১১টি ছিটমহল। আর ভারতের অংশে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের ৫১টি ছিটমহল। একরকম বন্দীজীবন কাটিয়েছে ছিটমহলের অধিবাসীরা। অন্য রাষ্ট্র দ্বারা সীমান্ত রক্ষিত ছিল বলে তাদের ছিটমহলের বাইরে যাওয়ার অনায়াস ব্যবস্থা ছিল না। তারা বঞ্চনার জীবন-যাপন করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত জীবন ছিল তাদের। ভোটাধিকারও ছিল না ছিটমহলবাসীর। তাঁরা অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশার দীর্ঘ বছর অতিবাহিত করে। যেদিন ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে দিল্লিতে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। দীর্ঘ বছর গড়িয়েছে। ‘৪৭ পরবর্তী সময় থেকে ৬৮ বছর পার হয়েছে। কিন্তু ছিটমহলবাসীর জীবনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক জীবনের মুক্তির সন্ধান মেলেনি। চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে এই চুক্তির বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গণমানুষের পক্ষে মানবিক চেতনার দীপ্ত নেত্রী। মানুষের বেঁচে থাকার সহজ সত্যকে তিনি মূল্যায়ন করেন। সমাধানের পথে এগিয়ে আসেন। তারই ফলশ্রুতি দেশভাগের ৬৮ বছর পরে ছিটমহলের মানুষের বন্দী জীবনের অবসান। এটি ছিল মানবিকতার পক্ষে বড় ধরনের বিজয়-অর্জন।

বাংলাদেশের সমুদ্র জয় এমন আরও একটি বড় অর্জন। ২০১২ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রসীমার যে বিরোধ ছিল তা ‘সমুদ্র আইন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে’ (ITLOS) নিষ্পত্তি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। বিশ্বের মানুষের সামনে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মতো দীপ্ত গৌরবের উদাহরণ থাকবে। এমন আরও অর্জন আছে বাংলাদেশের ৪৬ বছরের ইতিহাসের পৃষ্ঠায়। আমাদের নৃগোষ্ঠীর মানুষদের ভাষার মর্যাদা দিয়ে আমরা ওদের মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা করি। জয় হোক বিজয়ের গৌরবের। জয় হোক দেশবাসীর। বাংলাদেশের মানচিত্রে উড়তে থাকবে লাল-সবুজ পতাকা। এই পতাকা বিভিন্ন দেশে ওড়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেট দল -- ওড়ায় বাংলাদেশের ফুটবল-ক্রিকেট খেলোয়াড় মেয়েরা। এই দীপ্ত আলোর দিকে তাকিয়ে এ বছরে উদযাপিত হোক বিজয় দিবস। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে আসুক বিজয়ের মুকুট মাথায় নিয়ে।

লেখক: বাংলা একাডেমির সভাপতি ও সাহত্যিকি

/এএস

Header Ad
Header Ad

দুর্ঘটনায় আহত ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পথে সড়কে প্রাণ গেল মায়ের

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর মান্দায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পথে ভটভটির ধাক্কায় জায়েদা বিবি (৬৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৩ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের বিজয়পুর মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত জায়েদা বিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের হাজীগোবিন্দপুর গ্রামের মৃত মনসুর রহমানের স্ত্রী।

নিহতের ছেলে আল মামুন বলেন, তাঁর বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য রহিদুল ইসলাম রোববার সকালে উপজেলা সদরের প্রসাদপুর বাজার থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ভাইয়ের দুর্ঘটনার খবর জানতে পেরে তাঁর মা জায়েদা বিবি ভটভটিতে চড়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। পথে বিজয়পুর মোড় এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় একটি ভটভটি ধাক্কায় তিনি পাকা রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান জানান, অভিযোগ না থাকায় আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহত জায়েদা বিবির মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা দ্রুত মৃত্যু ডেকে আনে!

ছবি: সংগৃহীত

নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা ঘটনা নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ক্রমাগত দুশ্চিন্তা শরীরের স্ট্রেস-রেসপন্স সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্রনিক স্ট্রেসের জন্ম দেয় এবং এমনকি অকাল মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়, ফলে সংক্রমণ ও বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের মতো মারাত্মক কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার সঙ্গেও এটি সরাসরি সম্পর্কিত।

বিশেষজ্ঞরা জানান, দীর্ঘ সময় ধরে কর্টিসলসহ বিভিন্ন স্ট্রেস হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ হজমজনিত সমস্যা, পেশির টান, অনিদ্রা ও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

এছাড়া, অনিয়ন্ত্রিত বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ ধূমপান, অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ বা মাদকাসক্তির মতো ক্ষতিকর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে, যা আরও ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।

তবে, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানোর জন্য সচেতনতা ও সঠিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ করলে এ সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মেডিটেশন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পেশাদার সহায়তা নেওয়া এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর হতে পারে।

সূত্র: আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন

Header Ad
Header Ad

জীবন থাকতে কোনো স্থানীয় নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না: ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, জীবন থাকতে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে না।

রোববার বিকেলে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ওই পোস্টে ইশরাক লিখেছেন, "জীবন থাকতে কোনো স্থানীয় সরকার ফরকার হবে না। তার আগে অন্তত ঢাকার প্রাণকেন্দ্র দক্ষিণ ঢাকায় আমার সঙ্গে যুদ্ধ করে, আমাকে কবরে পাঠিয়ে তারপর করতে পারলে করবে।"

তিনি আরও লিখেছেন, "এই সরকারকে এর চাইতে স্পষ্ট ভাষায় আর কিছু বলার নাই। আর আমাদের দলীয় কেউ যদি ভুলেও স্বপ্ন দেখেন, যেই হন না কেন আপনাদের চিনবো না। অতএব এলাকায় ফ্যাসিবাদের স্থান দেওয়ার আগে ১০০ বার চিন্তা করে নিয়েন। আগে বরখাস্তকৃত কমিশনের/কাউন্সিলর পদধারী হাসিনার কিলার বাহিনীদের বিচার, শাস্তি ও নির্মূল করতে হবে।"

 

তরুণ এই বিএনপি নেতা তার পোস্টে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিজস্ব পরিকল্পনায় স্থানীয় নির্বাচন থাকতে পারে। কিছু নতুন দল বা ছোট দল নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টা করতে পারে। তবে তার মতে, "এই মার্কাবিহীন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে খুনি হাসিনার অমানুষ জালেম বাহিনীর উত্থান ঘটবে।"

তিনি আরও উল্লেখ করেন, "আমাদের স্পষ্ট দলীয় সিদ্ধান্ত রয়েছে এই ব্যাপারে। এর বাইরে, ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র প্রার্থী বা মহানগর বিএনপির সদস্য হিসেবে, বা একজন সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, যে অবস্থানেই বিবেচনা করা হোক না কেন, আমি জানিয়ে দিচ্ছি—ঢাকার অলিগলির রাজনীতি কীভাবে চলে তা আমি জানি।"

ইশরাক হোসেন তার পোস্টের শেষ অংশে বলেন, "ঢাকা ও অন্যত্র স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যে কোনো উদ্যোগকে চক্রান্ত হিসেবেই গণ্য করা হবে। হাসিনার কমিশনার/কাউন্সিলরা কিভাবে হয় এবং তারা কীভাবে ফিরে আসতে পারে, সেটাও আমাদের মুখস্থ।"

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দুর্ঘটনায় আহত ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পথে সড়কে প্রাণ গেল মায়ের
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা দ্রুত মৃত্যু ডেকে আনে!
জীবন থাকতে কোনো স্থানীয় নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না: ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক
২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা, সরকারি ছুটি নিয়ে যা জানা গেল!
ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রশিবিরের সংবাদ সম্মেলন, ছাত্রদলের নিন্দা
ভারতে ৫ বছর ধরে নিকটজনদের কাছে ধর্ষণের শিকার কিশোরী
ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফর ও স্টারলিংক চালুর আমন্ত্রণ প্রধান উপদেষ্টার
পাঁচ দফা দাবিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, একাডেমিক শাটডাউন ও লংমার্চের ঘোষণা
নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দুটি সময়সীমা নির্ধারণ: সিইসি
নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ অভিনেতা আজাদ, আহত মা ও স্ত্রী
আহতদের চিকিৎসা বন্ধে ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিলো
এস আলম পরিবারের ৮,১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের নির্দেশ
প্রথমবার বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি বাণিজ্য চালু
৪ ডিআইজিকে বাধ্যতামূলক অবসর, জানা গেল নাম
পুলিশ প্রজাতন্ত্রের স্বাধীন কর্মচারী, কোনো দলের নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ধর্ষণের প্রতিবাদে আসাদ গেটে ছাত্র-জনতার সড়ক অবরোধ
স্ত্রীর সামনে বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২
দুই ফুসফুসেই নিউমোনিয়া, পোপ ফ্রান্সিসের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ: জুনেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন
নওগাঁয় রাতে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি