বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে হতে হবে শেয়ার বাজার
দেশের শেয়ার বাজার কোনো ব্যাকরণ মেনে চলে না। শেয়ার বাজারে যখন কোন গুজব তৈরি হয়, তখন এই বাজার পড়ে যায়। যত না পড়ার কথা তার চেয়েও বেশি পড়ে যায়। ঠিক একইভাবে যত না উঠার কথা তার চেয়েও বেশি উঠে যায় একই কারণে। এজন্যই বলা হয় যে, শেয়ার বাজার কোনো ব্যাকরণ মেনে চলে না। তবে আমি মনে করি, ব্যাকরণ মেনেই চলা উচিত। কুচক্রি মহলের জন্য যেটি সুবিধা, মার্জিন লোনে অনেকেই অপারেট করে অর্থাৎ শেয়ার কেনার জন্য লোন দেয় হাউজগুলো।
যখন শেয়ার বাজার থমকে দাঁড়ায় অথবা পড়ে যায়,তখন সুদ বেড়ে যায়। তখন তারা সুদও দিতে পারে না, অন্যদিকে, ঋণ বাড়তে থাকে আর বাধ্য হয়ে এরা দ্রুত বিক্রয় করতে শুরু করে। গতদিন যেটি হয়েছে, এখানেও দেখা যাবে মার্জিন লোন যারা নিয়েছে, তারাই বেশি বিক্রি করেছে। আরও একটি ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের ৬৫ শতাংশ ইনভেস্টরের সর্বমোট বিনিয়োগ দশ লক্ষ টাকার নিচে এবং এরা শেয়ার বিক্রি করে দেয় ভয়-ভীতিতে। সেটিই ঘটেছে গতদিনে। যুদ্ধতো আছেই ,তার সাথে যুক্ত হয়েছে এসব জিনিস।
সাধারণ মানুষ হচ্ছে বোকা এবং লোভী। এরা জেনে বুঝে শেয়ার কেনেনি। যে শেয়ারের দাম ২০টাকা, এরা সেটি কিনেছে ৫০ টাকা দিয়ে। গুজবের মধ্যে পড়ে গিয়ে জুয়াড়িদের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। এটা বাড়বে, ওটা বাড়বে, এটা হবে, ওটা হবে ইত্যাদি ধাঁধায় পড়ে গিয়েছে। ১৭ টাকার শেয়ার ছয় মাসে হয়ে গিয়েছে ১২০ টাকা। ১০ টাকার শেয়ার কয়েকদিনের মধ্যে হয়ে গিয়েছে ২৮ টাকা। এগুলোতো টেকসই নয়। শেয়ার বাজার ভালো যায় এবং হঠাৎ করেই ধস নেমে পড়ে এবং বিশ্বব্যাপী এই ধস নেমেছে। এটি বঙ্গতে যেমন পড়েছে, নিউইয়র্কে পড়েছে, হংকং এ পড়েছে, জাপানে পড়েছে। এখন যারা শেয়ার বাজারে আছে, এরা লোকসান গুণছে। আবার যখন লাভ করে তখন লাভ নিয়ে খুশি থাকে। এখানে কাউকে রোধ করার কিছু নাই। কেউ কাউকে রোধ করতে পারবে না। সরকারও পারবে না। এটি যে যার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অনেকে বিক্রয় করে দেয় না বুঝেই। মূল কথা এক্ষেত্রে স্থিরতা নাই বলা যায়।
শেয়ার বাজারে গুজব ছড়ানোর জন্য মানুষই দায়ী। এতগুলো সিস্টেম, এতগুলো পার্ট আমাদের শেয়ার বাজারের সঙ্গে জড়িত। এখন কিছু গুজবকারী আছে যারা গ্যম্বলিং করে, শেয়ারবাজারে পলিউশন করে। বিনিয়োগকারীদের না বুঝে, না জেনে শেয়ার বাজারে আসা ঠিক না। কারা বুঝতে পারে কোথায় কী হচ্ছে? যারা বুঝতে পারে তারা তো যাবে না। লোকালদের স্বার্থ হচ্ছে, এরা যতখুশি কিনতে পারে অথবা বিক্রয় করতে পারে।
এরা মনে করে যে, এরা খুব চালাক। কিন্তু যারা আসল ঘটনা জানে, সরকারের পক্ষে শেয়ারবাজার পড়ে যাচ্ছে, এটি বন্ধ করা সম্ভব হবে না। সরকারের পক্ষে এটি সম্ভব যে, ভাল শেয়ার যোগান দেওয়া। সেটি করলে সমস্যা কিছুটা সমাধান হবে। আমাদের বাজার তৈরি করতে হবে বিনিয়োগকারীদের জন্য। জুয়াড়িদের জন্য নয়। বাজার নিয়ে যারা জুয়া খেলছে তারা সংখ্যায় ৩০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ। জনগণও না বুঝে দলবদ্ধভাবে চলে। তারা গুজবে আকৃষ্ট হয়, এইটা না ওইটা ধর। তবে ভালো নিয়ম হচ্ছে ৪/৫ বছরের মধ্যে শেয়ার কিনতে হবে। যেটির প্রবৃদ্ধি ভালো হবে। যেটির ভবিষ্যৎ বেশি। ব্যবসা আছে ব্যাপকভাবে।
কোম্পানির ব্যবসা সম্পর্কে খবর রাখেন না ,অথচ কোম্পানির শেয়ার কেনেন, আর বলেন আমিতো ক্ষতিগ্রস্থ হলাম। ইটস দেওয়ার ফল্ট! আগে জানতে হয়। আমরা জানতে চাই না। জানতে ইচ্ছুকও না। এভাবে লাভবান হওয়া যায় না। এখানে অনেক কিছু জড়িত। যেমন, স্কিল্ড, মানি, প্যাশন, প্রফেশানিলজম, এগুলোর কম্বাইন্ড এট্রিবিউটস। আমি কিছুই জানলাম না। হুজুগে বাড়তেছি কিনতেছি এবং ক্ষতগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা না জেনে বুঝে গ্যাম্বলারদের সুযোগ করে দিচ্ছি। ইউক্রেনের যুদ্ধটিও দারুণভাবে ধাক্কা দিয়েছে। এরপর সবাই দিশেহারা হয়েছে।
তবে জেনে বুঝে শুনে শেয়ার ক্রয় করে জয়লাভ করা যেমন সম্ভব, তেমনি অনেকেই একইভাবে রাঘব বোয়ালদের টোপ গিলছে এবং অবধারিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । সারা পৃথিবীতেই এখন এই গ্যাম্বলিং চলছে। বাইরে হয়তো তুলনামূলকভাবে কম কিন্তু আমাদের এখানে বেশি হচ্ছে। তবে এটিও সত্যি যে, গ্যাম্বলিং এ না জড়িয়েও অনেকেই ভালো করছে। কারণ, তারা জেনে বুঝে ইনভেস্ট করছে এবং সেটিই হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়