নিয়মিত সফরে চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি স্বচ্ছ হয়
আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে প্রথমত আমাদের স্বাগত জানাতে হবে। কারণ, যত বেশি সফর হবে, তত বেশি দুই দেশের মধ্যে সেটি একটি অভ্যাসে পরিণত হবে। যে অভ্যাসটি এখন আমাদের নেই, অর্থাৎ আমি বলব, ঝগড়াঝাটি যেমন একটি অভ্যাসে পরিণত হয় তেমনি পারস্পরিক সম্প্রীতি বাড়ানোও একটি অভ্যাসের বিষয়। পরস্পরকে সহযোগিতা করতে করতে একটি অভ্যাস পরিণত হয়। আর এভাবেই বড় বড় সমস্যাগুলো সমাধানের পথ তৈরি হয়।
আমি যদি নাই কথা বলি, পাঁচ বছর অথবা দশ বছর পরে যদি একবার দেখা হয়, সেটি কখনো অভ্যাসে পরিণত হবে না। আর সমস্যা সমাধানও হবে না। সে জায়গায় আমাদের সফরটি সেভাবেই দেখা দরকার এবং আমি মনে করি এটি আরও বাড়ানো দরকার।
সবসময় যে আনুষ্ঠানিকতা থাকতে হবে, লাল গালিচা সংবর্ধনা, এগুলোও কমিয়ে ফেলা উচিত। উদাহরণস্বরূপ আমরা ফ্রান্স ও জার্মানির দিকে আমর তাকাতে পারি। যারা সকালে যাচ্ছে, বিকালে চলে আসছে এবং তেমন কোনো অনুষ্ঠানও হচ্ছে না। তারা ঠিকই আলোচনায় বসে চলে আসছে।
মানুষতো অভ্যাসের দাস। আমি মনে করি, সেখানে একটি অভাব আছে। সেই অভ্যাসটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সেভাবে দেখা যায় না। যে কারণে আমরা সেভাবে অগ্রসর হই না। নতুন কিছুও করা যায় না। যেটি হয় যে, একটি দিধা শঙ্কা বিরাট হয়ে উঠে যে, সাংঘাতিক কিছু হবে কি না! কিন্তু চর্চার অভাব আমরা দেখেছি। সেটি থেকেই আমি বলব, আমাদের সফরগুলো নিয়মিত হওয়া ও আরও বেশি বাড়ানো দরকার। তাহলে সেটি আস্তে আস্তে অভ্যাসে দাঁড়াবে। তারপর বড় বড় সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হবে। আপনি দেখবেন, আত্নীয়ের বাড়িতে যাতায়াত না থাকলেও সম্পর্কে ভাঁটা পড়ে।
এবারের সফরে এমনিতেতো খুব বেশি আশাব্যঞ্চক কিছু হয়নি। সাতটির মত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। খুব বেশি বড় চুক্তিও না। যেগুলো হয়তো প্রধানমন্ত্রী না করলেও পারতেন। ভবিষ্যতে এগুলো অন্যরূপ নেবে কি না সেটিও একটি বিষয়। তবে এই সফরটিই বড় কিছু বলে আমি মনে করি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। জাতিসংঘে ভারত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে হয়তো সমাধান হতে পারে। এ ছাড়া, সীমান্ত হত্যা বন্ধের ক্ষেত্রেও তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। অর্থাৎ শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনায় দেশের মেজর ইস্যুগুলো নিয়ে সমাধান হয়নি। তবে একটি সফরে সবকিছু আশা করাও ঠিক নয়।
বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের উন্নতি বজায় রাখতে রাষ্ট্রীয় সফর বেশি করা উচিত। যেন চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি আরও স্বচ্ছ হয়। যেকোনো সফরেই আনুষঙ্গিক ব্যাপারগুলোতো আছেই। তার চেয়েও বড় কথা, আমি মনে করি, এসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ইন পারসন যেসব আলোচনা হয়। যে আলোচনায় তারা খোলামেলাভাবে চেষ্টা করে। বিভিন্ন ধরণের যে সমস্যাগুলো হয়, সেগুলো খোলামেলাভাবে আলোচনার মাধ্যমে কীভাবে মোকাবিলা করবে।
এসব নিয়ে জয়েন্ট ডিক্লারেশন অথবা চুক্তিও ঠিক হয় না। তবে সেটি একটি প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে। যেমন, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে তারা কি ধরনের অবস্থান নেবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত কতটুকু সহায়তা করতে পারে। এ ধরনের বিভিন্ন বিষয় থাকে। যেগুলো হয়ত পাকলিকলি সেভাবে প্রকাশ করা হয় না। তবে কথাবার্তায় বোঝা যায় যে, এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি মনে করি, এগুলো কিন্তু সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সেখানে বাংলাদেশ ভারত কী করতে পারে, সেই আলোচনাগুলো যেহেতু হয়েছে। আমাদের আশা থাকবে যে, ভাল পদক্ষেপ তারা নেবে। জ্বালানি সংকট পড়েছে, বিশ্ব ও বাংলাদেশ থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশ। সেখান থেকেও তারা উঠে আসতে পারবে।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্লেষক