পদ্মা সেতুর মাধ্যমে উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা উন্নত হবে
পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হয়েছে এটিকে আমি সাধুবাদ জানাই। এর মাধ্যমে অনেকগুলো ক্ষেত্রে বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন হতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু ব্যাপক শিল্পায়নের মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে দ্রুত উন্নয়নের বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
নবজীবন পাবে ক্ষুদ্র,অতিক্ষুদ্র,হস্ত ও কুটির শিল্প। উৎপাদন বৃদ্ধি করে আয়-রোজগারের অগ্রগতি ও কর্মসংস্থানে ভরে উঠবে।কুয়াকাটার মতো আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রে ঘটবে প্রাণসঞ্চার এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত হবে শতশত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগণ।দ্বিতল সেতুর উপরিভাগে চার লেনের সড়ক আর নিচের ডেকের রেল সংযোগ উত্তরণ ঘটাবে সুদুরপ্রসারি আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক পুনরুত্থানের টেকসই ও জোরালো হাওয়া। কৃষি, মত্স্য ও দুগ্ধখাতে উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সৃষ্টি করে হিমাগারে ধারণক্ষমতা ২০ লাখ টন থেকে অন্তত ৩০ লাখ টনে উন্নীত করা যায়, তবে আরেকটি কৃষি শিল্প বিপ্লব আনা সম্ভব হবে।
এভাবেই শিল্প বিপ্লবকে উৎপাদনশীল জীবনধারণে পাল্টে দিয়ে জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড বিস্তৃতি লাভ করবে । উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। সুশাসন নিশ্চিত করণের মাধ্যমে হিমাগারে পণ্য সংরক্ষণ অগ্রাধিকার দিলে বছরব্যাপী পণ্যসম্ভার বাজারে আসবে । মূল্য থাকবে স্থিতিশীল।উৎপাদনকারী ন্যায্যমূল্য পাবেন । দ্রুতগামী যানবাহন ও রেল-এর মাধ্যমে পদ্মা সেতু দিয়ে পণ্য সামগ্রী ও কাঁচামাল ভোক্তা ও শিল্প কারখানায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে । ভোক্তারাও ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারবেন। সংশোধিত টোল ভাড়ায় ৩৫ বছরে পদ্মা সেতুর খরচ উঠে আসবে। গতিময় জীবন্ত পদ্মা সেতু ২০৩০ সাল নাগাদ পাঁচ কোটিরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করবে, দারিদ্র্য কমাবে এবং আয়, সম্পদ ও সুযোগ বৈষম্য কমিয়ে আনবে। সর্বোপরি এক উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ নির্মাণে এক অপার সম্ভাবনার অগ্রযাত্রার চাবিকাঠি এই পদ্মা সেতু। এটি সবই আমাদের সম্ভাবনার কথা ।
একইসঙ্গে সেখানে অন্য কোন সমস্যা হবে কি না সেটিও দেখার বিষয়। সেখানে যারা কর্মসংস্থান গড়ে তুলেছিল সেটি কি আকার দাঁড়াবে? সেক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনাগুলি কি সেগুলি আরও ভেবে দেখতে হবে। পজিটিভের সাথে কিছু নেগেটিভতো অবশ্যই থাকবে। সবকিছুই ভেবে দেখতে হবে। পদ্মা সেতু চালু হয়ে যাওয়ার পরে কি অবস্থা দাঁড়ায় সেটি দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশই এক রাস্তায় অনেক জায়গায় টোল নেয়। আমাদের প্রায় সবক্ষেত্রেই রাস্তাঘাট ফ্রি। সেটির জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে সেইসাথে পরিবেশ বান্ধব কিছু নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তবে একটি কথা আমি বলতে চাই, দেশে অনেক প্রজেক্ট হয় যেগুলি শোকের । পদ্মাসেতু সেরকম কিছু না হোক এটিই আমাদের আশাবাদ।
লেখক: সাবেক নির্বাচন কমিশনার