নেচে-গেয়ে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ
‘বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা, কারা যে ডাকিল পিছে, বসন্ত এসে গেছে। মধুর অমৃতবাণী, বেলা গেল সহজেই, মরমে উঠিল বাজি, বসন্ত এসে গেছে’ এমন সুর জানান দেয় প্রকৃতে বসন্ত এসেছে; আর ঋতু রাজকে বরণ করে নিতে দিনভর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বসন্ত উৎসব উদযাপিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুল তলায় জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ অনুষ্ঠানের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বসন্ত উৎসব। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন সংলগ্ন ঐতিহাসিক সমগীত বসন্ত উৎসব ১৪২৯ অনুষ্ঠিত হয়।
চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় অনুষ্ঠিত ওই বসন্ত উৎসব প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন।
বসন্ত কথন পর্বে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সকলকে বসন্তের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, রং, উৎসব, আমেজ ও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আবহমান বাংলার চিরচেনা বৈশিষ্ট্য। এসব উৎসব অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক সমাজের বার্তা দেয় এবং মানুষের মধ্যে বিরাজমান বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উন্নত সমাজ বিনির্মাণে এসব উৎসবের মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে যাবে বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি স্থপতি সফিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সহ-সভাপতি কাজল দেবনাথ এবং সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট।
অনুষ্ঠানে একক আবৃত্তি পাঠ করেন ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, আহকাম উল্লাহ ও নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি। একক সংগীত পরিবেশন করেন শামা রহমান, মহাদেব ঘোষ, অনিমা মুক্তি গমেজ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, বিজন চন্দ্ৰ মিস্ত্রি, মাহমুদুল হাসান, ফেরদৌসি কাকলি, নুসরাত বিনতে নূর, নবনীতা জাইদ চৌধুরী, সঞ্জয় কবিরাজ, এস.এম মেজবা। অনুষ্ঠানে একক আবৃত্তি পাঠ করেন ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, নায়লা তারাননুম চৌধুরী ফাকলি।
একক সংগীত পরিবেশন করেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, সালমা আকবর, লাইসা আহমেদ লিসা, প্রিয়াংকা গোপ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস ও সুচি দেবনাথ। দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন গীতাঞ্জলি, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, বহ্নিশিখা, ও বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (ওয়াইজঘাট)।
এদিকে ‘পৃথিবীর নদী বন কিংবা পাহাড়, মানুষ মালিক নয়, বন্ধু তাহার’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বর্ণিল আয়োজনে বসন্ত উৎসব-১৪২৯ উদযাপন করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সমগীত’।
এতে গান পরিবেশন করেন গান নব আনন্দ, আমাদের পাঠশালা, গঙ্গাফড়িং (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ) শিশুদের জন্য আমরা, রেং ইয়ং ম্রো, কফিল আহমেদ, লীলা, দগদগে প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১৫৮৫ সালে বাংলা সনে ১৪টি উৎসব প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে বসন্ত বরণ উৎসবের উন্মেষ ঘটে মুঘল সম্রাট আকবরের হাত ধরে। ষাটের দশকে ফাল্গুনের প্রথম ছুটির দিনে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছিল ছায়ানট। স্বাধীন বাংলায় প্রথম বসন্ত পালিত হয় ১৯৯৪ সালে। জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের হাত ধরে ১৪০১ বঙ্গাব্দের পহেলা ফাগুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় উদযাপন শুরু হয় এই উৎসবের। এরপর থেকে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে এই উৎসব।
এমএমএ/