পাঠক-দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর অমর একুশে বইমেলা
ছোট-বড় পাঠক-দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর ছিল অমর একুশে গ্রন্থ মেলার একাদশতম দিন। এদিকে শিশু প্রহর থাকাতে মেলাতে যুক্ত হয়েছে এক ধরনের বাড়তি আমেজ। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বইমেলা রূপ নিয়েছে যেন পাঠক-দর্শনার্থী-প্রকাশকের মিলন মেলায়।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে বইমেলা। শুরুর ভাগ শিশু প্রহর থাকায় শিশু-কিশোরদের পদচারণায় মুখর ছিল মেলা। এ সময় সিসিমপুরের বন্ধুদের সঙ্গে মেতে ওঠে শিশু-কিশোররা।
পরিবারের ছোট্ট সদস্যটি মেলায় এসেছে বাবা-মা’র হাত ধরে কেউবা এসেছে বড় ভাই-বোনের সঙ্গে। কিনছে উল্টিয়ে দেখছে, কেউ কেউ কিনছে। কেউবা সঙ্গে আসা অভিভাবকের আঙ্গুল চেপে এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরছেন।
তাসনিম জাহান লাবিবা, পড়েন রাজধানীর বেসরকারি একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে। মেলায় এসেছেন বাবা-মার সঙ্গে। মেলা কেমন লাগছে জানতে চাইলে লাবিবা বলে, অনেক সুন্দর লাগছে! গত শুক্রবার এসেছিলাম সিসিমপুরের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়নি। আজ তাদের সঙ্গে হয়েছে, আমার ভীষণ ভালো লাগছে।
নুঝআত তাবাসসুম এসেছেন তার মায়ের সঙ্গে। নুঝআত বলে, আমি অনেক অনেক বই কিনতে চাই। কার্টুনের কিছু বইও কিনতে চাই। তবে কেন জানি, পছন্দ হচ্ছে না! কিছু স্টিকার কিনেছি।
এদিকে শিশুদের স্টলদের বেশ কয়েকজন বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, শুক্রবার যেহেতু ছুটির দিন হওয়াতে শিশু-কিশোরদের আনাগোনা অনেক বেশি ছিল। বিক্রিও ভালো হচ্ছে।
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে হতে শিশুদের মেলা বড়দের দখলে চলে যায়। দুপুর পর থেকে মেলায় লোক সমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরেজমিনে গিয়ে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় উপচে পড়া। পাঠক-দর্শনার্থী, লেখক-প্রকাশকের সমাগমে মুখর ছিল বইমেলা।
তানজিবা তারান্নুম এসেছেন রাজধানীর রামপুরা থেকে। তিনি বলেন, গত শুক্রবারও এসেছিলাম, তবে এমন ভিড় হবে ভাবিনি। মনে হচ্ছে বইয়ের মেলার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মেলাও লেগেছে। তবে লোকসমাগম অনেক হলেও একটা উৎসবের আমেজের মতো লাগছে এবারের অমর একুশে বইমেলা।
কোনো বই কেনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তানজিবা বলেন, ‘হ্যাঁ, এর আগের শনিবারে জাফর ইকবাল স্যারের বই কেনা হয়েছে। আজ হুমায়ুন আহমেদের দেয়াল উপন্যাস কেনা হয়েছে। আরও কিছু বই কেনার ইচ্ছে আছে।’
সঞ্জয় কর্মকার একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, থাকেন মতিঝিলে। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন স্ত্রী ও পরিবারের ছোট্ট সদস্য রূপক কর্মকারকে সঙ্গে নিয়ে। সঞ্জয় জানান, আজকেই মেলাতে প্রথম। এর আগেও আসতে চেয়েছিলাম, সময় হয়ে ওঠেনি। আজ হলো, ভালো লাগছে মেলা।
বই কিনেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো কেনা হয়নি। তবে আহমেদ ছফার পুরো রচনা সমগ্রটি কেনার এবার ইচ্ছে আসে। এ ছাড়া. বন্ধু-বান্ধবদের উপহার দেওয়ার জন্য কিছু বই কেনা হবে এবার।
স্টুডেন্ট ওয়েজে বই বিক্রির চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রকাশনাটির বিক্রয়কর্মী ফজলে রাব্বি বলেন, শুক্রবার হওয়াতে বই মেলাতে অনেক চাপ। দর্শনার্থীর সঙ্গে সঙ্গে পাঠকও অনেক বেড়েছে। বই বিক্রিও বেড়েছে মেলার অন্যান্য তুলনায়।
এদিকে, জ্ঞানকোষ প্রকাশনের বিক্রয়কর্মী রিয়াজ হোসেন বলেন, আমাদের স্টলে আজ অনেক ভিড় ছিল। মনে হচ্ছে মেলায় অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় দর্শনার্থী সমাগমের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকের উপস্থিতিও ভালো ছিল। আমরা আশাবাদী বাকি ২০ দিন ভালো বিক্রি হবে।
এমএমএ/