খরগোশের খামার করে সফল হবিগঞ্জের হান্নান
শান্ত ও নিরিহ প্রাণী খরগোশ অনেকেই পালন করেন সৌখিনভাবে। বন-বাদাড়েও এর দেখা মিলে। জেলার যুবক আব্দুল হান্নান বাণিজ্যিকভাবে খরগোশের খামার করে সবাইকে তাক লাগিয়েছেন।
আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও যে খরগোশ পালন করা যেতে পারে তা অনেকেরই জানা নেই। খরগোস পালন করে হান্নান যেভাবে লাভবান হচ্ছেন তেমনিভাবে তাকে দেখে এখন অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন খরগোশের খামার গড়ে তুলতে। প্রাণিসম্পদ বিভাগও এগিয়ে এসেছি খরগোশের খামার জনপ্রিয় করতে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি গ্রামের হিরা মিয়ার ছেলে আব্দুল হান্নান। স্থানীয় লুকড়া বাজারে ফার্মেসির ব্যবসা এবং পশু চিকিৎসক হিসেবেই তার পরিচিতি। তবে এর বাইরেও তিনি তার নিজ বাড়িতে তৈরি করেছেন খামার। ষাঁড় মোটাতাজাকরণ, দুধের গাভী পালন, চিনা হাঁস ও কবুতর পালনের পাশাপাশি ৬ মাস পূর্বে শুরু করেন খরগোশ পালন। অল্প সময়ে এই খরগোশ থেকেই তার খামার বড় আয়ের মুখ দেখেছে। এখন তার মনোযোগ খরগোশের খামারকে বড় করা।
আব্দুল হান্নান জানান, ৬ মাস পূর্বে লাখাই উপজেলার বুল্লা বাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় ৫টি খরগোশ কিনে করে শুরু করেন খামারের কাজ। এর মাঝে ৪টি ছিল মাদি এবং একটি পুরুষ খরগোশ। অল্প সময়ের মাঝে বাড়তে থাকে খরগোশের সংখ্যা। এখন তার খামারে আছে ৭০টি খরগোশ। প্রতি মাসে খরগোশ বিক্রি থেকে আয় আসে ৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে তার ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালান।
তিনি বলেন, খরগোশ পালনের জন্য বাড়িতে তিনি চ্যাপা শুটকির মটকা সংগ্রহ করেন। পরে তা মাটিতে পুতে খরগোশের বাসা তৈরি করেন। বর্তমানে ১৩টি মটকার ভিতর ১৩ জোড়া খরগোশকে বাসা তৈরি করে দিয়েছেন। অন্যগুলো বেড়া দেওয়া ঘরেই লালন পালন করেন। একটি খরগোশের বয়স ৪ মাস হলেই বাচ্চা দেওয়ার উপযোগী হয়। ৪০ দিনে বাচ্চা প্রসব করে। প্রসবের ২/১ দিন পরই আবারও খরগোশ গর্ভধারণ করে। ফলে বছরে ৬/৭ বার বাচ্চা দেখে একেকটি খরগোশ।
একসঙ্গে ৭/৬টি বাচ্চা প্রসাব করে। ৩ মাস বয়স হলেই খরগোশ খাওয়ার উপযোগী হয়। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের হয় প্রতিটি খরগোশ। বড় খরগোশ বিক্রি হয় ১ থেকে দেড় হাজার টাকা পিস। ছোট বাচ্চা বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পিস। তার খামারে এসে লোকজন ক্রয় করে নিয়ে যান খরগোশ। অনেকেই নেন খাওয়ার জন্য। কেউ কেউ নেন বাসা বাড়িতে সৌখিনভাবে পালন করার জন্য। আবার অনেকেই তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে খামার করার জন্য নিয়ে যান।
আব্দুল হান্নান বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগের সঙ্গে ভাল পরিচয় থাকায় এবং তাদের পরামশেই শুরু করেন খরগোশের খামার। এ ছাড়া, তার খামারে ৪টি ষাঁড়, ৪টি ফিজিয়ান গাভী, বিভিন্ন ধরনের কবুতর ও প্রচুর পরিমাণ চিনার হাস রয়েছে। এগুলো থেকে ভালই আয় আসে। তবে কম পরিশ্রম ও কম খরছে বেশি আয় আসে খরগোশ পালন থেকে। খরগোশের খাবার নিয়েও চিন্তা করতে হয়না। বাচ্চা জন্মের পর ৩০/৩৫ দিন পর্যন্ত মায়ের দুধ কায়। পরে কচি ঘাস, লতাপাতা, শাক-সবজি, খড়কুটো, গম, ভুসি, খৈল, গাজর, মুলা, মিষ্টি আলু খরগোশের খাদ্য হিসেবে দিতে হয়। তরকারির ফেলনা অংশ এবং গাভীর ফিডও খরগোশ পছন্দ করে। তার খামারে খরগোশের তেমন তোন রোগ বালাই হয় না। মাঝে মাঝে কোনটি পাতলা পায়খানা করলে একডোজ সিপ্রো ওষুধ দিলেই ভাল হয়ে যায়।
হবিগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, হবিগঞ্জে আব্দুল হান্নানই সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে খরগোশের খামার গড়ে তুলেছেন।
প্রাণিসম্পাদ প্রদর্শনীতে তার খামার দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আমারও চাই খরগোশ পালন জনপ্রিয় করতে। কারণ এটি লাভজনক এবং আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অন্য প্রাণীর তুলনায় খরগোশ সহজেই পালন করা যায়। এটির খাদ্য এবং ব্যবস্থাপনা সহজ বিধায় বাড়ির মহিলা ও ছেলেমেয়েরা কাজের ফাঁকে ফাঁকে সহজেই খরগোশ পালন করতে পারেন। আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, চীন এবং জাপানসহ অনেক দেশে বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ প্রতিপালন হয়।
বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির খরগোশ আছে। সাদা, কালো, ডোরা এবং খয়েরি রঙের খরগোশ বেশি। এক সময় খরগোশ বাড়ির শোভাবর্ধনকারী প্রাণী হিসেবে লালন-পালন করা হত। আবার ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন ওষুধ পরীক্ষা করার জন্যও খরগোশ ব্যবহার করা হয়। এখন জীবন ও জীবিকার তাগিদেই খরগোশ পালন প্রয়োজন।
বাসস/এমএমএ/