নওগাঁয় সবজি বদলে জিরা চাষে কৃষক পেয়েছে বিকল্প পথ!
মসলাজাতীয় ফসল জিরা। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
একসময় গ্রামের মাঠজুড়ে দেখা যেত সবজি ক্ষেত। এখন সেই মাঠে চোখে পড়ে মসলাজাতীয় ফসলের ক্ষেত। এই ফসলের চাষেই চমক দেখিয়েছেন নওগাঁর রানীনগর উপজেলার শিয়ালা গ্রামের কৃষক জহরুল ইসলাম।
জিরা মসলাজাতীয় ফসল। দেশে জিরার চাহিদার পুরোটায় আমদানি নির্ভর। আর সেই মূল্যেবান জিরা চাষ শুরু করেছেন কৃষক জহরুল ইসলাম। এই গ্রামের তার এই পরীক্ষামূলক জিরা চাষ দেখে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় অন্য কৃষকদেরও। এই অঞ্চলে মসলা ফসল জিরা চাষে কৃষক পাবে বিকল্প পথ! এমনটাই আশা।
প্রাচীনকাল থেকেই রান্নার স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে জিরা ব্যবহার করা হয়ে আসছে। জিরা শুধু মশলা নয়, বহু রকমের বিশেষ ঔষধি গুণ সম্পন্ন। এটি শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় তা নয়, শরীরের নানা সমস্যা সমাধানে জিরার জুড়িমেলা ভার।
জানা যায়- কৃষক জহুরুল ইসলাম বিভিন্ন সময় দেশী-বিদেশী সবজি চাষ করে থাকেন। বাজারে জিরার দাম বেশি হওযায় তিনি জিরা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর অনলাইনে এর চাষাবাদ প্রদ্ধতি দেখতে শুরু করেন। অনেক চেষ্টা করে অনলাইনে মাধ্যমে ভারত থেকে প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ করে ৫০০ গ্রাম জিরা বীজ সংগ্রহ করেন। এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে ৯ শতক জমিতে এই জিরা বীজ রোপণ করেন। বর্তমানে জহুরুলের জিরা গাছে ফুল ও জিরা আসতে শুরু করেছে। তিনি পরীক্ষামূলক জিরা চাষে অনেকটা সফল হওয়ায় স্থানীয় কৃষদের মধ্যেও জিরা চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষক জহুরুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, প্রথমে বীজ সংগ্রহের পর পানিতে ৩০টি জিরা বীজ ভিজে টিস্যুর মধ্যে রেখে পরীক্ষা করি, কি পরিমান গাছ গজাবে। পরে ৩০টির মধ্যে ২৫টি গাছ উঠে গেছে। তখন ৯ শতক জমি হালচাষ ও সার ছিটিয়ে বীজ রোপন করি। বীজ রোপনের ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে জিরা গাছ উঠতে শুরু করে। পরে বৃষ্টির কারনে কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যায়। বাকি গাছগুলো ভালো করে যত্ন নেয়া শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, যেভাবে সরিষার চাষ করা হয় একই রকমভাবে জিরা চাষ করেছি। এরইমধ্যে গাছে ফুল ও জিরা ধরতে শুরু করেছে। গাছে যতগুলো ফুল; ততগুলোই জিরা ধরছে। হিসেব করে দেখছি যেভাবে জিরা ধরছে তাতে ৯ শতক জমি থেকে ২০ থেকে ২২ কেজি জিরা পাওয়া যাবে। বাজারে জিরার দাম ভালো থাকায় যার বাজার মূল্যে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তাতে জিরা চাষ একটি লাভজনক ফসল মনে হয়েছে। তবে জিরা চাষ শীতকালে ভালো হয়। বীজ বপণের ৩ থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগে জিরা ঘরে উঠতে। এবছর পরীক্ষামূলকভাবে জিরা চাষ সফল দাবি করে আগামীতে আরও বড় পরিসরে জিরা চাষাবাদের পরিকল্পনা করছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় তানজিব হোসাইন নামে এ যুবক ঢাকাপ্রকাশকে জানান, জহরুল ভাই নতুন ফসল জিরা চাষ করেছেন। জিরা চাষ ইতিপূর্বে আমরা কখনো দেখিনি। প্রথম হলেও খুব সুন্দর তার জিরার গাছ হয়েছে। বাজারে জিরার দাম ভালো রয়েছে। চিন্তা করছি তার দেখাদেখি আমরাও জিরা চাষ করবো এবং জিরা চাষ করে লাভবান হওযার সম্ভাবনা আছে।
স্থানীয় আরেক কৃষক মোফাজ্জল হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আমাদের এই এলাকায় জিরা চাষ প্রথম হিসেবে মোটামুটি গাছ ভালোই হয়েছে জহুরুলের। শুনলাম তার এই জমিতে ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে আর পাবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা মতো। কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করলে আমরাও জিরা চাষ করবো।
এ বিষয়ে রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, জহুরুল ইসলাম উদ্যোগী একজন কৃষক। তিনি নতুন ফসল হিসেবে জিরা পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছেন। তার জিরা চাষ কৃষি বিভাগ সার্বক্ষনিক নজরে রেখেছে। আমরা শেষ পর্যন্ত এটার ফলন কেমন হয় সেটা দেখবো। তিনি জিরা চাষে সফল হলে উঠান বৈঠক, সভা, সেমিনার করে অন্য কৃষকদের জিরা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে যে পরিমাণ জিরার চাহিদা তার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। জিরা মসলা এখনও বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর। তাই এই জিরা চাষে সফল হলে কৃষিতে বানিজ্যকরন ও জিরা উৎপাদন করে আমদানির পরিমাণ কমানো সম্ভব বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।