সমুদ্রের অলস প্রাণী শাপলা পাতা মাছ
ছবি সংগৃহিত
সমুদ্রের তলদেশে বসবাস করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এদের মধ্যে কিছু প্রাণী শান্ত প্রকৃতির। আবার কিছু প্রজাতির প্রাণী সমুদ্রে রাজত্ব করে। এসব প্রাণী তাদের আকৃতি এবং বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে স্থলে বসবাসকারী প্রাণীর চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। হিংস্রতা, ক্ষিপ্রতা ও শিকার কৌশলে অনেক সময় ডাঙার প্রাণীকেও টেক্কা দেয়। তেমনই সমুদ্রে বসবাসকারী একটি অলস প্রাণীর নাম শাপলা পাতা মাছ।
শাপলা পাতা মাছের ইংরেজি নাম স্টিংরেস। বৈজ্ঞানিক নাম মাইলিওবাটোয়েডই। মূলত এরা মাংসাশী প্রাণী। ১৫-২৫ বছর এদের আয়ুষ্কাল। ৬.৫ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়া এ মাছের ওজন সর্বোচ্চ ৭৯০ পাউন্ড হতে পারে।
শাপলা পাতা মাছের চোখ তার দেহের সম্মুখভাগে অবস্থিত। মুখ, নাকের ছিদ্র এবং ফুলকা পেটের নিচে অবস্থিত। শিকার ধরতে শাপলার এ তীক্ষ্ণ চোখ ভীষণ কাজে আসে। এর বাহ্যিক আবরণ ‘লরেঞ্জিনির অ্যাম্পুলা’ নামক বৈদ্যুতিক সেন্সর দিয়ে আবৃত। শিকার কাছে এলে বৈদ্যুতিক শকের সাহায্যে শিকারকে ঘায়েল করে। এছাড়া দাঁতের সাহায্যে ছোট ছোট প্রাণীর খোলস, ঝিনুক চূর্ণবিচূর্ণ করতে পারে।
শাপলা পাতা মাছ যখন নড়াচড়া করে; তখন নিজের শরীরকে ঢেউয়ের মতো উল্টে দিয়ে সাঁতার কাটে। সঙ্গে অন্য শাপলাও ঘুরে বেড়ায়। এদের চাবুকের মতো দেখতে লেজ সাঁতার কাটতে সাহায্য করে। এছাড়া লেজ তাদের সুরক্ষায় অনেক কাজে আসে।
শাপলা পাতা মাছ সাগরের গভীরে বিচরণ করলেও বংশ বিস্তারের সময় মাছগুলো তীরের কাছাকাছি আসে। আর আটকে পড়ে জেলেদের লোভের জালে।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০ প্রজাতির শাপলাপাতা থাকলেও বাংলাদেশে ৫৬ প্রজাতির শাপলাপাতা মাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এই মাছ আকারে অনেক বড়। একটা মাছের কয়েক মণ ওজন হয়।
দূর থেকে দেখলে মনে হবে বড় আকৃতির শাপলা পাতা। কিন্তু না। শাপলা পাতা না। এটি একটি মাছ। মাছটির আকৃতি শাপলা পাতার মতো। যে কারণে শাপলা পাতা মাছ নামে পরিচিত।
নাতিশীতোষ্ণ সমুদ্রের অগভীর জলের মাছ এটি। তাই বেশিরভাগ সময়ই নিষ্ক্রিয়ভাবে সময় কাটায়। এতটাই অলস যে সমুদ্রের বালুর ক্ষুদ্র কণা গায়ে এসে জমলেও স্থির থাকে। তবে জোয়ারের সময় এরা জোয়ারের সঙ্গে ভেসে বেড়ায়।
শাপলা পাতা মাছের লেজের কাঁটা খুব বিষাক্ত। কেউ এ বিষের সংস্পর্শে এলে মৃত্যুর আশঙ্কা আছে। গ্রিক পুরাণ মতে, ইথাকার মহান রাজা ওডিসিয়াসকে তার ছেলে টেলিগোনাস শাপলার লেজের বিষের সাহায্যে ঘায়েল করেছিল।
শাপলা পাতা মাছের চামড়া অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ লাভজনক। এর চামড়া দিয়ে অনেক দেশে জুতা, ব্যাগ ইত্যাদি বানানো হয়।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী শাপলাপাতা মাছ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও উপকূলীয় জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে দিব্বি চলছে কেনাবেচা।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) শাপলা পাতা মাছকে বিপন্ন প্রায় প্রজাতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শাপলা পাতা মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে শাপলা পাতা মাছ ধরা এবং বিক্রি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।