মাঠজুড়ে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন
সবুজ ধানে এখন তরতর করে কাঁপছে ফসলের ক্ষেত। মাঠের পর মাঠ এখন সোনালি ধান যেন দিগন্ত ছুঁয়ে নতুনের জাগরণে মেতে উঠেছে। কাঁচা ধানের ডগায় সন্তপর্ণে পা ফেলে নামছে বিকেলের রোদ। আর দূরের নীলিমা ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে রঙিন সোনালি চিকন হাসি। মৃদুলয়ে দোল খাচ্ছে মাঠ ভরা বোরো ধানের রাঙা হাসি। আর বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকদের প্রাণে বয়ে বেড়াচ্ছে চাঞ্চল্য।
গত বছরের তুলনায় এবার ঠাকুরগাঁওয়ের আবহাওয়া অনেকটা ভালো থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। গত মৌসুমের তুলনায় এই মৌসুমে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষকরা। এ ছাড়াও আধুনিক যন্ত্রাংশের ফলে দিন দিন কৃষিতে উন্নতি হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কৃষাণ-কৃষাণিরা পরিপক্ক ধান সনাতন পদ্ধতি কাস্তে ও হারভেস্টার দিয়ে কাটা, মাড়াই এবং খড়কুটা শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগে যেখানে সমস্ত কৃষক হাত দিয়ে ধান কাটা মাড়াই করতে এখন অধিকাংশ কৃষকই আধুনিক কৃষি যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা মাড়াই করছেন। এতে তাদের শ্রম ও সময় দুটোই সাশ্রই হচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, তেমন বড় কোনো ঝড় বৃষ্টি ও দুর্যোগ না হওয়ায় ধানের ফলনের গতবছরের তুলনায় এবার ফলন বেশি হয়েছে। আর বর্তমানে এক বস্তা (৮০ কেজি) কাঁচা ধান ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। এতে এক বিঘা জমিতে ধান করতে তাদের খরচ হয়েছে ২২ হাজার টাকা আর বিক্রি করছেন ৫০ হাজার টাকা।
মাঠে ধান মাড়াই করে আবার মাঠেই ধান বিক্রি করছিলেন সদর উপজেলার চিলারং বালা পাড়া এলাকার রমেশ রায়। এসময় তিনি বলেন, এবার আমাদের এক বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ৫০ মণ। আর প্রতি মণ ধান বিক্রি করেছি ৯২৫ টাকায়। ধান চাষ করতে এক বিঘা জমিতে সর্বমোট খরচ হয়েছে ২২ হাজার টাকা। বিমল রায় বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের দাম ও ফলন দুটোই ভালো পেয়েছি।
আকচা ইউনিয়নের বন্দর পাড়া গ্রামের কৃষক আজমত ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, এবছর ফলন ভালো হয়েছে। খেতের পরিচর্যা যেমন আগাছা নিড়ানি, মাটি কঁচলানি শেষে পরিমান মতো সার ও কীটনাশক প্রদান হয়েছে। আমাদের এলাকার প্রতিটি বোরো খেত এখন ধানের কঁচি শীষে পরিপূর্ণ রূপ নিয়েছে। মাঠের দিকে চোখ পড়লেই মনটা ভরে যাচ্ছে। কৃষক দুলাল বলেন, ‘আগে আমরা ধান রোপন করতাম হাত দিয়ে ও কাটতাম করিচা-কাস্তি দিয়ে। আর এখন ধান রোপনসহ কাটা মাড়াই করছি আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন দিয়ে। এতে পরিশ্রম ও কষ্ট কমে গেছে।’
সিলেটের হবিগঞ্জ থেকে এসেছেন হারভেস্টার চালক হৃদয় ইসলাম। তিনি বলেন, দিনে ১০-১৫ বিঘা জমির ধান হারভেস্টার দিয়ে মাড়াই করছি। দূরত্ব ও স্থান ভেদে এক বিঘা জমির ধান মাড়াই করতে ৪-৫ হাজার টাকা নেয়।
ঠাকুরগাঁও কৃষি কর্মকর্তার তথ্যে মতে, জেলায় এবার ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হলেও এর বিপরীতে ৬১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪৫% জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৬ টন করে ফলন হয়েছে।
ব্যবসায়ী আক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার ধানের বস্তা প্রতি ২০০-৪০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কাঁচা ধানের বস্তা ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে ক্রয় করছি। তবে এর থেকে দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, সরকারি প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের সার-বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এবার হাইব্রীড ধানে ১৫ হাজার কৃষক ও উফশী জাতের ধানে ১০ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ধান চাষে সকল কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে কৃষকরা দ্রুত সময়ে ফসল রোপণ ও কর্তন করতে পারচ্ছেন এবং খরচের দিক থেকেও লাভবান হচ্ছে। এবার কর্তনকৃত বোরো ধান পার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৬ টন করে ফলন হয়েছে। তাই আশা করছি ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে।
এসএন