ফলন ভালো হলেও স্বপ্নের লিচুর গায়ে তাপের ক্ষত
ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি প্রায় সব রকমের ফল উৎপাদনের জন্য উপযোগী। এখানকার আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় মৌসুমি ফল ছাড়াও অন্যান্য ফলও হয় বেশ ভালো। তবে অনাবৃষ্টি ও তীব্র তাপদাহে আবারও ক্ষতির মুখে পড়ছে জেলার লিচু বাগানি ও ব্যবসায়ীরা।
তবে কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী গত বছরে জেলার ২৫৬টি বাগানে ৮০৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৯৯৮ টন লিচু উৎপাদন হয়েছিল।
গত বছর দফায় দফায় শিলা বৃষ্টির একটা বড় প্রভাব পড়েছিল লিচুর উপরে। লিচু ঝড়ে পড়ায় স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল বাগান ব্যবসায়ীদের। এ বছর জেলার লিচু বাগানগুলোতে ফলন ভালো এসেছে। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে লাভের স্বপ্ন দেখেছিল বাগান মালিক ও লিচু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তীব্র তাপদাহের কারণে স্বপ্নের লিচুতে দেখা দিয়েছে তাপের ক্ষত। এ ক্ষত লোকসানের শঙ্কা বাড়াচ্ছে আবারও।
সদর উপজেলার মুন্সিরহাট বাগান বাড়ি, আকচা মুন্সিপাড়া, হরিহরপুর, কালাপাহার, নারগুন কহরপাড়া সহ বেশ কয়েকটি স্থানে বড় বাগান ঘুরে দেখা গেছে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে লিচুর আকৃতি এখনো অনেক ছোট। এরই মধ্যে তীব্র রোদের কারণে অধিকাংশ লিচুর চামড়া পুড়ে গেছে। কিছু লিচুর আকৃতি বড় হতেই সে পোড়া চামড়া ফেটে যাচ্ছে। ফলে এবারেও লিচুতে বিপর্যয় ও লোকসানের শঙ্কা করছেন লিচু চাষি ও বাগান লিজ নেওয়া ব্যবসায়ীরা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বাগান ব্যবসায়ী নয়ন জানান, গত বছর শিলা বৃষ্টিতে তার সব লিচু ঝরে পড়েছিল। তিনটি বাগান থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছিল তার। এবছর বাগানগুলোতে ফলন ভালো হয়েছে। তবে লিচুর আকৃতি এখনো বড় হয়নি। ঝড়বৃষ্টির কবলে না পড়লেও তীব্র রোদে লিচুর একপাশের চমড়া পুড়ে গেছে। এখন লিচু যত বড় হচ্ছে লিচু ফেটে যাচ্ছে। এ বছর বাগানগুলো থেকে ২০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করে ঋণ পরিশোধের স্বপ্ন থাকলেও এখন তিনি প্রায় ৫ থেতে ৭ লাখ টাকা লোকসানের শঙ্কা করছেন।
আকচা মুন্সিপাড়ার একটি লিচু বাগানে সেচ দিতে দেখা গেল বাগান চাষি খায়রুল ইসলামকে। তিনি জানালেন, তীব্র রোদের কারণে গাছ পানি পাচ্ছে না। এদিকে লিচুর চামড়া পুড়ে যাচ্ছে ও ফেটে যাচ্ছে৷ এমন হতে থাকলে ফলন থাকবে ঠিক কিন্তু দাগের কারণে লিচুর দাম পাওয়া যাবে না। ফলে লোকসান হবে। তাই সেচের মাধ্যমে নিজের স্বপ্ন বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরে লিচুর বাগানে লোকসান গুণেছেন অনেক বাগান চাষি তারই মধ্যে একজন আজাদ আলী। এ বছর লিচুর বাগান কেটে ফেলেছেন তিনি। তিনি বলেন, লিচু লাভজনক ফসল হলেও অনেক ঝুঁকি আছে। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, ফলন ও বাজার সব কিছুর সঙ্গে লড়াই করে এ ব্যবসা করতে হয়। কখনো লোকসান হলে কোনো প্রনোদনা পাইনি। তাই লিচুর বাগান কেটে অন্য চাষাবাদ শুরু করছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ বছর লিচুর আবাদ ও বাগান সংখ্যার হিসাব জানাতে পারেনি। সেই সঙ্গে কী পরিমাণ লিচু তীব্র তাপদাহে ক্ষতি হতে পারে তারও ধারণা দিতে পারেনি। তবে তারা বলছে উৎপাদনের হিসেব থেকে এর সঠিক পরিসংখ্যান জানাতে পারবেন তারা। এখনো জেলাতে গাছ থেকে লিচু সংগ্রহের কাজ শুরু হয়নি। কিন্তু তারা জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে অনেক বড় বড় বাগান কর্তন করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, দুই কারণে লিচু ফেটে যেতে পারে। প্রথম কারণ বোরন সারের ব্যবহার ঠিক মতো না হলে আর অনেক দিন পরে বৃষ্টি হলে। তা ছাড়াও এবার রোদে তাপমাত্রাটা অনেক বেশি। যে কারণে লিচুর গায়ে দাগ পড়েছে। তবে আমরা চাষিদের নিয়মিত সেচ ও সারের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছি।
এসএন