নরসিংদীর মিষ্টি বাঙ্গি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে আশপাশের জেলায়
সারাদেশের ন্যায় নরসিংদীতে গ্রীষ্মের তাপদাহে অতিষ্ট জনজীবন। খুঁজে ফিরছে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস। এ সময় নরসিংদীর চরাঞ্চলের চাষিদের উৎপাদিত বাঙ্গি মানুষের মাঝে এনে দেয় স্বস্তি। দূর করে শরীরের ক্লান্তি। শ্রীষ্মকালের ফলের মধ্যে বাঙ্গি একটি অন্যতম ফল হিসেবে আমরা খেয়ে থাকি। এই বাঙ্গি চাষে প্রসিদ্ধ একটি অঞ্চল নরসিংদীর চরাঞ্চল। চরাঞ্চলের বাঙ্গি আকারে বড়, দেখতে সুন্দর ও স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। অল্প শ্রম ও স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদিত বাঙ্গি বাজারে বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জন করছে কৃষকরা। ফলে প্রতিবছরই চরাঞ্চলে বাড়ছে বাঙ্গির চাষাবাদ। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থানের।
সরেজমিনে রায়পুরার চরাঞ্চল মধ্যনগর গ্রামের চরে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে বাঁশগাড়ি ও পাড়াতলী ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মেঘনার চরাঞ্চল বিশাল চর। বিস্তীর্ণ চরের ধান ও মসলা জাতীয় ফসলের পাশাপাশি বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। মাটির উপর ছড়িয়ে রয়েছে বাঙ্গিগাছের সবুজ লতা-পাতা। সবুজ লতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি শোভা পাচ্ছে। অন্যদিকে কৃষকদের মুখেও হাসি দেখা যায়। জমি থেকেই বাঙ্গি কিনতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা কৃষকদের সঙ্গে দরদাম করছেন।
রায়পুরার মধ্যনগর গ্রামের কৃষক আলী হোসেন হোসেন জানান, আগে নিজেরা খাওয়ার জন্য চরে অল্প জমিতে বাঙ্গি করা হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা চর থেকে বাঙ্গি কেনা শুরু করায় বাঙ্গির জমি চাষাবাদ বাড়ছে। এখনতো চরের অর্ধেক জমিতেই বাঙ্গি চাষাবাদ করা হচ্ছে।
অপর এক বাঙ্গি চাষি আমজাদ হোসেন জানান, বাঙ্গি চাষে খুব বেশী খরচ দরকার হয় না। পিয়াজ, রসুন ও বাঙ্গি ৩ ফসল একসাথে করা যায়। রসুনের জন্য সার দেওয়ায় বাঙ্গির জন্য আলাদা করে সার দিতে হয় না।
চরাঞ্চলের ইসমাইল ৮০ শতক জমিতে এক লাখ বিশ হাজার টাকা খরচ করে বাঙ্গি চাষ করেছেন। এই বাঙ্গি তিনি তিন লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে জানা গেছে।
বাঙ্গি চাষ শুধু কৃষকদের সমৃদ্ধি আনেনি, সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের। বিশাল চরের বাঙ্গির জমি থেকে নৌ-ঘাটের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। শ্রমিকরা জমি থেকে বাঙ্গি ঝুঁড়িতে তুলে দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নৌকাভর্তি করে। এতে পুরো চরে চোঁখে পড়ে কৃষক ও শ্রমিকের কর্মচঞ্চলতা।
বাঙ্গি পরিবহনের কাজ করেন মধ্যনগরের আনোয়ার হোসেন । তিনি জানান, বাঙ্গির মৌসুমে এই গ্রামের কেউ বসে থাকে না। সবাই কিছু না কিছু কাজ করে থাকে। জমি থেকে একটা বাঙ্গি ঘাটে নিলে ১০/১৫ টাকা পাওয়া যায়। প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পড়ে।
চরে পাইকারি বাঙ্গি বিক্রি হয় শতক হিসেবে। আকার ভেদে প্রতিশত বাঙ্গি ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় পাইকারি বিক্রি হয়। জমি থেকে বাঙ্গি কিনেছেন পাইকারি ফল ব্যবসায়ী নরসিংদীর হারুন মিয়া। তিনি জানান, এই এলাকার বাঙ্গি আকারে বড়, দেখতে সুন্দর ও খেতে সু-স্বাদু। এই চরের বাঙ্গি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। কিন্তু যাতায়াতে ভালো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিটি বাঙ্গি আড়তে তুলতেই ২০ থেকে ৩০ টাকা খরচ লাগে। এতে করে বাঙ্গির দাম বেশি পড়ে যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আরও জানা গেছে, নরসিংদীর চরাঞ্চলে বাঙ্গি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাঙ্গি চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও ভালো বীজ সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে কৃষি বিভাগের। পাশাপাশি আগামী বছর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভালো বীজ বিভিন্ন চরের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী, পাড়াতলী ও মধ্যনগর গ্রামের কৃষকরা চরে এবার ৩৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ করে। চরাঞ্চলের উৎপাদিত বাঙ্গির আকার বড় ও রং উজ্জ্বল হয়। ফলে জেলাজুড়ে বাজারগুলোতে ক্রেতা চাহিদাও বেশি।
এসআইএইচ