পতিত জমিতে আউশ ধানে বিএডিসির সাফল্য
আলু উৎপাদনের পর এক সময় ফেলে রাখা হতো জমি। পরবর্তী আলু চাষের মৌসুম পর্যন্ত পড়ে থাকত এসব এক ফসলি জমি। এভাবেই চলে আসছে বছরের পর বছর। তবে কয়েক মৌসুম থেকে আর ফেলে রাখা হচ্ছে না এসব জমি।
আলুর পর গম ও বোরো আবাদের পরপরেই আবাদ করা হচ্ছে আউশ ধানের ভিত্তিবীজ। বর্তমানে আউশ ধানের সোনালি শীষে ভরে গেছে ডোমার আলু ভিত্তিবীজ উৎপাদন খামারটি। চলতি মৌসুমে এ খামারের ২৪০ একর জমিতে রোপন করা হয়েছে আউশ ধান।
সবুজ আউশ ক্ষেত সোনালি হয়ে গেছে ধানের শীষে। প্রায় সব ধানের গায়ে এসেছে সোনালি রং। কিছু কিছু ক্ষেতের ধান পেকে গেছে। সেসব ক্ষেতের ধান বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাটা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। আর যেসব ক্ষেতে এখনো ধান পাকেনি আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সেসব ক্ষেতেও ধান কাটার উপযোগী হবে। এর আগে খামারটিতে আলু উঠানোর পর জমিগুলো পতিত থাকত। এতে করে মাটির উর্বর শক্তি কমে যেত। মাটির উর্বর শক্তি বাড়ানোর জন্য ধইঞ্চা লাগানো হতো। ধইঞ্চা গাছগুলো ৩/৪ ফিট লম্বা হলে চাষ দিয়ে মাটিতে পচানো হয়। পচে গেলে এটি মাটিতে জৈব সার হিসেবে কাজ করে। এরপর কয়েকটি চাষ দিয়ে ওই জমিতে আউশ ধান রোপন করা হয়।
ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু তালেব মিঞা আউশ ধান চাষের উদ্যোগ নেন। এরপর থেকে পর্যায় ক্রমে প্রতি বছর বাড়তে থাকে আউশ ধানের চাষাবাদ। গত বছরের তুলনায় এবার ৯০ একর বেশি জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছে। মে মাসে আউশ ধান রোপন করা হয়। রোপন কাল থেকে কাটা পর্যন্ত ১১৫ দিন সময় লাগে। ঘনঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দেওয়ায় ধান উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলনের আশা করছেন বিএডিসি ফার্মের উপপরিচালক আবু তালেব মিঞা।
ডোমার উপজেলায় আউশের তেমন চাষাবাদ না থাকায় বিভিন্ন এলাকার কৃষক ধান ক্ষেত দেখতে প্রতিদিনই আসছে বিএডিসি ফার্মে। একসঙ্গে এত জমিতে আউশ ধান চাষ করে গোটা উপজেলায় সাড়া ফেলেছে ফার্মটি। আউশের আগে ১২ একর জমিতে গমবীজ উৎপাদন এবং বোরো মৌসুমে ব্র্রি-৯২ জাতের ৪৫ একর ও ব্রি-৮৮ জাতের ২৫ একরসহ ৭০ একর জমিতে ভিত্তি মানের বোরো ধানবীজ উৎপাদন করা হয়।
সাদেকুজ্জামান নামে এক কৃষক বলেন, আমাদের এদিকে বছরে দুবার (বোর ও আমন) ধান চাষাবাদ করা হয়। তবে ডোমার ফার্মে বছরে তিনটি আবাদ হচ্ছে। যদি ফার্ম থেকে স্থানীয় চাষিদের এ বিষয়ে পরার্মশ দেওয়া হয়, তবে এখানকার কৃষকরাও বছরে তিনটি ফসল উৎপাদন করতে পারবে।
মজিবুল আসলাম নামে আরও এক কৃষক বলেন, আউশ চাষ পদ্ধতি যদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের উৎসাহিত করা হয়ে থাকে তবে লাভবান হবে কৃষকরা বাড়বে আউশ ধানের চাষাবাদ।
বিএডিসি অফিস সূত্রে জানাযায়, খামারের জমিগুলো অধিকাংশ বেলে মাটি হওয়ায় আলু উৎপাদনের পর পতিত হিসেবে পড়ে থাকত। কর্তৃপক্ষ পতিত জমিগুলো দোঁ-আশ মাটি দিয়ে সংস্কার করে গত বছর ১৫০ একর জমিতে আউশ ধান চাষ করে। এবার ২৪০ একর জমিতে তিন জাতের আউশ ধান চাষ করা হয়েছে। জাতগুলো হলো ব্রি-৪৮, ৯৮ ও বিনা ধান-২১। এসব জাত থেকে উৎপাদিত ধান মানসম্পন্ন ভিত্তি বীজ হিসেবে বাজারজাত করা হবে।
ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারের উপপরিচালক আবু তালেব মিঞা জানান, আউশ ধান মে মাসে রোপন করা হয়। এবার ৯০ একর বেশি জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছে। ভালো ফলনের আশা করছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার একর প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ধান আশা করা হচ্ছে। উৎপাদিত সব ধান ভিত্তি বীজ হিসেবে বাজারজাত করা হবে। বীজ করায় উৎপাদন খরচ একটু বেশি লেগেছে। একর প্রতি ৫৫ হাজার টাকা মতো খরচ হয়েছে। ধানগুলো ভিত্তি বীজ হিসেবে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে পারে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এসএন