কৃষকদের ঋণ দেওয়া হবে ৩১ হাজার কোটি টাকা
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩১ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে। এই ঋণ বিতরণের জন্য নতুন নীতিমালাও ঘোষণা করেছে। গত অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধা মুক্তি এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে পল্লী অঞ্চলে কৃষি ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) এই নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ ‘ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি’ ঘোষণা করেছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলামসহ অন্য শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তারা।
কৃষি ঋণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোভিড মহামারি এবং সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কৃষির গুরুত্ব বেড়েছে। তাই এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের মাধ্যমে সহায়তা করতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া, টেকসই উন্নয়নের নির্ধারিত লক্ষ্যের প্রথম ও প্রধান তিনটি লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্য ছিল ২৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা।
এবার কৃষি ও পল্লী ঋণের চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক ১৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ২৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণ করেছে, যা অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, গত অর্থবছরে ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৮১১ জন কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন কৃষকরা। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ১৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫২ জন নারী ১০ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন। এছাড়া গত অর্থবছরে ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৪৫ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২০ হাজার ১৮২ কোটি টাকা এবং চর, হাওর প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৪ হাজার ৭৩ জন কৃষক প্রায় ১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছেন।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং কৃষকদের কাছে কৃষি ঋণ সহজলভ্য করার লক্ষ্যে বর্তমান নীতিমালা ও কর্মসূচিতে বেশ কিছু বিষয় সংযোজিত হয়েছে।
নীতিমালায় নতুন কিছু বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে- প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় হাঁস পালনের জন্য ঋণ নিয়মাচার সংযোজন, চিয়া বীজ, জ্বীন ফল, সুগারবিট চাষের জন্য ঋণ নিয়মাচার সংযোজন, ভিয়েতনামী হাইব্রিড নারিকেল, কফি ও সুইট কর্ন চাষের ঋণ নিয়মাচার সংযোজন, সামুদ্রিক শৈবাল চাষের জন্য ঋণ নিয়মাচার সংযোজন, মৎস্য খাতের আওতায় গলদা চিংড়ি চাষের ঋণ নিয়মাচার সংযোজন, সহজে অধিক সংখ্যক কৃষককে কৃষি ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে ব্যাংক দলবদ্ধভাবে কৃষি ঋণ বিতরণের পদ্ধতি সংযোজন এবং একর প্রতি ফসল উৎপাদনের ঋণ নিয়মাচার বৃদ্ধি করতে হবে। এসব বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি কৃষি খাতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর জন্য সহায়ক হবে। পাশাপাশি, কৃষি খাত ও গ্রামীণ উন্নয়নে নীতিমালাটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
জেডএ/এএস