এবার স্মার্টফোনের সঙ্গে জোট বাঁধতে যাচ্ছে ক্যানন
নাহ খুব একটা অবাক লাগছে না তাইতো? এ আর নতুন কি? বিশ্ববিখ্যাত প্রায় সব ক্যামেরা কোম্পানিই তো ইতোমধ্যে স্মার্টফোনের সঙ্গে জোট বেঁধেছে, সে তুলনায় ক্যানন তো বেশ দেরিই করে ফেলল। নেট দুনিয়ায় খবর ছড়িয়েছে স্মার্টফোন নির্মাণকারী অংশীদার খুঁজছে জাপানের বিখ্যাত ক্যামেরা ক্যামেরা নির্মাণকারী কোম্পানি ক্যানন। চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাইক্রো ব্লগিং সাইট সিনা উইবো থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ক্যামেরা নির্মাণকারী কোম্পানি সুইডেনের হেসেলব্লেড, জার্মানির লেইকা ও জেসিস ইতোমধ্যেই স্মার্টফোনের জন্য ক্যামেরা ও লেন্স এর উন্নয়ন সাধন করে বাজারে হইচই ফেলে দিয়েছে এবং অংশীদার হিসেবে বেশ পাকাপোক্ত অবস্থান গড়ে নিয়েছে।
হেসেলব্লেড এর সঙ্গে অংশীদারিত্বে গিয়েছে চায়নার বিখ্যাত টেক জায়ান্ট বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অপ্পো ও ওয়ান প্লাস। জেসিস এর সঙ্গে অংশীদারিত্বে গিয়েছে বিবিকে'র অপর প্রতিষ্ঠান ভিভো আর লেইকার সঙ্গে শাওমি।
বাকি থাকল অ্যাপল, স্যামসাং, হুয়াওয়ে, আসুস, গুগল, রিয়েলমি, অনর, সনি, মটোরলা, নকিয়া, এইচটিসি, জেডটিই, লেনোভো আর টেকনো। যারা এখনো কোনো ক্যামেরা কোম্পানির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়নি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে ক্যাননের সঙ্গে অংশীদারিত্বে যাবে কে। কার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কোম্পানি গুলোর বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা করা যেতে পারে।
প্রথমত অ্যাপল, স্যামসাং, সনি আর গুগল। এ কোম্পানিগুলো আসলে কারও সঙ্গে অংশীদারিত্বে যেতে চায় না। প্রয়োজন পড়লে নিজেরা নতুনভাবে গবেষণা করবে কিন্তু দ্বিতীয় কোনো পক্ষকে দায়িত্ব দিবেনা অথবা দায়িত্ব দিলেও স্বীকৃতি দিবেনা। সেক্ষেত্রে বলাই যায় এরা ক্যাননের সঙ্গে অংশীদারিত্বে যাবে না। আবার সনির তো নিজস্ব ক্যামেরা রয়েছেই, বরং সনি পারলে ক্যাননকে কিনে নিতে চাইবে। তাই সনির কোনো সম্ভাবনাই নেই অংশীদারিত্বে যাওয়ার।
আসুস, লেনোভো আর জেডটি এরা আসলে গেমিং স্মার্টফোন হিসেবে বাজারে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বেশি। তারা হলো গেমিং স্মার্টফোন লিজেন্ড। তাই গেমিং স্মার্টফোন প্রতিযোগিতায় তারা যতটা মনযোগী বা আগ্রহী ক্যামেরা ফোন সম্পর্কে ততটা নয়। ক্যামেরা ফোনে প্রাধান্য দিলে তারা আরও আগেই অংশীদারিত্বে যেতে পারত। তাই বলা যায় তারাও এখন ক্যাননের সঙ্গে অংশীদারিত্বে যাবে না।
ফিনল্যান্ডের বিখ্যাত কোম্পানি নকিয়া আর বিশ্বের প্রথম অ্যান্ড্রোয়েড স্মার্টফোন নির্মাতা এইচটিসি। তারা বিশ্ব বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে কালের অতলে হারিয়ে গিয়েছিল। এইচটিসি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলেও, নকিয়া এখনো পারেনি। তারা এখন যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে তাদের পক্ষে নতুন কোনো অংশীদারিত্বে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
গুগল থেকে ছিটকে যাওয়ার পর থেকে বাজারে বেশ পিছিয়ে পড়েছে চীনের বহুজাতিক কোম্পানি হুয়াওয়ে। তবে তারা যে ধরনের স্মার্টফোন বাজারজাত করছে তাতে তাদের এই অংশীদারিত্বে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনর একসময় হুয়াওয়ের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান থাকলেও এখন আর নেই তাই অনরের বিষয়টি একেবারেই অনিশ্চিত। আর আমেরিকার মটোরলা বেশ কিছু ক্লাসিক স্মার্টফোন বাজারে ছাড়লেও খুব একটা আলোচনায় নেই। আর এসব ব্র্যান্ডিং বা অংশীদারিত্ব নিয়ে তাদের খুব একটা মাথাব্যথা আছে বলেও মনে হয় না। তবে টেকনো দক্ষিণ এশিয়ায় দিন দিন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠলেও এখনই তারা এমন কোনো পদক্ষেপ নিবে বলে মনে হয় না।
সবশেষে বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স এর রিয়েলমি। রিয়েলমি এখন বাজার কাঁপাচ্ছে। বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশে সর্বাধিক বিক্রয় হওয়া ফোনগুলোর একটি। ক্যানন যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে রিয়েলমি সে সুযোগ ছেড়ে দিবে বলে মনে হয় না। আর বিবিকে ইলেক্ট্রনিক্স এর অন্যান্য অঙ্গসংগঠন ভিভো, অপ্পো, ওয়ানপ্লাস এর ধারাবাহিকতার দিকে তাকালে বলা যায় তারা এ সুযোগ লুফে নিবে। আর যেহেতু ক্যাননের অংশীদার বিষয়ের খবরটার উৎপত্তি চায়না থেকে তাই ঘুরে ফিরে দৃষ্টি সবার আগে রিয়েলমির দিকেই যাচ্ছে।
তবে বাণিজ্যিক জগতে কোনো সম্ভাবনাকেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যে কোনো মুহুর্তে গল্পের যে কোনো পটভূমি পরিবর্তন হতে পারে। তাই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। আসল খবর জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ক্যাননের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পর্যন্ত।
/এএস