বাজারে আসছে স্যামসাং এর নতুন দুই ফাইভ জি স্মার্টফোন
গেল ১৭ মার্চ স্যামসাং লঞ্চ করেছে গ্যালাক্সি এ সিরিজের দুটো নতুন ফাইভ জি স্মার্টফোন। এ ফিফটি থ্রি ও এ থারটি থ্রি। স্যামসাং জানিয়েছে আসছে এপ্রিলেই আন্তর্জাতিক বাজারে ফোনদুটো কিনতে পাওয়া যাবে।
স্যামসাং দাবি করেছে ফোন দুটো তাদের সম্পূর্ণ নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সমন্বয় করে তৈরিকৃত যা ব্যবহারকারীকে 'সাধ্যের মধ্যে সব' প্যাকেজের অভিজ্ঞতা দিবে। দুটো ফোনেই স্যামসাং তাদের নতুন চিপসেট ব্যবহার করেছে যার সাথে থাকছে তাদের নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্যামেরা। পাশাপাশি দুটো ফোনেই থাকছে হাই রিফ্রেশ রেটের সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি।
গেল বছরে স্যামসাং বাজারে ছাড়ে গ্যালাক্সি এ সিরিজের পাঁচটি ফোন যথাক্রমে এ থারটি টু, এ ফিফটি টু, এ থারটি টু ফাইভ জি, এ ফিফটি টু ফাইভ জি ও এ ফিফটি টু এস ফাইভ জি। পাঁচটি ফোনই বাজারে স্যামসাং এর বেশ ব্যবসা সফল স্মার্টফোন ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের বাজারে এ থারটি টু, এ ফিফটি টু ও এ ফিফটি টু এস ফাইভ জি এই তিনটি ফোনই পাওয়া যাচ্ছে। ২৬ হাজার থেকে ৪৬ হাজার টাকার মধ্যে তিনটি ফোনই দেশের বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
স্যামসাং এ থারটি থ্রি ও এ ফিফটি থ্রি দুটো স্মার্টফোনে একই প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। তবে স্যামসাং জানায়নি তারা কি তাদের নিজস্ব এক্সোনাস চিপসেট ব্যবহার করেছে নাকি মিডিয়াটে বা স্ন্যাপড্রাগন। তবে তারা বলেছে প্রসেসরটি নতুন সংস্করণ। আট কোরের এই প্রসেসরটি ২.৪ গিগাহার্জ পর্যন্ত স্পিড আপ করতে সক্ষম। সহায়ক হিসাবে থাকছে ৬ ও ৮ জিবি র্যাম। গ্রাফিক্স কার্ডের কথাও উল্লেখ করেনি স্যামসাং কিন্তু হাই রিফ্রেশ রেটের ডিসপ্লে ব্যবহার করায় ধারনা করা যাচ্ছে মালি বা অ্যাড্রিনো যে গ্রাফিক্স কার্ডই ব্যবহার করা হোক না কেন ভালো পারফরম্যান্সের জিপিউ-ই ব্যবহার করা হয়েছে। আরও থাকছে ১২৮ ও ২৫৬ গিগাবাইট স্টোরেজের সুবিধা। দুটো ফোনই চলবে অ্যান্ড্রোয়েড টুয়েলভ অপারেটিং সিস্টেমে আর ইউজার ইন্টারফেস বা ইউআই থাকছে স্যামসাংয়ের নিজস্ব ওয়ান ইউআই ৪.১। ফোন দুটো পাওয়া যাবে ৬/১২৮; ৮/১২৮ ও ৮/২৫৬ তিনটি ভ্যারিয়েন্টে। দুটো ফোনেই আলাদা ১ টেরাবাইট পর্যন্ত মেমোরি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা থাকছে।
এ থারটি থ্রি-তে ডিসপ্লে হিসাবে দেওয়া হয়েছে ৬.৪ ইঞ্চির সুপার অ্যামোলেড ইনফিনিটি ইউ মনিটর যা ৯০ হার্জ রিফ্রেশ রেটে অপারেট করা যাবে। ডিসপ্লের রেজুলেশন ১০৮০বাই২৪০০ (ফুল এইচডি)। ডিসপ্লের সুরক্ষায় স্ক্রিন হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ফাইভ।
এ ফিফটি থ্রি স্মার্টফোনটিতে ডিসপ্লে হিসাবে দেওয়া হয়েছে ৬.৫ ইঞ্চির সুপার অ্যামোলেড ইনফিনিটি ও মনিটর যা ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেটে অপারেট করা যাবে। এই ডিসপ্লের রেজুলেশনও ১০৮০বাই২৪০০ (ফুল এইচডি) এবং এতেও ডিসপ্লের সুরক্ষায় থাকছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ফাইভ।
এ থারটি থ্রি-তে পিছনের ক্যামেরা প্যানেলে ৩টি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। প্রাইমারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ১.৮ অ্যাপারচারের ৪৮ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ২৬ মিলিমিটার ওয়াইড। সেকেন্ডারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ২.২ অ্যাপারচারের ৮ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ১২৩ ডিগ্রি আল্ট্রাওয়াইড। তৃতীয় ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ২.৪ অ্যাপারচারের ৫ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ম্যাক্রো এবং সাথে থাকছে ২.৪ অ্যাপারচারের ২ মেগাপিক্সেল ডেপথ সেন্সর। আর বরাবরের মতো অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন তো থাকছেই। ভিডিও ধারণ করা যাবে ফোর-কে ফরম্যাটে। সেলফি ক্যামেরা হিসাবে থাকছে ২.২ অ্যাপারচারের ১৩ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর।
এদিকে এ ফিফটি থ্রি-তে পিছনের ক্যামেরা প্যানেলেও ৩টি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। প্রাইমারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ১.৮ অ্যাপারচারের ৬৪ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ২৬ মিলিমিটার ওয়াইড। সেকেন্ডারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ২.২ অ্যাপারচারের ১২ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ১২৩ ডিগ্রি আল্ট্রাওয়াইড। তৃতীয় ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ২.৪ অ্যাপারচারের ৫ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ম্যাক্রো এবং সাথে থাকছে ২.৪ অ্যাপারচারের ৫ মেগাপিক্সেল ডেপথ সেন্সর। এতেও অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন থাকছে। ভিডিও ধারণ করা যাবে ফোর-কে ফরম্যাটে। সেলফি ক্যামেরা হিসাবে থাকছে ২.২ অ্যাপারচারের ৩২ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ২৬ মিলিমিটার ওয়াইড।
দুটো ফোনেই সাউন্ড সিস্টেম হিসাবে থাকছে স্টেরিও স্পিকার। তবে এ থারটি থ্রি-তে ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক থাকলেও এ ফিফটি থ্রি-তে থাকছেনা। দুটো ফোনেরই ফ্রেম ও ব্যাকশেল পাস্টিকের। এ থারটি থ্রি এর ওজন ১৮৬ গ্রাম এবং এ ফিফটি থ্রি এর ওজন ১৮৯ গ্রাম।
দুটো ফোনই সচল রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম পলি ব্যাটারি যা ২৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টেড। দুটো ফোনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাশের পাওয়ার বাটনে ইনভার্ট করা। চারটি কালারে ফোন দুটো পাওয়া যাবে সাদা, কালো, পীচ ও আকাশী।
এ থারটি থ্রি-এর মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে ৪০০ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। আর এ ফিফটি থ্রি-এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৯ হাজার টাকা।
স্যামসাং জানিয়েছে আগামী ১ এপ্রিল থেকে এ ফিফটি থ্রি এবং ২২ এপ্রিল থেকে এ থারটি থ্রি আন্তর্জাতিক বাজারে পাওয়া যাবে। তবে এই ফোনটি বাংলাদেশে কবে আসবে তা এখনো জানা যায়নি।
/এএস