সিলেটের চারে চার
বিপিএলে একমাত্র দল হিসেবে শিরোপা জিততে না পারা সিলেট এবার যেন শিরোপা জিততে মরিয়া। মাশরাফির নেতৃত্বে তারা মরিয়া। এক একটি দলকে দিচ্ছে মরণ কামড়। যে কামড়ে নিঃশ্বেস হয়ে যাচ্ছে প্রতিপক্ষ। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের পর এবার সিলেট স্ট্রাইকার্স মরণ কামড় দিয়েছেন ঢাকা ডমিনেটরসকে। আগের তিন ম্যাচে যথাক্রমে ৮ উইকেট, ৬ উইকেট ৫ উইকেটের বড় ব্যবধানে জয়ের পর আজ ঢাকার বিপক্ষে পেয়েছে রানের ব্যবধানে জয়। সেখানেও এসেছে বড় জয়। জিতেছে ৬২ রান। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সিলেট তৌহিদ হৃদয়ের (৮৪) টানা তৃতীয় ও নাজমুল হোসেন শান্তর (৫৭) দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরিতে চলতি আসরে প্রথম দল হিসেবে ৮ উইকেটে ২০১ রান করার পর ঢাকাকে ১৯.৩ ওভারে অলআউট করে ১৩৯ রানে। সিলেটের টানা চার জয়ের বিপরীতে ঢাকার ছিল দুই ম্যাচে প্রথম হার। টানা তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করে টানা তৃতীয়বারের মতো ম্যাচ সেরা হন তৌহিদ হৃদয়।
প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে এবারের বিপিএলের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জয় একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। টস জেতা মানেই চোখ বুঝে ফিল্ডিং নেওয়া। এ সময় প্রতিপক্ষ যত রানই করুক না কেন, দ্বিতীয় ইনিংসে তা ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠে। কারণ এ সময় বল ঠিক মতো বোলার গ্রিপ করতে পারেন না। হয় প্রচুর মিস ফিল্ডিং আর হাত ছাড়া হয় ক্যাচ। এই সিলেটের বিপক্ষে ফরচুন বরিশাল আগে ব্যাট করে ১৯৪ রান করেও ম্যাচ জিততে পারেনি। আজ ঢাকার বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রিত হওয়ার পর বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই মনে ছিল সিলেটের ব্যাটসম্যানদের। জিততে হলে অন্তত দুইশর উপরে রান করতে হবে। তাও যদি শেষ পর্যন্ত নিরাপদ হয়। সিলেটের ব্যাটসম্যারা সেই কাজটি করে রেখেছেন তহবিলে ২০১ রান জমা করে। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুইশ রান তাড়া করার টার্গেট থাকলে তা অনেক সময় প্রতিপক্ষের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে উঠে। সেই চাপ কটিয়ে উঠে সিলেটের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ঢাকার ব্যাটসম্যানরা কি করতে পারেন তাই ছিল দেখার বিষয়? কিন্তু তারা পেরে উঠেননি। দ্বিতীয় ম্যাচের চিত্র উল্টে দিয়ে ঢাকাকে মাত্র ১৩৯ রান করতে দিয়েছে।
বড় সংগ্রহের পেছনে তাড়া করতে হলে শুরুটা করতে হয় ভালো। পাওয়ার প্লেকে লাগাতে হয় কাজে। এর কোনটিই করতে পারেনি ঢাকার ব্যাটসম্যানরা। পাওয়ার প্লেতেই তারা হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। রান করে মাত্র ৩৯। শুরুর এই ধাক্কা পরে আর তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ম্যাচ হয়ে উঠে তাদের কাছে নিয়ম রক্ষার। ইনিংসকে কতোদূর টেনে নিয়ে যেতে পারেন ব্যাটসম্যানরা। আর কমিয়ে আনতে পারেন হারের ব্যবধান। শেষ পর্যন্ত তারা ১৩৯ রান সংগ্রহ করে হার মানে ৬২ রানে।
ইমাদ ওয়াসিমের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে মুনাবীরা একটি করে চার ও ছক্কা মেরে ১০ রান নেওয়ার পর মাশরাফি ও মোহাম্মদ আমির বল হাতে নিয়ে ঢাকার উড়ন্ত সূচনাকে আটকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। মাশরাফি তার ৩ ওভারের স্পেলে আহমেদ শেহজাদ (০) ও সৌম্য সরকারকে (৬) এবং তার দুই উইকেটের মাঝে মোহাম্মদ আমির মুনাবীরাকে (১২) আউট করেন। তিন জনই বিগ শট মারতে গিয়ে আউট হন।
৩০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেট জুটিতে মোহাম্মদ মিঠুন ও অধিনায়ক নাসির হোসেন বিপর্যয় রোধ করে দলকে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা চালান। এখানে তারা বেশ সফলও হন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে তারা ৭.৪ ওভারে ৭৭ রান যোগ করে দলের অবস্থা বেশ ভালো করে তুলেন। এ সময় দলীয় ১০৭ রানে মোহাম্মদ, মিঠুন ২৮ বলে ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৪২ রান করে থিসারা পেরারা বলে অতিরিক্ত ফিল্ডার নাজমুল হোসেন অপুর হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেওয়ার পর আবার বিপর্যয় শুরু হয়। নাসির এক প্রান্ত আগলে রাখলেও অপরপ্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়তে থাকে। খুব দ্রুতই ইমাদ ওয়াসিম ফিরিয়ে দেন ওসমান গনি (১) ও আরিফুল হককে (০) এবং মোহাম্মদ আমির শিকার করেন তাসকিনকে (১)। মাত্র ১০ বলে ৬ রানে তারা হারায় ৪ উইকেট। ফলে মিঠুন ও নাসিরের ব্যাটে যে লড়াইয়ের সম্ভাবনা জেগেছিল, তা মুহূর্তে বিলীন হয়ে যায়। সামনে ভেসে উঠে বড় হার। তারপরও নাসির থাকায় সেই হারের ব্যবধান যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দলীয় ১২০ রানে নাসিরও ৪৪ রান করে রেজাউর রহমান রাজার শিকার হলে সেই সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়।
জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর মাশরাফি ষষ্ঠ বোলার হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে বল তুলে দেন। ২ ওভার বোলিং করে নাজমুল হোসেন শান্তও তুলে নেন আরাফাত সানির (৬) উইকেট। শেষ ব্যাটসম্যান মুক্তার আলী ব্যাট করতে নামেননি। ঢাকা অলআউট হয় ১৩৯ রানে। মাশরাফি ১৪, মোহাম্মদ আমির ১৯ ও ইমাদ ওয়াসিম ২৪ রানে ২টি করে উইকেট নেন। নাজমুল হোসেন শান্ত ১৯, থিসারা পেরেরা ২৫ ও রেজাউর রহমান রাজা ৪৫ রান দিয়ে নেন ১টি করে উইকেট।
এমপি/আরএ/