বাংলাদেশকে হারিয়ে সমতায় সিরিজ শেষ করল নিউজিল্যান্ড
সমতায় সিরিজ শেষ করল নিউজিল্যান্ড
জয়ের আশা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ের দেখা পেলো না বাংলাদেশ। বোলাররা চেষ্টার কমতি রাখেননি। তবে ব্যাটাররা ভালো পুঁজি এনে দিতে পারেননি। ১৩৭ রানের ছোট লক্ষ্য দিয়েও এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, কিউইদের বুঝি হারিয়েই দিল বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতার পরেও আশার বাতিঘর হয়ে ছিলেন বোলাররা। বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ১৩৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দিশেহারা হয় নিউজিল্যান্ড।
চতুর্থ দিন সকালে বাংলাদেশকে অল্পতে আটকে লক্ষ্যটাকে কাছাকাছি রাখে সফরকারীরা। পরে টপ-অর্ডাররা না পারলেও আলো ছড়িয়ে বাংলাদেশকে ছায়ায় ফেলেন ফিলিপস। দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলার ইতি হলো সিরিজ সমতায়।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষটিতে ৪ উইকেটে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১৭২ রানের পর ১৮০ রান করে কিউইরা। পরে স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয়ে যায় ১৪৪ রানে। ১৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ম্যাচ জিতে নেয় কিউইরা।
২ উইকেট হারিয়ে ৩৮ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করে বাংলাদেশ। এদিন সকাল ছিল কুয়াশা ঢাকা। প্রথম ওভারে এক রান নিয়ে স্ট্রাইকে থাকেন জাকির হাসান। পরের ওভারে টিম সাউদিকে দুই বলে দুটি চার হাঁকান তিনি। এরপর মাঝখানে এক ওভার বিরতি দিয়ে প্রতিটিতেই একটি করে চার হাঁকান বাংলাদেশি দুই ব্যাটার।
কিন্তু মুমিনুলের বিদায়ে সেটি শেষ হয়। এজাজ প্যাটেলের বলে পুল করতে গেলে তার প্যাডে লাগে তার। আম্পায়ারও আঙুল তুলে দেন সঙ্গে সঙ্গে। ১৯ বল খেলে ১০ রানে আউট হন তিনি। এরপর মুশফিকুর রহিমও ফেরেন দ্রুত।
আগের ম্যাচে হ্যান্ডেলড দ্য বল আউট হয়ে বেশ আলোচনার জন্ম দেন তিনি। এবার মিচেল স্যান্টনারের বলে ক্যাচ দেন ড্যারল মিচেলের হাতে। স্যান্টনারের শিকার হয়ে ফেরেন শাহাদাৎ হোসেন দীপুও। ১১ বলে ৪ রান করে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি।
একপ্রান্ত আগলে রেখে এর মধ্যেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন জাকির হাসান। কিন্তু তার সঙ্গীরা কেউই স্থায়ী হতে পারলেন না। মেহেদী হাসান মিরাজ এজাজ প্যাটেলকে তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে দাঁড়ানো স্যান্টনার ক্যাচ নেন। জাকিরের সঙ্গে নুরুল হাসান সোহান ছিলেন শেষ স্বীকৃত ব্যাটার।
কিন্তু তার তিন বলের ইনিংস ছিল অস্বস্তির। আম্পায়ারের দেওয়া আউটে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়ার পরের বলেই সাজঘরে ফিরতে হয় সোহানকে। এ দফায়ও তিনি এলবিডব্লিউ হন এজাজ প্যাটেলের বলে। এরপর কিছুক্ষণ টেল এন্ডারদের নিয়ে লড়াই করেন জাকির। নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৮৬ বলে ৫৯ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি।
তবে তার বিদায়ের পর শেষ উইকেট জুটিতে ১৬ রান যোগ করেন তাইজুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম। ৬ বলে ৮ রান করে এজাজ প্যাটেলকে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হন শরিফুল। ২১ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল। ১৮ ওভার বল করে ৫৭ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন এজাজ। তিনটি উইকেট পান মিচেল স্যান্টনার, একটি টিম সাউদি।
১৩৭ রান তাড়া করাও যে নিউজিল্যান্ডের জন্য সহজ কাজ হবে না, সেটি আঁচ করা যাচ্ছিল আগেই। তবুও চার ওভার খেলে কোনো উইকেট না হারিয়ে কিছুটা স্বস্তি নিয়েই লাঞ্চে যায় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু ফিরে এসে দ্বিতীয় ওভারেই সেটি উবে যায়। শরিফুল ইসলাম বিরতির আগে দুর্দান্ত একটি ওভার করেও উইকেট পাননি, তিনিই পান প্রথম উইকেট।
শরিফুল ইসলামের অফ স্টাম্প থেকে ভেতরে ঢোকা বল কিছুটা নিচু হয়ে ডেভন কনওয়ের পায়ে গিয়ে লাগে। ১৫ বলে ২ রান করে সাজঘরে ফেরত যান কনওয়ে। দ্বিতীয় উইকেট আসে তাইজুল ইসলামের হাত ধরে। এই সিরিজে চার ইনিংসে তৃতীয়বারের মতো কনওয়েকে সাজঘরে ফেরান তিনি। তাইজুলের বলে স্টাম্পিং হন ২৪ বলে ১১ রান করা উইলিয়ামসন।
এরপর সফরকারী ব্যাটারদের দারুণভাবে চাপে ফেলেন বাংলাদেশের বোলাররা। সাফল্যও মেলে মেহেদী হাসান মিরাজের হাত ধরে। তার বলে এলবিডব্লিউ হন হেনরি নিকোলস। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ১০ বলে ৩ রান করা এই ব্যাটার। ম্যাচ আরও জমিয়ে তোলেন মিরাজই। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া টম লাথামকে ৬০ বলে ২৬ রান করার পর আউট করেন তিনি। স্লিপে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন মিরাজ।
পরের ওভারে টম ব্লান্ডেলকে ফেরান তাইজুল ইসলাম। কিন্তু এর মধ্যে ফিলিপসের ক্যাচ ছেড়ে দেন অধিনায়ক শান্ত। সেটিই পরে কাল হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের জন্য। প্রথমে মিচেলের সঙ্গে ৩১ বলে ১৮ রানের জুটি গড়েন তিনি। সেটি অবশ্য ভেঙে দেন ড্যারল মিচেল। ৩৬ বলে ১৯ রান করার পর মিচেলকে আউট করে আবারও বাংলাদেশের আশার পালে হাওয়া এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
কিন্তু এরপর আর কুলিয়ে ওঠেনি বাংলাদেশ। ফিলিপসের সঙ্গে মিচেলের জুটিই তাদেরকে ম্যাচ জিতিয়ে দেয়। ৪৮ বলে ৪০ রান করে অপরাজিত থাকেন আগের ইনিংসেও দুর্দান্ত খেলে ম্যাচের মোড় ঘোরানো ফিলিপস। ৩৯ বলে ৩৫ রান করেন স্যান্টনার।