শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১২ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (পর্ব ১)

বাজারের উপর ছেড়ে দিলে কখনো অভিন্ন শিক্ষা হবে না

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সম্প্রতি ঢাকাপ্রকাশ’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন দেশের শিক্ষানীতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম এবং করোনাকালের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহেরীন আরাফাত। আজ প্রকাশিত হলো সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব

ঢাকাপ্রকাশ: অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, আমরা এখনই প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরগুলোতে একমুখী শিক্ষা করতে পারি কিনা। একমুখী শিক্ষার বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

আনু মুহাম্মদ: প্রথমেই একমুখী শিক্ষার অর্থটা খেয়াল করতে হবে। সবার কাছে তো এর অর্থ একরকম নয়। আমরা যতদূর দেখছি, বাংলাদেশে সর্বশেষ শিক্ষানীতি হয়েছিল ২০১০ সালে। সেখানেই প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছিল যে, একমুখী শিক্ষা তারা করবে। বাস্তবে তারা যেটাকে একমুখী শিক্ষা দাবি করছে, তার সঙ্গে একমুখী শিক্ষার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি যেভাবে বুঝি, একমুখী শিক্ষার মানে হলো অভিন্ন শিক্ষা। একটা দেশের নাগরিক হিসেবে শিশুকাল থেকে শুরু করে তার যে শিক্ষাগ্রহণ প্রক্রিয়া, তাতে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। সবাই যে একরকম করবে, এক রকম ফলাফল থাকবে বা সবার একই দিকে মনোযোগ থাকবে তা নাও হতে পারে; কিন্তু তার জন্য অভিন্ন একটা পদ্ধতি রাখতে হবে।

শিশুরা একেকজন একেকমানের পড়াশোনা করবে, একক ধারায় পড়াশোনা করবে–এটা সমাজে যে বৈষম্যটা আছে, তা আরও বাড়ানো বা একটা বিশাল অংশকে পঙ্গু করে ফেলার মতো। যেমন–আমরা যদি চিন্তা করি যে, বর্তমান সময়ে কী ধরনের শিক্ষা চলছে–একটা শিক্ষা আমরা দেখি সরকারি প্রাথমিক স্কুল, সরকারি মাধ্যমিক স্কুল পাশাপাশি আমরা দেখছি কিন্ডারগার্টেন–এর মধ্যে খুবই উচ্চ ব্যয়বহুল আছে, আবার সাধারণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে কিন্তু ব্যয়বহুল নয় এমনও আছে। মানের দিক থেকে আকাশ-পাতাল তফাৎ। আমরা দেখছি মাদ্রাসা শিক্ষা আছে। মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যেও দুটো প্রধান ধরন আছে–একটাতে খুবই সাধারণভাবে পড়াশোনা হয়, গরিব ছেলে-মেয়েরা পড়ে। আরেকটা হলো–ব্যয়বহুল ইংলিশ মিডিয়াম ক্যাডেট মাদ্রাসা, সেটাতে উচ্চবিত্তরা পড়ে। সাধারণ মাদ্রাসায় যে ধরনের পড়াশোনা হয়, সেদিক থেকে ইংলিশ মাদ্রাসা বা ক্যাডেট মাদ্রাসাগুলোর যে পড়াশোনার মান, তাদের যে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, সাজ-সরঞ্জাম কিংবা বইপত্র, তাদের যে ইনটেনসিভ কেয়ার সেটার তুলনাই হয় না। দুটোর মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। এদিকে আবার ক্যাডেট কলেজ বলে আরেকটা জিনিস আছে। এই যে বহুধরনের শিক্ষা–এর মধ্যে যে ছেলে-মেয়েরা বড় হচ্ছে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গীও ভিন্ন। মাদ্রাসায় যে পড়ছে সে এক ধরনের বিশ্বদৃষ্টি নিয়ে পড়ছে, আবার ক্যাডেট মাদ্রাসা যেগুলো, সেখানে তারা ইংলিশ ও আরবি শিখছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নাই। আবার কিন্ডারগার্টেনের যে ইংলিশ মিডিয়াম, সেখানে বাংলাদেশ থেকে যতদূরে থাকা যায়, তত চেষ্টা। সেগুলোর ব্যাপারে সরকারের কোনো কাঠামো নাই, নজরদারি নাই। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সবচেয়ে অবহেলিত। যদিও সেটা একটা স্ট্যান্ডার্ড জায়গায় যাওয়া উচিত ছিল, সেটাও নাই। এই যে বহু ধরনের শিক্ষা, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষা হওয়া উচিত–শিশুরা জন্ম থেকে শুরু করে তাদের জগৎকে জানা-বোঝা, নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো, ভাষার সঙ্গে পরিচিত হওয়া, গণিত-ইতিহাস-ভূগোল-সমাজ এগুলো সম্পর্কে তার ধারণা তৈরি হওয়া, তার শরীর সম্পর্কে তার ধারণা তৈরি হওয়া। এগুলো দিয়েই সাধারণ বা প্রাথমিক ভিত্তিটা মানুষের তৈরি করা দরকার। সবার মধ্যে সমান সুযোগ থাকলে তখন বোঝা যাবে কে, কোন বিষয়ে মনোযোগ পাচ্ছে। তাকে যদি বাধ্যতামূলকভাবে এক ধরনের শিক্ষার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে তাকে আমরা একটা গণ্ডিতে বন্দি করে ফেলছি।

আবার ব্যয়ের তারতম্যের কারণে, যার টাকা আছে সে উচ্চমানের লেখাপড়া করবে এবং বাংলাদেশ থেকে ক্রমান্বয়ে বিচ্ছিন্ন হতে থাকবে। আর যার টাকা নাই সে হীনমন্যতায় ভুগবে এবং সে অদক্ষ, অক্ষম হয়ে থাকবে। এটা তো জাতীয় পর্যায়ে নাগরিকদের প্রতি বড় ধরনের একটা বৈষম্য এবং বেঈমানি এক ধরনের। বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিশ্রুতি আছে যে, সবার জন্য শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে। অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা যদি করতে হয়, তাহলে এর জন্য রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। বাজারের উপর ছেড়ে দিলে কখনো অভিন্ন শিক্ষা হবে না। কারণ বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ার মানে–টাকার শক্তি দিয়ে প্রকাশিত হবে সেটা। যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রকাশিত হবে। নানা ধরনের মতাদর্শ, নানা ধরনের আগ্রহ, নানা রকম অগ্রাধিকার দ্বারা শিক্ষা নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়বে। শিক্ষা থাকতে হবে রাষ্ট্রের দায়িত্বে, এখানে কোনো আর্থিক বিষয় থাকা উচিত না। আর্থিক কোনোরকম চিন্তা, টাকা-পয়সার চিন্তা যদি কোনোরকম অভিভাবককে তাড়িত করে তাহলে তাদের পক্ষে সন্তানের লেখাপড়ার যে চাহিদা পূরণ সম্ভব না। আমরা অনেক ছেলে-মেয়ের কথা জানি, যারা অর্থের অভাবে মেধা থাকা সত্ত্বেও সফল হতে পারেনি। করোনাকালে অনেকের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে এবং করোনা ছাড়াও আমরা ঝরে পড়ার হার দেখি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।

শিক্ষার ব্যবস্থার যে প্রতিশ্রুতি ছিল–আমরা যদি ৬০-এর দশক থেকে শুরু করি–৫৪ সালে যে যুক্তফ্রন্ট গঠনের যে ২১ দফা, সেখান থেকে শুরু করে ৬৯ সালের যে ১১ দফা, স্বাধীনতার পর যতগুলো শিক্ষা আন্দোলন হয়েছে, সেগুলোর যে বিভিন্ন দাবি–সে সবগুলো দাবির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে এখনকার শিক্ষাব্যবস্থা চলছে। প্রত্যেকটার মধ্যেই এ দাবিটা ছিল–সবার জন্য শিক্ষার অভিন্ন ব্যবস্থা করতে হবে এবং রাষ্ট্রের সে দায়িত্ব নিতে হবে। দাবিগুলো ছিল বলেই সেটার প্রতিফলন আমরা সংবিধানে দেখি। দাবিগুলো যারা করেছিলেন–সে সময় অনেকে রাজনীতিবিদ ছিলেন বা ছাত্র সংগঠনে যুক্ত ছিলেন, তারা অনেকেই পরে মন্ত্রী হয়েছেন; কিন্তু ওই দাবিগুলো আর পূরণ হয়নি।

শৈশব থেকে শুরু করে শিক্ষাটা কখনো বোঝা হতে পারে না। আমাদের এখানে ব্যয়বহুল হোক, অব্যয়বহুল হোক–সবখানে আমরা দেখি, যারা নীতিনির্ধারণ করে তাদের মধ্যে এরকম একটা ধারণা–যত বেশি বই, যত বেশি বোঝা চাপানো যাবে শিশুদের উপর, সেই স্কুল তত উচ্চ মানসম্পন্ন। এর চেয়ে ভুল আর কিছু হতে পারে না। শিশুদের থেকে শুরু করে প্রাথমিক-মাধ্যমিক পর্যায়ে, আসলে সকল পর্যায়েই শিক্ষাটা হওয়া উচিত একটা আনন্দের বিষয়। আর শিক্ষার কাজ, শিক্ষকদের কাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে–শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করা, আনন্দ তৈরি করা এবং প্রশ্ন তৈরি করা। যাতে সে নতুন নতুন বিষয়ে অনুসন্ধানে নিজে থেকে আগ্রহী হয়, সে যেন আরও বই পড়তে চায়, সে যেন আরও জানতে চায়। আমাদের লেখাপড়ার সিস্টেমটাই এরকম–খুব ব্যয়বহুল কিন্ডারগার্টেন কিংবা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে শুরু করে মাদ্রাসা পর্যন্ত সবজায়গায় আমরা দেখি মুখস্ত করানো, গাইড বই পড়ানো। এগুলো একেকটা বোঝা হিসেবে আসে এবং শিক্ষার বোঝাটা বলা যায় শিক্ষার প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলে। আমরা যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে ভয় দেখি, পরীক্ষা নিয়ে ভয় দেখি কিংবা তাদের মধ্যে কোনো রকমে পাস করার প্রবণতা দেখি, নোট বইয়ের প্রতি আগ্রহ দেখি, গাইড বইয়ের প্রতি আগ্রহ দেখি; এগুলোর প্রধান কারণ হচ্ছে–প্রধানত, শিক্ষার কোনো অভিন্ন অবকাঠামো নাই; দ্বিতীয়ত, অভিন্ন কোনো সিলেবাস নাই; আর তৃতীয়ত, কাঠামোটাই এমন যে, শিক্ষার্থী ভয় পেয়ে যায়, বোঝা সৃষ্টি হয়। এটা থেকে পুরোপুরি শিক্ষাব্যবস্থাকে মুক্ত না করা পর্যন্ত আমাদের উপায় নাই।

ঢাকাপ্রকাশ: আমরা অনেক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছি, এই শিক্ষাব্যবস্থা কি আসলে আমাদের সংস্কৃতি থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে?

আনু মুহাম্মদ: আমাদের সংস্কৃতি বলে তো কোনো স্থির জিনিস নাই। সংস্কৃতিরও তো পরিবর্তন হয়; কিন্তু প্রধান বিষয় হচ্ছে–তার যে সামাজিক দায়, একজন শিশু নাগরিক হিসেবে যেভাবে বড় হয়, মানুষ হিসেবে তার মধ্যে যেটা হওয়া উচিত বলে মনে করি, প্রাকৃতিকভাবে যেটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে আছে, সেটা হচ্ছে তার মধ্যে পরিপার্শ্ব সম্পর্কে একটা দায় সৃষ্টি হয়। প্রথমত পরিবার, তারপর সমাজ, তারপর রাষ্ট্র, এরপর বিশ্ব। আশপাশের মানুষ, তার প্রাণ-প্রকৃতি–এগুলোর সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সেই সম্পর্ক তৈরি করার মধ্য দিয়ে তার একটা দায় তৈরি হয়, দায়-দায়িত্ববোধ তৈরি হয়; কিন্তু তাকে যদি ছোটবেলা থেকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, তাকে আত্মকেন্দ্রিক বানানো হয়। যে কোনোভাবে টাকা-পয়সা কীভাবে পাওয়া যাবে, কিংবা সমাজের মধ্যে তার একটা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠা হবে–সেখানে সে প্রাণ-প্রকৃতি সম্পর্কে জানে না, মানুষ সম্পর্কে তার কোনো দায় নাই, সমাজ সম্পর্কে জানে না বা সমাজ সম্পর্কে কোনো দায় নাই।

আমরা দেখি যে, অভিভাবকদের মধ্যেও এ প্রবণতা অনেকের আছে, যারা সন্তানদের যতটা সম্ভব আত্মকেন্দ্রিক করতে চেষ্টা করে, স্বার্থপর হতে চেষ্টা করে; কিন্তু শিক্ষা তো এটা হওয়া উচিত না। তার ফলে দেখা যায়–ইংলিশ মিডিয়াম, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা এগুলোর প্রধান প্রবণতাই হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে, সে যে দেশের মানুষ সেখান থেকে কত বিচ্ছিন্নতা তৈরি করা যায়। সেখানকার কিছু সম্পর্কে তার ধারণা নাই। এমনকি সে যে কবিতা পড়ে, গল্প পড়ে, যে কাহিনি পড়ে, প্রবাদ পড়ে, ইতিহাস-ভূগোল পর্যন্ত, সমাজ সম্পর্কে সে যে পড়াশোনা করে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নাই। এরকম একটা প্রজন্ম যদি হয় যে, বাংলাদেশে সে আউটসাইডার, বহিরাগত; সে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুই জানে না। বাংলাদেশকে বাইরে থেকে দেখে এবং বাংলাদেশকে দেখে একটা শাসকের দৃষ্টি থেকে–ঔপনিবেশিক প্রভুদের সন্তানেরা যেভাবে দেখত। সেটা তো বড় বিপদের কথা, ভবিষ্যতের জন্য একটা বড় বিপর্যয়ের বিষয় এবং যে সন্তানেরা এভাবে বড় হচ্ছে, এটা তাদের জন্যও একটা দুঃখজনক অবস্থা। কারণ সে আনন্দটা পাচ্ছে না এবং সে সম্পর্কটা তৈরি করতে পারছে না অন্যদের সঙ্গে। চারদিকে প্রাণশক্তির যে অনেক উৎস আছে, সেগুলো থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে।

(চলবে)

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (পর্ব ২)

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (পর্ব ৩)

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (শেষ পর্ব)

Header Ad
Header Ad

মেধাসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে মেধাসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) গণমাধ্যমে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "একটি বৈষম্যহীন, উদ্ভাবনী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ এবং উদ্ভাবনের পরিবেশ তৈরি করেই আমরা এগিয়ে যেতে পারি।"

তিনি জানান, 'আইপি অ্যান্ড মিউজিক: ফিল দ্য বিট অব আইপি'—এ বছরের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, যা সৃজনশীলতার সঙ্গে প্রযুক্তির যোগসূত্র তুলে ধরে। সংগীতকে তিনি "হৃদয়ের ভাষা" আখ্যা দিয়ে বলেন, "এটি কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতাকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার শক্তিশালী হাতিয়ার।"

ড. ইউনূস আরও বলেন, "বাংলাদেশের সংগীতশিল্পীরা লোকগান থেকে আধুনিক ধারায় নানাভাবে নিজেদের প্রতিভা প্রকাশ করে বিশ্বকে মুগ্ধ করছেন। এ শিল্পে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের মূল্যায়নের মাধ্যমে একটি অর্থনৈতিক গতিশীলতা সৃষ্টি সম্ভব।"

তিনি মনে করেন, শিল্প ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অগ্রগতি যেমন সম্ভব, তেমনি প্রয়োজন মেধাসম্পদ আইন ও নীতির কার্যকর প্রয়োগ, যাতে শিল্পীদের সৃজনশীলতা সুরক্ষিত থাকে এবং নতুন প্রজন্ম উদ্ভাবনে উৎসাহিত হয়।

বাণীর শেষাংশে তিনি বলেন, "ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এই সরকার উদ্ভাবনী শক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে একটি টেকসই বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"

উল্লেখ্য, প্রতি বছর ২৬ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস’ উদযাপন করা হয়, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং মেধাসম্পদের সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি।

Header Ad
Header Ad

বেনাপোলে ৬ নারী ছিনতাইকারী গ্রেফতার

বেনাপোলে ৬ নারী ছিনতাইকারী গ্রেফতার। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

যশোরের বেনাপোলে প্রতারণার জালে ফেলে এক নারীর কাছ থেকে স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে ৬ নারী ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকাল ৫ টার দিকে বেনাপোল পৌরসভার দিঘিরপাড় থেকে  স্থানীয় জনতা ধরে ৬ নারীকে পুলিশে সোপর্দ করে।

গ্রেফতারকৃত নারীরা হলেন- ব্রাক্ষনবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধরমন্ডল গ্রামের শিপনের স্ত্রী সাহানা আক্তার, ফিরোজের মেয়ে  ইভা আক্তার, ইয়াসিনের স্ত্রী সুলতানা খাতুন, পলাশের স্ত্রী মোর্শেদা, মালিলের স্ত্রী রাবেয়া ও জুয়েলের স্ত্রী নারগিস বেগম।

বেনাপোল পোর্টথানা পুলিশের উপপরিদর্শক(এসআই) পবিত্র বিশ্বাস জানান, বেনাপোল পৌরসভার দিঘিরপাড় গ্রামের এক গৃহবধূ বেনাপোল বাজার থেকে ইজিবাইক চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় পথিমধ্যে বোরকা পরা ৬ নারী ঐ ইজিবাইকে উঠে তাকে জিম্মি করে ফেলে। এক পর্যায়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ভুক্তভোগীর চিৎকার দেয়। এসময় পথচারীরা এগিয়ে এসে ছিনতাইকারীদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করে।  এরা পেশাদার প্রতারক ও ছিনতাইকারী জানায় পুলিশ।

Header Ad
Header Ad

‘সংস্কার না নির্বাচন’ এই খেলা বাদ দিয়ে বিচার করুন: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ছবি: সংগৃহীত

"সংস্কার না নির্বাচন—এই খেলা বাদ দিয়ে আগে বিচার নিশ্চিত করুন," বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।

ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন—জুলাই, পিলখানা ও শাপলা চত্বরের ঘটনাগুলো গণহত্যা, যার বিচার না হলে দেশে কোনো ধরনের নির্বাচন বা সংস্কার অর্থহীন হয়ে পড়ে।

সারজিস আলম বলেন, "বর্তমান সরকারের বৈধতা শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে অন্য কোনো বিষয় প্রাসঙ্গিক নয়।" তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি ২০২৪ সালের আগস্টে পূরণ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি।

আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সারজিস। তিনি বলেন, “আমরা যখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি করি, তারা পশ্চিমাদের অবস্থানের কথা বলে। কিন্তু শাপলা, পিলখানা বা জুলাইয়ের ঘটনায় যখন রক্ত ঝরল, তখন পশ্চিমারা কোথায় ছিল?”

তিনি আরও হুঁশিয়ার করে বলেন, “এই প্রজন্মের আবেগ নিয়ে খেলবেন না। এই প্রজন্ম ক্ষমতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কাউকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাতে পিছপা হবে না।”

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন—আপ বাংলাদেশের সংগঠক আলী আহসান জুনায়েদ, ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি শেখ মাহবুবুর রহমান ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

সমাবেশ থেকে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো-

১. আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাহী আদেশ, আদালতের রায় ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

২. শাপলা চত্বরের ঘটনার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহায়তায় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে শহীদদের তালিকা প্রকাশ ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে;

৩. পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে হবে

৪. দেশের সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচারের বিষয়ে স্পষ্ট ধারা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

মেধাসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বেনাপোলে ৬ নারী ছিনতাইকারী গ্রেফতার
‘সংস্কার না নির্বাচন’ এই খেলা বাদ দিয়ে বিচার করুন: সারজিস আলম
যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার মধ্যেই মস্কোয় গাড়িবোমা হামলায় রুশ জেনারেল নিহত
পোপ ফ্রান্সিসকে শেষ বিদায় জানাতে রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'বি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন
পাকিস্তানে বোমা বিস্ফোরণে নিরাপত্তা বাহিনীর ৪ সদস্য নিহত
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
নওগাঁয় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার ১
শিগগিরই স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করবে সরকার: প্রেস সচিব
টাঙ্গাইলে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মাছ ব্যবসায়ী খুন
সৌদিতে মক্কার কাছেই জেনিফার লোপেজের নাচ-গান, ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে, যা বলল জাতিসংঘ
হবিগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
ময়ূখ রঞ্জনকে ‘গাধা’ বললেন অভিনেতা ঋত্বিক!
পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান আসামি মেহেরাজ ৫ দিনের রিমান্ডে
ভারতীয় সেনার গুলিতে লস্করের শীর্ষ কমান্ডার আলতাফ লালি নিহত
ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা ‘সর্বাত্মক যুদ্ধে’ রূপ নিতে পারে: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ
বাইক দুর্ঘটনায় প্রেমিক-প্রেমিকা নিহত