বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (পর্ব ১)

বাজারের উপর ছেড়ে দিলে কখনো অভিন্ন শিক্ষা হবে না

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সম্প্রতি ঢাকাপ্রকাশ’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন দেশের শিক্ষানীতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম এবং করোনাকালের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহেরীন আরাফাত। আজ প্রকাশিত হলো সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব

ঢাকাপ্রকাশ: অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, আমরা এখনই প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরগুলোতে একমুখী শিক্ষা করতে পারি কিনা। একমুখী শিক্ষার বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

আনু মুহাম্মদ: প্রথমেই একমুখী শিক্ষার অর্থটা খেয়াল করতে হবে। সবার কাছে তো এর অর্থ একরকম নয়। আমরা যতদূর দেখছি, বাংলাদেশে সর্বশেষ শিক্ষানীতি হয়েছিল ২০১০ সালে। সেখানেই প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছিল যে, একমুখী শিক্ষা তারা করবে। বাস্তবে তারা যেটাকে একমুখী শিক্ষা দাবি করছে, তার সঙ্গে একমুখী শিক্ষার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি যেভাবে বুঝি, একমুখী শিক্ষার মানে হলো অভিন্ন শিক্ষা। একটা দেশের নাগরিক হিসেবে শিশুকাল থেকে শুরু করে তার যে শিক্ষাগ্রহণ প্রক্রিয়া, তাতে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। সবাই যে একরকম করবে, এক রকম ফলাফল থাকবে বা সবার একই দিকে মনোযোগ থাকবে তা নাও হতে পারে; কিন্তু তার জন্য অভিন্ন একটা পদ্ধতি রাখতে হবে।

শিশুরা একেকজন একেকমানের পড়াশোনা করবে, একক ধারায় পড়াশোনা করবে–এটা সমাজে যে বৈষম্যটা আছে, তা আরও বাড়ানো বা একটা বিশাল অংশকে পঙ্গু করে ফেলার মতো। যেমন–আমরা যদি চিন্তা করি যে, বর্তমান সময়ে কী ধরনের শিক্ষা চলছে–একটা শিক্ষা আমরা দেখি সরকারি প্রাথমিক স্কুল, সরকারি মাধ্যমিক স্কুল পাশাপাশি আমরা দেখছি কিন্ডারগার্টেন–এর মধ্যে খুবই উচ্চ ব্যয়বহুল আছে, আবার সাধারণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে কিন্তু ব্যয়বহুল নয় এমনও আছে। মানের দিক থেকে আকাশ-পাতাল তফাৎ। আমরা দেখছি মাদ্রাসা শিক্ষা আছে। মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যেও দুটো প্রধান ধরন আছে–একটাতে খুবই সাধারণভাবে পড়াশোনা হয়, গরিব ছেলে-মেয়েরা পড়ে। আরেকটা হলো–ব্যয়বহুল ইংলিশ মিডিয়াম ক্যাডেট মাদ্রাসা, সেটাতে উচ্চবিত্তরা পড়ে। সাধারণ মাদ্রাসায় যে ধরনের পড়াশোনা হয়, সেদিক থেকে ইংলিশ মাদ্রাসা বা ক্যাডেট মাদ্রাসাগুলোর যে পড়াশোনার মান, তাদের যে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, সাজ-সরঞ্জাম কিংবা বইপত্র, তাদের যে ইনটেনসিভ কেয়ার সেটার তুলনাই হয় না। দুটোর মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। এদিকে আবার ক্যাডেট কলেজ বলে আরেকটা জিনিস আছে। এই যে বহুধরনের শিক্ষা–এর মধ্যে যে ছেলে-মেয়েরা বড় হচ্ছে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গীও ভিন্ন। মাদ্রাসায় যে পড়ছে সে এক ধরনের বিশ্বদৃষ্টি নিয়ে পড়ছে, আবার ক্যাডেট মাদ্রাসা যেগুলো, সেখানে তারা ইংলিশ ও আরবি শিখছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নাই। আবার কিন্ডারগার্টেনের যে ইংলিশ মিডিয়াম, সেখানে বাংলাদেশ থেকে যতদূরে থাকা যায়, তত চেষ্টা। সেগুলোর ব্যাপারে সরকারের কোনো কাঠামো নাই, নজরদারি নাই। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সবচেয়ে অবহেলিত। যদিও সেটা একটা স্ট্যান্ডার্ড জায়গায় যাওয়া উচিত ছিল, সেটাও নাই। এই যে বহু ধরনের শিক্ষা, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষা হওয়া উচিত–শিশুরা জন্ম থেকে শুরু করে তাদের জগৎকে জানা-বোঝা, নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো, ভাষার সঙ্গে পরিচিত হওয়া, গণিত-ইতিহাস-ভূগোল-সমাজ এগুলো সম্পর্কে তার ধারণা তৈরি হওয়া, তার শরীর সম্পর্কে তার ধারণা তৈরি হওয়া। এগুলো দিয়েই সাধারণ বা প্রাথমিক ভিত্তিটা মানুষের তৈরি করা দরকার। সবার মধ্যে সমান সুযোগ থাকলে তখন বোঝা যাবে কে, কোন বিষয়ে মনোযোগ পাচ্ছে। তাকে যদি বাধ্যতামূলকভাবে এক ধরনের শিক্ষার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে তাকে আমরা একটা গণ্ডিতে বন্দি করে ফেলছি।

আবার ব্যয়ের তারতম্যের কারণে, যার টাকা আছে সে উচ্চমানের লেখাপড়া করবে এবং বাংলাদেশ থেকে ক্রমান্বয়ে বিচ্ছিন্ন হতে থাকবে। আর যার টাকা নাই সে হীনমন্যতায় ভুগবে এবং সে অদক্ষ, অক্ষম হয়ে থাকবে। এটা তো জাতীয় পর্যায়ে নাগরিকদের প্রতি বড় ধরনের একটা বৈষম্য এবং বেঈমানি এক ধরনের। বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিশ্রুতি আছে যে, সবার জন্য শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে। অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা যদি করতে হয়, তাহলে এর জন্য রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। বাজারের উপর ছেড়ে দিলে কখনো অভিন্ন শিক্ষা হবে না। কারণ বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ার মানে–টাকার শক্তি দিয়ে প্রকাশিত হবে সেটা। যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রকাশিত হবে। নানা ধরনের মতাদর্শ, নানা ধরনের আগ্রহ, নানা রকম অগ্রাধিকার দ্বারা শিক্ষা নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়বে। শিক্ষা থাকতে হবে রাষ্ট্রের দায়িত্বে, এখানে কোনো আর্থিক বিষয় থাকা উচিত না। আর্থিক কোনোরকম চিন্তা, টাকা-পয়সার চিন্তা যদি কোনোরকম অভিভাবককে তাড়িত করে তাহলে তাদের পক্ষে সন্তানের লেখাপড়ার যে চাহিদা পূরণ সম্ভব না। আমরা অনেক ছেলে-মেয়ের কথা জানি, যারা অর্থের অভাবে মেধা থাকা সত্ত্বেও সফল হতে পারেনি। করোনাকালে অনেকের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে এবং করোনা ছাড়াও আমরা ঝরে পড়ার হার দেখি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।

শিক্ষার ব্যবস্থার যে প্রতিশ্রুতি ছিল–আমরা যদি ৬০-এর দশক থেকে শুরু করি–৫৪ সালে যে যুক্তফ্রন্ট গঠনের যে ২১ দফা, সেখান থেকে শুরু করে ৬৯ সালের যে ১১ দফা, স্বাধীনতার পর যতগুলো শিক্ষা আন্দোলন হয়েছে, সেগুলোর যে বিভিন্ন দাবি–সে সবগুলো দাবির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে এখনকার শিক্ষাব্যবস্থা চলছে। প্রত্যেকটার মধ্যেই এ দাবিটা ছিল–সবার জন্য শিক্ষার অভিন্ন ব্যবস্থা করতে হবে এবং রাষ্ট্রের সে দায়িত্ব নিতে হবে। দাবিগুলো ছিল বলেই সেটার প্রতিফলন আমরা সংবিধানে দেখি। দাবিগুলো যারা করেছিলেন–সে সময় অনেকে রাজনীতিবিদ ছিলেন বা ছাত্র সংগঠনে যুক্ত ছিলেন, তারা অনেকেই পরে মন্ত্রী হয়েছেন; কিন্তু ওই দাবিগুলো আর পূরণ হয়নি।

শৈশব থেকে শুরু করে শিক্ষাটা কখনো বোঝা হতে পারে না। আমাদের এখানে ব্যয়বহুল হোক, অব্যয়বহুল হোক–সবখানে আমরা দেখি, যারা নীতিনির্ধারণ করে তাদের মধ্যে এরকম একটা ধারণা–যত বেশি বই, যত বেশি বোঝা চাপানো যাবে শিশুদের উপর, সেই স্কুল তত উচ্চ মানসম্পন্ন। এর চেয়ে ভুল আর কিছু হতে পারে না। শিশুদের থেকে শুরু করে প্রাথমিক-মাধ্যমিক পর্যায়ে, আসলে সকল পর্যায়েই শিক্ষাটা হওয়া উচিত একটা আনন্দের বিষয়। আর শিক্ষার কাজ, শিক্ষকদের কাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে–শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করা, আনন্দ তৈরি করা এবং প্রশ্ন তৈরি করা। যাতে সে নতুন নতুন বিষয়ে অনুসন্ধানে নিজে থেকে আগ্রহী হয়, সে যেন আরও বই পড়তে চায়, সে যেন আরও জানতে চায়। আমাদের লেখাপড়ার সিস্টেমটাই এরকম–খুব ব্যয়বহুল কিন্ডারগার্টেন কিংবা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে শুরু করে মাদ্রাসা পর্যন্ত সবজায়গায় আমরা দেখি মুখস্ত করানো, গাইড বই পড়ানো। এগুলো একেকটা বোঝা হিসেবে আসে এবং শিক্ষার বোঝাটা বলা যায় শিক্ষার প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলে। আমরা যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে ভয় দেখি, পরীক্ষা নিয়ে ভয় দেখি কিংবা তাদের মধ্যে কোনো রকমে পাস করার প্রবণতা দেখি, নোট বইয়ের প্রতি আগ্রহ দেখি, গাইড বইয়ের প্রতি আগ্রহ দেখি; এগুলোর প্রধান কারণ হচ্ছে–প্রধানত, শিক্ষার কোনো অভিন্ন অবকাঠামো নাই; দ্বিতীয়ত, অভিন্ন কোনো সিলেবাস নাই; আর তৃতীয়ত, কাঠামোটাই এমন যে, শিক্ষার্থী ভয় পেয়ে যায়, বোঝা সৃষ্টি হয়। এটা থেকে পুরোপুরি শিক্ষাব্যবস্থাকে মুক্ত না করা পর্যন্ত আমাদের উপায় নাই।

ঢাকাপ্রকাশ: আমরা অনেক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছি, এই শিক্ষাব্যবস্থা কি আসলে আমাদের সংস্কৃতি থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে?

আনু মুহাম্মদ: আমাদের সংস্কৃতি বলে তো কোনো স্থির জিনিস নাই। সংস্কৃতিরও তো পরিবর্তন হয়; কিন্তু প্রধান বিষয় হচ্ছে–তার যে সামাজিক দায়, একজন শিশু নাগরিক হিসেবে যেভাবে বড় হয়, মানুষ হিসেবে তার মধ্যে যেটা হওয়া উচিত বলে মনে করি, প্রাকৃতিকভাবে যেটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে আছে, সেটা হচ্ছে তার মধ্যে পরিপার্শ্ব সম্পর্কে একটা দায় সৃষ্টি হয়। প্রথমত পরিবার, তারপর সমাজ, তারপর রাষ্ট্র, এরপর বিশ্ব। আশপাশের মানুষ, তার প্রাণ-প্রকৃতি–এগুলোর সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সেই সম্পর্ক তৈরি করার মধ্য দিয়ে তার একটা দায় তৈরি হয়, দায়-দায়িত্ববোধ তৈরি হয়; কিন্তু তাকে যদি ছোটবেলা থেকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, তাকে আত্মকেন্দ্রিক বানানো হয়। যে কোনোভাবে টাকা-পয়সা কীভাবে পাওয়া যাবে, কিংবা সমাজের মধ্যে তার একটা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠা হবে–সেখানে সে প্রাণ-প্রকৃতি সম্পর্কে জানে না, মানুষ সম্পর্কে তার কোনো দায় নাই, সমাজ সম্পর্কে জানে না বা সমাজ সম্পর্কে কোনো দায় নাই।

আমরা দেখি যে, অভিভাবকদের মধ্যেও এ প্রবণতা অনেকের আছে, যারা সন্তানদের যতটা সম্ভব আত্মকেন্দ্রিক করতে চেষ্টা করে, স্বার্থপর হতে চেষ্টা করে; কিন্তু শিক্ষা তো এটা হওয়া উচিত না। তার ফলে দেখা যায়–ইংলিশ মিডিয়াম, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা এগুলোর প্রধান প্রবণতাই হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে, সে যে দেশের মানুষ সেখান থেকে কত বিচ্ছিন্নতা তৈরি করা যায়। সেখানকার কিছু সম্পর্কে তার ধারণা নাই। এমনকি সে যে কবিতা পড়ে, গল্প পড়ে, যে কাহিনি পড়ে, প্রবাদ পড়ে, ইতিহাস-ভূগোল পর্যন্ত, সমাজ সম্পর্কে সে যে পড়াশোনা করে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নাই। এরকম একটা প্রজন্ম যদি হয় যে, বাংলাদেশে সে আউটসাইডার, বহিরাগত; সে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুই জানে না। বাংলাদেশকে বাইরে থেকে দেখে এবং বাংলাদেশকে দেখে একটা শাসকের দৃষ্টি থেকে–ঔপনিবেশিক প্রভুদের সন্তানেরা যেভাবে দেখত। সেটা তো বড় বিপদের কথা, ভবিষ্যতের জন্য একটা বড় বিপর্যয়ের বিষয় এবং যে সন্তানেরা এভাবে বড় হচ্ছে, এটা তাদের জন্যও একটা দুঃখজনক অবস্থা। কারণ সে আনন্দটা পাচ্ছে না এবং সে সম্পর্কটা তৈরি করতে পারছে না অন্যদের সঙ্গে। চারদিকে প্রাণশক্তির যে অনেক উৎস আছে, সেগুলো থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে।

(চলবে)

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (পর্ব ২)

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (পর্ব ৩)

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (শেষ পর্ব)

Header Ad
Header Ad

আখাউড়ায় ট্রেনের ছাদে টিকটক বানাতে গিয়ে দুর্ঘটনা, নিহত ২

ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় চলন্ত ট্রেনের ছাদে টিকটক ভিডিও বানানোর সময় নিচে পড়ে আহত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুইজনে।

আজ বুধবার (২ এপ্রিল) ঈদের তৃতীয় দিনে উপজেলার গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে রেলব্রিজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার কাইয়ুম (২৩) ও কসবা উপজেলার তারেক। এদের মধ্যে কাইয়ুম ঘটনাস্থলেই মারা যান, আর তারেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদে কয়েকজন টিকটক ভিডিও বানাচ্ছিলেন। ট্রেনটি রেলব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে ডিসের তারে পেঁচিয়ে চারজন নিচে পড়ে যান। এতে ঘটনাস্থলেই কাইয়ুমের মৃত্যু হয়। বাকিদের উদ্ধার করে কসবা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারেক মারা যান।

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছমিউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ভারতের ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

টিপরা মোথার প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোৎ মাণিক্য। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, ত্রিপুরার এক রাজনীতিবিদ ‘বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার’ আহ্বান জানিয়েছেন। এই বিতর্কিত মন্তব্যটি করেছেন ত্রিপুরার দ্বিতীয় বৃহত্তম দল টিপরা মোথার প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোৎ মাণিক্য।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মাণিক্য পরামর্শ দিয়েছেন, দিল্লি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ স্থাপন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘শত শত কোটি টাকা খরচ’ না করে বরং বাংলাদেশের সেই অংশগুলো দখল করে নিক, যা ‘সব সময়ই ভারতের অংশ হতে চেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জাতীয় স্বার্থ এবং তাদের মঙ্গলের জন্য এটি ব্যবহার করা উচিত।’ পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা যদি বাংলাদেশকে ভেঙে নিজেদের জন্য সমুদ্রপথ তৈরি করি, তাহলে সেটা হয়তো আরও সুবিধাজনক হবে। কারণ, এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং এবং ব্যয়বহুল প্রকৌশল পরিকল্পনায় বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা খরচের প্রয়োজন পড়বে না।’

ত্রিপুরার এই নেতা দাবি করেন, চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চল আদিকাল থেকেই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাসের স্থান ছিল এবং ১৯৪৭ সাল থেকেই তারা ভারতের অংশ হতে চেয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে লাখ লাখ ত্রিপুরি, গারো, খাসি ও চাকমা জনগোষ্ঠী রয়েছে, যারা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ভূমিতে অত্যন্ত দুরবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করছে। তাদের স্বার্থ রক্ষা করেই ভারতের জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করা উচিত।

প্রদ্যোৎ মাণিক্যের এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিলেও তিনি নিজের অবস্থানে অবিচল রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনোই আমাদের বন্ধু ছিল না... তাই আসুন আমরা বোকা না হই।’ তার মতে, ভারতে বাংলাদেশের একমাত্র ‘বন্ধু’ ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাস করি এবং প্রতিদিন স্পষ্ট ও উপস্থিত বিপদ দেখতে পাই। আমি বুঝতে পারছি, আপনার বামপন্থী ঝোঁক এটিকে কঠিন করে তোলে... তবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও উপলব্ধি করুন।’

প্রদ্যোৎ মাণিক্যের এই মন্তব্য মূলত আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বক্তব্যের সম্প্রসারণ। বিশ্বশর্মা ড. ইউনূসের মন্তব্যকে ‘আপত্তিজনক’ ও ‘তীব্র নিন্দনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রেল ও সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে ল্যান্ডলকড (স্থলবেষ্টিত)। সমুদ্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের কোনো উপায় নেই। আমরাই এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।’

এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ‘এই মন্তব্যটি ভারতের কৌশলগত চিকেনস নেক করিডরের সঙ্গে জড়িত দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতার ন্যারেটিভটিকেই তুলে ধরে।’ তিনি বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ নিশ্চিত করতে বিকল্প সড়ক ও রেলপথ তৈরির কাজ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

চট্টগ্রাম বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বশর্মা বলেন, এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বন্দরই নয়, বরং দিল্লি এটিকে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় পণ্য পরিবহনের জন্য একটি ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে বিবেচনা করছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতা বন্দর থেকে আগরতলায় পরিবহনের খরচ প্রতি টনে ৬,৩০০ থেকে ৭,০০০ টাকা। তবে চট্টগ্রাম থেকে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহন খরচ অনেক কম।

এই বিতর্কিত মন্তব্যের পর ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।

Header Ad
Header Ad

বিএনপি কখনোই নির্বাচনের পরে সংস্কারের কথা বলেনি: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি নির্বাচন আগে না সংস্কার—এমন বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়ে জনগণের মধ্যে ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, বিএনপি কখনোই নির্বাচনের পরে সংস্কারের কথা বলেনি।

বুধবার (২ এপ্রিল) দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচারব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে। তবে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে কোনো সংস্কার হলে বিএনপি তা মেনে নেবে না।

তিনি আরও বলেন, দেশে কোনো সংঘাতের শঙ্কা নেই। প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত প্রকাশ করবে এবং জনগণের সামনে নিজেদের নীতিমালা উপস্থাপন করবে। পরে জনগণ তাদের উপযুক্ত নেতৃত্ব বেছে নেবে—এটাই গণতন্ত্রের প্রকৃত রূপ। তাই নির্বাচন জরুরি।

সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সংস্কার প্রস্তাবের মিল রয়েছে। তবে সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি দল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধরে রাখলে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম থাকে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ডানপন্থি রাজনীতির উত্থান হচ্ছে এবং তারা বলছেন যে গণতন্ত্র এখন হুমকির মুখে। যদি কোনো দল স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে, তাহলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে। তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।

বিএনপির ভেতরে কিছু ব্যক্তি অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কারসহ কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে এসব ঘটনা অনেকটাই কমে এসেছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আখাউড়ায় ট্রেনের ছাদে টিকটক বানাতে গিয়ে দুর্ঘটনা, নিহত ২
বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ভারতের ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের
বিএনপি কখনোই নির্বাচনের পরে সংস্কারের কথা বলেনি: মির্জা ফখরুল
বিরামপুরে জমি নিয়ে বিরোধ, চাঁদা দাবি ও হামলার ঘটনায় আটক ৫
হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা ভ্যাল কিলমার আর নেই
ময়মনসিংহে সিনেমা হলে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে দর্শকদের ভাঙচুর
সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু
ঈদের আনন্দে যমুনার দুর্গম চরে গ্রাম-বাংলার ঘুড়ি উৎসব, আনন্দে মেতে উঠে বিনোদনপ্রেমীরা!
ইমামকে ঘোড়ার গাড়িতে রাজকীয় বিদায়, দেওয়া হলো ৯ লাখ টাকার সংবর্ধনা
লন্ডনে একসঙ্গে দেখা গেলো সাবেক চার আওয়ামী মন্ত্রীকে
ঢাকায় ফিরছে ঈদযাত্রীরা, অনেকে ছুটছেন শহরের বাইরে
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আবারও সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৭
বিটিভিতে আজ প্রচারিত হবে ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা, নেই যানজটের চিরচেনা দৃশ্য
মাদারীপুরে তিন মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত ২
থানায় জিডি করলেন ভোক্তা অধিকারের জব্বার মন্ডল
রাশিয়া আমাদের চিরকালের বন্ধু, কখনো শত্রু নয়: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান খালেদা জিয়ার
দ্বিতীয় দফায় মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা পাঠালো বাংলাদেশ