ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
সাড়ে ৪ হাজার বন্দির জন্য ২ ডাক্তার!
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) ৪ হাজার ৫৯৫ বন্দির জন্য কারা হাসপাতালে রয়েছেন মাত্র দুইজন চিকিৎসক। এ ছাড়া শয্যা রয়েছে ১৭২টি। ডাক্তার, নার্সসহ জনবল কম থাকায় বন্দিদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। লোকবলের অভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না যন্ত্রপাতিও।
টেকনিশিয়ান না থাকার কারণে এক বছরেও চালু হয়নি এক্স-রে মেশিন। হাসপাতালের রোগীদের কিছু ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও জনবল সংকটের কারণে রোগীদের দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কারা চিকিৎসক দুজন জানান, কম করে হলেও কারা হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসক দরকার। পাশাপাশি ৫/৭ জন সেবিকা এবং ৩/৪ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান হলে ভালো হয়।
বন্দিদের অনেকের স্ট্রোক থেকে প্যারালাইসিস হয়ে যায়। সেসব রোগীকে থেরাপি দিতে হয়। অথচ কারা হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি মেশিন ও ফিজিওথেরাপিস্ট কোনোটিই নেই। নেই আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনও।
ইউসুফ আহমেদ তুহিন নামে এক বন্দি জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর এ প্রতিবেদককে জানান, কারাগারে বন্দিরা চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মারা যাচ্ছে। মাসের পর মাস, বছরে পর বছর ধরে রয়েছে কারা হাসপাতালের চিকিৎসার সংকট। কারাগারে ভেতরে বহু অনিয়মের ঘটনাও রয়েছে।
কারাগারের একটি সূত্র জানায়, ১৭২ শয্যা চারতলা কারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও ওয়ার্ডের রোগীর জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দুইজন। এ ছাড়া নার্স দুইজন ও ল্যাব টেকনিশিয়ান একজন রয়েছেন। এ দুই চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। সকালে চিকিৎসা নিতে আসা বন্দি রোগীদের লাইন লেগে যায়।
কারা হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান শুভ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, রোগীদের জন্য ওষুধের কোনো সমস্যা নেই। সব ধরনের ওষুধ আমাদের কারা হাসপাতাল থেকে রোগীদের দেওয়া হয়। শুধু কাশিমপুর কারাগারের নারী বন্দি ছাড়া দেশের সব কারাগার থেকে ঢাকা কারাগারে বন্দি রোগীরা আসে চিকিৎসা নিতে। প্রথমে রোগীদের কারা হাসপাতালে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে নিয়মানুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য কারারক্ষীদের পাহারায় তাদের ঢাকার সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু কারা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের পাশাপাশি বাইরে জেলা কারাগার থেকে আসা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এত রোগী অথচ দুইজন চিকিৎসক ও দুইজন নার্স দিয়ে চলেছে কারা হাসপাতাল! আজকে কারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন আনুমানিক ৫৫ জন। রোগীদের ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে হয়।
তিনি বলেন, কারা হাসপাতালে নতুন এক্স-রে মেশিন এক বছর ধরে পড়ে আছে। টেকনিশিয়ান না থাকার কারণে সেটা চালু করা যাচ্ছে না। কম করে হলেও কারা হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসক দরকার। এ ছাড়া ৫/৭ জন নার্স ও ৩/৪ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান হলে ভালো হয়।
এদিকে হাসপাতালে প্যারালাইসিসের রোগী থাকলেও ফিজিওথেরাপি মেশিন ও ফিজিওথেরাপিস্ট নেই বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হক বলেন, ‘জনবল বাড়ানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। টেকনিশিয়ানের অভাবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালে নতুন এক্স-রে মেশিন পড়ে আছে- বিষয়টি আমি জানতাম না। খোঁজ-খবর নিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’
এসএন