নারায়ণগঞ্জে আইভির প্রতিদ্বন্দ্বী কে!
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি। টানা ১৮ বছর নারায়ণগঞ্জে নেতৃত্ব দেওয়া দেশের প্রথম নারী মেয়রের সঙ্গে লড়াই করার মতো কোনো প্রার্থী এখন মাঠে নেই।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড ও দলের সংসদীয় বোর্ডের যৌথ সভায় নৌকার ঝান্ডা তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৬ জানুয়ারি ২০২২।
সেলিনা হায়াৎ আইভি প্রথম নির্বাচন করেন ২০০২ সালে। তখন নারায়ণগঞ্জ ছিল পৌরসভা। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির পর তার এই বিজয় ছিল স্রোতের বিপরীতে। তিনি হারিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন বিএনপির প্রার্থীকে। এরপর আর পেছনে পিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
নির্বাচিত হওয়ার পর উন্নয়নকেই নিজের কাজের একমাত্র ‘দর্শন’ হিসেবে নেন আইভি। নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে তিনি জনগণের মন জয় করে নেন। এই তালিকায় যুক্ত হয়েছিল বিএনপি ঘরনার মানুষও। যে কারণে পরেরবারের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।
২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। তখন ক্ষমতায় নিজের দল আওয়ামী লীগ। মনোয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে তার সঙ্গে শামিল হন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান। আওয়ামী লীগ সমর্থন দেন শামীম ওসমানকে। তার পক্ষ হয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতাই প্রচারে নামেন। এই দুই জনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। ত্রিমুখি লড়ায়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয। আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই ডাকসাইটে প্রার্থীর বিপরীতে আইভি ছিলেন স্বতন্ত্র। স্থানীয় আওয়ামী লীগের খুব অল্পসংখ্যক নেতা- কর্মী ছিলেন তার সঙ্গে। কিন্তু নির্বাচনের আগের রাতে বিএনপি তাদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নিলে নির্বাচনের চিত্র পাল্টে যায়। আইভির পাল্লা ভারী হয়ে উঠে। বিজয়ও তখন এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়। নির্বাচনে সেলিনা হায়াত শামীম ওসমানকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলন এক লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে।
প্রথমবার সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর উন্নয়নের ধারার সঙ্গে বেদখল হয়ে যাওয়া সিটি করপোরেশনের জমি দখলমুক্ত করতে থাকেন। জনগণের মাঝে তার অবস্থান আরও পোক্ত হয়।
২০১৬ সালের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আইনজীবী শাখাওয়াত হোসেন। আইভি পান নৌকা প্রতীক। এটি ছিল তার প্রথম নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন। কিন্তু এই মার্কা পেতে তাকে অনেক প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল। তৃণমুল থেকে যাদের নাম গিয়েছিল কেন্দ্রে, সেখানে তার নাম ছিল না। তারপরও কেন্দ্র তার ওপর আস্থা রাখে। এবারও আইভি জয়ী হন সত্তর হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে।
সময় যত গড়িয়েছে আইভির কাজের গতি বেড়েছে। শক্ত হয়েছে পায়ের তলার মাটিও। এবারও তিনি যাতে নৌকা প্রতীক না পান সে জন্য ওসমান পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল। বিভিন্ন সভা সমাবেশে শামীম ওসমানের সঙ্গে তার বড় ভাই আরেক সাংসদ সেলিম ওসমানও কথা বলেছেন। প্রতিবার আইভি সে সব কথার কড়া জবাব দিয়েছেন।
এবারে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন আরও তিনজন। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা ও সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল। কিন্তু আওয়ামী লীগ আস্থা রেখেছে আইভির ওপরই।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতো, নৌকা ও ধানের শীষকে মোকাবেলা করে আসা আইভির সামানে এবার তেমন শক্ত কোনো প্রতিপক্ষ নেই। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন তার পক্ষে নিশ্চিত। রাজনৈতিক অপর প্রতিপক্ষ বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে আইভির বড় প্রতিপক্ষ ওসমান পরিবার কী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় সেটিই এখন দেখার বিষয়।
গতবারও ওসমান পরিবার প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করতে পারেনি। এবার নৌকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নামার কোনো সম্ভাবনাও নেই। আপাতদৃষ্টিতে এবারের নির্বাচনে আইভির প্রতিপক্ষ হিসেবে কোন ডাকসাইটে প্রার্থী নেই।
এমপি/এপি/এএন