দুদকের জালে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো সচল করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা সচল রেখেছে দুদক। পাশাপাশি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মতো নেতাদের মামলাতে গতি এনেছে দুদক।
বিএনপি নেতৃত্বের অভিযোগ, সরকার চলমান আন্দোলন বেগবান করতে ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জাতীয়তাবাদী দলের শীর্ষ নেতাদের নতুন করে দুদকের মামলার জালে আটকাতে চাইছে। যদিও এসব মামলা নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি বিএনপির কোনো নেতাই।
দুদক সূত্র জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, রাশেদুজ্জামান মিল্লাতসহ বিএনপির অনেক নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা সচল করা হচ্ছে।
বিএনপির কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে এই সংস্থাকে আমরা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছি না। কারণ এরা সরকারের নির্দেশে কাজ করে।
জানতে চাইলে দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিএনপির কিছু নেতার নামে আগের মামলা রয়েছে। সেসব মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। আর নতুন মামলার বিষয়ে আপাতত কিছু বলতে পরছি না। খোঁজ খবর নিয়ে বলতে হবে। এসময় তিনি এ প্রতিবেদককে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
দুদকের সংশ্লিষ্টরা বলেন, কে খালেদা জিয়া কে তারেক রহমান বা কে বিএনপি বা অন্যদলের নেতা তা দেখার সময় দুদকের নেই। দুদকের কাছে সব মামলাই একই রকম। সবার ক্ষেত্রেই আইন সমান। জানা গেছে, বিএনপির শীর্ষ কিছু নেতার নামে দুদকের গোপনে তদন্ত ও মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বিএনপি'র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুদকের মামলায় বেশ কয়েকজন নেতা জামিনে আছেন। তবে দুদকের মামলার জালে বিএনপির কত জন নেতা রয়েছেন সেই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যায় নি।
জানা যায়, বর্তমানে বিএনপি নেতাদের নামে দুদকের মামলাসহ মোট মামলা সংখ্যা ২ লাখ। আর এসব মামলায় আসামি সংখ্যা ৩৬ লাখের কাছাকাছি। বর্তমান ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে রয়েছেন।
দুদকের মামলাসহ এখনো বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা রয়েছে। তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে বাসা থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে দুদক ও অন্যান্য প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। যদিও তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে প্রায় ১০০ মামলা রয়েছে। তবে তার নামে দুদকে কোনো মামলা নেই বলে দুদকের সংশ্লিষ্টরা জানান।
জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দুদকের মামলাগুলো তদন্ত করেই আদালতে আবেদন করা হয়। শুধু দুদক নয়, যে সমস্ত মামলা আমার কাছে আসে সে মামলাগুলো আমি লড়াই করে থাকি। তা ছাড়া কে বিএনপি নেতা, কে আওয়ামী লীগের নেতা অথবা কে জামায়াতের নেতা সেটা দেখা মুখ্য বিষয় আমার না। আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত নয়।
দুদকের এই আইনজীবী আরও বলেন, বিএনপির যে সকল নেতার নাম আপনি বললেন তাদের মামলার ফাইল আমাদের কাছে রয়েছে। তাদের মামলাগুলো যে শুধু আমিই আইনজীবী হিসেবে লড়াই করি বিষয়টি এমন নয়। আমি অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করি।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলছেন, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে পুরাতন মামলা সচল করার উদ্দ্যেগ নেওয়া হচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতাদের বেছে বেছে আবার নতুন নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে এবং পরিকল্পনা চলছে। গত বছরের শেষের দিকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ২ শতাধিক গায়েবি মামলা দেওয়া হয়। দুদকের মামলাসহ এসব মামলার কোনো ভিত্তি নেই।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক আরও বলেন, সাধারণ মানুষ এখন বলে থাকে দুদক বিএনপি দমনের কমিশনে পরিণত হয়েছে। বিএনপিকে দমনের জন্য একদিকে পুলিশ আর অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন আর আদালতের ওপর ভর করে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের আসল উদ্দেশ্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপির নেতৃত্বে যে আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলনকে গলাটিপে হত্যা করা। এজন্য তারা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে যা মনে চাইছে তাই করছে।
আরইউ/এসএন