রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: টানেলের শেষ প্রান্তে আলো দেখা যাচ্ছে?
চীনা মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আশার আলো দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করার জন্য মিয়ানমারকে প্রস্তাব দেওয়া এবং চীনা মধ্যস্থতায় ২০ জন রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল মিয়ানমার যাওয়ায় প্রত্যাবসন শুরুর সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েরই ভাল বন্ধু। একারণেই চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতা করছে। বেইজিং ও নিউইয়র্কে ইতিমধ্যে দেশটির মধ্যস্থতা ঢাকা-নেপিদোর মধ্যে তিনটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মিয়ানমার পক্ষের ইতিবাচক সাড়া থাকলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলছেন, গত পাঁচ-ছয় মাসে মিয়ানমার পক্ষের ইতিবাচক অবস্থান লক্ষ করা যাচ্ছে। এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে আশা করা যাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত হবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চলতি বছরের শুরুতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
বৃহস্পতিবার (৫ মে) মিয়ানমারে যে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ থেকে গেছে তাদের মধ্যেই ২০ জন রোহিঙ্গা। বাকিরা বাংলাদেশি কর্মকর্তা। ২০ রোহিঙ্গার মধ্যে তিনজন নারীও আছে। এসব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে কি-না সেটা দেখবেন।
বৃহস্পতিবার বিকালেই তারা বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। মূলত প্রত্যাবাসন হলে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের যেখানে রাখা হবে সে স্থানটি পরিদর্শন করেন দলের সদস্যরা।
এর আগে মিয়ানমারকে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। এসব রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার অংশ হিসেবে পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পাইলট প্রকল্পে প্রথম দফায় প্রায় ১ হাজার ১৪০ জনকে নির্বাচন করেছে মিয়ানমার। পাশপাশি ৪২৯ জনের ব্যাপারে আপত্তিও জানিয়ে আসছে মিয়ানমার।
গত ১৫ মার্চ মিয়ানমারের ১৫ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশের টেকনাফে এসে ৪৮০ জনের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে ফেরত গেছে। সংশ্লিষ্টদের আশা, যাচাই-বাছাই করা সেই ১ হাজার ১৪০ জনকে দিয়ে শিগগিরই প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। একারণেই এমন পরিদর্শনের আনুষ্ঠানিকতা।
সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করতে চীন মিয়ানমারকে প্রস্তাব দিয়েছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফরের সময় এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বুধবার (৪ মে) চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমার সরকারপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিউইন গ্যাং বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্কের উন্নয়নের ওপর জোর দেন। চীন বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের আরও বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চায়।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, চীন যেটা করছে সেটা ভারতও করতে পারে। কারণ ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুদেশেরই সম্পর্ক ভাল। কাজেই চীনের মতো ভারতও মধ্যস্থতা করতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে এম হুমায়ুন কবির বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চেষ্টা চলছে। চেষ্টা করে যেতে হবে। মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, চীন-মার্কিন উত্তেজনা এগুলোর উপর বাংলাদেশে হাত নেই।
মিয়ানমারে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট হত্যা-নির্যাতন শুরু হওয়ার পর মাত্র কয়েক মাসে আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১২ লাখেরও বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক আশ্রিত আছেন। তবে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পাশপাশি বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারাও বলছেন, সহায়তা কমে গেলে এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য খাদ্য-আশ্রয় দেওয়া সম্ভব না।
/এএস