ট্যাক্সের নামে খ্রিস্টান কমিশনের কোটি টাকা লোপাট
খ্রিস্টান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি) এর কর্পাস ফান্ডের ৩২ কোটি টাকার বিপরীতে ট্যাক্স দেওয়ার নামে ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন— সিসিডিবি'র চেয়ারম্যান ডেভিড অনিল হালদার, এডভিন বরুন ব্যানার্জি ও লিগ্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট শাহীন ব্যাপারী ও নির্বাহী পরিচালক কেয়া জুলিয়েট মালাকার।
যদিও অভিযুক্তদের দাবি, এ সব টাকার সঙ্গে তাদের কোনো সর্ম্পক নেই। এ সব অভিযোগ মিথ্যা।
জানা যায়, সিসিডিবি'র প্রতিষ্ঠাতা সুশান্ত অধিকারী এনজিওটিকে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা করে একটি তহবিল তৈরি করেন। এই তহবিলটি বিভিন্ন প্রজেক্টের অনুদানের অর্থে গঠিত হয়। বর্তমানে এই তহবিলে ৩২ কোটি টাকা আছে। বিধিমতে, এই তহবিলের জন্য সরকারকে কোনো ট্যাক্স প্রদান করতে হয় না। যদিও অভিযুক্তরা বলছেন, ট্যাক্স দেওয়া হয়েছে ১ কোটি টাকা। তবে ১ কোটি টাকার ট্যাক্স এর সঠিক কাগজ নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
এনজিওটির বর্তমান দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের দাবি, এই ফান্ডের টাকা ট্যাক্স ফ্রি নয়। ট্যাক্স জমা দেওয়া হয়েছে।
ট্যাক্স দিয়েছেন এমন কাগজপত্র আপনাদের কাছে কি না ঢাকাপ্রকাশের এমন প্রশ্নের জবাবে অভিযুক্তরা বলেন, ট্যাক্সের কাগজ আপাতত আমাদের কাছে নেই। এসময় তারা ট্যাক্স আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
সিসিডিবি’র চেয়ারম্যান ডেভিড অনিল হালদার, সদস্য এডভিন বরুন ব্যানার্জি ও লিগ্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাড. শাহীন ব্যাপারী কৌশলে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক কেয়া জুলিয়েট মালাকারকে সঙ্গে নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করেছেন। যদিও কেয়া জুলিয়েট মালাকার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি। তার বোন ফোন ধরে এই প্রতিবেদককে জানান, আপাতত এই বিষয়ে তিনি বক্তব্য দিতে পারছেন না।
এখন সিসিডিবি'র চেয়ারম্যান ডেভিড অনিল হালদার, এডভিন বরুণ ব্যানার্জি ও লিগ্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট শাহীন ব্যাপারী ১ কোটি টাকার কোনো হিসাব দিতে পারেছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত এডভিন বরুন ব্যানার্জি ঢাকাপ্রকাশ-কে ফোনে বলেন, আমরা ট্রাক্সের টাকা খেয়ে ফেলবো কেন? এসব বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। দরকার হলে সরাসরি এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলুন।
সিসিডিবি এডভিন বরুন ব্যানার্জি আরও বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের মূল নীতি নির্ধারক দেশের বাইরে আছেন। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগের কথা বললেন সেটা সঠিক নয়।
জানতে চাইলে সিসিডিবি চেয়ারম্যান ডেভিড অনিল হালদার বলেন, আমরা ট্যাক্স দিয়েছি এটা সত্য আর যে অভিযোগগুলো আপনি করেছেন এগুলো সব ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। ট্যাক্সের কাগজ আপনার কাছে আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্যাক্স গ্রহণকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করুন, আপাতত ট্যাক্সের কাগজ আমার কাছে নেই। তবে কোটি টাকার ট্যাক্স দেওয়া হয়েছে তা সত্য। আপনি ট্যাক্সের কাগজটি দেখেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্যাক্স যখন দেওয়া হয় তখন আমি বিষয়টি জানতাম না এবং আপাতত আমার কাছে কাগজও নেই, অফিসে হয়ত আছে।
এই বিষয়ে কথা বলতে সিসিডিবি নির্বাহী পরিচালক কেয়া জুলিয়েট মালাকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কয়েকবার ফোন করার পর রিসিভ করেন তার ছোট বোন পরিচয়ে এক ব্যক্তি। তিনি তার নাম রাজি না হয়ে বলেন, কেয়া জুলিয়েটকে যদি কোনো মেসেজ দিতে হয় তাহলে আমাকে বলুন আমি মেসেজ পাঠিয়ে দেব। তার বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বিষয়টি জানতে বারবার তাকে ফোন করা হচ্ছে— এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, মালাকার আপু বাইরে আছেন এবং তিনি ব্যস্ত আছেন। যোগাযোগ হলে বিষয়টি আমি পরে তাকে জানাবো। উত্তর আসলেও আপনাকে জানাবো।
এই ব্যাপারে সিসিডিবি লিগাল অ্যাডভাইজার শাহীন ব্যাপারী বলেন, এখানে ট্যাক্সের আইনজীবী আছেন তিনি এই বিষয়টি জানেন। আমি এখানকার আইন উপদেষ্টা। আমার জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। কমিটির একটা লোক বিভিন্নভাবে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা একটা অভিযোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন দপ্তরে এমনটাই আমরা জানতে পেরেছি। আমি এর সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত নেই।
ট্যাক্সের টাকা জমা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শাহীন বলেন, তা ছাড়া এটা আমাদের অফিসিয়াল ইন্টার্নাল বিষয়। বাংলাদেশে অনেক পত্রিকার লোক এটা তদন্ত করেছে তারা দেখেছেন এই অভিযোগ সত্যি না। সরকারি একটি সংস্থার লোক তদন্ত করেছে, তারা অভিযোগের সত্যতা পায়নি। আশা করি আপনিও পাবেন না।
আপনারা এক কোটি টাকার ট্যাক্স দিয়েছেন কি না এবং এর হিসাব মেলাতে পারছেন না অভিযোগ রয়েছে— এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমি কমিটিতে নেই। যদি কোনো কাজে লাগে সেই ক্ষেত্রে তারা আমাকে ডাকেন, আমি যাই এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য কাজ করি। তাছাড়া সরিয়ে ফেলা ১ কোটি টাকার হিসাব আমি জানি না। কমিটিতে যারা আছেন বা অন্য যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।
এদিকে এই ১ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে অভিযুক্তদের বক্তব্য যাচাই করার জন্য সিসিডিবি একাধিক সদস্যের মতামত গ্রহণ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সদস্য বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে এটা নিঃসন্দেহে সত্য। তবে ১ কোটি টাকা লোপাটের বিষয়ে কে কে, কীভাবে জড়িত তা তদন্ত হওয়া দরকার। দুদক এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার তরফ থেকেও তদন্ত হওয়া উচিত। প্রকৃতপক্ষে সিসিডিবি চেয়ারম্যান ডেভিড অনিল হালদার যে এসব দুর্নীতিতে জড়িত থাকতে পারেন— তা কমিশন সদস্যদের কেউ কেউ মনে করেন।
আরইউ/আরএ/